alt

অর্থ-বাণিজ্য

একীভূত ব্যাংক : পাঁচটির বাইরে আপাতত আর না

রমজান আলী : সোমবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৪

এখন নতুন করে আর কোনো ব্যাংককে একীভূত হওয়ার অনুমতি দিবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই সিদ্ধান্ত আগামী তিন বছরের জন্য। এ পর্যন্ত পাঁচটি দুর্বল ব্যাংক অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়া বা আলোচনা শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক সোমবার (১৫ এপ্রিল) বলেন, ‘আগামী তিন বছরের মধ্যে আর কোনো ব্যাংকের একীভূত হওয়ার অনুমোদন দিবে না বাংলাদেশ ব্যাংক। যে পাঁচটি ব্যাংকের একীভূত হওয়ার আলোচনা রয়েছে সেগুলোর কাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে আর কোনো ব্যাংকের একীভূত হওয়ার অনুমোদন দেয়া হবে না।’

এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক দুর্বল ব্যাংকগুলোকে অপেক্ষাকৃত ভালো ব্যাংকের সঙ্গে স্বেচ্ছায় একীভূত হওয়ার জন্য এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছিলো। তা নাহলে আগামী বছর থেকে একীভূতকরণে অনেক ব্যাংককে বাধ্য করা হবে বলে জানানো হয়েছিল। রোজার ঈদের আগে ‘স্বপ্রণোদিত হয়ে ব্যাংক-কোম্পানির একীভূতকরণ সম্পর্কিত নীতিমালা’ জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই প্রক্রিয়াকে একীভূতকরণ বলা হলেও আদতে অপেক্ষাকৃত ভালো ব্যাংক দুর্বল ব্যাংককে অধিগ্রহণ করবে।

এখন এই প্রক্রিয়ায় কেন বিরতি তার ব্যাখ্যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকএর মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘ওই পাঁচটি ব্যাংকের নিরীক্ষার জন্য পাঁচটি অডিট ফার্ম নিয়োগ দিতে হবে। এই নিরীক্ষাও সময়ের ব্যাপার। তাই এই পাঁচটি ব্যাংকের সব ধরনের কাজ শেষ হওয়ার পরে অন্য ব্যাংকের একীভূত হতে চাইলে তখন দেয়া যেতে পারে। তবে আপতত কেউ সেচ্ছায় চাইলেও আর একীভূত হওয়ার অনুমোদন দিবে না বাংলাদেশ ব্যাংক।’

সম্প্রতি বেসরকারি খাতের পদ্মা ও ন্যাশনাল ব্যাংক, এবং রাষ্ট্রীয় খাতের রাকাব, বেসিক ও বিডিবিএল ব্যাংকের অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত বা বিলীন হওয়ার প্রক্রিয়া বা আলোচনা শুরু হয়েছে।

এর মধ্যে শুধু পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে এক্সিম ব্যাংকের চুক্তি হয়েছে। বাকি চারটির শুধু আলোচনা হয়েছে। এখনও কোনো চুক্তি হয়নি।

ইউসিবি ব্যাংকের সঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংক, বিডিবিএলের সঙ্গে সোনালী ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকের সঙ্গে বেসিক ব্যাংক এবং কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে রাকাব বা রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের একীভূত হওয়ার আলোচনা হয়েছে।

এর মধ্যে কাগজ-কলমে ন্যাশনাল ব্যাংকের ও রাকাবের খেলাপি ২৬ শতাংশ। বাস্তবে আরও বেশি। বেসিকের ৬২ শতাংশ ও বিডিবিএলের ৪৪ শতাংশ খেলাপি রয়েছে।

৪ মার্চ ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) একটি প্রতিনিধিদলের বৈঠকে গভর্নর জানান, চলতি বছরের মধ্যে ৭ থেকে ১০টি দুর্বল ব্যাংককে সবল বা ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হতে পারে। এর মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। বাকি চারটির একীভূত হওয়ার আলোচনা চলছে।

