alt

অর্থ-বাণিজ্য

হঠাৎ ঝলকের পর আবার পতন, বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ

রেজাউল করিম : মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

অব্যাহত দরপতনের প্রতিবাদে মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে বিক্ষোভ করেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা-সংবাদ

ধারাবাহিক পতনের পর ২২ এপ্রিল সোমবার হঠাৎ উত্থান হয় শেয়ারবাজারে। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ২১ দশমিক ১৫ পয়েন্ট বেড়ে যায়। এদিন অন্য সূচকও সামান্য বাড়ে। এরপরই মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) আবার পতন হয় শেয়ারবাজারে। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক কমে যায় ৪১ দশমিক ২৫ পয়েন্ট। এই পতনে মঙ্গলবার মতিঝিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ভবনের সামনে বিক্ষোভ করছেন বিনিয়োগকারীরা।

দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারবাজারের অবস্থা টালমাটাল। ধারাবাহিক পতনের পর হঠাৎ সামান্য উত্থান হচ্ছে। এরপর আবার কিছুদিন ধারাবাহিক পতন হচ্ছে। ধারাবাহিক পতনের ফলে যে পরিমাণ সূচক কমছে হঠাৎ একদিন উত্থানে সূচক বাড়ছে খুবই সামান্য। বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শেয়ারবাজার স্থিতিশীল করার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও এর বাস্তবায়ন প্রয়োজন। বাজারের আকার বড় করার জন্য প্রয়োজন ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করা।

চলতি বছর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এর অবস্থান ছিল ৬২৪২ দশমিক ৮৭ পয়েন্টে। এরপর ধীরে ধীরে বেড়ে ১৭ জানুয়ারি সূচক ৬৩৪৬ দশমিক ২১ পয়েন্টে দাঁড়ায়। এর কিছুদিন পর বড় পতন হয়ে ২৮ জানুয়ারি সূচক নেমে দাঁড়ায় ৬০৭৯ দশমিক ০৬ পয়েন্টে। অর্থাৎ মাঝে সামান্য উত্থান হয়ে যেটুকু বেড়েছিল পতনে তার চেয়ে বেশি কমেছে।

এরপরের মাসে সূচক সামান্য বেড়ে ১১ ফেব্রুয়ারি দাঁড়ায় ৬৪৪৭ দশমিক ০৭ পয়েন্টে। এরপর শুরু হয় ধারাবাহিক বড় পতন। গত ২৮ মার্চ ডিএসইএক্স নেমে যায় ৫৭৭৮ দশমিক ৩৩ পয়েন্টে। এরপরও পতন থামে না। সর্বশেষ মঙ্গলবার ডিএসইএক্স নেমে দাঁড়ায় ৫৬৩৩ দশমিক ৬১ পয়েন্টে।

পতনের বৃত্তে আটকে থাকা শেয়ারবাজারকে চাঙ্গা করতে বিভিন্ন অংশীদারদের নিয়ে একাধিকবার আলোচনায় বসেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)। এর ধারাবাহিকতায় সোমবারও একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিএসইসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে অংশ নেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই), ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ), মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সংগঠন বিএমবিএ এর প্রতিনিধিদল ও শীর্ষস্থানীয় ১০টি ব্রোকারেজ হাউসের নির্বাহী কর্মকর্তারা।

এই বৈঠকের খবরে সোমবার কিছুটা উত্থান হয় শেয়ারবাজারে। এদিন ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২১ দশমিক ১৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৬৭৪ পয়েন্টে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরীয়াহ সূচক ৪ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ২৪৩ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৯৮৩ পয়েন্টে। অর্থাৎ এদিন প্রায় সব সূচক কিছুটা বাড়ে।

কিন্তু এরপর দিনই আবার বড় পতন হয়। অর্থাৎ মঙ্গলবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪১ দশমিক ২৫ পয়েন্ট কমে যায়। সূচকটির বর্তমান অবস্থান ৫ হাজার ৬৩৩ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসইর অন্য সূচক ‘ডিএসইএস’ ৭ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২৩৫ পয়েন্ট এবং ‘ডিএস-৩০’ সূচক ৩ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৮০ পয়েন্টে অবস্থান করে। অর্থাৎ আগের দিন সোমবার যে পরিমাণ উত্থান হয় ঠিক এরপর দিনই দ্বিগুণেরও বেশি সূচকের পতন হয়।

