তারল্য সংকট ও মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় সুদের হার বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের আশা এতে ব্যাংকে মানুষের টাকা জমা রাখার আগ্রহ বাড়বে এবং মূল্যস্ফীতিও অনেক কমিয়ে আনা যাবে।
রোববার (২৬ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ মো. হাবিবুর রহমান এক সংবাদ সম্মলনে এ কথা বলেন। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক উপস্থিত ছিলেন।
হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি ডিসেম্বরের শেষে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে ৮ শতাংশে এবং আগামী জুনের শেষে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকের তারল্য সংকট উত্তরণের ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার নেয়া কমাতে দেশের সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। এখন সাধারণ মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখতে আগ্রহ প্রকাশ করবে। ফলে আয় বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘ব্যাংক ঋণের সুদহারের সীমা প্রয়োজনে আর বাড়ানো হবে। যাতে সাধারণ মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখতে আগ্রহ প্রকাশ করে। সামনে আমানত ও ব্যাংক ঋণের সুদহারের সীমা তুলে দিয়ে তা বাজারমুখীকরণ করা হবে।’
হাবিবুর রহমান বলেন, পুনর্গঠিত মুদ্রানীতি বা মনিটারি পলিসি কমিটির (এমপিসি) প্রথম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুদহার করিডোর পুনঃনির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে পলিসি রেট তথা ওভারনাইট রেপো সুদহার বিদ্যমান শতকরা ৭.২৫ শতাংশ হতে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ৭.৭৫ শতাংশে করা হয়েছে। নীতি সুদহার করিডোরের ঊর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) সুদহার বিদ্যমান শতকরা ৯.২৫ শতাংশ হতে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ৯.৭৫ শতাংশে করা হয়েছে। নীতি সুদহার করিডোরের নিম্নসীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) সুদহার বিদ্যমান শতকরা ৫.২৫ শতাংশ হতে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ৫.৭৫ শতাংশে করা হয়েছে।
অন্যদিকে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ নিতে গেলে এখন ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ প্রায় সাড়ে ১১ শতাংশ পর্যন্ত সুদ আদায় করতে পারবে। কারণ দশমিক ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে স্মার্ট বা সিক্স মান্থ মুভিং এভারেজ রেট অফ ট্রেজারি বিল।
চলতি বছরের অক্টোবরে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ৬ মাসের গড় সুদহার (স্মার্ট রেট) ছিল ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ‘স্মার্ট’ হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মার্জিন বা সুদ যোগ করে নভেম্বর মাসে ঋণ দিতে পারবে ব্যাংক। সেই হিসাবে ঋণের সুদহার হবে ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ।
হাবিবুর রহমান আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসাই আমাদের মূল লক্ষ্য। প্রয়োজনে জিডিপি কিছুটা কমবে। তারপরও সবার আগে মূল সমস্যাতে নজর দিতে হবে। ইতোমধ্যেই আমরা ক্ষুদ্র এবং কৃষি ঋণ বিতরণের গুরুত্ব বাড়িয়েছি। এছাড়া পদ্মা সেতু, বিভিন্ন রেল এবং সড়ক পথের উন্নয়নের কারণে অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান সহজ হবে। সুদের হার বৃদ্ধির কারণে নির্বাচনে ব্যাংক থেকে ঋণ কম বের হতে পারে বলেও আশা প্রধান অর্থনীতিবিদের।
তিনি আরও বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক এবং বর্তমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে রোববার একটি সভায় হয়েছে। এই সভায় সুুদের হার বাড়ানোর সিন্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি দেশের বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি, বিনিময় হার, তারল্য ও সুদহার পরিস্থিতি এবং নীতি সুদহারের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ এবং রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে রেমিট্যান্স বাড়ছে। সামনে আরও বাড়বে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হতে অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যের আমদানি ব্যয় মেটানোর ছাড়া কোনো প্রকার ডলার বিক্রি করবে না।
হাবিবুর রহমান বলেন, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ এবং ব্যাংকিং খাতে নন-পারফর্মিং লোন যাতে না বাড়ে সেই বিষয়ে সবাইকে কাজ করতে বলা হয়েছে। বিনিময় হারকে বাজারমুখী করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের চলমান প্রচেষ্টা জোরদারকরণ এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত রাখা। মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করে যাবে।
গত অক্টোবর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ হওয়া মানে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে একজন মানুষের যদি চাল, ডাল, চিনি, তেল, মাছ-মাংসসহ যাবতীয় খাদ্যপণ্য কিনতে ১০০ টাকা খরচ হয়; তাহলে এ বছরের অক্টোবরে একই খাবার কিনতে তার খরচ হয়েছে ১১২ টাকা ৫৬ পয়সা।