এই প্রক্রিয়ায় যেগুলো আলোচনায় ছিল, তার মধ্যে একটি এবি ব্যাংক, যার খেলাপি পরিমাণ ১২ শতাংশের মতো। এছাড়া গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, এবং বিদেশি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে পারে বলে আলোচনায় ছিল। এছাড়া গুঞ্জন ছিল বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, গ্লোবাল ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক একীভূত হতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে একীভূত (মার্জার) করতে একটি রোডম্যাপ ঠিক করার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে এক বছর সময় দিয়ে ‘প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন’ বা পিসিএ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে নেয়া হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার, মূলধনের পর্যাপ্ততা, নগদ অর্থের প্রবাহ, ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের তথ্যকে প্রাধান্য দিয়ে আর্থিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন সূচক ঠিক করে দেয়া হয়েছে। সেই সূচকে কাঙ্ক্ষিত মানদ-ের নিচে থাকা ব্যাংকগুলোকে ‘দুর্বল’ শ্রেণীভুক্ত করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। দুর্বল ব্যাংক টেনে তোলার শেষ পদক্ষেপ হিসেবে অন্য ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার এই প্রক্রিয়া।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা, যা তাদের মোট ঋণের ৯ শতাংশ। এছাড় অর্থ ঋণ আদালতে ২ লাখ কোটি টাকার অর্থ মামলায় আটকে রয়েছে, যা খেলাপি হিসেবে গণ্য করলে প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার মতো হবে খেলাপি ঋণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ সংবাদকে বলেন, ‘শুধু ব্যাংক একীভূত করেই ব্যাংক খাত ঠিক করা যাবে না। পাশাপাশি বেনামি ঋণ ও যেসব ঋণ খেলাপি দেখানো হচ্ছে না, তাও খুঁজে বের করতে হবে। এছাড়া ‘যেসব ব্যাংক দুর্বল, তার তালিকা করে খারাপ সম্পদগুলো আগে আলাদা করে ফেলতে হবে। এরপর ব্যাংকগুলোকে স্বেচ্ছায় একীভূত হওয়ার আহ্বান জানালে সেটা ভালো হবে। চাপ দিয়ে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে খারাপ ব্যাংক একীভূত করলে তা ভালো ফল নাও দিতে পারে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবক্ষেত্রে সম-আইন প্রয়োগ শুরু করতে হবে। কাউকে রেখে কাউকে ধরার দিন শেষ হয়ে গেছে। সবার আগে আমানতকারীদের অর্থের সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। তারপরে একীভূত করতে হবে ব্যাংক।,

বাংলাদেশ ব্যাংক যে একীভূতকরণ নীতমালা জারি করেছে তাতে উল্লেখিত বিষয়ের সঙ্গে চারটি সংযুক্তি দেয়া হয়েছে। দুর্বল ব্যাংক অধিগ্রহণ করলে খেলাপি ঋণ ও পুঞ্জীভূত লোকসানের পুরোটা বহন করতে হবে গ্রহীতা ব্যাংককে। তবে এ জন্য নিরাপত্তা সঞ্চিতিতে (প্রভিশন) বিশেষ ছাড় পাবে তারা। এর বাইরে সরকারি বিশেষ নীতি সহায়তাও দেয়া হবে।

নীতিমালার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলেছে, ‘অপেক্ষাকৃত দুর্বল ব্যাংকের বিদ্যমান সমস্যা সমাধান এবং একই সঙ্গে অপেক্ষাকৃত সবল ব্যাংকের কার্যক্রম উন্নয়নের মাধ্যমে আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করা; যাতে করে জনস্বার্থে একীভূত ব্যাংক-কোম্পানি অধিকতর সেবা প্রদান করতে পারে।’

নীতিমালায় বলা হয়েছে নিরীক্ষা এবং আর্থিক ও আইনি কাজ সম্পন্ন করার খরচ বহন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমানতকারী, পাওনাদার ও শেয়ারহোল্ডারদের দাবি পরিশোধসহ সম্পূর্ণ একত্রীকরণ কার্যক্রম সুষ্ঠু ও যথাযথভাবে সম্পাদনের জন্য সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষা ফার্ম তার নিরীক্ষা এবং আর্থিক ও আইনি কার্যক্রম প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিবে। এসব বিষয়ে তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। এতে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তার অনুমোদন বাতিলও করতে পারবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংক হেলথ ইনডেক্স অ্যান্ড হিট ম্যাপ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে দেশের ৩৮টি ব্যাংককে দুর্বল ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২টির অবস্থা খুবই খারাপ, তার মধ্যে ৯টি ব্যাংক ইতোমধ্যে রেড জোনে চলে গেছে। অন্য ৩টির অবস্থান ইয়েলো জোনে অর্থাৎ রেড জোনের খুব কাছাকাছি রয়েছে বলে সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ২০২৩ সালের জুন থেকে অর্ধ-বার্ষিক আর্থিক কর্মক্ষমতার ভিত্তিতে অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য ব্যাংকের স্বাস্থ্য সূচক তৈরি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা বিভাগ।

