ঈদুল ফিতরের ছুটিতে দেশের বিখ্যাত পর্যটন স্পটগুলোয় ব্যাপক পর্যটক সমাগমের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তাই সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছেন পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তবে, ডলার সংকট আর বিমানের টিকিটের দাম বাড়ায় বিদেশে ছুটি কাটাতে যাওয়াদের সংখ্যা ‘অর্ধেকে’ নামতে পারে ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক বছরে ঈদের ছুটিতে অবকাশ যাপনের জন্য দেশে কিংবা দেশের বাইরে বাড়ছে ভ্রমণের প্রবণতা। প্রতিবার ঈদকে কেন্দ্র করে নতুন করে গতি পায় দেশের পর্যটন খাত। বাড়তি আয়োজন থাকে পর্যটন কেন্দ্র, হোটেল, মোটেল, রিসোর্টগুলোতে। ট্রাভেল এজেন্টরাও সাজায় নিত্যনতুন ট্যুর প্যাকেজ।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন পরিচালক (বাণিজ্যিক) জামিল আহমেদ সংবাদকে বলেন ‘মানুষের মধ্যে ইদের সময় গ্রামের বাড়িতে না গিয়ে ঘুরতে যাওয়ার ট্রেন্ড তৈরি হয়েছে। একটা জেনারেশ ছিল যারা ইদে গ্রামের বাড়িতে যেত বাবা-মায়ের সঙ্গে ইদ করে কাটাতে। কিন্ত এখন সেকেন্ড বা থার্ড জেনারেশ আসছে যারা আর গ্রামে যায়না তাদের সিংহভাগই দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় জায়গা, বিভিন্ন রিসোর্ট, বন জঙ্গল ও সমুদ্রে চলে যায়। আর এদের একটা অংশ দেশে ছেড়ে বাহিরে বিভিন্ন দেশে এই ভ্যাকেশনটা পালন করে।’
বরাবরের মতো এ বছরও ভ্রমণ পিপাসুদের চাপ থাকবে অভ্যন্তরীণ গন্তব্যগুলোতে। দেশিয় পর্যটকদের আগ্রহের শীর্ষে রয়েছে কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট। সঙ্গে পদ্মা সেতুর জন্য কুয়াকাটা আর সুন্দরবনেও চাপ থাকবে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি।
জামিল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের ইন বাউন্ড ট্যুরিজস আগের থেকে অনেক বেড়েছে। দেশের মধ্যে মবিলিটি অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে ঈদ উপলক্ষে কক্সবাজারে একদম জায়গা পাওয়া যায়না। বিশেষ করে রোজার ঈদে তো বেশি ব্যস্ত থাকে।’
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ ও আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক) মো. বোরহান উদ্দিন দাবি করেন, ইতোমধ্যে তাদের কক্সবাজার ও কুয়াকাটায় সব রুম বুকিং হয়ে গেছে।
বিদেশ যাত্রায় ভিন্ন চিত্র জানা গেছে। কারণ হিসেবে অনেকেই ডলার সংকট আর বিমান টিকিটের দাম বৃদ্ধিকে দায়ি করছেন। তারা মনে করছেন, ছুটি কাটাতে বিদেশ যাত্রা গত বছরের তুলনায় ‘অর্ধেকে’ নামতে পারে ।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশে থেকে বেশিরভাগ পর্যটক আশেপাশের দেশেই বেড়াতে যান বেশি। খরচ কম হওয়ায় পছন্দের তালিকায় প্রথমেই আছে ভারত। এরপর নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ড, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, দুবাই, তুরস্ক।
বেসরকারী ট্রাভেল এজেন্সি ‘ট্রাভেলার্স ডায়েরি’ এর চেয়ারম্যান ওয়াহিদ উদ্দিন সংবাদকে বলেন, ‘আগে ঈদের মৌসুমে আমরা পর্যটকদের কাছে যত টিকিট বিক্রি করতাম এবার তা পারিনি। আর এবারের ইদে বিদেশে ভ্রমণের চেয়ে মানুষ ওমরায় বেশি গেছে। সব মিরিয়ে গতবারের তুলনায় কম মানুষ দেশের বাইরে যাচ্ছে।’
‘ডলার ও টিকিটের মূল্যবৃদ্ধির কারণেই বিদেশের প্রতি পর্যটকদের আগ্রহ কম। সে সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে শীর্য পর্যটনকেন্দ্রগুলো। এক্ষেত্রে সবার চেয়ে এগিয়ে কক্সবাজার। এখানে বর্তমানে কোনো হোটেল-মোটেলে নেই কোনো সিট। তিল ধারনের ঠাঁই নেই পর্যটন নগরীতে। একই অবস্থা এয়ারলাইন্সগুলোতে। কোনো এয়ারেই টিকেট নেই ঈদের আগে-পরের দুদিনের,’ বলে মত তার।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) এর তথ্য বলছে, দেশে পর্যটন খাতে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়, য়ার ৩০ শতাংশ হয় দুই ঈদে। এরমধ্যে রোজার ঈদে ২০ শতাংশ এবং কোরবানির ঈদে ১০ শতাংশ ব্যবসা হয়।
