‘গতবছরও বেচাকেনা ভালো ছিল না। আমরা আশা করছিলাম, এবার হয়তো ঘুরে দাঁড়াতে পারবো। কিন্তু সেই আশা পূরণ হলো না। এবারের বেচাকেনা গতবছরের চেয়েও কম।’ এবারের পার্বত্য মেলা বেচাকেনার বিষয়ে সংবাদকে বলছিলেন বন্যা চাকমা নামের একজন উদ্যোক্তা। তার স্টলের নাম মাইসা হ্যান্ডি ক্র্যাফট। শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, ফ্রিপিছসহ নিজেদের তৈরি বিভিন্ন ধরনের পোশাক পরিচ্ছদ বিক্রি করেন তিনি।
একই কথা বলছিলেন প্রায় ১১ বছর ধরে মেলায় অংশ নেওয়া প্রবীণ উদ্যোক্তা নন্দিতা দেওয়ান। এবার তার স্টলেও বেচাকেনা ভালো হয়নি। তাই তার মনেও দুশ্চিন্তার ছাপ। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘যে বছর থেকে এই মেলার আয়োজন শুরু হয়েছিল সে বছর থেকেই আমি মেলায় অংশগ্রহণ করে আসছি। এবার আমার ব্যবসাই যেহেতু ভালো হয়নি সেহেতু অন্যদের ব্যবসাও ভালো হয়নি সেটা নিশ্চিত করে বলা যায়। গতবছর ভালো হয়নি। ধারণা ছিল এবার হয়তো ভালো হবে। কিন্তু হলো না।’
বিক্রি কম হওয়ায় পণ্যের দাম কমিয়ে দিয়েছেন জানিয়ে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘যে শাড়িটা আমরা ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করি। সেটা মেলায় ১৮শ’ টাকায় বিক্রি করলাম। তারপরও গ্রাহক নাই। অনেকে আসছে ঘুরে ফিরে দেখে চলে যাচ্ছে। কেউ আবার নেড়েচেড়ে দেখে রেখে দিচ্ছে।’
এভাবে এই বছরের মেলায় চিত্র তুলে ধরছিলেন মেলায় অংশ নেওয়া উদ্যোক্তারা।
রাজধানীর বেইলি রোডে চার দিনব্যাপী পার্বত্য মেলা আয়োজন করা হয়। গতকাল ছিল মেলার শেষ দিন। প্রতিবছর আয়োজিত এই মেলা যেন নগরের বুকে এক টুকরো পাহাড়ি জনপদের মিলনমেলা। পাহাড়ি খাবার, পোশাকসহ হরেক রকম পণ্যের সমাহার ছিল মেলায়। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বেইলি রোডে অবস্থিত শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সের পার্বত্য চট্টগ্রাম ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রে এই মেলা শুরু হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি।
মেলায় দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানসহ মোট ৮৫টি স্টল অংশ নেয়। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর হ্যান্ডলুমে তৈরি গামছা, লুঙ্গি, ব্যাগ ও বাঁশের তৈরি তৈজসপত্র রয়েছে মেলায়। এছাড়া রয়েছে হাতে বোনা শাল, চাদরসহ বিভিন্ন বয়নশিল্পের পণ্য।
স্টলে স্টলে ছিল বিন্নি চাল, আনারস, বাংলা কলা, কাজুবাদাম, ভুট্টা, লাল আলু, পাহাড়ি খাঁটি মধু, পাহাড়ি হলুদ, মরিচ গুঁড়া, মেটে আলু, বল সুন্দরী কুল, ওল কচু, বাউকুল ও মিষ্টি ভুট্টার মতো সবজি ও ফল। মিনিয়েচার জুম ঘর, জুমচাষের তুলা, কাসাবা নামের দুর্লভ সবজি, জুম মরিচ ও পাহাড়ি কলার দেখা মিলেছে স্টলে।
মেলায় আরও ছিল রুপার আদিবাসী গয়না, হ্যান্ডলুম শাড়ি, থামি দিয়ে তৈরি স্কার্ট ও টি-শার্ট। খাবারের স্টলে পাচনের পাশাপাশি মিলছে পাহাড়ি নানা খাবার। এর মধ্যে রয়েছে মুরগি ভর্তা, পাহাড়ি বিভিন্ন সবজি, বিন্নি চালের পিঠা, শামুকসহ আরও অনেক কিছু। বাঁশের কাপের চা ছিল মেলায়। এছাড়া মেলায় ছিল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের সাংস্কৃতিক আয়োজন।
