গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার। কিন্তু সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে আগের বাড়তি দামেই এগুলো বিক্রি হচ্ছে বাজারে। পাশাপাশি হাতেগোনা কিছু সবজির দামই নাগালের মধ্যে, বাকি সব সবজির দাম আকাশছোঁয়া।
প্রতিটি ফার্মের ডিমের দাম ১২ টাকা, আলু খুচরা পর্যায়ে ৩৫-৩৬ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৬৪-৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অথচ নির্ধারণ করে দেয়ার ১৫ দিন পরেও বাজারে এসব দ্রব্যের দাম কার্যকর হয়নি।
শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ফার্মের ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায়। আর প্রতি হালি (৪ পিস) বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। ফলে একটি ডিমের দাম পড়ছে ১৩ টাকা ৭৫ পয়সা। অথচ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিমের দাম বেঁধে দিয়েছিল সর্বোচ্চ ১২ টাকা।
একই ভাবে বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ টাকা, যেখানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এর দাম বেঁধে দিয়েছিল ৩৫-৩৬ টাকা। ফলে নির্ধারিত দামের চেয়ে কেজিতে ১৪-১৫ টাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে দেশি পেঁয়াজের দাম সরকার ৬৪-৬৫ টাকা বেঁধে দিলেও বাজারে এর চেয়ে ১৫ থেকে ২৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ কর্মদিবসে বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা কেজি দরে, আর আলু বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৪৫ টাকা কেজি দরে। সেই সঙ্গে ডিম প্রতি হালি সর্বোচ্চ ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
টিসিবির সহকারী পরিচালক (বাজার তথ্য) নাসির উদ্দিন জানান, যেই পেঁয়াজ বর্তমান বাজারে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এই সময় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৮ থেকে ৪৫ টাকায়। সেই হিসেবে এক বছরে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৯৮ দশমিক ৮০ শতাংশ।
একইভাবে যে আলু বর্তমানে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এই সময় সেই আলু বিক্রি হয়েছে ২৩ থেকে ৩০ টাকায়। ফলে এক বছরে আলুর দাম বেড়েছে ৬৪ দশমিক ১৫ শতাংশ। পাশাপাশি ডিমের দাম এক বছরে বেড়েছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ।
বাজারের এমন পরিস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ক্রেতারা। তারা বলছে, সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও আমরা ক্রেতারা এসব আলু, ডিম, পেঁয়াজ এখনও বাড়তি দামেই কিনছি। বাজার মনিটরিং যদি না থাকে তাহলে দাম নির্ধারণ করে দিয়ে কি লাভ হলো? দাম নির্ধারণের আগেও যে দামে কিনেছি এখনও সেই বাড়তি দামেই কিনছি।
শুক্রবার রাজধানীর মানিকনগর বাজারে মাছ কিনতে এসে ঘুরতেছে আরিফ নামে একজন ক্রেতা। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম ঘুরতেছেন কেন ভাই। তিনি ক্ষোপ প্রকাশ করে বললেন, বাজারে মাছ কিনতে আসছি কিন্তু কোন মাছই কিনতে পারছি না। এক কেজি ইলিশ সর্বনিম্ন সাড়ে ৫০০ টাকা। ৫০০ টাকা নিয়ে বাজারে আসছি। মাছ কিনলে আর কোন টাকা থাকে না। তাহলে বাজার করবো কি দিয়ে? শুক্রবার বাজারে আসলে একটু মাছ-মাংস কিনতে হয় ছেলেমেয়ে আছে। কিন্তু কীভাবে কিনবো।
তিনি বলেন, এভাবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকলে কতদিন সংসার চালাবো। ২৫ হাজার টাকা বেতন পাই। বাজার করতে মাসে ১৫ হাজারে পারি না। তাও মাত্র চারজন মানুষ। আমি ও আমার স্ত্রী এবং এক ছেলে ও মেয়ে। ছেলের বয়স ৫ বছর ও মেয়ের বয়স ২ বছর। গড়ে প্রতিদিন ৫০০ টাকার বাজার লাগে।