এই অবস্থায় অব্যাহত পতনের প্রতিবাদে মঙ্গলবার বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে একদল বিনিয়োগকারী মতিঝিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ভবনের সামনে বিক্ষোভ করছেন। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় বিক্ষুব্ধ এসব বিনিয়োগকারী ব্যানার নিয়ে ডিএসই ভবনের সামনে জড়ো হন। এ সময় তারা শেয়ারবাজারের পতনের প্রতিবাদে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটির অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান, ডিএসইর চেয়ারম্যানসহ পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পদত্যাগ দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দেন। বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা বলেন, ‘টানা দরপতনে আমরা পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমরা আমাদের পুঁজি ফেরত চাই। সারা বিশ্বের পুঁজিবাজার যেখানে ঊর্ধ্বমুখী, সেখানে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে টানা দরপতন চলছে। তাদের অভিযোগ, নি¤œমানের ও স্বল্প মূলধনি কোম্পানি তালিকাভুক্ত করে বারবার বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির মুখে ফেলা হচ্ছে। এসব কোম্পানি বাজার থেকে টাকা লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে আর বিনিয়োগকারীরা নিঃস্ব হচ্ছেন। অবিলম্বে নিম্নমানের ও স্বল্প মূলধনী কোম্পানির আইপিও এর তালিকাভুক্তি বন্ধ করতে হবে।’

২০২৪ সালের পতন অতিতের সব পতনকে ছাড়িয়ে গেছে অভিযোগ করে বিক্ষোভকারীরা বলেন, ‘শেয়ারবাজারে ১৯৯৬ ও ২০১০ সালে বড় ধরনের দুটি ধস হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালে এসে বাজারে যে ধস নেমেছে তা অতীতের দুই ধসকে ছাড়িয়ে গেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার ব্যর্থতায় এটা হচ্ছে।’

একই অভিযোগ করেন একজন সাধারণ বিনিয়োগকারী মো. জাকির হোসেন। মঙ্গলবার সংবাদকে তিনি বলেন, ‘এই পতন স্বাভাবিক কোনো পতন নয়। এর পেছনে গেমলারদের হাত আছে। বিএসইসি যদি শক্ত হাতে তাদেরকে দমন করে তাহলে বাজার আবার ঘুরে দাঁড়াবে। নয়তো গেমলাররা এভাবে বাজার থেকে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে কেটে পড়বে। আর আমার মতো সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ধরা খাবে।’

বিনিয়োগকারীরা এই পতনকে মানবসৃষ্ট পতন বললেও তা মানতে নারাজ শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, শেয়ারবাজারে উত্থান-পতন খুব স্বাভাবিক বিষয়। একদিন উত্থান হবে, আরেকদিন পতন হবে এটাই নিয়ম।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম সংবাদকে বলেন, ‘আসলে ফোর্স সেল এর কারণে বাজারে পতন হচ্ছে। আর ফ্লোস প্রাইস না থাকার কারণটাও আছে। শেয়ারবাজারে উত্থান-পতন থাকবে এটাই স্বাভাবিক।’

এই পতনের পেছনে অসাধু চক্রের হাত রয়েছে- এমন আশঙ্কা করেন কিনা জানতে চাইলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আমরা খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। যদি বাজারকে প্রভাবিত করতে কারো হাত থাকে তাহলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘কেউ বাজারকে ম্যানুপুলেট করছে এটা আমি বলতে চাচ্ছি না। তবে আমার বক্তব্য হলো, বাজার ব্যবস্থায় সুশাসনের উন্নতি করতে হবে, ভালো শেয়ারের সরবরাহ বৃদ্ধি ও মিউচুয়াল ফান্ড খাতকে শক্তিশালী করতে হবে। তাহলে দীর্ঘমেয়াদে বাজারে সুফল মিলবে।’

তবে অন্য কারণ উল্লেখ্য করেন ডিবিএ এর সিনিয়র ভাইস মো. সাইফুদ্দিন। তিনি জানিয়েছেন, সুদের হার বেড়ে যাওয়ার কারণে বাজারে পতন হচ্ছে।

তিনি সংবাদকে বলেন, ‘ব্যাংক সুদের হার এখন অনেক বেশি। একজন বিনিয়োগকারী যদি বাইরে অর্থ বিনিয়োগ করে বেশি মুনাফা পায় তাহলে কেন শেয়ারবাজারে আসবে? এখন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের চেয়ে অন্য খাতে বিনিয়োগ করে বেশি আয় করা সম্ভব। তাই নতুন বিনিয়োগকারী বাজারে আসছে না। আর পুরোনো বিনিয়োগকারীরা অনেকে শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছেড়ে দিচ্ছে। এতে বাজারে ফোর্স সেলের চাপ বাড়ছে এবং পতন হচ্ছে।’