ছবি

স্থানীয় শিল্পে খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার

ছবি

তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার চান টেক্সটাইল মালিকরা

বাজার মূলধনে যোগ হলো সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা

বিকাশ, রকেট, নগদসহ এমএফএসের মাধ্যমে শুল্ক-কর জমা দেয়া যাবে

ছবি

ব্রাদার পার্টনার ডে ২০২৫ অনুষ্ঠিত

ছবি

বিকাশ-রকেট-নগদে কাস্টমস শুল্ক পরিশোধ সুবিধা চালু, ঘরে বসেই পণ্য খালাসের পথ খুলল

ছবি

তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার চান ব্যবসায়ীরা

ছবি

কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে মাশুল বাড়বে না

সেমিকন্ডাক্টর খাতে ১০ বছরের কর অব্যাহতি ও শুল্ক ছাড়ের সুপারিশ

ছবি

প্রথম প্রান্তিকে বিমাদাবি নিষ্পত্তিতে গার্ডিয়ান লাইফ ইনস্যুরেন্সের ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’

৮৫ ব্রোকারেজ হাউসকে আগস্টের মধ্যে চালু করতে হবে ব্যাক অফিস সফটওয়্যার

ছবি

প্রসাধনী পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধি প্রত্যাহারের দাবি

ছবি

স্বর্ণের দাম আবার বাড়লো

ছবি

৮৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এক লাখ ১০ হাজার টন সার কিনবে সরকার

এফবিসিসিআই নির্বাচন: সময় বাড়লো ৪৫ দিন

ছবি

পাট খাতের উন্নয়নে ‘সাসটেইনেবল মার্কেট এক্সেস বুটক্যাম্প’ কর্মসূচি শুরু

এক বছরে ভারতে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন নেমেছে এক-তৃতীয়াংশে

৫ দিন বন্ধ থাকবে রূপালী ও এনসিসি ব্যাংকের সব কার্যক্রম

ছবি

ডলারের বিপরীতে টাকায় ঋণ নেয়ার সুযোগ

গত অর্থবছরে রফতানি আয় ৪৮ বিলিয়ন ডলার

নবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার

ছবি

ব্যাগেজ রুলসে মোবাইল ও স্বর্ণ আনায় বড় ছাড়

ছবি

এনবিআরের আন্দোলনে অংশ নেওয়া আরও ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তের কথা জানালো দুদক

ছবি

প্রবাসী আয়ে রেকর্ড, রপ্তানিতে বড় প্রবৃদ্ধি

ছবি

দেশের ৩২ বীমা কোম্পানি উচ্চ ঝুঁকিতে: আইডিআরএ চেয়ারম্যান

ছবি

বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ৭ শতাংশেরও কম

ছবি

ডিএসইর নতুন সিওও মোহাম্মদ আসাদুর রহমান

ছবি

অর্থবছরের প্রথম দিন ঊর্ধ্বমুখী শেয়ারবাজার

ছবি

ইলিশের দাম নির্ধারণ করে দেবে সরকার

ছবি

এনবিআরে আন্দোলন: এবার চার কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠালো সরকার

ছবি

৭৩ ধাপ এগিয়ে থাকা মায়ানমারকে হারিয়ে ইতিহাসের পথে বাংলাদেশের মেয়েরা

বিইআরসি ঘোষণা করল বেসরকারি এলপিজির নতুন দাম, ১২ কেজিতে ৩৯ টাকা কমতি

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানি আসছে, অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্বে নৌবাহিনী

ছবি

নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ে এফবিসিসিআই নির্বাচন পিছিয়ে গেল

