alt

অর্থ-বাণিজ্য

ডিসিসিআই আয়োজিত ‘স্মার্ট এসএমই’র জন্য তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক’ সেমিনার

স্মার্ট অথনীতি : ক্ষুদ্র ও মাঝারিদের প্রযুক্তি সক্ষমতা বাড়ানোর আহ্বান

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : শনিবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৩

স্মার্ট অর্থনীতি নির্মাণে এসএমইদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘স্মার্ট এসএমইদের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি’ বিষয়ক সেমিনার শনিবার (২৫ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত। সেমিনারে তারা এসব কথা বলেন।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন উক্ত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক সাবেক মুখ্য সমন্বয়ক এবং সাবেক মুখ্যসচিব মো. আবুল কালাম আজাদ এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) চেয়ারম্যান মুহ. মাহবুবর রহমান উক্ত সেমিনারে যথাক্রমে বিশেষ অতিথি ও সম্মানিত অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।

সেমিনারের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, ‘দেশের এসএমইদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো, সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রয়োজনীয় সংষ্কার বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ভবিষ্যতে স্মার্ট অর্থনীতিতে রপ্তান্তরে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারাকে বেগবান করার পাশাপাশি বিশেষকরে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে স্থানীয় এসএমইরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।’

তিনি জানান, আমাদের ৯ মিলিয়ন এসএমই উদ্যোক্তা কৃষি, পণ্য উৎপাদনসহ ব্যবসায়ের বিভিন্ন খাতে প্রায় ২৪.৫ মিলিয়ন লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে এবং জিডিপিতে তাদের অবদান প্রায় ২৫ শতাংশ। এসএমইদের প্রযুক্তি বিষয়ে সক্ষমতা বৃদ্ধিকল্পে অর্থায়নের সুযোগ বৃদ্ধি, তথ্যপ্রযুক্তি গ্রহণে স্বল্পসুদে পুণঃঅর্থায়ন সহায়তা প্রদান, ফিনটেক ব্যবস্থার সর্বাত্মক ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, টেকনোলজি ট্রান্সফার, কর ও শুল্ক বিষয়ক সহায়তা প্রদান, নীতি সহায়তা প্রভৃতি বিষয়ের ওপর জোরারোপ করেন ডিসিসিআই সভাপতি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমানে স্মার্ট সরকারের পাশাপাশি স্মার্ট ইকোনোমি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সরকারের সংস্থাগুলো প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে জনগনের ভোগান্তি ও ব্যয় কমবে এবং সেবার মান বৃদ্ধি পাবে। এসএমই খাতে যথাযথ তথ্য প্রাপ্তির বিষয়টি এ খাতের সম্প্রসারণে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণের একান্ত অপরিহার্য। এসএমই উদ্যোক্তারা আমাদের অর্থনীতি ও জিডিপিতে সবচেয়ে বেশি হারে অবদান রেখে আসছে, তাই তাদের উন্নয়নে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিতকরণের কোনো বিকল্প নেই।’

সাবেক মুখ্য ও অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমাদের মাথাপিছু আয়, জ্বালানি সক্ষমতাসহ অন্য সূচকে আমাদের উন্নয়ন হয়েছে এবং এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে দেশের বেসরকারি খাত। আমাদের এসএমই উদ্যোক্তারা সবচেয়ে বেশি সাহসী এবং নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে ব্যবসায়িক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে, এমতাবস্থায় এখাতের উদ্যোক্তাদের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সক্ষমতা বাড়ানো গেলে, অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন আনায়ন সম্ভব।’

প্রযুক্তি গ্রহণে আমাদের মধ্যকার ভয়-ভীতি দূরীকরণের ওপর তিনি জোরারোপ করেন। তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি খাতের যৌথ সমন্বয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) চেয়ারম্যান মুহ. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘সারাদেশে আমাদের ৮৫টি কার্যালয় ও প্রায় ১০০ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কীম রয়েছে, যেখানে হতে এসএমই উদ্যোক্তাদের ৫ শতাংশ হারে ঋণ সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে। আমাদের এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়নে বিসিক নানাবিধ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।’