ছবি

স্থানীয় শিল্পে খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার

ছবি

তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার চান টেক্সটাইল মালিকরা

বাজার মূলধনে যোগ হলো সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা

বিকাশ, রকেট, নগদসহ এমএফএসের মাধ্যমে শুল্ক-কর জমা দেয়া যাবে

ছবি

ব্রাদার পার্টনার ডে ২০২৫ অনুষ্ঠিত

ছবি

বিকাশ-রকেট-নগদে কাস্টমস শুল্ক পরিশোধ সুবিধা চালু, ঘরে বসেই পণ্য খালাসের পথ খুলল

ছবি

তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার চান ব্যবসায়ীরা

ছবি

কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে মাশুল বাড়বে না

সেমিকন্ডাক্টর খাতে ১০ বছরের কর অব্যাহতি ও শুল্ক ছাড়ের সুপারিশ

ছবি

প্রথম প্রান্তিকে বিমাদাবি নিষ্পত্তিতে গার্ডিয়ান লাইফ ইনস্যুরেন্সের ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’

৮৫ ব্রোকারেজ হাউসকে আগস্টের মধ্যে চালু করতে হবে ব্যাক অফিস সফটওয়্যার

ছবি

প্রসাধনী পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধি প্রত্যাহারের দাবি

ছবি

স্বর্ণের দাম আবার বাড়লো

ছবি

৮৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এক লাখ ১০ হাজার টন সার কিনবে সরকার

এফবিসিসিআই নির্বাচন: সময় বাড়লো ৪৫ দিন

ছবি

পাট খাতের উন্নয়নে ‘সাসটেইনেবল মার্কেট এক্সেস বুটক্যাম্প’ কর্মসূচি শুরু

এক বছরে ভারতে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন নেমেছে এক-তৃতীয়াংশে

৫ দিন বন্ধ থাকবে রূপালী ও এনসিসি ব্যাংকের সব কার্যক্রম

ছবি

ডলারের বিপরীতে টাকায় ঋণ নেয়ার সুযোগ

গত অর্থবছরে রফতানি আয় ৪৮ বিলিয়ন ডলার

নবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার

ছবি

ব্যাগেজ রুলসে মোবাইল ও স্বর্ণ আনায় বড় ছাড়

ছবি

এনবিআরের আন্দোলনে অংশ নেওয়া আরও ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তের কথা জানালো দুদক

ছবি

প্রবাসী আয়ে রেকর্ড, রপ্তানিতে বড় প্রবৃদ্ধি

ছবি

দেশের ৩২ বীমা কোম্পানি উচ্চ ঝুঁকিতে: আইডিআরএ চেয়ারম্যান

ছবি

বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ৭ শতাংশেরও কম

ছবি

ডিএসইর নতুন সিওও মোহাম্মদ আসাদুর রহমান

ছবি

অর্থবছরের প্রথম দিন ঊর্ধ্বমুখী শেয়ারবাজার

ছবি

ইলিশের দাম নির্ধারণ করে দেবে সরকার

ছবি

এনবিআরে আন্দোলন: এবার চার কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠালো সরকার

ছবি

৭৩ ধাপ এগিয়ে থাকা মায়ানমারকে হারিয়ে ইতিহাসের পথে বাংলাদেশের মেয়েরা

বিইআরসি ঘোষণা করল বেসরকারি এলপিজির নতুন দাম, ১২ কেজিতে ৩৯ টাকা কমতি

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানি আসছে, অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্বে নৌবাহিনী

ছবি

নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ে এফবিসিসিআই নির্বাচন পিছিয়ে গেল

ছবি

রেকর্ড রেমিটেন্সে শেষ হলো অর্থবছর, প্রথমবারের মতো আয় ছাড়াল ৩০ বিলিয়ন ডলার

ছবি

‘শাটডাউন’ কর্মসূচিতে অংশ: চট্টগ্রাম কাস্টম কমিশনার বরখাস্ত

tab

অর্থ-বাণিজ্য

হঠাৎ ঝলকের পর আবার পতন, বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ

রেজাউল করিম

অব্যাহত দরপতনের প্রতিবাদে মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে বিক্ষোভ করেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা-সংবাদ

মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

ধারাবাহিক পতনের পর ২২ এপ্রিল সোমবার হঠাৎ উত্থান হয় শেয়ারবাজারে। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ২১ দশমিক ১৫ পয়েন্ট বেড়ে যায়। এদিন অন্য সূচকও সামান্য বাড়ে। এরপরই মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) আবার পতন হয় শেয়ারবাজারে। এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক কমে যায় ৪১ দশমিক ২৫ পয়েন্ট। এই পতনে মঙ্গলবার মতিঝিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ভবনের সামনে বিক্ষোভ করছেন বিনিয়োগকারীরা।

দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারবাজারের অবস্থা টালমাটাল। ধারাবাহিক পতনের পর হঠাৎ সামান্য উত্থান হচ্ছে। এরপর আবার কিছুদিন ধারাবাহিক পতন হচ্ছে। ধারাবাহিক পতনের ফলে যে পরিমাণ সূচক কমছে হঠাৎ একদিন উত্থানে সূচক বাড়ছে খুবই সামান্য। বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শেয়ারবাজার স্থিতিশীল করার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও এর বাস্তবায়ন প্রয়োজন। বাজারের আকার বড় করার জন্য প্রয়োজন ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করা।

চলতি বছর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এর অবস্থান ছিল ৬২৪২ দশমিক ৮৭ পয়েন্টে। এরপর ধীরে ধীরে বেড়ে ১৭ জানুয়ারি সূচক ৬৩৪৬ দশমিক ২১ পয়েন্টে দাঁড়ায়। এর কিছুদিন পর বড় পতন হয়ে ২৮ জানুয়ারি সূচক নেমে দাঁড়ায় ৬০৭৯ দশমিক ০৬ পয়েন্টে। অর্থাৎ মাঝে সামান্য উত্থান হয়ে যেটুকু বেড়েছিল পতনে তার চেয়ে বেশি কমেছে।

এরপরের মাসে সূচক সামান্য বেড়ে ১১ ফেব্রুয়ারি দাঁড়ায় ৬৪৪৭ দশমিক ০৭ পয়েন্টে। এরপর শুরু হয় ধারাবাহিক বড় পতন। গত ২৮ মার্চ ডিএসইএক্স নেমে যায় ৫৭৭৮ দশমিক ৩৩ পয়েন্টে। এরপরও পতন থামে না। সর্বশেষ মঙ্গলবার ডিএসইএক্স নেমে দাঁড়ায় ৫৬৩৩ দশমিক ৬১ পয়েন্টে।

পতনের বৃত্তে আটকে থাকা শেয়ারবাজারকে চাঙ্গা করতে বিভিন্ন অংশীদারদের নিয়ে একাধিকবার আলোচনায় বসেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)। এর ধারাবাহিকতায় সোমবারও একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিএসইসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে অংশ নেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই), ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ), মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সংগঠন বিএমবিএ এর প্রতিনিধিদল ও শীর্ষস্থানীয় ১০টি ব্রোকারেজ হাউসের নির্বাহী কর্মকর্তারা।

এই বৈঠকের খবরে সোমবার কিছুটা উত্থান হয় শেয়ারবাজারে। এদিন ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২১ দশমিক ১৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৬৭৪ পয়েন্টে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরীয়াহ সূচক ৪ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ২৪৩ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৯৮৩ পয়েন্টে। অর্থাৎ এদিন প্রায় সব সূচক কিছুটা বাড়ে।

কিন্তু এরপর দিনই আবার বড় পতন হয়। অর্থাৎ মঙ্গলবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪১ দশমিক ২৫ পয়েন্ট কমে যায়। সূচকটির বর্তমান অবস্থান ৫ হাজার ৬৩৩ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসইর অন্য সূচক ‘ডিএসইএস’ ৭ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২৩৫ পয়েন্ট এবং ‘ডিএস-৩০’ সূচক ৩ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৮০ পয়েন্টে অবস্থান করে। অর্থাৎ আগের দিন সোমবার যে পরিমাণ উত্থান হয় ঠিক এরপর দিনই দ্বিগুণেরও বেশি সূচকের পতন হয়।

