একসময় ঘর সাজাতে, বাড়ি তৈরিতে ও অতিথি আপ্যায়নে বিদেশ থেকে সিরামিকের পণ্য আনা হতো। তবে দেশেই এখন বিশ্বমানের সিরামিক তৈরি হচ্ছে। শুধু দেশের চাহিদাই মেটাচ্ছে না, রপ্তানি করছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এ খাতে বর্তমানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাঁচ লাখেরও বেশি দক্ষ লোকবল কাজ করছেন। অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। এক সময়ের ছোট একটি খাত হাটি হাটি পা পা করে অনেক বড় হয়েছে বাংলাদেশে।
গত এক দশকে দেশে সিরামিক পণ্যের বাজারে এসেছে বড় পরিবর্তন। একটি বৃহৎ শিল্পে রূপ নিয়েছে বাংলাদেশের সিরামিক খাত। দেশে গড়ে উঠেছে ৬৮টি সিরামিক ফ্যাক্টরি। সম্প্রতি এ খাতের বর্তমান অবস্থা ও সম্ভাবনা নিয়ে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার কথা জানান পা-ওয়াং সিরামিক ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম মাহবুব আলম। সিরামিক শিল্পের অতীত প্রেক্ষাপট তুলে ধরে এসএম মাহবুব আলম বলেন, এক সময়ে অভিজাত মানুষের চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে সিরামিক পণ্য আমদানি করা হতো। পাকিস্তান আমলে মিরপুরে ১৯৫৮ সালে প্রথম দেশে সিরামিক কারখানা গড়ে উঠে। কিন্তু বিভিন্ন সমস্যার কারণে তা বিকশিত হতে পারেনি। তবে আশির দশকের পর টেবিল সিরামিকে পিপলস, মন্নু সিরামিক, সাইনপুকুর আসার পরে স্থানীয় বাজার শুরু হয়। প্রথমে তাদের অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। ২০০০ সালের আগ পর্যন্ত এভাবে বিভিন্ন সমস্যায় শিরামিককে চলতে হয়েছে। দেশের সিরামিক খাতে বিশেষ করে বেকারত্ব দূর, দক্ষ জনশক্তি তৈরি, আমদানি নির্ভরতা কমানো তথা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে আমাদের প্রতিষ্ঠানটি। পা-ওয়াংয়ের রোমা টাইলস এখন বেশ জনপ্রিয় ব্র্যান্ড। ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ডের এ টাইলস সৃষ্টিশীলতা, আধুনিকতা এবং রুচি ও আভিজাত্যের প্রতীক।
বাংলাদেশে সিরামিকের বাজারের আকার কত বড় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অল্প সময়ে এটার বিকাশ ঘটেছে। ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকটিক্যাল প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। এর ফলে বাংলাদেশের সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি ধীরে ধীরে ভালো অবস্থানের দিকে এগুচ্ছে। সিরামিক ইন্ডাস্ট্রির বেশ কয়েকটি সাবসেক্টর রয়েছে। এগুলো হলো- বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালসের সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি (টাইলস, স্যানিটারিওয়্যার), টেবিল ওয়্যারের সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি, অ্যাডভান্স সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি। বিল্ডিং ম্যাটারিয়ালস বলতে ফ্লোর বা ওয়াল টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার। টেবিলওয়্যার সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি বলতে থালা-বাসন, কাপ-পিরিচ, ডাইনিংয়ে ব্যবহারযোগ্য সিরামিক পণ্য। আর অ্যাডভান্স সিরামিকের মধ্যে রয়েছে টেলিভিশনের পার্টস থেকে কৃত্রিম দাঁতসহ স্পেস ক্রাফটের মতো কিছু স্পর্শকাতর যন্ত্রাংশ।
সিরামিক পণ্য রপ্তানির প্রধান বাধাগুলো চিহ্নিত করে মাহবুব আলম বলেন, এক্ষেত্রে অন্য দেশের তুলনায় আমরা এখনও পিছিয়ে রয়েছি। অন্য দেশের তুলনায় আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটি পৌঁছে দিতে আমাদের খরচ অনেক বেশি হয়। কাঁচামাল আমদানিতে ৩২ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হয়। বিদেশে সরাসরি ও দ্রুত পণ্য পৌঁছানোর যথাযথ কোন ব্যবস্থা নেই। এ মুহূর্তে সিরামিক পণ্যে সবমিলে ৩৮ শতাংশ ট্যাক্স আরোপ বড় বাধা উল্লেখ করে তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ধরুন ১০০ টাকার পণ্যে ৩৮ টাকা সরকারকে ট্যাক্স দিতে হয়। বাকি ৬২ টাকার মধ্যে রয়েছে কাঁচামাল, লোকজনের বেতন, কারখানার খরচ। তারপর লাভের হিসাব। এভাবে বেশি ট্যাক্সের কারণে টেকা মুসকিল। তাই ২০ শতাংশ ট্যাক কমানো দরকার বলে জানান তিনি।