তিনি আরও বলেন, এই পরিস্থিতিতে আমরা সাধারণ ক্রেতারা খুব খারাপ অবস্থায় আছি। সব কিছুর দাম বাড়তি এর মধ্যে বাজার মনিটরিংয়ের কোন উদ্যোগ দেখছি না। সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হলো যেগুলোর দাম সরকার কমালো সেগুলোও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ, আলু, ডিমের দাম সরকার নির্ধারণ করে দিলেও তার চেয়ে অনেক বেশি দামে আমাকে এগুলো কিনতে হলো। তাহলে লোক দেখানো দাম নির্ধারণের প্রয়োজন কি ছিল। নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বাড়তি দামে এগুলো বাজারে ওপেন বিক্রি হচ্ছে অথচ দেখার কেউ নেই।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারের বেঁধে দেয়া দামের চেয়েও কেন বেশি দামে ডিম, আলু, পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, এই বাড়তি দামের বিষয়ে আমাদের কোন হাত নেই। আমরা যে দামে কিনে আনি, অল্প কিছু লাভ করে বিক্রি করি। কারা দাম বাড়িয়ে রেখেছে তা বড় বড় ব্যবসায়ীরা বলতে পারবে। আমরা যখন কম দামে ডিম, আলু, পেঁয়াজ কিনতে পারব তখন কম দামে বিক্রি করতে পারব। তার আগ পর্যন্ত আমাদের কিছুই করার নেই।
বাজারে ইলিশ মাছ ৮৫০-২২০০ টাকা, রুই মাছ ৫৫০ টাকা, কাতল মাছ ৫৫০-৬০০ টাকা, কালবাউশ ৪৫০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮০০-১০০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৫০০ টাকা, টেংরা মাছ ৭০০ টাকা, কৈ মাছ ৪০০ টাকা, পাবদা মাছ ৬০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-৫৫০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০-১০০০ টাকা, বোয়াল মাছ ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ব্রয়লার মুরগি ১৭০-১৮৫ টাকা, কক মুরগি ২৯৫, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০-৭৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মুদি দোকানগুলোয় অন্যান্য পণ্যের দাম রয়েছে আগের মতোই। মসুরের ডাল ১৩০ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১০৫ টাকা, মুগ ডাল ১৩০ টাকা, খেসারি ডাল ৮০ টাকা, বুটের ডাল ৯০ টাকা, ছোলা ৭৫ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা, চিনি ১৩৫ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৪০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১২০ টাকা খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ২২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি আদা ২৬০-২৮০ টাকা, চায়না রসুন ১৮০, দেশি রসুন ২০০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে সব ধরনের সবজির দাম রয়েছে ঊর্ধ্বমুখী। লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, গোল বেগুন ১০০-১২০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, করল্লা ৮০ টাকা, উচ্ছে ৮০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, পটল ৬০-৭০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, মূলা ৬০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৭০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা, শিম ১৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২৮০ টাকা, ধনেপাতা ২০০ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতিটি লাউ ৭০ টাকা ও চাল কুমড়া ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী মাহমুদুল হাসান বলেন, আজকের বাজারে সবকিছুরই দাম বেশি মনে হচ্ছে। মূলার কেজি ৬০ টাকা, যা সাধারণত ৩০-৪০ টাকার মধ্যেই থাকে। এছাড়া ঢেঁড়শের কেজিও ৬০ টাকা, গত দুই দিন আগেও ছিল ৪০ টাকা।
তিনি বলেন, বাজারে কোন পণ্যের দামে নিয়ন্ত্রণ নেই। ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছে মতো যখন ইচ্ছে দাম বাড়িয়ে নিচ্ছে। আমি মনে করি এটা সরকারের বড় ব্যর্থতা। বাজারে শিম এসেছে আরও দুই সপ্তাহ আগে, তারপরও দাম এখন ২০০ টাকা কেজি।
