দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে আলোচিত ও উদ্বেগজনক সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ কমছেই। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ হিসাবে গত বুধবার দিন শেষে বাংলাদেশের রিজার্ভ ১৯ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ ২৪ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত বৃহস্পতিবার অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর পাশপাশি রিজার্ভের এই তথ্য প্রকাশ করেছে। প্রতি সপ্তাহের শেষ দিন গত বৃহস্পতিবার এই তথ্য প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত সপ্তাহের বুধবার বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক শূন্য দুই বিলিয়ন ডলার।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ কমেছে ২৭ কোটি ডলার। আর ‘গ্রস’ হিসাবে কমেছে ৩৬ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভকে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’ রিজার্ভ বলে দাবি করছে।
সবশেষ গত অক্টোবর মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ৫২বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। সে হিসাবে বিপিএম৬ হিসাবের ১৯ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের কিছু বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।
আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়। গত ১২ জুলাই থেকে আইএমএফের কথামতো রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘গ্রস’ হিসাবের পাশাপাশি বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুসরণ করেও রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ওই দিন ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম-৬ হিসাবে ছিল ২৩ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার। হিসাব বলছে, দুই পদ্ধতিতে রিজার্ভের তথ্য প্রকাশের পর গত পাঁচ মাসে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমেছে ৪ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার। আর ‘গ্রস’ হিসাবে কমেছে ৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার।
১২ জুলাইয়ের আগে শুধু ‘গ্রস’ হিসাবের রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করত বাংলাদেশ ব্যাংক। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে। ওই বছরের ২৪ আগস্ট রিজার্ভ ৪৮ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। এর পর থেকে কমছেই। এক বছর আগে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ৩৩ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে এক বছরে রিজার্ভ কমেছে ৯ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে রিজার্ভের প্রকৃত তথ্য নিয়ে দেশে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। গত ২৮ নভেম্বর ঢাকার প্রথমসারির জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো ‘ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ কমে ১৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
তবে রিজার্ভের এই হিসাব নিয়ে ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিবাদ জানায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ‘রিজার্ভের এই তথ্য সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে ‘গ্রস’বা মোট রিজার্ভ স্থানীয় বিনিয়োগসহ হিসাব করা হয়। অপরদিকে আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী স্থানীয় বিনিয়োগ ব্যতীত হিসাব করা হয়। বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে হিসাব করা রিজার্ভ তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য ও ‘গ্রস’ রিজার্ভ বিনিয়োগ আদায় সাপেক্ষে ব্যবহারযোগ্য।’
প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভবিষ্যতে জনমনে বিভ্রান্তি এড়াতে রিজার্ভের তথ্য পরিবেশনের ক্ষেত্রে অধিকতর সতকর্তা অবলম্বন করতে দেশের সব গণমাধ্যমকে আহ্বান জানায়। গত ৮ নভেম্বর রিজার্ভ থেকে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের ১ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে আসে। বিপিএম৬ হিসাবে রিজার্ভ নামে ১৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।
আমদানি ব্যয়ে ধীরগতি এবং রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের ইতিবাচক ধারার পরও পরও রিজার্ভ বাড়ছে না; উল্টো কমছে। জ্বালানি তেল, সার, খাদ্যপণ্যসহ সরকারের অন্যান্য আমদানি খরচ মেটাতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির কারণেই রিজার্ভ কমছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।
রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস হচ্ছে রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রপ্তানি আয় বেড়েছে ১ দশমিক ৩০ শতাংশ; রেমিটেন্স বেড়েছে দশমিক ১৭ শতাংশ।
আমদানি ব্যয়ের চার মাসের (জুলাই-অক্টোবর) তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, এই চার মাসে আমদানি ব্যয় কমেছে ২০ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
শুক্রবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩
দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে আলোচিত ও উদ্বেগজনক সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ কমছেই। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ হিসাবে গত বুধবার দিন শেষে বাংলাদেশের রিজার্ভ ১৯ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ ২৪ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত বৃহস্পতিবার অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর পাশপাশি রিজার্ভের এই তথ্য প্রকাশ করেছে। প্রতি সপ্তাহের শেষ দিন গত বৃহস্পতিবার এই তথ্য প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত সপ্তাহের বুধবার বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক শূন্য দুই বিলিয়ন ডলার।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ কমেছে ২৭ কোটি ডলার। আর ‘গ্রস’ হিসাবে কমেছে ৩৬ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক বিপিএম-৬ হিসাবের রিজার্ভকে ‘তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য’ রিজার্ভ বলে দাবি করছে।
সবশেষ গত অক্টোবর মাসে পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ৫ দশমিক ৫২বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। সে হিসাবে বিপিএম৬ হিসাবের ১৯ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের কিছু বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে।
আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়। গত ১২ জুলাই থেকে আইএমএফের কথামতো রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘গ্রস’ হিসাবের পাশাপাশি বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুসরণ করেও রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ওই দিন ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। আর বিপিএম-৬ হিসাবে ছিল ২৩ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার। হিসাব বলছে, দুই পদ্ধতিতে রিজার্ভের তথ্য প্রকাশের পর গত পাঁচ মাসে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ কমেছে ৪ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার। আর ‘গ্রস’ হিসাবে কমেছে ৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার।
১২ জুলাইয়ের আগে শুধু ‘গ্রস’ হিসাবের রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করত বাংলাদেশ ব্যাংক। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে। ওই বছরের ২৪ আগস্ট রিজার্ভ ৪৮ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। এর পর থেকে কমছেই। এক বছর আগে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ৩৩ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার। এ হিসাবে এক বছরে রিজার্ভ কমেছে ৯ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে রিজার্ভের প্রকৃত তথ্য নিয়ে দেশে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। গত ২৮ নভেম্বর ঢাকার প্রথমসারির জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো ‘ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ কমে ১৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
তবে রিজার্ভের এই হিসাব নিয়ে ২৯ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিবাদ জানায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ‘রিজার্ভের এই তথ্য সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে ‘গ্রস’বা মোট রিজার্ভ স্থানীয় বিনিয়োগসহ হিসাব করা হয়। অপরদিকে আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী স্থানীয় বিনিয়োগ ব্যতীত হিসাব করা হয়। বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে হিসাব করা রিজার্ভ তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য ও ‘গ্রস’ রিজার্ভ বিনিয়োগ আদায় সাপেক্ষে ব্যবহারযোগ্য।’
প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভবিষ্যতে জনমনে বিভ্রান্তি এড়াতে রিজার্ভের তথ্য পরিবেশনের ক্ষেত্রে অধিকতর সতকর্তা অবলম্বন করতে দেশের সব গণমাধ্যমকে আহ্বান জানায়। গত ৮ নভেম্বর রিজার্ভ থেকে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের ১ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর ‘গ্রস’ হিসাবে রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে আসে। বিপিএম৬ হিসাবে রিজার্ভ নামে ১৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।
আমদানি ব্যয়ে ধীরগতি এবং রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের ইতিবাচক ধারার পরও পরও রিজার্ভ বাড়ছে না; উল্টো কমছে। জ্বালানি তেল, সার, খাদ্যপণ্যসহ সরকারের অন্যান্য আমদানি খরচ মেটাতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির কারণেই রিজার্ভ কমছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।
রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস হচ্ছে রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রপ্তানি আয় বেড়েছে ১ দশমিক ৩০ শতাংশ; রেমিটেন্স বেড়েছে দশমিক ১৭ শতাংশ।
আমদানি ব্যয়ের চার মাসের (জুলাই-অক্টোবর) তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে দেখা যায়, এই চার মাসে আমদানি ব্যয় কমেছে ২০ দশমিক ৫৪ শতাংশ।