জিবিএল ফিনটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুর রহমান সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘এন্টারপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট’ এবং ‘গ্লোবাল ইনোভেশন’ সূচকে বাংলাদেশ যথাক্রমে ৮৪ ও ১০৫তম স্থানে রয়েছে, তাই এক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থান উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। প্রযুক্তির সীমিত ব্যবহার, আর্থিক সহায়তার সীমাবদ্ধতা এবং দক্ষতার অভাব আমাদের এসএমই খাতের উন্নয়নে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা।’

এসএমই খাতে প্রযুক্তিবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ গ্রহণের ওপর তিনি জোরারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘উচ্চ কর ও শুল্ক হার, টেকনোলোজি বিষয়ক ‘নো-হাউ’ পিছিয়ে থাকা, সক্ষমতার অভাব, প্রযুক্তিগত বিনিয়োগের উচ্চমূল্য, তথ্য সুরক্ষা, সাইবার সিকিউরিট এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা প্রভৃতি বিষয়সমূহ আমাদের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। আমাদের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ‘স্মার্ট এসএমই’ তে রূপান্তরের লক্ষ্যে নীতিমালার সংস্কার ও সহায়ক নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।’ এছাড়া এসএমইদের সহজশর্তে ঋণ সহায়তা প্রাপ্তির পরিবেশ উন্নয়নে সবাইকে এগিয়ে আসার প্রস্তাব করেন।

সেমিনারের নির্ধারিত আলোচনায় সেবা প্ল্যাটফর্ম লিমিটেডের কো-ফাউন্ডার ইলমুল হক সজীব, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলোজির অধ্যাপক ড. বি মাইনুল হাসান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বক্তব্য প্রদান করেন।

ইলমুল হক সজীব বলেন, ‘আমাদের এসএমইদের সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান এখন সময়ের দাবি এবং দেশে ডিজিটাল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু হয়েছে, এমতাবস্থায় ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেমে অংশগ্রহণ বাড়াতে এ বিষয়ে জনগনের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।’ এছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাসকল্পে তিনি সবার সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ওপর জোরারোপ করেন।

ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাইনুল হোসেন বলেন, ‘পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে আমরা অনেক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি না। বিশেষ করে এসএমইদের সার্বিক উন্নয়নে এ খাতে একটি ডাটাবেইজ একান্ত আবশ্যক। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশ ভালো করেছে এবং দেশে ই-কমার্স খাতের আরও বিকাশে ‘ক্রস-বর্ডার ট্রেড’ সম্প্রসারণের আহ্বান জানাই।’

সেই সঙ্গে যুগোপযোগী ও সহায়ক নীতিসহায়তা একান্ত অপরিহার্য বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. মেসবাহ উল হক সারাদেশে ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থার কার্যকর বাস্তবায়নের জোরোরোপ করেন, সেই সঙ্গে প্রযুক্তিগুলোর সর্বাত্মক ব্যবহারের পরামর্শ প্রদান করেন।

মুক্ত আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই বিভাগের জয়েন্ট ডিরেক্টর জাহিদ ইকবাল বলেন, ‘এসএমই খাতে প্রযুক্তির ব্যবহারকে উৎসাহীত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৯০০ কোটি টাকার একটি ফান্ড রয়েছে এবং শুধুমাত্র প্রডাক্ট, সার্ভিস, প্রসেস এবং টেকনোলিজ প্রভৃতি খাতে নতুনত্ব নিয়ে আসতে পারলে মাত্র ৪% হারে উক্ত ফান্ড হতে ঋণ সহায়তা পাওয়া যাবে।’

এছাড়া অন্য আলোচকরা এসএমইদের ঋণের সুদের হার কমানো ও ঋণ প্রাপ্তির শর্তাবলী সহজীকরণ, সরকারি সংস্থাসমূহের মধ্যকার সমন্বয় বৃদ্ধি, এসএমইবিষয়ক আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন এবং কর ও শুল্কবিষয়ক সহায়ক নীতিমালা প্রদানের ওপর জোরোপ করেন। ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এস এম গোলাম ফারুক আলমগীর (আরমান), সহ-সভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলী, পরিচলনা পর্ষদের সদস্যরা এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা এ অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।