পা-ওয়াং সিরামিক ইন্ডাস্ট্রির বিষয়ে জানতে চাইলে দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রথমে একটু কম করে উৎপাদন করা হচ্ছে। চীনে করোনা সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের দেশের সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিতে তার প্রভাব পড়েছে। কারণ, আমরা বিদেশ থেকে অনেক কাঁচামাল আমদানি করে থাকি। অন্যান্য শিল্পের মতো সিরামিক শিল্পের উৎপাদনও এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। কেউ কেউ তিন মাস পরই অপারেশন শুরু করে দিয়েছে। তবে সরকার ছুটি তুলে নিলে আবার কারখানা চালু করা হয়েছে। স্যানিটারি পণ্য বিশেষ করে টাইলসে আমাদের কোয়ালিটি বিশ্বমানের। পা-ওয়াং সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি রোমা ব্রান্ড-এর লাক্সারিয়াস টাইলস উৎপাদন করে। বিদেশ থেকে যে পণ্যগুলো দেশে আসছে আমরা ঠিক সেই মানের পণ্য উৎপাদন করি। ওয়াটার ট্রিটমেন্টসহ আধুনিক সব প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটানো হয়েছে এখানে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে (পূর্ব পাকিস্তান) প্রথম সিরামিক কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৮ সালে। নাম ছিল তাজমা সিরামিক। তাজমার উৎপাদন খুব সীমিত ছিল। ১৯৬৬ সালে যাত্রা শুরু করে পাকিস্তান সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে নাম পাল্টে পিপলস সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ হয়।
শুক্রবার, ২৩ অক্টোবর ২০২০
একসময় ঘর সাজাতে, বাড়ি তৈরিতে ও অতিথি আপ্যায়নে বিদেশ থেকে সিরামিকের পণ্য আনা হতো। তবে দেশেই এখন বিশ্বমানের সিরামিক তৈরি হচ্ছে। শুধু দেশের চাহিদাই মেটাচ্ছে না, রপ্তানি করছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এ খাতে বর্তমানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাঁচ লাখেরও বেশি দক্ষ লোকবল কাজ করছেন। অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। এক সময়ের ছোট একটি খাত হাটি হাটি পা পা করে অনেক বড় হয়েছে বাংলাদেশে।
গত এক দশকে দেশে সিরামিক পণ্যের বাজারে এসেছে বড় পরিবর্তন। একটি বৃহৎ শিল্পে রূপ নিয়েছে বাংলাদেশের সিরামিক খাত। দেশে গড়ে উঠেছে ৬৮টি সিরামিক ফ্যাক্টরি। সম্প্রতি এ খাতের বর্তমান অবস্থা ও সম্ভাবনা নিয়ে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার কথা জানান পা-ওয়াং সিরামিক ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম মাহবুব আলম। সিরামিক শিল্পের অতীত প্রেক্ষাপট তুলে ধরে এসএম মাহবুব আলম বলেন, এক সময়ে অভিজাত মানুষের চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে সিরামিক পণ্য আমদানি করা হতো। পাকিস্তান আমলে মিরপুরে ১৯৫৮ সালে প্রথম দেশে সিরামিক কারখানা গড়ে উঠে। কিন্তু বিভিন্ন সমস্যার কারণে তা বিকশিত হতে পারেনি। তবে আশির দশকের পর টেবিল সিরামিকে পিপলস, মন্নু সিরামিক, সাইনপুকুর আসার পরে স্থানীয় বাজার শুরু হয়। প্রথমে তাদের অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। ২০০০ সালের আগ পর্যন্ত এভাবে বিভিন্ন সমস্যায় শিরামিককে চলতে হয়েছে। দেশের সিরামিক খাতে বিশেষ করে বেকারত্ব দূর, দক্ষ জনশক্তি তৈরি, আমদানি নির্ভরতা কমানো তথা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে আমাদের প্রতিষ্ঠানটি। পা-ওয়াংয়ের রোমা টাইলস এখন বেশ জনপ্রিয় ব্র্যান্ড। ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ডের এ টাইলস সৃষ্টিশীলতা, আধুনিকতা এবং রুচি ও আভিজাত্যের প্রতীক।