এই অবস্থায় অব্যাহত পতনের প্রতিবাদে মঙ্গলবার বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে একদল বিনিয়োগকারী মতিঝিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ভবনের সামনে বিক্ষোভ করছেন। মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় বিক্ষুব্ধ এসব বিনিয়োগকারী ব্যানার নিয়ে ডিএসই ভবনের সামনে জড়ো হন। এ সময় তারা শেয়ারবাজারের পতনের প্রতিবাদে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটির অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান, ডিএসইর চেয়ারম্যানসহ পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পদত্যাগ দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দেন। বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা বলেন, ‘টানা দরপতনে আমরা পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমরা আমাদের পুঁজি ফেরত চাই। সারা বিশ্বের পুঁজিবাজার যেখানে ঊর্ধ্বমুখী, সেখানে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে টানা দরপতন চলছে। তাদের অভিযোগ, নি¤œমানের ও স্বল্প মূলধনি কোম্পানি তালিকাভুক্ত করে বারবার বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির মুখে ফেলা হচ্ছে। এসব কোম্পানি বাজার থেকে টাকা লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে আর বিনিয়োগকারীরা নিঃস্ব হচ্ছেন। অবিলম্বে নিম্নমানের ও স্বল্প মূলধনী কোম্পানির আইপিও এর তালিকাভুক্তি বন্ধ করতে হবে।’

২০২৪ সালের পতন অতিতের সব পতনকে ছাড়িয়ে গেছে অভিযোগ করে বিক্ষোভকারীরা বলেন, ‘শেয়ারবাজারে ১৯৯৬ ও ২০১০ সালে বড় ধরনের দুটি ধস হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালে এসে বাজারে যে ধস নেমেছে তা অতীতের দুই ধসকে ছাড়িয়ে গেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার ব্যর্থতায় এটা হচ্ছে।’

একই অভিযোগ করেন একজন সাধারণ বিনিয়োগকারী মো. জাকির হোসেন। মঙ্গলবার সংবাদকে তিনি বলেন, ‘এই পতন স্বাভাবিক কোনো পতন নয়। এর পেছনে গেমলারদের হাত আছে। বিএসইসি যদি শক্ত হাতে তাদেরকে দমন করে তাহলে বাজার আবার ঘুরে দাঁড়াবে। নয়তো গেমলাররা এভাবে বাজার থেকে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে কেটে পড়বে। আর আমার মতো সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ধরা খাবে।’

বিনিয়োগকারীরা এই পতনকে মানবসৃষ্ট পতন বললেও তা মানতে নারাজ শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, শেয়ারবাজারে উত্থান-পতন খুব স্বাভাবিক বিষয়। একদিন উত্থান হবে, আরেকদিন পতন হবে এটাই নিয়ম।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম সংবাদকে বলেন, ‘আসলে ফোর্স সেল এর কারণে বাজারে পতন হচ্ছে। আর ফ্লোস প্রাইস না থাকার কারণটাও আছে। শেয়ারবাজারে উত্থান-পতন থাকবে এটাই স্বাভাবিক।’

এই পতনের পেছনে অসাধু চক্রের হাত রয়েছে- এমন আশঙ্কা করেন কিনা জানতে চাইলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আমরা খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। যদি বাজারকে প্রভাবিত করতে কারো হাত থাকে তাহলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘কেউ বাজারকে ম্যানুপুলেট করছে এটা আমি বলতে চাচ্ছি না। তবে আমার বক্তব্য হলো, বাজার ব্যবস্থায় সুশাসনের উন্নতি করতে হবে, ভালো শেয়ারের সরবরাহ বৃদ্ধি ও মিউচুয়াল ফান্ড খাতকে শক্তিশালী করতে হবে। তাহলে দীর্ঘমেয়াদে বাজারে সুফল মিলবে।’

তবে অন্য কারণ উল্লেখ্য করেন ডিবিএ এর সিনিয়র ভাইস মো. সাইফুদ্দিন। তিনি জানিয়েছেন, সুদের হার বেড়ে যাওয়ার কারণে বাজারে পতন হচ্ছে।

তিনি সংবাদকে বলেন, ‘ব্যাংক সুদের হার এখন অনেক বেশি। একজন বিনিয়োগকারী যদি বাইরে অর্থ বিনিয়োগ করে বেশি মুনাফা পায় তাহলে কেন শেয়ারবাজারে আসবে? এখন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের চেয়ে অন্য খাতে বিনিয়োগ করে বেশি আয় করা সম্ভব। তাই নতুন বিনিয়োগকারী বাজারে আসছে না। আর পুরোনো বিনিয়োগকারীরা অনেকে শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছেড়ে দিচ্ছে। এতে বাজারে ফোর্স সেলের চাপ বাড়ছে এবং পতন হচ্ছে।’

back to top