রাণীনগরে ন্যায্যমূল্যের দোকান : স্বল্প আয়ের মানুষের স্বস্তি

ছবি

পুঁজিবাজারে শেয়ার কারসাজির ঘটনায় ১১৫ কোটি টাকা জরিমানা

ছবি

মূল্যস্ফীতির চাপে নিত্যপণ্যের বাজার, খাদ্যদ্রব্যে ১৩.৮০% মূল্যবৃদ্ধি

আইএমএফ-এর অধিকাংশ শর্ত পূরণ, চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড় ফেব্রুয়ারিতে

এইচআর ম্যানেজমেন্টে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে ‘ট্যালেন্ট লেন্স হাব’

ছবি

বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার প্রসারে টিকটকের কর্মশালা

ছবি

৫-৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হচ্ছে রুয়েট সাইবার ফেস্ট ২০২৪

থ্রি মিলিয়ন ক্লাবে প্রবেশ করেছে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং

ছবি

চার ধরনের নতুন নোট আসছে, নকশায় যুক্ত হবে জুলাই বিপ্লবের গ্রাফিতি

ছবি

সূচকের ওঠানামায় পুঁজিবাজারে চলছে লেনদেন

দুই বছরের মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনার সুপারিশ

ছবি

২৮ উপায়ে ‘দুর্নীতি’, ২৩৪ বিলিয়ন ডলার ‘পাচার’

ছবি

বিপিও শিল্পের উন্নয়নে বাক্কো ও বিটিআরসি যৌথ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

ছবি

দক্ষতা উন্নয়নে বেসিস ও সিসিপ এর মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর

ছবি

বেসিস ও এনআরবি ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত

ছবি

মুক্তাগাছায় ২০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে এডিবির অর্থায়ন

শ্বেতপত্র কমিটি: দেড় দশকে ২৮ উপায়ে দুর্নীতি, দেশ থেকে পাচার ২৮ লাখ কোটি টাকা

ছবি

ক্রেডিট কার্ডে সুদের হার বাড়ছে, জানুয়ারি থেকে কার্যকর

ছবি

ব্যাংক খাতের সংকট: দুর্নীতি ও খেলাপি ঋণে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ১০ ব্যাংক

ছবি

ছয় মাসে দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কায় খেলাপি ঋণ: গভর্নর

ছবি

সরকারি প্রকল্পে ১৫ বছরে ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি: শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদন

ছবি

ইউনিলিভার বাংলাদেশের সাসটেইনেবিলিটি ব্লুবুক ২০২৪ প্রকাশ

ছবি

মহেশখালীর মাতারবাড়ী কয়লা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পুনরায় বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু

ছবি

প্রয়োজনের সময় মানবতার পাশে বিকাশ

ছবি

বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছে ৯৩ শতাংশ

ছবি

সবজি-পেঁয়াজের দাম কমেছে, নাগালে আসছে নতুন আলুও

ছবি

ন্যায়সংগত সমাজ গঠনে গভীর সংস্কার প্রয়োজন: রেহমান সোবহান

ছবি

একদিনের ব্যবধানে সোনার দাম আরও কমলো

ছবি

ওপাস কমিউনিকেশন্স লিমিটেডের যাত্রা শুরু

ছবি

পিএমআই বাংলাদেশের পুরস্কার পেল বাংলালিন্ক

২য় বর্ষপূর্তি উদযাপন করলো এয়ার এ্যাস্ট্রা

দেশে বিওয়াইডির ৩০ বছর পূর্তি উদযাপন

ছবি

বেক্সিমকো শিল্প পার্কে শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন

ছবি

অর্থ সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি

ছবি

মেডিকেল প্রফেশনালদের জন্য কো-ব্র্যান্ডেড ক্রেডিট কার্ড চালু

ছবি

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আইসিসিবি’র কর্মশালা

tab

অর্থ-বাণিজ্য

ডিসিসিআই আয়োজিত ‘স্মার্ট এসএমই’র জন্য তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক’ সেমিনার