টোয়াব সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশী জানান, এবার গরম বাড়ছে। এছাড়া অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ। তাছাড়া মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বান্দরবানের ঘটনা। এসব বিষয় সামগ্রিকভাবে পর্যটনের ওপর প্রভাব ফেলবে।
এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহ সংবাদকে বলেন, ‘দেশীয় যে ট্যুরিজম স্পটগুলো আছে সেগুলো বলতে গেলে সব বুকড। দেশের ভিতরে মানুষ প্রচুর ভ্রমণ করছে।’
তিনি বলেন, ‘যারা বিদেশে ছুটি কাটাতে যেতে চায় তারা মূলত দুই-তিন মাস আগেই সব কিছু ঠিকঠাক করে ফেলে। আবার অনেকেই সব কিছু ম্যানেজ করে একমাস আগে থেকে কাজ শুরু করে। কিন্ত এবার বিষয়টা ভিন্ন। প্রত্যেকবার ঈদে যে মানুষের বিদেশে যাওয়ার জন্য যে ভিসা নেয়ার ভীড় করতো এবার সেটা নেই।’
কারণ হিসেবে অর্থনৈতিক অবস্থার খারাপের কথা বলছেন তিনি।
পরিসংখ্যান জানা নেই
অতীতে বা এবার ঈদুল ফিতরে ছুটিতে কত সংখ্যায় মানুষ ভ্রমণে যাবেন, দেশে-বিদেশে কত সংখ্যা যাবে তার সঠিক কোনো পরিংখ্যান বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড বা পর্যটন করপোরেশনের নিকট নেই। তবে, পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন গত বছর দেশের বাইরে ১০ লাখ মানুষ বেড়াতে গেলেও এবার তা অনেক কম।
দেশে-বিদেশে কত মানুষ ভ্রমণে যায় তার সঠিক কোনো সংখ্যা বা পরিসংখ্যান আছে কিনা জানতে চাইলে জামিল আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশে ট্যুরিজস রিলেটেড সঠিক ডাটা পাওয়া কঠিন। আমাদের সেরকম ডাটা নেই। তবে, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের কেউ বলতে পারবে।’ তবে, বোরহান উদ্দিনের নিকট জানতে চাইলে এ বিষয়ে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান জানা নেই বলে এ প্রতিবেদককে জানান।
সোমবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৪
ঈদুল ফিতরের ছুটিতে দেশের বিখ্যাত পর্যটন স্পটগুলোয় ব্যাপক পর্যটক সমাগমের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তাই সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছেন পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তবে, ডলার সংকট আর বিমানের টিকিটের দাম বাড়ায় বিদেশে ছুটি কাটাতে যাওয়াদের সংখ্যা ‘অর্ধেকে’ নামতে পারে ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক বছরে ঈদের ছুটিতে অবকাশ যাপনের জন্য দেশে কিংবা দেশের বাইরে বাড়ছে ভ্রমণের প্রবণতা। প্রতিবার ঈদকে কেন্দ্র করে নতুন করে গতি পায় দেশের পর্যটন খাত। বাড়তি আয়োজন থাকে পর্যটন কেন্দ্র, হোটেল, মোটেল, রিসোর্টগুলোতে। ট্রাভেল এজেন্টরাও সাজায় নিত্যনতুন ট্যুর প্যাকেজ।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন পরিচালক (বাণিজ্যিক) জামিল আহমেদ সংবাদকে বলেন ‘মানুষের মধ্যে ইদের সময় গ্রামের বাড়িতে না গিয়ে ঘুরতে যাওয়ার ট্রেন্ড তৈরি হয়েছে। একটা জেনারেশ ছিল যারা ইদে গ্রামের বাড়িতে যেত বাবা-মায়ের সঙ্গে ইদ করে কাটাতে। কিন্ত এখন সেকেন্ড বা থার্ড জেনারেশ আসছে যারা আর গ্রামে যায়না তাদের সিংহভাগই দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় জায়গা, বিভিন্ন রিসোর্ট, বন জঙ্গল ও সমুদ্রে চলে যায়। আর এদের একটা অংশ দেশে ছেড়ে বাহিরে বিভিন্ন দেশে এই ভ্যাকেশনটা পালন করে।’
বরাবরের মতো এ বছরও ভ্রমণ পিপাসুদের চাপ থাকবে অভ্যন্তরীণ গন্তব্যগুলোতে। দেশিয় পর্যটকদের আগ্রহের শীর্ষে রয়েছে কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট। সঙ্গে পদ্মা সেতুর জন্য কুয়াকাটা আর সুন্দরবনেও চাপ থাকবে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি।
জামিল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের ইন বাউন্ড ট্যুরিজস আগের থেকে অনেক বেড়েছে। দেশের মধ্যে মবিলিটি অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে ঈদ উপলক্ষে কক্সবাজারে একদম জায়গা পাওয়া যায়না। বিশেষ করে রোজার ঈদে তো বেশি ব্যস্ত থাকে।’
