alt

অর্থ-বাণিজ্য

মামলা নয়, সমঝোতায় খেলাপি ঋণ আদায়ে ‘জোর’ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪

দেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি গ্রাহকদের বিরুদ্ধে মামলার পরিবর্তে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) মাধ্যমে ঋণ আদায় করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এজন্য একটি লক্ষ্যমাত্রাও বেঁধে দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

তবে এই প্রজ্ঞাপনের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন অনেক ব্যাংকের শীর্ষ কর্তারা। তারা বলছেন, সমঝোতা দিয়ে খেলাপিদের ধরা যাবে না। অনেকই ‘ইচ্ছাকৃতভাবেই’ খেলাপি হন তাদের সঙ্গে সমঝোতায় কাজ হবে না’। তাদেরকে ধরতে হলে আইন দিয়ে ধরতে হবে বলেই তাদের অভিমত।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গত রোববার জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অর্থ ঋণ আদালত আইন-২০০৩ এ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দ্রুত আদায়ে আদালতের বাইরে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতিকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এই আইন অনুসারে আদালত রায় বা আদেশ প্রদানের আগে মামলার যেকোনো পর্যায়ে উভয় পক্ষ আদালতের অনুমতিক্রমে বিকল্প পদ্ধতিতে মামলা নিষ্পত্তি করতে পারবে।

সেখানে আরও বলা হয়েছে, আগামী ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে প্রত্যেক ব্যাংকের খেলাপি ঋণস্থিতির ন্যূনতম ১ শতাংশ নগদ আদায় এডিআর’র মাধ্যমে করতে হবে। এই লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোর সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতেও নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংকাররা বলছেন, এই সমস্যার সমাধান করতে হলে অর্থ ঋণ আদালতে বিচারক ও অন্যান্য জনবলের সংখ্যা বাড়াতে হবে ও তাদের উপস্থিতি নিয়মিত করতে হবে। সেই সঙ্গে এসব মামলার বিচারকাজ কতদিনের মধ্যে শেষ করতে হবে, এরকম একটি সময়সীমা বেঁধে দেয়া উচিত। যারা উচ্চ আদালতে গিয়ে অর্থ ঋণ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে রিট করেন, সেসব রিটের আগে মোট ঋণের একটি অংশ জমা দিয়ে রিট করার বিধান যুক্ত করার পরামর্শ ব্যাংকারদের। তাহলে এভাবে আইনের সুযোগ নিয়ে ঋণ অনাদায়ী রাখার প্রবণতা বন্ধ হবে বলে তাদের ধারণা।

এ ব্যাপারে নামপ্রকাশ না করা শর্তে বেসরকারি ব্যাংকের একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক সংবাদকে বলেন, ‘আসলে সমঝোতা করে খেলাপি ঋণ আদায় করা সম্ভব না। মামলা হলেই সে সমঝোতায় আসে। তার আগে খেলাপিরা সমঝোতায় আসে না। ব্যাংক কখন মামলা করে যখন সব ধরনের চেষ্টা করার পরেও কোনো কাজ হয় না তখনই মামলা করে। তাই শুধু সমঝোতা দিয়ে খেলাপি ঋণ আদায় করা সম্ভব হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘সত্যি বলতে এই প্রজ্ঞাপন ব্যবসায়ীদের পক্ষে চলে গেছে। এতে তারা খেলাপি হতে আরও উৎসাহী হবে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য জারি করা নোটিশে গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বা সদিচ্ছাকে বিবেচনায় নিয়ে কেস টু কেস ভিত্তিতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা। ব্যাংকার ও গ্রাহক উভয়পক্ষের সম্মতিতে বিআইএসিসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানে তালিকাভুক্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ মধ্যস্থতাকারী অথবা অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, আইনজীবী, অথবা অন্য যেকোনো উপযুক্ত ব্যক্তি যাদের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সফলতার নজর রয়েছে তাদেরকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নির্বাচন করা।

মধ্যস্থতাকারী নিযুক্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিরোধীয় পক্ষরা ও মধ্যস্থতাকারী পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে পারিশ্রমিকের পরিমাণ, পরিশোধকারী পক্ষ ইত্যাদি নির্ধারণ এবং যথাসময়ে তা পরিশোধ নিশ্চিত করা। মধ্যস্থতাকে সফল করা এবং খেলাপি ঋণ দ্রুত আদায়ের স্বার্থে প্রয়োজনে কেস টু কেস ভিত্তিতে বিদ্যমান নির্দেশনা মোতাবেক ব্যাংক কর্তৃক ছাড় দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা, যা তাদের মোট ঋণের ৯ শতাংশ।

