alt

অর্থ-বাণিজ্য

তিন মাসে খেলাপি ঋণ কমেছে, তবে ২০২২ সালের হিসেবে এখনও বেশি

রমজান আলী : সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

তিন মাসে খেলাপি ঋণ কমলোও ২০২২ সালের চেয়ে এখনো বেশি। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাড়িয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। যা সেপ্টেম্বরে ছিল এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে খেলাপি ঋণ কমেছে ৯ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা। শতাংশে এসে দাড়িয়েছে ৯ শতাংশে। যা আগে ছিল সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

২০২২ সালে ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ছিল ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। এক বছরে হিসাবে খেলাপি ঋণ বেড়েছে শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে হিসাব দিচ্ছে, তা আবার প্রকৃত তথ্য নয়। কারণ, প্রকৃত খেলাপি ঋণ আরও অনেক বেশি। মামলার কারণে অনেক ঋণকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। আবার অবলোপন করা ঋণও খেলাপির হিসাবে নেই।

খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, আর্থিক প্রতিবেদন ভালো দেখাতে বছরের শেষ তিন মাসে ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ আদায়ে জোর দেয়। যে কারণে প্রতি বছরই সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় ডিসেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ কমতে দেখা যায়। আবার আন্তার্জাতিক মুদ্রা তহবিলেরও (আইএমএফ) খেলাপি ঋণ কমাতে শর্ত রয়েছে। সেই শর্ত পরিপালনে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তাই ব্যাংকগুলো আগে থেকেই খেলাপি ঋণ কমাতে প্রস্তুতি নিয়েছে। তারও প্রভাভে কিছুটা কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ৩ মাস পর ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের হিসাবে সেটা কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ হাজার কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৯ শতাংশ। অর্থাৎ ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে এসে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমেছে ৯ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। আগের বছরের, অর্থাৎ ২০২২ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা বা ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। সেই হিসাবে অবশ্য এক বছরে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২৪ হাজার ৯৭৭ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে।

স¤প্রতি খেলাপি ঋণ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক রোডম্যাপ বা পথনকশা ঘোষণা করেছে। এই পথনকশা বা রোডম্যাপের মাধ্যমে আগামী ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে ব্যাংক খাতের সার্বিক খেলাপি ঋণ ৮ শতাংশের নিচে নামানো হবে, যা এখন ৯ শতাংশে রয়েছে। আর রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ এবং বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে, যা ডিসেম্বর শেষে যথাক্রমে ২০ দশমিক ৯৯ ও ৫ দশমিক ৯৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ২০ দশমিক ৯৯ শতাংশ। সেপ্টেম্বর শেষে এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ছিল ৬৫ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। তিন মাসে সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে ১৬ কোটি টাকা।

গত বছরের শেষে তিন মাসে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ কমেছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮১ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ০৪ শতাংশ। ডিসেম্বরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ। তিন মাসে কমেছে ১০ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা। আর বিদেশি ব্যাংকে ৮৫ কোটি টাকা কমে ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২০১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪ দশমিক ৮২ শতাংশ। তবে বিশেষায়িত ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক সংবাদকে বলেন, খেলাপি ঋণ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি রোডম্যাপ নিয়েছে। ইতিমধ্যে কিছু পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে পরিচালকদের নীতিমাল কঠোর করা হয়েছে। যাতে ঋণ শৃঙ্খলা বজায় থাকে এবং আমানতকারী ও শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ সংরক্ষণ হয়। আর অডিট কমিটির চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র পরিচালক মধ্যে থেকে থাকতে হবে। এতে করে অডিট কমিটির নিয়ন্ত্রণ আরও শক্তিশালী হবে। এমন পদক্ষেপ আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। ফলে আগামীতে খেলাপি ঋণের লাগব টানা যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা। তিন মাসে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৫২ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা।

বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণের স্থিতি রয়েছে বেসরকারি খাতের ব্যাংকে। ডিসেম্বর শেষে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৯৬ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। রাষ্ট্রমালিকানাধী ব্যাংকের ৩ লাখ ১৩ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা। বিদেশি ব্যাংকের ৬৬ হাজার ৪৫৬ কোটি এবং বিশেষায়িত ব্যাংকের ৪০ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে।

তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাব্কে উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে তথ্য দেয়, বাস্তবে তা আরো বেশি। খেলাপি হওয়ার পরে পুনঃতফসিল করা ঋণও খেলাপি, কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক তা দেখায় না। খেলাপি হওয়ার পরে গ্রাহক উচ্চ আদালতে গিয়ে স্থিতিবস্থার আদেশ নিয়ে আসে। ওই ঋণকেও খেলাপি দেখানো হয় না। আবার কোনো ঋণ খেলাপি হলে অবলোপন করতে পারে বাণিজ্যিক ব্যাংক। অবলোপন বা রাইট অফ হচ্ছে মন্দ মানের ঋণকে ব্যাংকের স্থিতিপত্র থেকে (ব্যালেন্স শিট) বাদ দিয়ে পৃথক হিসাবে রাখা। বর্তমানে অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন শেষে বিভিন্ন ব্যাংকের ঋণ আদায়ে অর্থঋণ আদালতে দায়ের করা মামলার মধ্যে নিস্পত্তির অপেক্ষায় ছিল ৭২ হাজার ৭১২টি মামলা। এসব মামালায় আটকা আছে এক লাখ ৭৮ হাজার ৭০১ কোটি টাকা।

