alt

অর্থ-বাণিজ্য

পিছিয়ে গেল রূপপুরের বিদ্যুৎ উৎপাদন

প্রতিনিধি, ঈশ্বরদী (পাবনা) : সোমবার, ২০ মে ২০২৪

পরিকল্পনা অনুসারে শেষ হচ্ছে না রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ। আগামী ডিসেম্বর মাসে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। ২০২৫ সালের শেষ দিকে উৎপাদনে যেতে পারে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট। সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প।

রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ ব্যাহত হয়েছে। সময়মতো শেষ হয়নি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের কাজও।এমন পরিস্থিতিতে গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দেশের যৌথ সমন্বয় কমিটির সভায় প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।

এছাড়া কাজে গতি আনতে ডলারের পরিবর্তে টাকায় বিল পরিশোধের বিষয়ে মূল চুক্তির অধীন এ মাসের শুরুর দিকে একটি অতিরিক্ত চুক্তি হয়েছে। রূপপুর প্রকল্পের খরচের জন্য বছরে বরাদ্দ করা মোট অর্থের ১০ শতাংশ দিতে হয় বাংলাদেশ সরকারকে।

রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের দায়িত্বশীল তিনজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ডলার-সংকটের কারণে এটি নিয়মিত পরিশোধ করা যাচ্ছিল না। এতে ১ কোটি ৬০ লাখ ডলারের জরিমানা (বিলম্ব ফি) হয়। যদিও তা মওকুফ করে দিয়েছে রুশ ঠিকাদার। পরবর্তী বিল নিয়মিত পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশি টাকা নিতে রাজি হয়েছে ঠিকাদারি সংস্থা। টাকা জমা দিতে সোনালী ব্যাংকের গুলশান শাখায় একটি ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে।

তবে পাওনা অর্থের কত ভাগ বাংলাদেশি টাকায় পরিশোধ করা যাবে, তা চুক্তিতে নির্ধারণ করা নেই। ঠিকাদার তার প্রয়োজন বুঝে নিয়মিত চাহিদা জানাবে। রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী ইউনিয়নে রূপপুরে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পরমাণু শক্তি কমিশন।

এ প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট নির্মাণ করছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু সংস্থা রোসাটমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল প্রকল্পের মেয়াদ। এটি বাড়িয়ে ২০২৭ সালের ডিসেম্বর করা হয়েছে। তবে চুক্তি অনুসারে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও খরচ বাড়াতে পারবে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

এ প্রকল্প শেষ করার আগে একই এলাকায় আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। ২০১৩ সালের ২ অক্টোবর রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রথম পর্যায়ের কাজ উদ্বোধন করা হয়। মূল কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। পরিকল্পনা অনুসারে প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কথা ছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। আর গত বছর ডিসেম্বরে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর কথা ছিল। এরপর এটি পিছিয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে নেয়া হয়।

অন্যদিকে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর কথা ছিল এ বছরের ডিসেম্বরে। এটিও পিছিয়ে ২০২৫ সালে নেয়া হয়েছিল। এখন দুটি ইউনিটেরই উৎপাদন পেছাচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী ডিসেম্বরে চুল্লিপাত্রে জ্বালানি প্রবেশ করানো শুরুবে, চলবে বেশ কিছুদিন ধরে। তিন মাস পরে এ কেন্দ্রে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হতে পারে।

একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলতে থাকবে। সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করে রূপপুরের প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হতে পারে আগামী বছরের ডিসেম্বরে। এরপরে দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদন শুরু হতে পারে।

কাজে দেরির বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান রোসাটম। রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক বলেন, বিশ্বের কোথাও পারমাণবিক প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষ করার নজির নেই। তবে করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো বৈশ্বিক পরিস্থিতি তৈরি না হলে রূপপুর প্রকল্প সময়মতো শেষ হতে পারত। ওই পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আনা, বিশেষজ্ঞদের আসা-যাওয়া ব্যাহত হয়েছে। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের কাজও শেষ হয়নি। নতুন সময়সীমার মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদন শুরু হবে।

রূপপুর প্রকল্প সূত্র বলছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ইউরোপের দেশগুলো রূপপুরের জন্য তৈরি করা যন্ত্রপাতি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ইউক্রেন থেকে যেসব যন্ত্রপাতি আনার কথা, সেটাও বাতিল করে দেয় রাশিয়া। এরপর বিকল্প উৎস থেকে এসব যন্ত্রপাতি আনা হয়। এসব যন্ত্রপাতির বড় অংশ সরবরাহ করে চীন। রাশিয়া থেকে রূপপুরের পণ্যবাহী জাহাজ আসা নিয়েও জটিলতা ছিল। এ