গত জুন পর্যন্ত এক লাখ ৫৫ হাজার ৮৮৮টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। নিষ্পত্তি হওয়া মামলায় অর্থের পরিমাণ ছিল ৯২ হাজার ২১২ কোটি টাকা। যদিও নিষ্পত্তীকৃত অর্থের অর্ধেকও আদায় করতে পারেনি ব্যাংকগুলো। এখন পর্যন্ত নিষ্পত্তীকৃত মামলার বিপরীতে মাত্র ২৩ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা আদায় হয়েছে, যা খেলাপি পাওনার মাত্র ২৫ দশমিক ৩০ শতাংশ।

২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নিষ্পত্তি মামলার পরিমাণ ছিল এক লাখ ৫০ হাজার ১৫৯টি। এসব মামলায় ৮২ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা দাবি ছিল। ওই সময় পর্যন্ত দাবির বিপরীতে আদায়ের পরিমাণ ছিল মাত্র ২১ হাজার ৮২ কোটি টাকা। অর্থাৎ ছয় মাসে মামলা নিষ্পত্তি বেড়েছে পাঁচ হাজার ৭২৯টি। দাবির পরিমাণ বেড়েছে ৯ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা। ছয় মাসে আদায় বেড়েছে দুই হাজার ২৪৬ কোটি টাকা।

২০০৩ সালে অর্থঋণ আদালত গঠন হওয়ার পর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এ আদালতে মামলা হয়েছে মোট দুই লাখ ২৮ হাজার ৪২৮টি। এসব মামলায় জড়িত অর্থের দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৭০ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকায়। গত ডিসেম্বর শেষে মামলার স্থিতি ছিল দুই লাখ ২২ হাজার ৩৪৮টি। এর বিপরীতে জড়িত অর্থের পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৪৯ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ ছয় মাসের ব্যবধানে মামলা বেড়েছে ছয় হাজার ৮০টি আর দাবিকৃত অর্থের পরিমাণ বেড়েছে ২১ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সভাপতির জেসমিন সুলতানা সংবাদকে বলেন, অর্থঋণ আদালতের পুরো বিচার প্রক্রিয়াটাই দীর্ঘমেয়াদি। মামলা নিষ্পত্তিতে সময় লাগার অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে যে কারণগুলো সব মামলার ক্ষেত্রে বলা যায়, সেটা হচ্ছে সমন জারিতে অনেক সময় লাগে। বিবাদী পক্ষ নিম্ন আদালত থেকে মামলা উচ্চ আদালতে নিয়ে যায়। উচ্চ আদালতে মামলাজট থাকায় শুনানিতে দেরি হয়। আবার অনেকে রিট মামলা করেন। রিটের চূড়ান্ত শুনানিতেও দীর্ঘদিন লেগে যায়।

ছবি

শুল্ক পদ্ধতির সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হবে: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

বাজারে ভিভোর নতুন স্মার্টফোন ভিভো ভি৫০ ফাইভ জি

ছবি

বাজারে হেলিও ব্র্যান্ডের নতুন স্মার্টফোন হেলিও ১০০

ছবি

বাজেটে মিথ্যা আশ্বাস দেয়া হবে না: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

তরুণদের মেন্টরিং করবেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের সিনিয়র নেতারা

করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ টাকা করার সুপারিশ

মোবাইল ফোনে কথা বলার ওপর শুল্ক-কর কমানোর সুপারিশ

ব্যাংকারদেরও বেতন হবে ২৩ মার্চ

ছবি

বেক্সিমকোর ৩৩ হাজার ৮৫ জন শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ

ছবি

ভারতে তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়ছে

মোবাইল ফোন সেবার ওপর ২০% শুল্ক কমানোর সুপারিশ, করপোরেট কর হ্রাসের দাবি

ছবি

সরকারের ১০ দফায় মধ্যপ্রাচ্যের টিকেটের দাম অর্ধেকে নেমেছে: আটাব

ছবি

চট্টগ্রামের ‘বিহারীপল্লী’চলছে নকশা তৈরীর কাজ , ঈদ সামনে রেখে দম ফেলার ফুরসত নেই কারিগরদের