এসব ঋণ খেলাপি হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক তা হিসাবে দেখায় না। এই তথ্য যোগ করলে প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরো বাড়বে জানান মির্জ্জা আজিজ।

ছবি

স্থানীয় শিল্পে খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার

ছবি

তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার চান টেক্সটাইল মালিকরা

বাজার মূলধনে যোগ হলো সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা

বিকাশ, রকেট, নগদসহ এমএফএসের মাধ্যমে শুল্ক-কর জমা দেয়া যাবে

ছবি

ব্রাদার পার্টনার ডে ২০২৫ অনুষ্ঠিত

ছবি

বিকাশ-রকেট-নগদে কাস্টমস শুল্ক পরিশোধ সুবিধা চালু, ঘরে বসেই পণ্য খালাসের পথ খুলল

ছবি

তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার চান ব্যবসায়ীরা

ছবি

কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে মাশুল বাড়বে না

সেমিকন্ডাক্টর খাতে ১০ বছরের কর অব্যাহতি ও শুল্ক ছাড়ের সুপারিশ

ছবি

প্রথম প্রান্তিকে বিমাদাবি নিষ্পত্তিতে গার্ডিয়ান লাইফ ইনস্যুরেন্সের ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’

৮৫ ব্রোকারেজ হাউসকে আগস্টের মধ্যে চালু করতে হবে ব্যাক অফিস সফটওয়্যার

ছবি

প্রসাধনী পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধি প্রত্যাহারের দাবি

ছবি

স্বর্ণের দাম আবার বাড়লো

ছবি

৮৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এক লাখ ১০ হাজার টন সার কিনবে সরকার

এফবিসিসিআই নির্বাচন: সময় বাড়লো ৪৫ দিন

ছবি

পাট খাতের উন্নয়নে ‘সাসটেইনেবল মার্কেট এক্সেস বুটক্যাম্প’ কর্মসূচি শুরু

এক বছরে ভারতে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন নেমেছে এক-তৃতীয়াংশে

৫ দিন বন্ধ থাকবে রূপালী ও এনসিসি ব্যাংকের সব কার্যক্রম

ছবি

ডলারের বিপরীতে টাকায় ঋণ নেয়ার সুযোগ

গত অর্থবছরে রফতানি আয় ৪৮ বিলিয়ন ডলার

নবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার

ছবি

ব্যাগেজ রুলসে মোবাইল ও স্বর্ণ আনায় বড় ছাড়

ছবি

এনবিআরের আন্দোলনে অংশ নেওয়া আরও ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তের কথা জানালো দুদক

ছবি

প্রবাসী আয়ে রেকর্ড, রপ্তানিতে বড় প্রবৃদ্ধি

ছবি

দেশের ৩২ বীমা কোম্পানি উচ্চ ঝুঁকিতে: আইডিআরএ চেয়ারম্যান

ছবি

বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ৭ শতাংশেরও কম

ছবি

ডিএসইর নতুন সিওও মোহাম্মদ আসাদুর রহমান

ছবি

অর্থবছরের প্রথম দিন ঊর্ধ্বমুখী শেয়ারবাজার

ছবি

ইলিশের দাম নির্ধারণ করে দেবে সরকার

ছবি

এনবিআরে আন্দোলন: এবার চার কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠালো সরকার

ছবি

৭৩ ধাপ এগিয়ে থাকা মায়ানমারকে হারিয়ে ইতিহাসের পথে বাংলাদেশের মেয়েরা

বিইআরসি ঘোষণা করল বেসরকারি এলপিজির নতুন দাম, ১২ কেজিতে ৩৯ টাকা কমতি

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানি আসছে, অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্বে নৌবাহিনী

ছবি

নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ে এফবিসিসিআই নির্বাচন পিছিয়ে গেল

ছবি

রেকর্ড রেমিটেন্সে শেষ হলো অর্থবছর, প্রথমবারের মতো আয় ছাড়াল ৩০ বিলিয়ন ডলার

ছবি

‘শাটডাউন’ কর্মসূচিতে অংশ: চট্টগ্রাম কাস্টম কমিশনার বরখাস্ত

tab

অর্থ-বাণিজ্য

তিন মাসে খেলাপি ঋণ কমেছে, তবে ২০২২ সালের হিসেবে এখনও বেশি

রমজান আলী

সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

তিন মাসে খেলাপি ঋণ কমলোও ২০২২ সালের চেয়ে এখনো বেশি। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাড়িয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। যা সেপ্টেম্বরে ছিল এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে খেলাপি ঋণ কমেছে ৯ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা। শতাংশে এসে দাড়িয়েছে ৯ শতাংশে। যা আগে ছিল সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