কবার জাহাজ ফেরত পাঠানোর ঘটনা ঘটেছে। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের কাজটি করছে দেশের একমাত্র বিদ্যুৎ সঞ্চালন সংস্থা পিজিসিবি। ২০১৮ সালের এপ্রিলে কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজ শুরু হয়েছে প্রায় তিন বছর পর। ভারতের এলওসি চুক্তির আওতায় কাজটি হওয়ার কথা ছিল। শুরুতে এক্সিম ব্যাংক থেকে ঋণের ছাড়পত্র পেতে চলে যায় ১৩ মাস। তাদের মনোনীত ঠিকাদার অনেক বেশি দরপ্রস্তাব করে। এরপর নিজস্ব অর্থায়নে কাজটি করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ডলার-সংকটের কারণে পণ্য আমদানির ঋণপত্র খোলা ও ঠিকাদারের অগ্রিম প্রদানে দেরি হয়েছে।

পিজিসিবি সূত্র বলছে, উৎপাদন শুরুর আগে সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ হবে। প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে রূপপুর-বাঘাবাড়ী ৬০ কিলোমিটার, রূপপুর-বগুড়া ১০২ কিলোমিটার ও রূপপুর-গোপালগঞ্জ ১৪৪ কিলোমিটার লাইন করা হচ্ছে। এর মধ্যে স্থলভাগের কাজ প্রায় শেষের দিকে। তবে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পদ্মা পারাপারের দুই কিলোমিটার কাজ বাকি আছে। নদীতে চারটি টাওয়ারের মধ্যে দুটি বসানো হয়েছে, বাকি দুটি বসানোর প্রস্তুতি নেয়া আছে। আর দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে রূপপুর-ঢাকা ১৪৭ কিলোমিটার লাইনের কাজ চলছে। এর মধ্যে যমুনা নদী পারাপারে ১৪ কিলোমিটার লাইন আছে। রিভার ক্রসিং সঞ্চালন লাইন স্কিমের দায়িত্বে আছেন পিজিসিবির স্কিম পরিচালক (প্রধান প্রকৌশলী) মো. দেলোয়ার হোসেন।

তিনি বলেন, নদী পারাপারের কাজটা জটিল। ডিসেম্বরের মধ্যে পদ্মা পারাপার শেষ করে প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ সঞ্চালনের কাজ শেষ হবে। আর আগামী বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিটের সঞ্চালন লাইন শেষ করা হবে। জ্বালানি মজুত আছে রূপপুরেরূপপুর প্রকল্পে খরচ হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দিচ্ছে ২২ হাজার ৫২ কোটি ৯১ লাখ ২৭ হাজার টাকা।

আর রাশিয়া থেকে ঋণ-সহায়তা হিসেবে আসছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। ২০২১ সালের অক্টোবরে রূপপুরে প্রথম ইউনিটের ভৌত কাঠামোর ভেতরে চুল্লিপাত্র স্থাপন করা হয়। চুল্লিপাত্র হচ্ছে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল যন্ত্র। এই যন্ত্রের মধ্যে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি হিসেবে ইউরেনিয়াম লোড করা হয়।

গত বছরের অক্টোবরে বসানো হয় দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লিপাত্র। রূপপুর প্রকল্পের বিভাগীয় প্রধান (প্রশাসন ও অর্থ) অলক চক্রবর্তী বলেন, এখন নিয়মিত জাহাজ আসছে, মান বজায় রেখে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি রূপপুরে পৌঁছাচ্ছে। এখন আর কাজে দেরি হওয়ার কোনো শঙ্কা নেই। গত বছরের ৫ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের হাতে পারমাণবিক জ্বালানির প্রথম চালান তুলে দেয় রাশিয়া। এর মধ্য দিয়ে পারমাণবিক স্থাপনার স্বীকৃতি পায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।

৩৩তম সদস্য হিসেবে পারমাণবিক ক্লাবে যুক্ত হয় বাংলাদেশ। প্রথম ইউনিটের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি এখন রূপপুরে মজুত আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, জ্বালানি প্রবেশ করানোর পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে এক বছর লেগে যায়।