বাংলাদেশে সিরামিকের বাজারের আকার কত বড় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অল্প সময়ে এটার বিকাশ ঘটেছে। ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকটিক্যাল প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। এর ফলে বাংলাদেশের সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি ধীরে ধীরে ভালো অবস্থানের দিকে এগুচ্ছে। সিরামিক ইন্ডাস্ট্রির বেশ কয়েকটি সাবসেক্টর রয়েছে। এগুলো হলো- বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালসের সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি (টাইলস, স্যানিটারিওয়্যার), টেবিল ওয়্যারের সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি, অ্যাডভান্স সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি। বিল্ডিং ম্যাটারিয়ালস বলতে ফ্লোর বা ওয়াল টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার। টেবিলওয়্যার সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি বলতে থালা-বাসন, কাপ-পিরিচ, ডাইনিংয়ে ব্যবহারযোগ্য সিরামিক পণ্য। আর অ্যাডভান্স সিরামিকের মধ্যে রয়েছে টেলিভিশনের পার্টস থেকে কৃত্রিম দাঁতসহ স্পেস ক্রাফটের মতো কিছু স্পর্শকাতর যন্ত্রাংশ।
সিরামিক পণ্য রপ্তানির প্রধান বাধাগুলো চিহ্নিত করে মাহবুব আলম বলেন, এক্ষেত্রে অন্য দেশের তুলনায় আমরা এখনও পিছিয়ে রয়েছি। অন্য দেশের তুলনায় আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটি পৌঁছে দিতে আমাদের খরচ অনেক বেশি হয়। কাঁচামাল আমদানিতে ৩২ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হয়। বিদেশে সরাসরি ও দ্রুত পণ্য পৌঁছানোর যথাযথ কোন ব্যবস্থা নেই। এ মুহূর্তে সিরামিক পণ্যে সবমিলে ৩৮ শতাংশ ট্যাক্স আরোপ বড় বাধা উল্লেখ করে তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ধরুন ১০০ টাকার পণ্যে ৩৮ টাকা সরকারকে ট্যাক্স দিতে হয়। বাকি ৬২ টাকার মধ্যে রয়েছে কাঁচামাল, লোকজনের বেতন, কারখানার খরচ। তারপর লাভের হিসাব। এভাবে বেশি ট্যাক্সের কারণে টেকা মুসকিল। তাই ২০ শতাংশ ট্যাক কমানো দরকার বলে জানান তিনি।
পা-ওয়াং সিরামিক ইন্ডাস্ট্রির বিষয়ে জানতে চাইলে দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রথমে একটু কম করে উৎপাদন করা হচ্ছে। চীনে করোনা সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের দেশের সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিতে তার প্রভাব পড়েছে। কারণ, আমরা বিদেশ থেকে অনেক কাঁচামাল আমদানি করে থাকি। অন্যান্য শিল্পের মতো সিরামিক শিল্পের উৎপাদনও এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। কেউ কেউ তিন মাস পরই অপারেশন শুরু করে দিয়েছে। তবে সরকার ছুটি তুলে নিলে আবার কারখানা চালু করা হয়েছে। স্যানিটারি পণ্য বিশেষ করে টাইলসে আমাদের কোয়ালিটি বিশ্বমানের। পা-ওয়াং সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি রোমা ব্রান্ড-এর লাক্সারিয়াস টাইলস উৎপাদন করে। বিদেশ থেকে যে পণ্যগুলো দেশে আসছে আমরা ঠিক সেই মানের পণ্য উৎপাদন করি। ওয়াটার ট্রিটমেন্টসহ আধুনিক সব প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটানো হয়েছে এখানে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে (পূর্ব পাকিস্তান) প্রথম সিরামিক কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৮ সালে। নাম ছিল তাজমা সিরামিক। তাজমার উৎপাদন খুব সীমিত ছিল। ১৯৬৬ সালে যাত্রা শুরু করে পাকিস্তান সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে নাম পাল্টে পিপলস সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ হয়।