পার্বত্য অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্টল দিয়েছিলেন নিরব চাকমা। কেমন ব্যবসা হলো জানতে চাইলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘মোটামুটি ভালো। তবে যেমন প্রত্যাশা করেছিলাম তেমন হয়নি। বর্তমানে সব জিনিসের দাম বাড়ছে। এজন্য খাবারের দামও বাড়াতে হচ্ছে। আবার বেশি দাম হলে ক্রেতারা খরচ কমানোর জন্য কম খাচ্ছে। এতে আমাদের ব্যবসাও আশানুরুপ হচ্ছে না।’এবার বেচাকেনা কম কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের মেলার পাশাপাশি বাণিজ্যমেলা ও বইমেলা হচ্ছে। দুটি বড় মেলা হওয়ায় হয়তো আমাদের মেলায় লোক সমাগম কম হয়েছে। আমার ধারনা এমন হতে পারে।’
১৪ ফেব্রুয়ারি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক ও সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ মেলা উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, ‘পার্বত্য জেলাগুলোর নৈসর্গিক সৌন্দর্য সমুন্নত রাখা ও পর্যটনশিল্পের প্রসারেও সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সরকারের সময়োচিত উদ্যোগ গ্রহণের ফলে পার্বত্য জেলাগুলো আজ কোনো পিছিয়ে পড়া জনপদ নয়। দেশের সার্বিক অগ্রযাত্রায় এ অঞ্চলের জনগণ সম-অংশীদার। তিন পার্বত্য জেলায় উৎপাদিত বিভিন্ন কৃষিপণ্য, হস্তশিল্প, ঐতিহ্যবাহী কোমরতাঁতে বোনা পণ্য, বিভিন্ন মৌসুমি ফল, ঐতিহ্যবাহী পার্বত্য খাবার মেলার আকর্ষণকে অধিকতর বাড়িয়ে তুলেছে।’
শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
‘গতবছরও বেচাকেনা ভালো ছিল না। আমরা আশা করছিলাম, এবার হয়তো ঘুরে দাঁড়াতে পারবো। কিন্তু সেই আশা পূরণ হলো না। এবারের বেচাকেনা গতবছরের চেয়েও কম।’ এবারের পার্বত্য মেলা বেচাকেনার বিষয়ে সংবাদকে বলছিলেন বন্যা চাকমা নামের একজন উদ্যোক্তা। তার স্টলের নাম মাইসা হ্যান্ডি ক্র্যাফট। শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, ফ্রিপিছসহ নিজেদের তৈরি বিভিন্ন ধরনের পোশাক পরিচ্ছদ বিক্রি করেন তিনি।
একই কথা বলছিলেন প্রায় ১১ বছর ধরে মেলায় অংশ নেওয়া প্রবীণ উদ্যোক্তা নন্দিতা দেওয়ান। এবার তার স্টলেও বেচাকেনা ভালো হয়নি। তাই তার মনেও দুশ্চিন্তার ছাপ। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘যে বছর থেকে এই মেলার আয়োজন শুরু হয়েছিল সে বছর থেকেই আমি মেলায় অংশগ্রহণ করে আসছি। এবার আমার ব্যবসাই যেহেতু ভালো হয়নি সেহেতু অন্যদের ব্যবসাও ভালো হয়নি সেটা নিশ্চিত করে বলা যায়। গতবছর ভালো হয়নি। ধারণা ছিল এবার হয়তো ভালো হবে। কিন্তু হলো না।’
বিক্রি কম হওয়ায় পণ্যের দাম কমিয়ে দিয়েছেন জানিয়ে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘যে শাড়িটা আমরা ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করি। সেটা মেলায় ১৮শ’ টাকায় বিক্রি করলাম। তারপরও গ্রাহক নাই। অনেকে আসছে ঘুরে ফিরে দেখে চলে যাচ্ছে। কেউ আবার নেড়েচেড়ে দেখে রেখে দিচ্ছে।’
এভাবে এই বছরের মেলায় চিত্র তুলে ধরছিলেন মেলায় অংশ নেওয়া উদ্যোক্তারা।