স্মার্ট অথনীতি : ক্ষুদ্র ও মাঝারিদের প্রযুক্তি সক্ষমতা বাড়ানোর আহ্বান

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

শনিবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৩

স্মার্ট অর্থনীতি নির্মাণে এসএমইদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘স্মার্ট এসএমইদের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি’ বিষয়ক সেমিনার শনিবার (২৫ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত। সেমিনারে তারা এসব কথা বলেন।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন উক্ত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক সাবেক মুখ্য সমন্বয়ক এবং সাবেক মুখ্যসচিব মো. আবুল কালাম আজাদ এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) চেয়ারম্যান মুহ. মাহবুবর রহমান উক্ত সেমিনারে যথাক্রমে বিশেষ অতিথি ও সম্মানিত অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।

সেমিনারের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, ‘দেশের এসএমইদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো, সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রয়োজনীয় সংষ্কার বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ভবিষ্যতে স্মার্ট অর্থনীতিতে রপ্তান্তরে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারাকে বেগবান করার পাশাপাশি বিশেষকরে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে স্থানীয় এসএমইরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।’

তিনি জানান, আমাদের ৯ মিলিয়ন এসএমই উদ্যোক্তা কৃষি, পণ্য উৎপাদনসহ ব্যবসায়ের বিভিন্ন খাতে প্রায় ২৪.৫ মিলিয়ন লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে এবং জিডিপিতে তাদের অবদান প্রায় ২৫ শতাংশ। এসএমইদের প্রযুক্তি বিষয়ে সক্ষমতা বৃদ্ধিকল্পে অর্থায়নের সুযোগ বৃদ্ধি, তথ্যপ্রযুক্তি গ্রহণে স্বল্পসুদে পুণঃঅর্থায়ন সহায়তা প্রদান, ফিনটেক ব্যবস্থার সর্বাত্মক ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, টেকনোলজি ট্রান্সফার, কর ও শুল্ক বিষয়ক সহায়তা প্রদান, নীতি সহায়তা প্রভৃতি বিষয়ের ওপর জোরারোপ করেন ডিসিসিআই সভাপতি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমানে স্মার্ট সরকারের পাশাপাশি স্মার্ট ইকোনোমি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সরকারের সংস্থাগুলো প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে জনগনের ভোগান্তি ও ব্যয় কমবে এবং সেবার মান বৃদ্ধি পাবে। এসএমই খাতে যথাযথ তথ্য প্রাপ্তির বিষয়টি এ খাতের সম্প্রসারণে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণের একান্ত অপরিহার্য। এসএমই উদ্যোক্তারা আমাদের অর্থনীতি ও জিডিপিতে সবচেয়ে বেশি হারে অবদান রেখে আসছে, তাই তাদের উন্নয়নে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিতকরণের কোনো বিকল্প নেই।’

সাবেক মুখ্য ও অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমাদের মাথাপিছু আয়, জ্বালানি সক্ষমতাসহ অন্য সূচকে আমাদের উন্নয়ন হয়েছে এবং এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে দেশের বেসরকারি খাত। আমাদের এসএমই উদ্যোক্তারা সবচেয়ে বেশি সাহসী এবং নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে ব্যবসায়িক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে, এমতাবস্থায় এখাতের উদ্যোক্তাদের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সক্ষমতা বাড়ানো গেলে, অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন আনায়ন সম্ভব।’

প্রযুক্তি গ্রহণে আমাদের মধ্যকার ভয়-ভীতি দূরীকরণের ওপর তিনি জোরারোপ করেন। তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি খাতের যৌথ সমন্বয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) চেয়ারম্যান মুহ. মাহবুবর রহমান বলেন, ‘সারাদেশে আমাদের ৮৫টি কার্যালয় ও প্রায় ১০০ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কীম রয়েছে, যেখানে হতে এসএমই উদ্যোক্তাদের ৫ শতাংশ হারে ঋণ সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে। আমাদের এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়নে বিসিক নানাবিধ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।’