রোকেয়া আক্তার নামে আরেক ক্রেতা বলেন, বাজারে জিনিসপত্রের এত দাম, আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কেনার অবস্থা নেই। যে সবজিরই দাম জিজ্ঞেস করি, ৫০-৬০ টাকার নিচে কিছুই নেই। বাজারে এলেই হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়।
তিনি বলেন, মাছ-মাংস কেনার অবস্থা নেই। ভর্তা-ভাত, সবজি খেয়ে থাকবো সেটারও অবস্থা নেই। আমরা গরিব মানুষ কতোটা বিপদে আছি বলে বোঝানোর ভাষা নেই।
সবজির দাম প্রসঙ্গে রামপুরা বাজারের সবজি বিক্রেতা নুরুজ্জামান বাবু বলেন, শীতের সবজি বাজারে এলেও চাহিদা অনুপাতে পরিমাণ খুবই কম। আমরাও চাহিদা মতো আড়ত থেকে কিনতে পারছি না। যে কারণে বাধ্য হয়েই একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।
দাম বেশি হওয়ার আরেকটি কারণ হলো, বাজারে সার-কীটনাশকের দাম অনেক বেশি। তাছাড়া মজুরির দামও বেড়েছে। সবমিলিয়ে কৃষক পর্যায়েই এখন দামটা কিছুটা বেশি। সেটা যখন বিভিন্ন হাত ঘুরে আমাদের কাছে আসে, স্বাভাবিকভাবেই দামটা বেশি হওয়ার কথা।
রফিকুল ইসলাম নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, এবার আগাম সবজির চাষ হয়েছে, যে কারণে বাজারে দ্রুত চলে এসেছে। বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে সবজির দাম বাড়তি। এর কারণ হলো এখনও আসলে শীতকালীন সবজির পুরোপুরি মৌসুম আসেনি। ফলে এগুলোর দাম বেশি। বাজারে ফুলকপি-বাঁধাকপি থাকলেও সাইজ অনেক ছোট। শীতের একেকটা কপি যেখানে দুই থেকে আড়াই কেজি হয়, সেখানে এখন সর্বোচ্চ ৩০০-৪০০ গ্রাম হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, মূলত শীতকাল আসার আগ পর্যন্ত সবজির দাম এমন বাড়তিই থাকে। কারওয়ান বাজারসহ অন্যান্য সব পাইকারি বাজারে সব ধরনের সবজিই প্রতি পাল্লায় দাম বেড়েছে। সে কারণে আমাদের কেনার খরচ আগের চেয়ে বেশি লেগে যাচ্ছে। এরপর তা পরিবহনসহ শ্রমিক খরচ, রাস্তা খরচ, যেখানে দোকান বসাচ্ছি তার খরচ সব মিলিয়ে খুচরা বাজারে সবজির দাম বাড়তি যাচ্ছে।
শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩
গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার। কিন্তু সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে আগের বাড়তি দামেই এগুলো বিক্রি হচ্ছে বাজারে। পাশাপাশি হাতেগোনা কিছু সবজির দামই নাগালের মধ্যে, বাকি সব সবজির দাম আকাশছোঁয়া।
প্রতিটি ফার্মের ডিমের দাম ১২ টাকা, আলু খুচরা পর্যায়ে ৩৫-৩৬ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৬৪-৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অথচ নির্ধারণ করে দেয়ার ১৫ দিন পরেও বাজারে এসব দ্রব্যের দাম কার্যকর হয়নি।
শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ফার্মের ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায়। আর প্রতি হালি (৪ পিস) বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। ফলে একটি ডিমের দাম পড়ছে ১৩ টাকা ৭৫ পয়সা। অথচ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিমের দাম বেঁধে দিয়েছিল সর্বোচ্চ ১২ টাকা।
একই ভাবে বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ টাকা, যেখানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এর দাম বেঁধে দিয়েছিল ৩৫-৩৬ টাকা। ফলে নির্ধারিত দামের চেয়ে কেজিতে ১৪-১৫ টাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে দেশি পেঁয়াজের দাম সরকার ৬৪-৬৫ টাকা বেঁধে দিলেও বাজারে এর চেয়ে ১৫ থেকে ২৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ কর্মদিবসে বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা কেজি দরে, আর আলু বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৪৫ টাকা কেজি দরে। সেই সঙ্গে ডিম প্রতি হালি সর্বোচ্চ ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
