সেদ্ধ চাল রপ্তানিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়।
দেশের বাজারে সরবরাহ ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত বছরের আগস্টে চাল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ওই সময় বলা হয়েছিল, চলতি বছরের অর্থাৎ মার্চ মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত এই শুল্ক জারি থাকবে। কিন্তু গতকাল বুধবার জানানো হয়, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এই শুল্ক জারি থাকবে। খবর ইকোনমিক টাইমস ও এনডিটিভির।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো দুই বছর ধরে ভারতের মানুষও উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে রয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে ভারতের খুচরা মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ১ শতাংশে নামলেও খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৩ শতাংশ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, চলতি বছর লোকসভা নির্বাচনের আগে ভারতের ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদি সরকার বেশ কিছু ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও তাদের অস্বস্তির জায়গা একটি। সেটা হলো বাজারে পণ্যের দাম। সে জন্য পেঁয়াজের পাশাপাশি বাসমতী ভিন্ন অন্যান্য সাদা চালের রপ্তানিতে শুল্ক আরোপ করেছে সরকার। এক সময় টমেটো বিক্রি হয়েছে সরকারি বিপণি থেকে। খোলাবাজারে বিক্রির জন্য সরকারি গুদামে শস্যের মজুতও বাড়ানো হচ্ছে।
চাল রপ্তানিতে শুল্ক আরোপ করা হলেও চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল মোদি সরকার। গত মঙ্গলবার তারা আবার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, সেই সময় এগিয়ে আনার প্রশ্ন নেই, বরং নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আরও বাড়ানো হতে পারে।
ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর, ভারতের বাজারে সম্প্রতি এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে যে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হচ্ছে। এর জেরে ভারতের বৃহত্তম পেঁয়াজ বাজার মহারাষ্ট্রের লাসালগাঁওয়ের পাইকারি বাজারে মাত্র দুই দিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম ৪০ শতাংশের বেশি বেড়ে যায়।
১৭ ফেব্রুয়ারি প্রতি কুইন্টাল পেঁয়াজের দাম ছিল ১ হাজার ২৮০ রুপি; ১৯ ফেব্রুয়ারি তা ১ হাজার ৮০০ রুপিতে উঠে যায়।
পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, নাসিক থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি শুরু হলে ভবিষ্যতে পেঁয়াজের পাইকারি ও খুচরা দাম বাড়তে পারে। এ ধরনের গুজব যাতে আর বাজারে ছড়াতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে কোমর বেঁধে নেমেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় ক্রেতা সুরক্ষা সচিব রোহিত কুমার সিংহ ভারতের গণমাধ্যমকে বলেছেন, পেঁয়াজের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়নি এবং সেই ব্যবস্থায় পরিবর্তনও আনা হয়নি।
সামগ্রিকভাবে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বাংলাদেশসহ ছয় দেশে সীমিত পরিমাণে পেঁয়াজ রপ্তানি করবে বলে জানিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, এসব দেশে সরকারি পর্যায়ে (জিটুজি) পেঁয়াজ রপ্তানি করা হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে দেশটির কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সংবাদে বলা হয়েছে। তবে কী পরিমাণে পেঁয়াজ রপ্তানি হবে, কিংবা কবে থেকে রপ্তানি হবে, সে ব্যাপারে ভারতীয় গণমাধ্যম কিছু জানাতে পারেনি।
যেসব দেশে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি করবে সেই দেশগুলো হলো বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মরিশাস, বাহরাইন, ভুটান ও নেপাল।
বাংলাদেশ চাহিদা মেটাতে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করে প্রতিবছর। রোজার সময় দেশে পেঁয়াজের চাহিদা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেড়ে যায়। এ অবস্থায় রোজার আগে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ এবং এক লাখ টন চিনি যাতে বাংলাদেশ পায়, সেজন্য সাম্প্রতিক ভারত সফরে আলোচনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
এরপর গত রোববার এক বৈঠকে বাংলাদেশসহ ছয় দেশে সীমিত পরিসরে পেঁয়াজ বিক্রির অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রীদের একটি কমিটি।
কিন্তু তাতে ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি উঠে যাচ্ছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে এবং পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম এক লাফে ৪০ শতাংশ বেড়ে যায়। ১৭ ফেব্রুয়ারি যেখানে প্রতি কুইন্টাল পেঁয়াজের দাম ছিল ১২৮০ রুপি, ১৯ ফেব্রুয়ারি তা উঠে যায় ১৮০০ রুপিতে।
এ পরিস্থিতিতে সরকারের অবস্থান তুলে ধরে ভারতের ভোক্তা সুরক্ষা সচিব রোহিত কুমার সিং মঙ্গলবার বলেন, পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়নি এবং ৩১ মার্চের আগে তা তোলার কোনো সম্ভাবনাও নেই। দেশের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রেখে দাম ভোক্তার নাগালে রাখার ওপরই সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।
ইকোনমিক টাইমস লিখেছে, মহারাষ্ট্রে এবার রবি মৌসুমে পেঁয়াজের চাষ কম হয়েছে। ফলে উৎপাদনও হবে অন্য সময়ের তুলনায় কম। সে কারণে ৩১ মার্চের পরও পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা হতে পারে।
বিশ্বের অনেক দেশের মত ভারতকেও গত দুই বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়তে হচ্ছে। আসন্ন নির্বাচনের আগে নিত্যপণ্যের দাম হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদী সরকারের মাথা ব্যথার কারণ।
তবে ভারতের পরিসংখ্যান দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, নতুন বছরের শুরুতে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। জানুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতির হার হয়েছে ৫ দশমিক ১ শতাংশ, যা ডিসেম্বরে ৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ ছিল।
বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