জিবিএল ফিনটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুর রহমান সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘এন্টারপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট’ এবং ‘গ্লোবাল ইনোভেশন’ সূচকে বাংলাদেশ যথাক্রমে ৮৪ ও ১০৫তম স্থানে রয়েছে, তাই এক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থান উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। প্রযুক্তির সীমিত ব্যবহার, আর্থিক সহায়তার সীমাবদ্ধতা এবং দক্ষতার অভাব আমাদের এসএমই খাতের উন্নয়নে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা।’

এসএমই খাতে প্রযুক্তিবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতকরণে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ গ্রহণের ওপর তিনি জোরারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘উচ্চ কর ও শুল্ক হার, টেকনোলোজি বিষয়ক ‘নো-হাউ’ পিছিয়ে থাকা, সক্ষমতার অভাব, প্রযুক্তিগত বিনিয়োগের উচ্চমূল্য, তথ্য সুরক্ষা, সাইবার সিকিউরিট এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা প্রভৃতি বিষয়সমূহ আমাদের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। আমাদের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ‘স্মার্ট এসএমই’ তে রূপান্তরের লক্ষ্যে নীতিমালার সংস্কার ও সহায়ক নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।’ এছাড়া এসএমইদের সহজশর্তে ঋণ সহায়তা প্রাপ্তির পরিবেশ উন্নয়নে সবাইকে এগিয়ে আসার প্রস্তাব করেন।

সেমিনারের নির্ধারিত আলোচনায় সেবা প্ল্যাটফর্ম লিমিটেডের কো-ফাউন্ডার ইলমুল হক সজীব, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলোজির অধ্যাপক ড. বি মাইনুল হাসান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বক্তব্য প্রদান করেন।

ইলমুল হক সজীব বলেন, ‘আমাদের এসএমইদের সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান এখন সময়ের দাবি এবং দেশে ডিজিটাল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু হয়েছে, এমতাবস্থায় ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেমে অংশগ্রহণ বাড়াতে এ বিষয়ে জনগনের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।’ এছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাসকল্পে তিনি সবার সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ওপর জোরারোপ করেন।

ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাইনুল হোসেন বলেন, ‘পর্যাপ্ত তথ্যের অভাবে আমরা অনেক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি না। বিশেষ করে এসএমইদের সার্বিক উন্নয়নে এ খাতে একটি ডাটাবেইজ একান্ত আবশ্যক। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশ ভালো করেছে এবং দেশে ই-কমার্স খাতের আরও বিকাশে ‘ক্রস-বর্ডার ট্রেড’ সম্প্রসারণের আহ্বান জানাই।’

সেই সঙ্গে যুগোপযোগী ও সহায়ক নীতিসহায়তা একান্ত অপরিহার্য বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. মেসবাহ উল হক সারাদেশে ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থার কার্যকর বাস্তবায়নের জোরোরোপ করেন, সেই সঙ্গে প্রযুক্তিগুলোর সর্বাত্মক ব্যবহারের পরামর্শ প্রদান করেন।

মুক্ত আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই বিভাগের জয়েন্ট ডিরেক্টর জাহিদ ইকবাল বলেন, ‘এসএমই খাতে প্রযুক্তির ব্যবহারকে উৎসাহীত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৯০০ কোটি টাকার একটি ফান্ড রয়েছে এবং শুধুমাত্র প্রডাক্ট, সার্ভিস, প্রসেস এবং টেকনোলিজ প্রভৃতি খাতে নতুনত্ব নিয়ে আসতে পারলে মাত্র ৪% হারে উক্ত ফান্ড হতে ঋণ সহায়তা পাওয়া যাবে।’

এছাড়া অন্য আলোচকরা এসএমইদের ঋণের সুদের হার কমানো ও ঋণ প্রাপ্তির শর্তাবলী সহজীকরণ, সরকারি সংস্থাসমূহের মধ্যকার সমন্বয় বৃদ্ধি, এসএমইবিষয়ক আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন এবং কর ও শুল্কবিষয়ক সহায়ক নীতিমালা প্রদানের ওপর জোরোপ করেন। ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এস এম গোলাম ফারুক আলমগীর (আরমান), সহ-সভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলী, পরিচলনা পর্ষদের সদস্যরা এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা এ অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।

back to top