টিসিবির সহকারী পরিচালক (বাজার তথ্য) নাসির উদ্দিন জানান, যেই পেঁয়াজ বর্তমান বাজারে সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এই সময় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৮ থেকে ৪৫ টাকায়। সেই হিসেবে এক বছরে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৯৮ দশমিক ৮০ শতাংশ।
একইভাবে যে আলু বর্তমানে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এই সময় সেই আলু বিক্রি হয়েছে ২৩ থেকে ৩০ টাকায়। ফলে এক বছরে আলুর দাম বেড়েছে ৬৪ দশমিক ১৫ শতাংশ। পাশাপাশি ডিমের দাম এক বছরে বেড়েছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ।
বাজারের এমন পরিস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ক্রেতারা। তারা বলছে, সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও আমরা ক্রেতারা এসব আলু, ডিম, পেঁয়াজ এখনও বাড়তি দামেই কিনছি। বাজার মনিটরিং যদি না থাকে তাহলে দাম নির্ধারণ করে দিয়ে কি লাভ হলো? দাম নির্ধারণের আগেও যে দামে কিনেছি এখনও সেই বাড়তি দামেই কিনছি।
শুক্রবার রাজধানীর মানিকনগর বাজারে মাছ কিনতে এসে ঘুরতেছে আরিফ নামে একজন ক্রেতা। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম ঘুরতেছেন কেন ভাই। তিনি ক্ষোপ প্রকাশ করে বললেন, বাজারে মাছ কিনতে আসছি কিন্তু কোন মাছই কিনতে পারছি না। এক কেজি ইলিশ সর্বনিম্ন সাড়ে ৫০০ টাকা। ৫০০ টাকা নিয়ে বাজারে আসছি। মাছ কিনলে আর কোন টাকা থাকে না। তাহলে বাজার করবো কি দিয়ে? শুক্রবার বাজারে আসলে একটু মাছ-মাংস কিনতে হয় ছেলেমেয়ে আছে। কিন্তু কীভাবে কিনবো।
তিনি বলেন, এভাবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকলে কতদিন সংসার চালাবো। ২৫ হাজার টাকা বেতন পাই। বাজার করতে মাসে ১৫ হাজারে পারি না। তাও মাত্র চারজন মানুষ। আমি ও আমার স্ত্রী এবং এক ছেলে ও মেয়ে। ছেলের বয়স ৫ বছর ও মেয়ের বয়স ২ বছর। গড়ে প্রতিদিন ৫০০ টাকার বাজার লাগে।
তিনি আরও বলেন, এই পরিস্থিতিতে আমরা সাধারণ ক্রেতারা খুব খারাপ অবস্থায় আছি। সব কিছুর দাম বাড়তি এর মধ্যে বাজার মনিটরিংয়ের কোন উদ্যোগ দেখছি না। সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হলো যেগুলোর দাম সরকার কমালো সেগুলোও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ, আলু, ডিমের দাম সরকার নির্ধারণ করে দিলেও তার চেয়ে অনেক বেশি দামে আমাকে এগুলো কিনতে হলো। তাহলে লোক দেখানো দাম নির্ধারণের প্রয়োজন কি ছিল। নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বাড়তি দামে এগুলো বাজারে ওপেন বিক্রি হচ্ছে অথচ দেখার কেউ নেই।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারের বেঁধে দেয়া দামের চেয়েও কেন বেশি দামে ডিম, আলু, পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, এই বাড়তি দামের বিষয়ে আমাদের কোন হাত নেই। আমরা যে দামে কিনে আনি, অল্প কিছু লাভ করে বিক্রি করি। কারা দাম বাড়িয়ে রেখেছে তা বড় বড় ব্যবসায়ীরা বলতে পারবে। আমরা যখন কম দামে ডিম, আলু, পেঁয়াজ কিনতে পারব তখন কম দামে বিক্রি করতে পারব। তার আগ পর্যন্ত আমাদের কিছুই করার নেই।
বাজারে ইলিশ মাছ ৮৫০-২২০০ টাকা, রুই মাছ ৫৫০ টাকা, কাতল মাছ ৫৫০-৬০০ টাকা, কালবাউশ ৪৫০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮০০-১০০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৫০০ টাকা, টেংরা মাছ ৭০০ টাকা, কৈ মাছ ৪০০ টাকা, পাবদা মাছ ৬০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-৫৫০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০-১০০০ টাকা, বোয়াল মাছ ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ব্রয়লার মুরগি ১৭০-১৮৫ টাকা, কক মুরগি ২৯৫, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০-৭৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মুদি দোকানগুলোয় অন্যান্য পণ্যের দাম রয়েছে আগের মতোই। মসুরের ডাল ১৩০ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১০৫ টাকা, মুগ ডাল ১৩০ টাকা, খেসারি ডাল ৮০ টাকা, বুটের ডাল ৯০ টাকা, ছোলা ৭৫ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা, চিনি ১৩৫ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৪০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১২০ টাকা খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ২২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি আদা ২৬০-২৮০ টাকা, চায়না রসুন ১৮০, দেশি রসুন ২০০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে সব ধরনের সবজির দাম রয়েছে ঊর্ধ্বমুখী। লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, গোল বেগুন ১০০-১২০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, করল্লা ৮০ টাকা, উচ্ছে ৮০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, পটল ৬০-৭০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, মূলা ৬০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৭০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা, শিম ১৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২৮০ টাকা, ধনেপাতা ২০০ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতিটি লাউ ৭০ টাকা ও চাল কুমড়া ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী মাহমুদুল হাসান বলেন, আজকের বাজারে সবকিছুরই দাম বেশি মনে হচ্ছে। মূলার কেজি ৬০ টাকা, যা সাধারণত ৩০-৪০ টাকার মধ্যেই থাকে। এছাড়া ঢেঁড়শের কেজিও ৬০ টাকা, গত দুই দিন আগেও ছিল ৪০ টাকা।
তিনি বলেন, বাজারে কোন পণ্যের দামে নিয়ন্ত্রণ নেই। ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছে মতো যখন ইচ্ছে দাম বাড়িয়ে নিচ্ছে। আমি মনে করি এটা সরকারের বড় ব্যর্থতা। বাজারে শিম এসেছে আরও দুই সপ্তাহ আগে, তারপরও দাম এখন ২০০ টাকা কেজি।
রোকেয়া আক্তার নামে আরেক ক্রেতা বলেন, বাজারে জিনিসপত্রের এত দাম, আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কেনার অবস্থা নেই। যে সবজিরই দাম জিজ্ঞেস করি, ৫০-৬০ টাকার নিচে কিছুই নেই। বাজারে এলেই হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়।
তিনি বলেন, মাছ-মাংস কেনার অবস্থা নেই। ভর্তা-ভাত, সবজি খেয়ে থাকবো সেটারও অবস্থা নেই। আমরা গরিব মানুষ কতোটা বিপদে আছি বলে বোঝানোর ভাষা নেই।
সবজির দাম প্রসঙ্গে রামপুরা বাজারের সবজি বিক্রেতা নুরুজ্জামান বাবু বলেন, শীতের সবজি বাজারে এলেও চাহিদা অনুপাতে পরিমাণ খুবই কম। আমরাও চাহিদা মতো আড়ত থেকে কিনতে পারছি না। যে কারণে বাধ্য হয়েই একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।
দাম বেশি হওয়ার আরেকটি কারণ হলো, বাজারে সার-কীটনাশকের দাম অনেক বেশি। তাছাড়া মজুরির দামও বেড়েছে। সবমিলিয়ে কৃষক পর্যায়েই এখন দামটা কিছুটা বেশি। সেটা যখন বিভিন্ন হাত ঘুরে আমাদের কাছে আসে, স্বাভাবিকভাবেই দামটা বেশি হওয়ার কথা।
রফিকুল ইসলাম নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, এবার আগাম সবজির চাষ হয়েছে, যে কারণে বাজারে দ্রুত চলে এসেছে। বেশ কিছুদিন ধরে বাজারে সবজির দাম বাড়তি। এর কারণ হলো এখনও আসলে শীতকালীন সবজির পুরোপুরি মৌসুম আসেনি। ফলে এগুলোর দাম বেশি। বাজারে ফুলকপি-বাঁধাকপি থাকলেও সাইজ অনেক ছোট। শীতের একেকটা কপি যেখানে দুই থেকে আড়াই কেজি হয়, সেখানে এখন সর্বোচ্চ ৩০০-৪০০ গ্রাম হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, মূলত শীতকাল আসার আগ পর্যন্ত সবজির দাম এমন বাড়তিই থাকে। কারওয়ান বাজারসহ অন্যান্য সব পাইকারি বাজারে সব ধরনের সবজিই প্রতি পাল্লায় দাম বেড়েছে। সে কারণে আমাদের কেনার খরচ আগের চেয়ে বেশি লেগে যাচ্ছে। এরপর তা পরিবহনসহ শ্রমিক খরচ, রাস্তা খরচ, যেখানে দোকান বসাচ্ছি তার খরচ সব মিলিয়ে খুচরা বাজারে সবজির দাম বাড়তি যাচ্ছে।