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ ও আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক) মো. বোরহান উদ্দিন দাবি করেন, ইতোমধ্যে তাদের কক্সবাজার ও কুয়াকাটায় সব রুম বুকিং হয়ে গেছে।
বিদেশ যাত্রায় ভিন্ন চিত্র জানা গেছে। কারণ হিসেবে অনেকেই ডলার সংকট আর বিমান টিকিটের দাম বৃদ্ধিকে দায়ি করছেন। তারা মনে করছেন, ছুটি কাটাতে বিদেশ যাত্রা গত বছরের তুলনায় ‘অর্ধেকে’ নামতে পারে ।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশে থেকে বেশিরভাগ পর্যটক আশেপাশের দেশেই বেড়াতে যান বেশি। খরচ কম হওয়ায় পছন্দের তালিকায় প্রথমেই আছে ভারত। এরপর নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ড, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, দুবাই, তুরস্ক।
বেসরকারী ট্রাভেল এজেন্সি ‘ট্রাভেলার্স ডায়েরি’ এর চেয়ারম্যান ওয়াহিদ উদ্দিন সংবাদকে বলেন, ‘আগে ঈদের মৌসুমে আমরা পর্যটকদের কাছে যত টিকিট বিক্রি করতাম এবার তা পারিনি। আর এবারের ইদে বিদেশে ভ্রমণের চেয়ে মানুষ ওমরায় বেশি গেছে। সব মিরিয়ে গতবারের তুলনায় কম মানুষ দেশের বাইরে যাচ্ছে।’
‘ডলার ও টিকিটের মূল্যবৃদ্ধির কারণেই বিদেশের প্রতি পর্যটকদের আগ্রহ কম। সে সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে শীর্য পর্যটনকেন্দ্রগুলো। এক্ষেত্রে সবার চেয়ে এগিয়ে কক্সবাজার। এখানে বর্তমানে কোনো হোটেল-মোটেলে নেই কোনো সিট। তিল ধারনের ঠাঁই নেই পর্যটন নগরীতে। একই অবস্থা এয়ারলাইন্সগুলোতে। কোনো এয়ারেই টিকেট নেই ঈদের আগে-পরের দুদিনের,’ বলে মত তার।
ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) এর তথ্য বলছে, দেশে পর্যটন খাতে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়, য়ার ৩০ শতাংশ হয় দুই ঈদে। এরমধ্যে রোজার ঈদে ২০ শতাংশ এবং কোরবানির ঈদে ১০ শতাংশ ব্যবসা হয়।
টোয়াব সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশী জানান, এবার গরম বাড়ছে। এছাড়া অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ। তাছাড়া মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বান্দরবানের ঘটনা। এসব বিষয় সামগ্রিকভাবে পর্যটনের ওপর প্রভাব ফেলবে।
এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহ সংবাদকে বলেন, ‘দেশীয় যে ট্যুরিজম স্পটগুলো আছে সেগুলো বলতে গেলে সব বুকড। দেশের ভিতরে মানুষ প্রচুর ভ্রমণ করছে।’
তিনি বলেন, ‘যারা বিদেশে ছুটি কাটাতে যেতে চায় তারা মূলত দুই-তিন মাস আগেই সব কিছু ঠিকঠাক করে ফেলে। আবার অনেকেই সব কিছু ম্যানেজ করে একমাস আগে থেকে কাজ শুরু করে। কিন্ত এবার বিষয়টা ভিন্ন। প্রত্যেকবার ঈদে যে মানুষের বিদেশে যাওয়ার জন্য যে ভিসা নেয়ার ভীড় করতো এবার সেটা নেই।’
কারণ হিসেবে অর্থনৈতিক অবস্থার খারাপের কথা বলছেন তিনি।
পরিসংখ্যান জানা নেই
অতীতে বা এবার ঈদুল ফিতরে ছুটিতে কত সংখ্যায় মানুষ ভ্রমণে যাবেন, দেশে-বিদেশে কত সংখ্যা যাবে তার সঠিক কোনো পরিংখ্যান বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড বা পর্যটন করপোরেশনের নিকট নেই। তবে, পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন গত বছর দেশের বাইরে ১০ লাখ মানুষ বেড়াতে গেলেও এবার তা অনেক কম।
দেশে-বিদেশে কত মানুষ ভ্রমণে যায় তার সঠিক কোনো সংখ্যা বা পরিসংখ্যান আছে কিনা জানতে চাইলে জামিল আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশে ট্যুরিজস রিলেটেড সঠিক ডাটা পাওয়া কঠিন। আমাদের সেরকম ডাটা নেই। তবে, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের কেউ বলতে পারবে।’ তবে, বোরহান উদ্দিনের নিকট জানতে চাইলে এ বিষয়ে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান জানা নেই বলে এ প্রতিবেদককে জানান।