ছবি

রেকর্ড রেমিটেন্সে শেষ হলো অর্থবছর, প্রথমবারের মতো আয় ছাড়াল ৩০ বিলিয়ন ডলার

ছবি

‘শাটডাউন’ কর্মসূচিতে অংশ: চট্টগ্রাম কাস্টম কমিশনার বরখাস্ত

tab

অর্থ-বাণিজ্য

একীভূত ব্যাংক : পাঁচটির বাইরে আপাতত আর না

রমজান আলী

সোমবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৪

এখন নতুন করে আর কোনো ব্যাংককে একীভূত হওয়ার অনুমতি দিবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই সিদ্ধান্ত আগামী তিন বছরের জন্য। এ পর্যন্ত পাঁচটি দুর্বল ব্যাংক অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়া বা আলোচনা শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক সোমবার (১৫ এপ্রিল) বলেন, ‘আগামী তিন বছরের মধ্যে আর কোনো ব্যাংকের একীভূত হওয়ার অনুমোদন দিবে না বাংলাদেশ ব্যাংক। যে পাঁচটি ব্যাংকের একীভূত হওয়ার আলোচনা রয়েছে সেগুলোর কাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে আর কোনো ব্যাংকের একীভূত হওয়ার অনুমোদন দেয়া হবে না।’

এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক দুর্বল ব্যাংকগুলোকে অপেক্ষাকৃত ভালো ব্যাংকের সঙ্গে স্বেচ্ছায় একীভূত হওয়ার জন্য এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছিলো। তা নাহলে আগামী বছর থেকে একীভূতকরণে অনেক ব্যাংককে বাধ্য করা হবে বলে জানানো হয়েছিল। রোজার ঈদের আগে ‘স্বপ্রণোদিত হয়ে ব্যাংক-কোম্পানির একীভূতকরণ সম্পর্কিত নীতিমালা’ জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই প্রক্রিয়াকে একীভূতকরণ বলা হলেও আদতে অপেক্ষাকৃত ভালো ব্যাংক দুর্বল ব্যাংককে অধিগ্রহণ করবে।

এখন এই প্রক্রিয়ায় কেন বিরতি তার ব্যাখ্যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকএর মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘ওই পাঁচটি ব্যাংকের নিরীক্ষার জন্য পাঁচটি অডিট ফার্ম নিয়োগ দিতে হবে। এই নিরীক্ষাও সময়ের ব্যাপার। তাই এই পাঁচটি ব্যাংকের সব ধরনের কাজ শেষ হওয়ার পরে অন্য ব্যাংকের একীভূত হতে চাইলে তখন দেয়া যেতে পারে। তবে আপতত কেউ সেচ্ছায় চাইলেও আর একীভূত হওয়ার অনুমোদন দিবে না বাংলাদেশ ব্যাংক।’

সম্প্রতি বেসরকারি খাতের পদ্মা ও ন্যাশনাল ব্যাংক, এবং রাষ্ট্রীয় খাতের রাকাব, বেসিক ও বিডিবিএল ব্যাংকের অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত বা বিলীন হওয়ার প্রক্রিয়া বা আলোচনা শুরু হয়েছে।

এর মধ্যে শুধু পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে এক্সিম ব্যাংকের চুক্তি হয়েছে। বাকি চারটির শুধু আলোচনা হয়েছে। এখনও কোনো চুক্তি হয়নি।

ইউসিবি ব্যাংকের সঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংক, বিডিবিএলের সঙ্গে সোনালী ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকের সঙ্গে বেসিক ব্যাংক এবং কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে রাকাব বা রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের একীভূত হওয়ার আলোচনা হয়েছে।

এর মধ্যে কাগজ-কলমে ন্যাশনাল ব্যাংকের ও রাকাবের খেলাপি ২৬ শতাংশ। বাস্তবে আরও বেশি। বেসিকের ৬২ শতাংশ ও বিডিবিএলের ৪৪ শতাংশ খেলাপি রয়েছে।

৪ মার্চ ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) একটি প্রতিনিধিদলের বৈঠকে গভর্নর জানান, চলতি বছরের মধ্যে ৭ থেকে ১০টি দুর্বল ব্যাংককে সবল বা ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করা হতে পারে। এর মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। বাকি চারটির একীভূত হওয়ার আলোচনা চলছে।

