এবার সরকারি খাতের চারটি ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংককে (বিডিবিএল) সরকারি অন্য দুই ব্যাংক — সোনালী ও কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। আগামী সোমবার চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এক বৈঠকে ৩ এপ্রিল বুধবার এ সিন্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। বৈঠকে ব্যাংক চারটির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অংশ নেন। এছাড়া সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, উপদেষ্টা আবু ফরাহ মো. নাছের ও নির্বাহী পরিচালক সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে ব্যাংক চারটিকে জানানো হয়, শীঘ্রই ব্যাংক একীভূত করার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিমালা দেবে। এরপরই নীতিমালা মেনে নিজ নিজ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় একীভূত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এরপর সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। আর বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) ব্যাংক একীভূত করার বিষয়ে নীতিমালা প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, হঠাৎ বুধবার চার ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিকে ডেকে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য আগে থেকে কোনো চিঠি দেয়া হয়নি, এমনকি আলোচনার বিষয়বস্তুও বলা হয়নি। একটি সভায় সোনালী ব্যাংক ও বিডিবিএলের চেয়ারম্যান-এমডিকে জানানো হয়, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিডিবিএল ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হয়ে যাবে। আরেকটি সভায় বিকেবি ও রাকাবকে একই ধরনের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
একীভূতকরণ শেষ হলে রাকাব ও বিডিবিএলের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হবে। চারটি ব্যাংকেরই মালিকানা সরকারের হওয়ায় প্রক্রিয়াটি অপেক্ষাকৃত সহজ হবে বলে বলছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যেহেতু সরকারি ব্যাংকের সঙ্গে সরকারি ব্যাংককে একীভূত করা হবে, তাই রাকাব ও বিডিবিএল ব্যাংকের কর্মীদের চাকরি নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই।
এর আগে গত ২৫ মার্চ বেসরকারি খাতের এ´ি ব্যাংকের সঙ্গে চতুর্থ প্রজন্মের পদ্মা ব্যাংক একীভূত হওয়ার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়।
১৯৭২ সালে সোনালী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকের ৯৩ হাজার ৯৬ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি ১৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। এটা মোট ঋণের ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। ডেফারেল সুবিধার কারণে কোনো মূলধন ঘাটতি নেই।
বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক (বিএসবি) ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা (বিএসআরএস) একীভূত হয়ে ২০১০ সালে বিডিবিএল ব্যাংক নামে যাত্রা শুরু করে। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের ৪২ শতাংশই ছিল খেলাপি। ওই সময় পর্যন্ত বিডিবিএলের ঋণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা, যার মধ্যে খেলাপি ৯৮২ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ১৯৭৩ সালে কার্যক্রম শুরু করে। আর ১৯৮৬ সালে উত্তরাঞ্চলের কৃষি ব্যাংকের শাখাগুলো নিয়ে গঠন করা হয় রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। এখন আবার দুটি ব্যাংককে এক করে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত ডিসেম্বর শেষে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের বিতরণ করা ৩১ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৩ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। ব্যাংক খাতে আর কোনো ব্যাংকের এত ঘাটতি নেই। ব্যাংকটির খেলাপির হার ১২ দশমিক ৬৪ শতাংশ। আর মূলধন ঘাটতি ১৩ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ভেঙেই ১৯৮৬ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। কৃষি ব্যাংকের রাজশাহী বিভাগের শাখাগুলো নিয়েই ব্যাংকটির যাত্রা। এরই মধ্যে সরকার রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলা নিয়ে রংপুর বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেছে। এ কারণে বেশ কয়েক বছর ধরেই ব্যাংক দুটিকে একীভূত করে দেয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছিল। কৃষি ব্যাংকের মতোই ২০১০ সাল-পরবর্তী সময়ে রাকাবও লুণ্ঠনের শিকার হয়েছে। প্রভাবশালী কিছু গ্রাহককে কোল্ডস্টোরেজ নির্মাণসহ বড় ঋণ দিয়ে বিপদ বাড়িয়েছে ব্যাংকটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিকেবির পরিশোধিত মূলধন ৯০০ কোটি টাকা। যদিও গত বছর পর্যন্ত ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ১৬ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষায়িত ব্যাংকটির পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ ঠেকেছে ১৫ হাজার ২১৫ কোটি টাকায়। ব্যাংকের ১ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা বা ২১ দশমিক ৩৭ শতাংশ ঋণখেলাপি। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কোনো ব্যাংক নিজ থেকে এক হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তাতে সমর্থন দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এরপর আগামী বছরের মার্চ থেকে খারাপ ব্যাংক জোরপূর্বক ভালো ব্যাংকের সঙ্গে মিলিয়ে দেয়া হবে। একীভূতকরণের আগে দুর্বল ব্যাংক চিহ্নিত করার জন্য চারটি সূচকের ভিত্তিতে একটি পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক ঘোষণা করা হয়েছে। ব্যাংক খাতের উচ্চ খেলাপি ঋণ কমানো, মূলধন পরিস্থিতির উন্নতি এবং ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা আনার ক্ষেত্রে আইএমএফের চাপ রয়েছে।
সরকারি ব্যাংকের মধ্যে অগ্রণীর সঙ্গে বেসিকের একীভূত হওয়ার আলোচনা চলছে। আর বেসকারি মন্দ ৭/৮টি ব্যাংকের অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার আলোচনা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার, ০৪ এপ্রিল ২০২৪