তার মানে নির্ধারিত সময়ের দুই বছর পর বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। দেশে দেরির কারণ ছিল না, বৈশ্বিক পরিস্থিতি মূলত প্রভাব ফেলেছে। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে পারলে ভালো দৃষ্টান্ত হতো। এখন নতুন সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টায় জোর দিতে হবে।

ছবি

প্রসাধনীতে শুল্ক বাড়ায় রাজস্ব নয়, বাড়বে অর্থপাচার-চোরাচালান: বিসিটিআইএ

ছবি

৪০ শতাংশ কৃষক যথাযথ মজুরি পান না: বিবিএসের জরিপ

বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ১১ ব্যাংকের সম্পদের মান যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত

চট্টগ্রামে সমন্বিত তৈরি পোশাক শিল্পাঞ্চল গড়ার প্রস্তাব বিজিএমইএর

অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেছেন ১৭ লাখের বেশি করদাতা: এনবিআর

ছবি

বাক্কো ও আকিজ টেলিকমের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত

মানবতাবিরোধী অপরাধ: শেখ হাসিনাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি সোমবার

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল ছয় মাসের জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার অনুমোদন

ছবি

সব সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমলো

ছবি

‘শাটডাউন’ এর মধ্যে কাস্টমস চাকরিকে অত্যাবশ্যক ঘোষণা করল সরকার

ছবি

স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করলে তদন্তে ভয় নেই’— এনবিআর ইস্যুতে অর্থ উপদেষ্টার মন্তব্য

ছবি

বিমানবন্দরের ১৬ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে কার্যক্রম গুটাতে বলল কর্তৃপক্ষ

ছবি

অর্থবছরের শেষ দিন শেয়ারবাজারে পতন

ছবি

বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের নতুন ডিভিশন ডিরেক্টর জ্যঁ পেম

ছবি

রাজস্ব আদায় গতবারের চেয়ে বেশি হবে এটা নিশ্চিত: এনবিআর চেয়ারম্যান

রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি ও ভর্তুকি কমানোর পরামর্শ আইএমএফের

মঙ্গলবার ব্যাংক হলিডে, লেনদেন বন্ধ থাকবে

পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে: ডিবিএ সভাপতি

ছবি

দাম কমেছে অপো এ৩এক্স স্মার্টফোনের

ছবি

দুদক পরিচয়ে চাঁদাবাজি, গ্রেপ্তার বেড়ে ৫

ছবি

রাজস্ব আদায়ে জোর, ভর্তুকি কমানোর পরামর্শ আইএমএফের

ছবি

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩১.৩১ বিলিয়ন ডলার: বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

রিজার্ভের নতুন হিসাব প্রকাশ: নিট রিজার্ভে উল্লেখযোগ্য উল্লম্ফন

স্টার্লিংয়ের এফডিআরের টাকা ফেরত দেয়নি ফারইস্ট ফাইন্যান্স, তদন্তে বিএসইসি

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কে পোশাকের দাম বাড়ছে: এইচঅ্যান্ডএম সিইও

ছবি

আলোচনার আশা ভেঙে সচিবালয় থেকে ফিরে গেলেন এনবিআর আন্দোলনকারীরা

লজিস্টিক পলিসির বাস্তবায়নে সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যান অপরিহার্য: ঢাকা চেম্বার

পরপর পাঁচ কার্যদিবস উত্থানে শেয়ারবাজার

ছবি

জাপান ও ভারতে তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়ছে

ছবি

‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচিতে কাস্টমস কার্যক্রমে অচলাবস্থা

ছবি

‘শর্ত ছাড়া আন্দোলন প্রত্যাহার করুন’—ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর অনুরোধ

ছবি

বিদেশিদের হস্তান্তরের আগপর্যন্ত এনসিটি পরিচালনায় আলোচনায় নৌবাহিনী

ব্যাংকিং খাত বর্তমানে সংকটময় অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে: ডিসিসিআই

বাংলাদেশের কাপড়-পাট-সুতার পণ্য আমদানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা

বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন ওয়েবসাইট চালু করলো বিডা

ছবি

কৃষি যন্ত্রপাতি আমদানিতে হয়রানি দূর করার দাবি

tab

অর্থ-বাণিজ্য

পিছিয়ে গেল রূপপুরের বিদ্যুৎ উৎপাদন

প্রতিনিধি, ঈশ্বরদী (পাবনা)