এই প্রক্রিয়ায় যেগুলো আলোচনায় ছিল, তার মধ্যে একটি এবি ব্যাংক, যার খেলাপি পরিমাণ ১২ শতাংশের মতো। এছাড়া গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, এবং বিদেশি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে পারে বলে আলোচনায় ছিল। এছাড়া গুঞ্জন ছিল বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, গ্লোবাল ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক একীভূত হতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে একীভূত (মার্জার) করতে একটি রোডম্যাপ ঠিক করার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে এক বছর সময় দিয়ে ‘প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন’ বা পিসিএ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে নেয়া হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার, মূলধনের পর্যাপ্ততা, নগদ অর্থের প্রবাহ, ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের তথ্যকে প্রাধান্য দিয়ে আর্থিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন সূচক ঠিক করে দেয়া হয়েছে। সেই সূচকে কাঙ্ক্ষিত মানদ-ের নিচে থাকা ব্যাংকগুলোকে ‘দুর্বল’ শ্রেণীভুক্ত করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। দুর্বল ব্যাংক টেনে তোলার শেষ পদক্ষেপ হিসেবে অন্য ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার এই প্রক্রিয়া।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা, যা তাদের মোট ঋণের ৯ শতাংশ। এছাড় অর্থ ঋণ আদালতে ২ লাখ কোটি টাকার অর্থ মামলায় আটকে রয়েছে, যা খেলাপি হিসেবে গণ্য করলে প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকার মতো হবে খেলাপি ঋণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ সংবাদকে বলেন, ‘শুধু ব্যাংক একীভূত করেই ব্যাংক খাত ঠিক করা যাবে না। পাশাপাশি বেনামি ঋণ ও যেসব ঋণ খেলাপি দেখানো হচ্ছে না, তাও খুঁজে বের করতে হবে। এছাড়া ‘যেসব ব্যাংক দুর্বল, তার তালিকা করে খারাপ সম্পদগুলো আগে আলাদা করে ফেলতে হবে। এরপর ব্যাংকগুলোকে স্বেচ্ছায় একীভূত হওয়ার আহ্বান জানালে সেটা ভালো হবে। চাপ দিয়ে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে খারাপ ব্যাংক একীভূত করলে তা ভালো ফল নাও দিতে পারে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবক্ষেত্রে সম-আইন প্রয়োগ শুরু করতে হবে। কাউকে রেখে কাউকে ধরার দিন শেষ হয়ে গেছে। সবার আগে আমানতকারীদের অর্থের সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। তারপরে একীভূত করতে হবে ব্যাংক।,

বাংলাদেশ ব্যাংক যে একীভূতকরণ নীতমালা জারি করেছে তাতে উল্লেখিত বিষয়ের সঙ্গে চারটি সংযুক্তি দেয়া হয়েছে। দুর্বল ব্যাংক অধিগ্রহণ করলে খেলাপি ঋণ ও পুঞ্জীভূত লোকসানের পুরোটা বহন করতে হবে গ্রহীতা ব্যাংককে। তবে এ জন্য নিরাপত্তা সঞ্চিতিতে (প্রভিশন) বিশেষ ছাড় পাবে তারা। এর বাইরে সরকারি বিশেষ নীতি সহায়তাও দেয়া হবে।

নীতিমালার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বলেছে, ‘অপেক্ষাকৃত দুর্বল ব্যাংকের বিদ্যমান সমস্যা সমাধান এবং একই সঙ্গে অপেক্ষাকৃত সবল ব্যাংকের কার্যক্রম উন্নয়নের মাধ্যমে আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করা; যাতে করে জনস্বার্থে একীভূত ব্যাংক-কোম্পানি অধিকতর সেবা প্রদান করতে পারে।’

নীতিমালায় বলা হয়েছে নিরীক্ষা এবং আর্থিক ও আইনি কাজ সম্পন্ন করার খরচ বহন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমানতকারী, পাওনাদার ও শেয়ারহোল্ডারদের দাবি পরিশোধসহ সম্পূর্ণ একত্রীকরণ কার্যক্রম সুষ্ঠু ও যথাযথভাবে সম্পাদনের জন্য সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষা ফার্ম তার নিরীক্ষা এবং আর্থিক ও আইনি কার্যক্রম প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিবে। এসব বিষয়ে তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। এতে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তার অনুমোদন বাতিলও করতে পারবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংক হেলথ ইনডেক্স অ্যান্ড হিট ম্যাপ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে দেশের ৩৮টি ব্যাংককে দুর্বল ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২টির অবস্থা খুবই খারাপ, তার মধ্যে ৯টি ব্যাংক ইতোমধ্যে রেড জোনে চলে গেছে। অন্য ৩টির অবস্থান ইয়েলো জোনে অর্থাৎ রেড জোনের খুব কাছাকাছি রয়েছে বলে সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ২০২৩ সালের জুন থেকে অর্ধ-বার্ষিক আর্থিক কর্মক্ষমতার ভিত্তিতে অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য ব্যাংকের স্বাস্থ্য সূচক তৈরি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা বিভাগ।

back to top