রোববার, ২৬ নভেম্বর ২০২৩
তারল্য সংকট ও মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় সুদের হার বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের আশা এতে ব্যাংকে মানুষের টাকা জমা রাখার আগ্রহ বাড়বে এবং মূল্যস্ফীতিও অনেক কমিয়ে আনা যাবে।
রোববার (২৬ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ মো. হাবিবুর রহমান এক সংবাদ সম্মলনে এ কথা বলেন। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক উপস্থিত ছিলেন।
হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি ডিসেম্বরের শেষে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে ৮ শতাংশে এবং আগামী জুনের শেষে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকের তারল্য সংকট উত্তরণের ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার নেয়া কমাতে দেশের সুদের হার বাড়ানো হয়েছে। এখন সাধারণ মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখতে আগ্রহ প্রকাশ করবে। ফলে আয় বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘ব্যাংক ঋণের সুদহারের সীমা প্রয়োজনে আর বাড়ানো হবে। যাতে সাধারণ মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখতে আগ্রহ প্রকাশ করে। সামনে আমানত ও ব্যাংক ঋণের সুদহারের সীমা তুলে দিয়ে তা বাজারমুখীকরণ করা হবে।’
হাবিবুর রহমান বলেন, পুনর্গঠিত মুদ্রানীতি বা মনিটারি পলিসি কমিটির (এমপিসি) প্রথম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুদহার করিডোর পুনঃনির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে পলিসি রেট তথা ওভারনাইট রেপো সুদহার বিদ্যমান শতকরা ৭.২৫ শতাংশ হতে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ৭.৭৫ শতাংশে করা হয়েছে। নীতি সুদহার করিডোরের ঊর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) সুদহার বিদ্যমান শতকরা ৯.২৫ শতাংশ হতে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ৯.৭৫ শতাংশে করা হয়েছে। নীতি সুদহার করিডোরের নিম্নসীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) সুদহার বিদ্যমান শতকরা ৫.২৫ শতাংশ হতে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি করে ৫.৭৫ শতাংশে করা হয়েছে।
অন্যদিকে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ নিতে গেলে এখন ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ প্রায় সাড়ে ১১ শতাংশ পর্যন্ত সুদ আদায় করতে পারবে। কারণ দশমিক ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে স্মার্ট বা সিক্স মান্থ মুভিং এভারেজ রেট অফ ট্রেজারি বিল।
চলতি বছরের অক্টোবরে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ৬ মাসের গড় সুদহার (স্মার্ট রেট) ছিল ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ‘স্মার্ট’ হারের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে মার্জিন বা সুদ যোগ করে নভেম্বর মাসে ঋণ দিতে পারবে ব্যাংক। সেই হিসাবে ঋণের সুদহার হবে ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ।
হাবিবুর রহমান আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসাই আমাদের মূল লক্ষ্য। প্রয়োজনে জিডিপি কিছুটা কমবে। তারপরও সবার আগে মূল সমস্যাতে নজর দিতে হবে। ইতোমধ্যেই আমরা ক্ষুদ্র এবং কৃষি ঋণ বিতরণের গুরুত্ব বাড়িয়েছি। এছাড়া পদ্মা সেতু, বিভিন্ন রেল এবং সড়ক পথের উন্নয়নের কারণে অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান সহজ হবে। সুদের হার বৃদ্ধির কারণে নির্বাচনে ব্যাংক থেকে ঋণ কম বের হতে পারে বলেও আশা প্রধান অর্থনীতিবিদের।
তিনি আরও বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক এবং বর্তমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে রোববার একটি সভায় হয়েছে। এই সভায় সুুদের হার বাড়ানোর সিন্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি দেশের বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি, বিনিময় হার, তারল্য ও সুদহার পরিস্থিতি এবং নীতি সুদহারের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ এবং রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে রেমিট্যান্স বাড়ছে। সামনে আরও বাড়বে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হতে অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যের আমদানি ব্যয় মেটানোর ছাড়া কোনো প্রকার ডলার বিক্রি করবে না।
হাবিবুর রহমান বলেন, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ এবং ব্যাংকিং খাতে নন-পারফর্মিং লোন যাতে না বাড়ে সেই বিষয়ে সবাইকে কাজ করতে বলা হয়েছে। বিনিময় হারকে বাজারমুখী করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের চলমান প্রচেষ্টা জোরদারকরণ এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত রাখা। মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করে যাবে।
গত অক্টোবর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ হওয়া মানে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে একজন মানুষের যদি চাল, ডাল, চিনি, তেল, মাছ-মাংসসহ যাবতীয় খাদ্যপণ্য কিনতে ১০০ টাকা খরচ হয়; তাহলে এ বছরের অক্টোবরে একই খাবার কিনতে তার খরচ হয়েছে ১১২ টাকা ৫৬ পয়সা।