সোমবার, ২০ মে ২০২৪

পরিকল্পনা অনুসারে শেষ হচ্ছে না রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ। আগামী ডিসেম্বর মাসে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। ২০২৫ সালের শেষ দিকে উৎপাদনে যেতে পারে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট। সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প।

রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ ব্যাহত হয়েছে। সময়মতো শেষ হয়নি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের কাজও।এমন পরিস্থিতিতে গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দেশের যৌথ সমন্বয় কমিটির সভায় প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।

এছাড়া কাজে গতি আনতে ডলারের পরিবর্তে টাকায় বিল পরিশোধের বিষয়ে মূল চুক্তির অধীন এ মাসের শুরুর দিকে একটি অতিরিক্ত চুক্তি হয়েছে। রূপপুর প্রকল্পের খরচের জন্য বছরে বরাদ্দ করা মোট অর্থের ১০ শতাংশ দিতে হয় বাংলাদেশ সরকারকে।

রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের দায়িত্বশীল তিনজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ডলার-সংকটের কারণে এটি নিয়মিত পরিশোধ করা যাচ্ছিল না। এতে ১ কোটি ৬০ লাখ ডলারের জরিমানা (বিলম্ব ফি) হয়। যদিও তা মওকুফ করে দিয়েছে রুশ ঠিকাদার। পরবর্তী বিল নিয়মিত পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশি টাকা নিতে রাজি হয়েছে ঠিকাদারি সংস্থা। টাকা জমা দিতে সোনালী ব্যাংকের গুলশান শাখায় একটি ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে।

তবে পাওনা অর্থের কত ভাগ বাংলাদেশি টাকায় পরিশোধ করা যাবে, তা চুক্তিতে নির্ধারণ করা নেই। ঠিকাদার তার প্রয়োজন বুঝে নিয়মিত চাহিদা জানাবে। রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী ইউনিয়নে রূপপুরে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পরমাণু শক্তি কমিশন।

এ প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট নির্মাণ করছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু সংস্থা রোসাটমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল প্রকল্পের মেয়াদ। এটি বাড়িয়ে ২০২৭ সালের ডিসেম্বর করা হয়েছে। তবে চুক্তি অনুসারে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও খরচ বাড়াতে পারবে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

এ প্রকল্প শেষ করার আগে একই এলাকায় আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। ২০১৩ সালের ২ অক্টোবর রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রথম পর্যায়ের কাজ উদ্বোধন করা হয়। মূল কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। পরিকল্পনা অনুসারে প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কথা ছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। আর গত বছর ডিসেম্বরে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর কথা ছিল। এরপর এটি পিছিয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে নেয়া হয়।

অন্যদিকে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর কথা ছিল এ বছরের ডিসেম্বরে। এটিও পিছিয়ে ২০২৫ সালে নেয়া হয়েছিল। এখন দুটি ইউনিটেরই উৎপাদন পেছাচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী ডিসেম্বরে চুল্লিপাত্রে জ্বালানি প্রবেশ করানো শুরুবে, চলবে বেশ কিছুদিন ধরে। তিন মাস পরে এ কেন্দ্রে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হতে পারে।

একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলতে থাকবে। সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করে রূপপুরের প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হতে পারে আগামী বছরের ডিসেম্বরে। এরপরে দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদন শুরু হতে পারে।

কাজে দেরির বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান রোসাটম। রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক বলেন, বিশ্বের কোথাও পারমাণবিক প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষ করার নজির নেই। তবে করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো বৈশ্বিক পরিস্থিতি তৈরি না হলে রূপপুর প্রকল্প সময়মতো শেষ হতে পারত। ওই পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আনা, বিশেষজ্ঞদের আসা-যাওয়া ব্যাহত হয়েছে। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের কাজও শেষ হয়নি। নতুন সময়সীমার মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদন শুরু হবে।

রূপপুর প্রকল্প সূত্র বলছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ইউরোপের দেশগুলো রূপপুরের জন্য তৈরি করা যন্ত্রপাতি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ইউক্রেন থেকে যেসব যন্ত্রপাতি আনার কথা, সেটাও বাতিল করে দেয় রাশিয়া। এরপর বিকল্প উৎস থেকে এসব যন্ত্রপাতি আনা হয়। এসব যন্ত্রপাতির বড় অংশ সরবরাহ করে চীন। রাশিয়া থেকে রূপপুরের পণ্যবাহী জাহাজ আসা নিয়েও জটিলতা ছিল। এ