২০২২ সালে ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ছিল ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। এক বছরে হিসাবে খেলাপি ঋণ বেড়েছে শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে হিসাব দিচ্ছে, তা আবার প্রকৃত তথ্য নয়। কারণ, প্রকৃত খেলাপি ঋণ আরও অনেক বেশি। মামলার কারণে অনেক ঋণকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। আবার অবলোপন করা ঋণও খেলাপির হিসাবে নেই।

খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, আর্থিক প্রতিবেদন ভালো দেখাতে বছরের শেষ তিন মাসে ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ আদায়ে জোর দেয়। যে কারণে প্রতি বছরই সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় ডিসেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ কমতে দেখা যায়। আবার আন্তার্জাতিক মুদ্রা তহবিলেরও (আইএমএফ) খেলাপি ঋণ কমাতে শর্ত রয়েছে। সেই শর্ত পরিপালনে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তাই ব্যাংকগুলো আগে থেকেই খেলাপি ঋণ কমাতে প্রস্তুতি নিয়েছে। তারও প্রভাভে কিছুটা কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ৩ মাস পর ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের হিসাবে সেটা কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ হাজার কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৯ শতাংশ। অর্থাৎ ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে এসে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমেছে ৯ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। আগের বছরের, অর্থাৎ ২০২২ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা বা ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। সেই হিসাবে অবশ্য এক বছরে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২৪ হাজার ৯৭৭ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে।

স¤প্রতি খেলাপি ঋণ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক রোডম্যাপ বা পথনকশা ঘোষণা করেছে। এই পথনকশা বা রোডম্যাপের মাধ্যমে আগামী ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে ব্যাংক খাতের সার্বিক খেলাপি ঋণ ৮ শতাংশের নিচে নামানো হবে, যা এখন ৯ শতাংশে রয়েছে। আর রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ এবং বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে, যা ডিসেম্বর শেষে যথাক্রমে ২০ দশমিক ৯৯ ও ৫ দশমিক ৯৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ২০ দশমিক ৯৯ শতাংশ। সেপ্টেম্বর শেষে এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ছিল ৬৫ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। তিন মাসে সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমেছে ১৬ কোটি টাকা।

গত বছরের শেষে তিন মাসে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ কমেছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮১ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ০৪ শতাংশ। ডিসেম্বরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ। তিন মাসে কমেছে ১০ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা। আর বিদেশি ব্যাংকে ৮৫ কোটি টাকা কমে ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২০১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪ দশমিক ৮২ শতাংশ। তবে বিশেষায়িত ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক সংবাদকে বলেন, খেলাপি ঋণ কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি রোডম্যাপ নিয়েছে। ইতিমধ্যে কিছু পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে পরিচালকদের নীতিমাল কঠোর করা হয়েছে। যাতে ঋণ শৃঙ্খলা বজায় থাকে এবং আমানতকারী ও শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ সংরক্ষণ হয়। আর অডিট কমিটির চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র পরিচালক মধ্যে থেকে থাকতে হবে। এতে করে অডিট কমিটির নিয়ন্ত্রণ আরও শক্তিশালী হবে। এমন পদক্ষেপ আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। ফলে আগামীতে খেলাপি ঋণের লাগব টানা যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ১৭ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা, যা সেপ্টেম্বরে ছিল ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা। তিন মাসে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৫২ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা।

বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণের স্থিতি রয়েছে বেসরকারি খাতের ব্যাংকে। ডিসেম্বর শেষে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৯৬ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। রাষ্ট্রমালিকানাধী ব্যাংকের ৩ লাখ ১৩ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা। বিদেশি ব্যাংকের ৬৬ হাজার ৪৫৬ কোটি এবং বিশেষায়িত ব্যাংকের ৪০ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে।

তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাব্কে উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে তথ্য দেয়, বাস্তবে তা আরো বেশি। খেলাপি হওয়ার পরে পুনঃতফসিল করা ঋণও খেলাপি, কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক তা দেখায় না। খেলাপি হওয়ার পরে গ্রাহক উচ্চ আদালতে গিয়ে স্থিতিবস্থার আদেশ নিয়ে আসে। ওই ঋণকেও খেলাপি দেখানো হয় না। আবার কোনো ঋণ খেলাপি হলে অবলোপন করতে পারে বাণিজ্যিক ব্যাংক। অবলোপন বা রাইট অফ হচ্ছে মন্দ মানের ঋণকে ব্যাংকের স্থিতিপত্র থেকে (ব্যালেন্স শিট) বাদ দিয়ে পৃথক হিসাবে রাখা। বর্তমানে অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন শেষে বিভিন্ন ব্যাংকের ঋণ আদায়ে অর্থঋণ আদালতে দায়ের করা মামলার মধ্যে নিস্পত্তির অপেক্ষায় ছিল ৭২ হাজার ৭১২টি মামলা। এসব মামালায় আটকা আছে এক লাখ ৭৮ হাজার ৭০১ কোটি টাকা।

এসব ঋণ খেলাপি হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক তা হিসাবে দেখায় না। এই তথ্য যোগ করলে প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরো বাড়বে জানান মির্জ্জা আজিজ।

back to top