ছবি

গেমারদের জন্য এলজি’র নতুন মনিটর

ছবি

অনলাইনে পণ্য কিনে আইফোন জেতার সুযোগ

ছবি

আরও তিনটি কারখানা পেল পরিবেশবান্ধব সনদ

১ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকার এলএনজি আমদানির অনুমোদন

মার্কিন শুল্ক ভারতের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ

স্বর্ণের দামে রেকর্ড, প্রতি ভরি ১ লাখ ৫৫ হাজার

ঈদের দিন ছাড়া প্রতিদিন খোলা থাকবে কাস্টমস হাউস ও শুল্ক স্টেশন

ছবি

ভারত থেকে আরও ৫০ হাজার টন চাল কেনার সিদ্ধান্ত

ছবি

অভিন্ন একক-অঙ্কের ভ্যাট হার চালুর আহ্বান জানিয়েছে ডিসিসিআই

স্পট অ্যাসেসমেন্ট কার্যক্রম শুরু করেছে এনবিআর

আগামী দিনে সামগ্রিক শুল্ক কাঠামো হ্রাস পেতে পারে: এনবিআর চেয়ারম্যান

অর্থবছরের আট মাস ১২ বছরে সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়ন

ছবি

বাংলাদেশের বাজারে ইউমিডিজির নতুন স্মার্টফোন ‘জি৯ ফাইভজি’

ছবি

বাংলালিংকের নতুন সিইও ইওহান বুসে

ছবি

২০ রোজার মধ্যে শ্রমিকদের ঈদ বোনাস পরিশোধের দাবি গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির

ছবি

করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ করার প্রস্তাব ঢাকা চেম্বারের

ছবি

ক্রেডিট কার্ডে বিদেশে সবচেয়ে বেশি খরচ যুক্তরাষ্ট্রে

শেয়ারবাজারে সামান্য উত্থান

আপেল, আঙুর, নাশপাতি ও কমলা আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক কমল

ছবি

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ও বহুজাতিক কোম্পানীগুলোকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য আবেদন ডিবিএ’র

ভোজ্যতেলের করসুবিধা ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর সুপারিশ

ছবি

রংপুরে চালের দাম ৬ থেকে ৮ টাকা কেজিতে বেড়েছে

ছবি

ভোজ্যতেলের করসুবিধা ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর সুপারিশ করলো ট্যারিফ কমিশন

tab

অর্থ-বাণিজ্য

মামলা নয়, সমঝোতায় খেলাপি ঋণ আদায়ে ‘জোর’ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪

দেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি গ্রাহকদের বিরুদ্ধে মামলার পরিবর্তে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) মাধ্যমে ঋণ আদায় করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এজন্য একটি লক্ষ্যমাত্রাও বেঁধে দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

তবে এই প্রজ্ঞাপনের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন অনেক ব্যাংকের শীর্ষ কর্তারা। তারা বলছেন, সমঝোতা দিয়ে খেলাপিদের ধরা যাবে না। অনেকই ‘ইচ্ছাকৃতভাবেই’ খেলাপি হন তাদের সঙ্গে সমঝোতায় কাজ হবে না’। তাদেরকে ধরতে হলে আইন দিয়ে ধরতে হবে বলেই তাদের অভিমত।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গত রোববার জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অর্থ ঋণ আদালত আইন-২০০৩ এ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দ্রুত আদায়ে আদালতের বাইরে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতিকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এই আইন অনুসারে আদালত রায় বা আদেশ প্রদানের আগে মামলার যেকোনো পর্যায়ে উভয় পক্ষ আদালতের অনুমতিক্রমে বিকল্প পদ্ধতিতে মামলা নিষ্পত্তি করতে পারবে।

সেখানে আরও বলা হয়েছে, আগামী ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে প্রত্যেক ব্যাংকের খেলাপি ঋণস্থিতির ন্যূনতম ১ শতাংশ নগদ আদায় এডিআর’র মাধ্যমে করতে হবে। এই লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোর সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতেও নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংকাররা বলছেন, এই সমস্যার সমাধান করতে হলে অর্থ ঋণ আদালতে বিচারক ও অন্যান্য জনবলের সংখ্যা বাড়াতে হবে ও তাদের উপস্থিতি নিয়মিত করতে হবে। সেই সঙ্গে এসব মামলার বিচারকাজ কতদিনের মধ্যে শেষ করতে হবে, এরকম একটি সময়সীমা বেঁধে দেয়া উচিত। যারা উচ্চ আদালতে গিয়ে অর্থ ঋণ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে রিট করেন, সেসব রিটের আগে মোট ঋণের একটি অংশ জমা দিয়ে রিট করার বিধান যুক্ত করার পরামর্শ ব্যাংকারদের। তাহলে এভাবে আইনের সুযোগ নিয়ে ঋণ অনাদায়ী রাখার প্রবণতা বন্ধ হবে বলে তাদের ধারণা।