সেদ্ধ চাল রপ্তানিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়।
দেশের বাজারে সরবরাহ ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত বছরের আগস্টে চাল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ওই সময় বলা হয়েছিল, চলতি বছরের অর্থাৎ মার্চ মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত এই শুল্ক জারি থাকবে। কিন্তু গতকাল বুধবার জানানো হয়, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এই শুল্ক জারি থাকবে। খবর ইকোনমিক টাইমস ও এনডিটিভির।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো দুই বছর ধরে ভারতের মানুষও উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে রয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে ভারতের খুচরা মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ১ শতাংশে নামলেও খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৩ শতাংশ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, চলতি বছর লোকসভা নির্বাচনের আগে ভারতের ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদি সরকার বেশ কিছু ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও তাদের অস্বস্তির জায়গা একটি। সেটা হলো বাজারে পণ্যের দাম। সে জন্য পেঁয়াজের পাশাপাশি বাসমতী ভিন্ন অন্যান্য সাদা চালের রপ্তানিতে শুল্ক আরোপ করেছে সরকার। এক সময় টমেটো বিক্রি হয়েছে সরকারি বিপণি থেকে। খোলাবাজারে বিক্রির জন্য সরকারি গুদামে শস্যের মজুতও বাড়ানো হচ্ছে।
চাল রপ্তানিতে শুল্ক আরোপ করা হলেও চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল মোদি সরকার। গত মঙ্গলবার তারা আবার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, সেই সময় এগিয়ে আনার প্রশ্ন নেই, বরং নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আরও বাড়ানো হতে পারে।
ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর, ভারতের বাজারে সম্প্রতি এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে যে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হচ্ছে। এর জেরে ভারতের বৃহত্তম পেঁয়াজ বাজার মহারাষ্ট্রের লাসালগাঁওয়ের পাইকারি বাজারে মাত্র দুই দিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম ৪০ শতাংশের বেশি বেড়ে যায়।
১৭ ফেব্রুয়ারি প্রতি কুইন্টাল পেঁয়াজের দাম ছিল ১ হাজার ২৮০ রুপি; ১৯ ফেব্রুয়ারি তা ১ হাজার ৮০০ রুপিতে উঠে যায়।
পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, নাসিক থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি শুরু হলে ভবিষ্যতে পেঁয়াজের পাইকারি ও খুচরা দাম বাড়তে পারে। এ ধরনের গুজব যাতে আর বাজারে ছড়াতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে কোমর বেঁধে নেমেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় ক্রেতা সুরক্ষা সচিব রোহিত কুমার সিংহ ভারতের গণমাধ্যমকে বলেছেন, পেঁয়াজের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়নি এবং সেই ব্যবস্থায় পরিবর্তনও আনা হয়নি।
সামগ্রিকভাবে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বাংলাদেশসহ ছয় দেশে সীমিত পরিমাণে পেঁয়াজ রপ্তানি করবে বলে জানিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, এসব দেশে সরকারি পর্যায়ে (জিটুজি) পেঁয়াজ রপ্তানি করা হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে দেশটির কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সংবাদে বলা হয়েছে। তবে কী পরিমাণে পেঁয়াজ রপ্তানি হবে, কিংবা কবে থেকে রপ্তানি হবে, সে ব্যাপারে ভারতীয় গণমাধ্যম কিছু জানাতে পারেনি।
যেসব দেশে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি করবে সেই দেশগুলো হলো বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মরিশাস, বাহরাইন, ভুটান ও নেপাল।
বাংলাদেশ চাহিদা মেটাতে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করে প্রতিবছর। রোজার সময় দেশে পেঁয়াজের চাহিদা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেড়ে যায়। এ অবস্থায় রোজার আগে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ এবং এক লাখ টন চিনি যাতে বাংলাদেশ পায়, সেজন্য সাম্প্রতিক ভারত সফরে আলোচনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
এরপর গত রোববার এক বৈঠকে বাংলাদেশসহ ছয় দেশে সীমিত পরিসরে পেঁয়াজ বিক্রির অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রীদের একটি কমিটি।
কিন্তু তাতে ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি উঠে যাচ্ছে বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে এবং পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম এক লাফে ৪০ শতাংশ বেড়ে যায়। ১৭ ফেব্রুয়ারি যেখানে প্রতি কুইন্টাল পেঁয়াজের দাম ছিল ১২৮০ রুপি, ১৯ ফেব্রুয়ারি তা উঠে যায় ১৮০০ রুপিতে।
এ পরিস্থিতিতে সরকারের অবস্থান তুলে ধরে ভারতের ভোক্তা সুরক্ষা সচিব রোহিত কুমার সিং মঙ্গলবার বলেন, পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়নি এবং ৩১ মার্চের আগে তা তোলার কোনো সম্ভাবনাও নেই। দেশের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রেখে দাম ভোক্তার নাগালে রাখার ওপরই সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।
ইকোনমিক টাইমস লিখেছে, মহারাষ্ট্রে এবার রবি মৌসুমে পেঁয়াজের চাষ কম হয়েছে। ফলে উৎপাদনও হবে অন্য সময়ের তুলনায় কম। সে কারণে ৩১ মার্চের পরও পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা হতে পারে।
বিশ্বের অনেক দেশের মত ভারতকেও গত দুই বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়তে হচ্ছে। আসন্ন নির্বাচনের আগে নিত্যপণ্যের দাম হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদী সরকারের মাথা ব্যথার কারণ।
তবে ভারতের পরিসংখ্যান দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, নতুন বছরের শুরুতে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। জানুয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতির হার হয়েছে ৫ দশমিক ১ শতাংশ, যা ডিসেম্বরে ৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ ছিল।