কবার জাহাজ ফেরত পাঠানোর ঘটনা ঘটেছে। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের কাজটি করছে দেশের একমাত্র বিদ্যুৎ সঞ্চালন সংস্থা পিজিসিবি। ২০১৮ সালের এপ্রিলে কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজ শুরু হয়েছে প্রায় তিন বছর পর। ভারতের এলওসি চুক্তির আওতায় কাজটি হওয়ার কথা ছিল। শুরুতে এক্সিম ব্যাংক থেকে ঋণের ছাড়পত্র পেতে চলে যায় ১৩ মাস। তাদের মনোনীত ঠিকাদার অনেক বেশি দরপ্রস্তাব করে। এরপর নিজস্ব অর্থায়নে কাজটি করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ডলার-সংকটের কারণে পণ্য আমদানির ঋণপত্র খোলা ও ঠিকাদারের অগ্রিম প্রদানে দেরি হয়েছে।

পিজিসিবি সূত্র বলছে, উৎপাদন শুরুর আগে সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ হবে। প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে রূপপুর-বাঘাবাড়ী ৬০ কিলোমিটার, রূপপুর-বগুড়া ১০২ কিলোমিটার ও রূপপুর-গোপালগঞ্জ ১৪৪ কিলোমিটার লাইন করা হচ্ছে। এর মধ্যে স্থলভাগের কাজ প্রায় শেষের দিকে। তবে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পদ্মা পারাপারের দুই কিলোমিটার কাজ বাকি আছে। নদীতে চারটি টাওয়ারের মধ্যে দুটি বসানো হয়েছে, বাকি দুটি বসানোর প্রস্তুতি নেয়া আছে। আর দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে রূপপুর-ঢাকা ১৪৭ কিলোমিটার লাইনের কাজ চলছে। এর মধ্যে যমুনা নদী পারাপারে ১৪ কিলোমিটার লাইন আছে। রিভার ক্রসিং সঞ্চালন লাইন স্কিমের দায়িত্বে আছেন পিজিসিবির স্কিম পরিচালক (প্রধান প্রকৌশলী) মো. দেলোয়ার হোসেন।

তিনি বলেন, নদী পারাপারের কাজটা জটিল। ডিসেম্বরের মধ্যে পদ্মা পারাপার শেষ করে প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ সঞ্চালনের কাজ শেষ হবে। আর আগামী বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিটের সঞ্চালন লাইন শেষ করা হবে। জ্বালানি মজুত আছে রূপপুরেরূপপুর প্রকল্পে খরচ হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দিচ্ছে ২২ হাজার ৫২ কোটি ৯১ লাখ ২৭ হাজার টাকা।

আর রাশিয়া থেকে ঋণ-সহায়তা হিসেবে আসছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। ২০২১ সালের অক্টোবরে রূপপুরে প্রথম ইউনিটের ভৌত কাঠামোর ভেতরে চুল্লিপাত্র স্থাপন করা হয়। চুল্লিপাত্র হচ্ছে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল যন্ত্র। এই যন্ত্রের মধ্যে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি হিসেবে ইউরেনিয়াম লোড করা হয়।

গত বছরের অক্টোবরে বসানো হয় দ্বিতীয় ইউনিটের চুল্লিপাত্র। রূপপুর প্রকল্পের বিভাগীয় প্রধান (প্রশাসন ও অর্থ) অলক চক্রবর্তী বলেন, এখন নিয়মিত জাহাজ আসছে, মান বজায় রেখে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি রূপপুরে পৌঁছাচ্ছে। এখন আর কাজে দেরি হওয়ার কোনো শঙ্কা নেই। গত বছরের ৫ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের হাতে পারমাণবিক জ্বালানির প্রথম চালান তুলে দেয় রাশিয়া। এর মধ্য দিয়ে পারমাণবিক স্থাপনার স্বীকৃতি পায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র।

৩৩তম সদস্য হিসেবে পারমাণবিক ক্লাবে যুক্ত হয় বাংলাদেশ। প্রথম ইউনিটের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি এখন রূপপুরে মজুত আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, জ্বালানি প্রবেশ করানোর পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে এক বছর লেগে যায়।

তার মানে নির্ধারিত সময়ের দুই বছর পর বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। দেশে দেরির কারণ ছিল না, বৈশ্বিক পরিস্থিতি মূলত প্রভাব ফেলেছে। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে পারলে ভালো দৃষ্টান্ত হতো। এখন নতুন সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টায় জোর দিতে হবে।

back to top