রাজধানীর বেইলি রোডে চার দিনব্যাপী পার্বত্য মেলা আয়োজন করা হয়। গতকাল ছিল মেলার শেষ দিন। প্রতিবছর আয়োজিত এই মেলা যেন নগরের বুকে এক টুকরো পাহাড়ি জনপদের মিলনমেলা। পাহাড়ি খাবার, পোশাকসহ হরেক রকম পণ্যের সমাহার ছিল মেলায়। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বেইলি রোডে অবস্থিত শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সের পার্বত্য চট্টগ্রাম ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রে এই মেলা শুরু হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি।
মেলায় দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানসহ মোট ৮৫টি স্টল অংশ নেয়। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর হ্যান্ডলুমে তৈরি গামছা, লুঙ্গি, ব্যাগ ও বাঁশের তৈরি তৈজসপত্র রয়েছে মেলায়। এছাড়া রয়েছে হাতে বোনা শাল, চাদরসহ বিভিন্ন বয়নশিল্পের পণ্য।
স্টলে স্টলে ছিল বিন্নি চাল, আনারস, বাংলা কলা, কাজুবাদাম, ভুট্টা, লাল আলু, পাহাড়ি খাঁটি মধু, পাহাড়ি হলুদ, মরিচ গুঁড়া, মেটে আলু, বল সুন্দরী কুল, ওল কচু, বাউকুল ও মিষ্টি ভুট্টার মতো সবজি ও ফল। মিনিয়েচার জুম ঘর, জুমচাষের তুলা, কাসাবা নামের দুর্লভ সবজি, জুম মরিচ ও পাহাড়ি কলার দেখা মিলেছে স্টলে।
মেলায় আরও ছিল রুপার আদিবাসী গয়না, হ্যান্ডলুম শাড়ি, থামি দিয়ে তৈরি স্কার্ট ও টি-শার্ট। খাবারের স্টলে পাচনের পাশাপাশি মিলছে পাহাড়ি নানা খাবার। এর মধ্যে রয়েছে মুরগি ভর্তা, পাহাড়ি বিভিন্ন সবজি, বিন্নি চালের পিঠা, শামুকসহ আরও অনেক কিছু। বাঁশের কাপের চা ছিল মেলায়। এছাড়া মেলায় ছিল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের সাংস্কৃতিক আয়োজন।
পার্বত্য অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্টল দিয়েছিলেন নিরব চাকমা। কেমন ব্যবসা হলো জানতে চাইলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘মোটামুটি ভালো। তবে যেমন প্রত্যাশা করেছিলাম তেমন হয়নি। বর্তমানে সব জিনিসের দাম বাড়ছে। এজন্য খাবারের দামও বাড়াতে হচ্ছে। আবার বেশি দাম হলে ক্রেতারা খরচ কমানোর জন্য কম খাচ্ছে। এতে আমাদের ব্যবসাও আশানুরুপ হচ্ছে না।’এবার বেচাকেনা কম কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের মেলার পাশাপাশি বাণিজ্যমেলা ও বইমেলা হচ্ছে। দুটি বড় মেলা হওয়ায় হয়তো আমাদের মেলায় লোক সমাগম কম হয়েছে। আমার ধারনা এমন হতে পারে।’
১৪ ফেব্রুয়ারি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক ও সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ মেলা উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন, ‘পার্বত্য জেলাগুলোর নৈসর্গিক সৌন্দর্য সমুন্নত রাখা ও পর্যটনশিল্পের প্রসারেও সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সরকারের সময়োচিত উদ্যোগ গ্রহণের ফলে পার্বত্য জেলাগুলো আজ কোনো পিছিয়ে পড়া জনপদ নয়। দেশের সার্বিক অগ্রযাত্রায় এ অঞ্চলের জনগণ সম-অংশীদার। তিন পার্বত্য জেলায় উৎপাদিত বিভিন্ন কৃষিপণ্য, হস্তশিল্প, ঐতিহ্যবাহী কোমরতাঁতে বোনা পণ্য, বিভিন্ন মৌসুমি ফল, ঐতিহ্যবাহী পার্বত্য খাবার মেলার আকর্ষণকে অধিকতর বাড়িয়ে তুলেছে।’