এ ব্যাপারে নামপ্রকাশ না করা শর্তে বেসরকারি ব্যাংকের একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক সংবাদকে বলেন, ‘আসলে সমঝোতা করে খেলাপি ঋণ আদায় করা সম্ভব না। মামলা হলেই সে সমঝোতায় আসে। তার আগে খেলাপিরা সমঝোতায় আসে না। ব্যাংক কখন মামলা করে যখন সব ধরনের চেষ্টা করার পরেও কোনো কাজ হয় না তখনই মামলা করে। তাই শুধু সমঝোতা দিয়ে খেলাপি ঋণ আদায় করা সম্ভব হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘সত্যি বলতে এই প্রজ্ঞাপন ব্যবসায়ীদের পক্ষে চলে গেছে। এতে তারা খেলাপি হতে আরও উৎসাহী হবে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য জারি করা নোটিশে গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বা সদিচ্ছাকে বিবেচনায় নিয়ে কেস টু কেস ভিত্তিতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা। ব্যাংকার ও গ্রাহক উভয়পক্ষের সম্মতিতে বিআইএসিসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানে তালিকাভুক্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ মধ্যস্থতাকারী অথবা অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, আইনজীবী, অথবা অন্য যেকোনো উপযুক্ত ব্যক্তি যাদের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সফলতার নজর রয়েছে তাদেরকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নির্বাচন করা।

মধ্যস্থতাকারী নিযুক্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিরোধীয় পক্ষরা ও মধ্যস্থতাকারী পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে পারিশ্রমিকের পরিমাণ, পরিশোধকারী পক্ষ ইত্যাদি নির্ধারণ এবং যথাসময়ে তা পরিশোধ নিশ্চিত করা। মধ্যস্থতাকে সফল করা এবং খেলাপি ঋণ দ্রুত আদায়ের স্বার্থে প্রয়োজনে কেস টু কেস ভিত্তিতে বিদ্যমান নির্দেশনা মোতাবেক ব্যাংক কর্তৃক ছাড় দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা, যা তাদের মোট ঋণের ৯ শতাংশ।

গত জুন পর্যন্ত এক লাখ ৫৫ হাজার ৮৮৮টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। নিষ্পত্তি হওয়া মামলায় অর্থের পরিমাণ ছিল ৯২ হাজার ২১২ কোটি টাকা। যদিও নিষ্পত্তীকৃত অর্থের অর্ধেকও আদায় করতে পারেনি ব্যাংকগুলো। এখন পর্যন্ত নিষ্পত্তীকৃত মামলার বিপরীতে মাত্র ২৩ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা আদায় হয়েছে, যা খেলাপি পাওনার মাত্র ২৫ দশমিক ৩০ শতাংশ।

২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নিষ্পত্তি মামলার পরিমাণ ছিল এক লাখ ৫০ হাজার ১৫৯টি। এসব মামলায় ৮২ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা দাবি ছিল। ওই সময় পর্যন্ত দাবির বিপরীতে আদায়ের পরিমাণ ছিল মাত্র ২১ হাজার ৮২ কোটি টাকা। অর্থাৎ ছয় মাসে মামলা নিষ্পত্তি বেড়েছে পাঁচ হাজার ৭২৯টি। দাবির পরিমাণ বেড়েছে ৯ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা। ছয় মাসে আদায় বেড়েছে দুই হাজার ২৪৬ কোটি টাকা।

২০০৩ সালে অর্থঋণ আদালত গঠন হওয়ার পর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এ আদালতে মামলা হয়েছে মোট দুই লাখ ২৮ হাজার ৪২৮টি। এসব মামলায় জড়িত অর্থের দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৭০ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকায়। গত ডিসেম্বর শেষে মামলার স্থিতি ছিল দুই লাখ ২২ হাজার ৩৪৮টি। এর বিপরীতে জড়িত অর্থের পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৪৯ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ ছয় মাসের ব্যবধানে মামলা বেড়েছে ছয় হাজার ৮০টি আর দাবিকৃত অর্থের পরিমাণ বেড়েছে ২১ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সভাপতির জেসমিন সুলতানা সংবাদকে বলেন, অর্থঋণ আদালতের পুরো বিচার প্রক্রিয়াটাই দীর্ঘমেয়াদি। মামলা নিষ্পত্তিতে সময় লাগার অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে যে কারণগুলো সব মামলার ক্ষেত্রে বলা যায়, সেটা হচ্ছে সমন জারিতে অনেক সময় লাগে। বিবাদী পক্ষ নিম্ন আদালত থেকে মামলা উচ্চ আদালতে নিয়ে যায়। উচ্চ আদালতে মামলাজট থাকায় শুনানিতে দেরি হয়। আবার অনেকে রিট মামলা করেন। রিটের চূড়ান্ত শুনানিতেও দীর্ঘদিন লেগে যায়।

back to top