এবার সরকারি খাতের চারটি ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংককে (বিডিবিএল) সরকারি অন্য দুই ব্যাংক — সোনালী ও কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। আগামী সোমবার চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এক বৈঠকে ৩ এপ্রিল বুধবার এ সিন্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। বৈঠকে ব্যাংক চারটির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অংশ নেন। এছাড়া সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, উপদেষ্টা আবু ফরাহ মো. নাছের ও নির্বাহী পরিচালক সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে ব্যাংক চারটিকে জানানো হয়, শীঘ্রই ব্যাংক একীভূত করার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিমালা দেবে। এরপরই নীতিমালা মেনে নিজ নিজ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় একীভূত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এরপর সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। আর বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) ব্যাংক একীভূত করার বিষয়ে নীতিমালা প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, হঠাৎ বুধবার চার ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিকে ডেকে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য আগে থেকে কোনো চিঠি দেয়া হয়নি, এমনকি আলোচনার বিষয়বস্তুও বলা হয়নি। একটি সভায় সোনালী ব্যাংক ও বিডিবিএলের চেয়ারম্যান-এমডিকে জানানো হয়, সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিডিবিএল ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হয়ে যাবে। আরেকটি সভায় বিকেবি ও রাকাবকে একই ধরনের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
একীভূতকরণ শেষ হলে রাকাব ও বিডিবিএলের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হবে। চারটি ব্যাংকেরই মালিকানা সরকারের হওয়ায় প্রক্রিয়াটি অপেক্ষাকৃত সহজ হবে বলে বলছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যেহেতু সরকারি ব্যাংকের সঙ্গে সরকারি ব্যাংককে একীভূত করা হবে, তাই রাকাব ও বিডিবিএল ব্যাংকের কর্মীদের চাকরি নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই।
এর আগে গত ২৫ মার্চ বেসরকারি খাতের এ´ি ব্যাংকের সঙ্গে চতুর্থ প্রজন্মের পদ্মা ব্যাংক একীভূত হওয়ার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়।
১৯৭২ সালে সোনালী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকের ৯৩ হাজার ৯৬ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি ১৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। এটা মোট ঋণের ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। ডেফারেল সুবিধার কারণে কোনো মূলধন ঘাটতি নেই।
বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক (বিএসবি) ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা (বিএসআরএস) একীভূত হয়ে ২০১০ সালে বিডিবিএল ব্যাংক নামে যাত্রা শুরু করে। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের ৪২ শতাংশই ছিল খেলাপি। ওই সময় পর্যন্ত বিডিবিএলের ঋণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা, যার মধ্যে খেলাপি ৯৮২ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ১৯৭৩ সালে কার্যক্রম শুরু করে। আর ১৯৮৬ সালে উত্তরাঞ্চলের কৃষি ব্যাংকের শাখাগুলো নিয়ে গঠন করা হয় রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। এখন আবার দুটি ব্যাংককে এক করে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত ডিসেম্বর শেষে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের বিতরণ করা ৩১ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৩ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। ব্যাংক খাতে আর কোনো ব্যাংকের এত ঘাটতি নেই। ব্যাংকটির খেলাপির হার ১২ দশমিক ৬৪ শতাংশ। আর মূলধন ঘাটতি ১৩ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ভেঙেই ১৯৮৬ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। কৃষি ব্যাংকের রাজশাহী বিভাগের শাখাগুলো নিয়েই ব্যাংকটির যাত্রা। এরই মধ্যে সরকার রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলা নিয়ে রংপুর বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেছে। এ কারণে বেশ কয়েক বছর ধরেই ব্যাংক দুটিকে একীভূত করে দেয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছিল। কৃষি ব্যাংকের মতোই ২০১০ সাল-পরবর্তী সময়ে রাকাবও লুণ্ঠনের শিকার হয়েছে। প্রভাবশালী কিছু গ্রাহককে কোল্ডস্টোরেজ নির্মাণসহ বড় ঋণ দিয়ে বিপদ বাড়িয়েছে ব্যাংকটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিকেবির পরিশোধিত মূলধন ৯০০ কোটি টাকা। যদিও গত বছর পর্যন্ত ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ১৬ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষায়িত ব্যাংকটির পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ ঠেকেছে ১৫ হাজার ২১৫ কোটি টাকায়। ব্যাংকের ১ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা বা ২১ দশমিক ৩৭ শতাংশ ঋণখেলাপি। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কোনো ব্যাংক নিজ থেকে এক হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তাতে সমর্থন দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এরপর আগামী বছরের মার্চ থেকে খারাপ ব্যাংক জোরপূর্বক ভালো ব্যাংকের সঙ্গে মিলিয়ে দেয়া হবে। একীভূতকরণের আগে দুর্বল ব্যাংক চিহ্নিত করার জন্য চারটি সূচকের ভিত্তিতে একটি পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক ঘোষণা করা হয়েছে। ব্যাংক খাতের উচ্চ খেলাপি ঋণ কমানো, মূলধন পরিস্থিতির উন্নতি এবং ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা আনার ক্ষেত্রে আইএমএফের চাপ রয়েছে।
সরকারি ব্যাংকের মধ্যে অগ্রণীর সঙ্গে বেসিকের একীভূত হওয়ার আলোচনা চলছে। আর বেসকারি মন্দ ৭/৮টি ব্যাংকের অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার আলোচনা রয়েছে।