alt

অর্থ-বাণিজ্য

প্রস্তাবিত বাজেট বে-নজির বাজেট : দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : সোমবার, ১০ জুন ২০২৪

২০২৪-২০২৫ সালের প্রস্তাবিত বাজেটকে একটি বে-নজির বাজেট বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সিপিডির দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার যে নিয়ম রাখা হয়েছে তা সংবিধান পরিপন্থি। এই বাজেট বে-নজির বাজেট।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫ ও বিরাজমান পরিস্থিতি: অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের প্রাপ্তি’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান ব্রিফিং এ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে আমরা কোথাও কোনো স্বস্তি দেখি না। চলমান সময়ে পিছিয়ে পড়া মানুষজনকে সুরক্ষা দিতে হয়। বিভিন্ন খাতে দেখা গেছে প্রস্তাবিত বাজেটে সুরক্ষার বিষয়ে আশ্বস্ত হওয়ার কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে জ্বালানি খাত, ব্যাংক খাত ও পুঁজিবাজারসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে রাজনৈতিক অঙ্গীকার দেখা যায়নি। প্রস্তাবিত বাজেটে সুরক্ষা, স্থিতিশীলতা ও সংস্কারের বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি এবং আসক্ত হওয়ার মতো কিছু পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের ঘোষিত নীতির সঙ্গে বাজেটে অন্তত পাঁচটি ক্ষেত্রে বড় ধরনের ব্যত্যয় হয়েছে। ৭ জানুয়ারিতে যে নির্বাচন প্রক্রিয়া হয়েছে সেখানে বর্তমান শাসক দল যে ইশতেহার দিয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে তারা ইশতিহারের প্রতি বিশ্বস্ত থাকেনি। প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচনী ইশতিহারের বড় ধরনের বরখেলাপ হয়েছে। বর্তমান সরকারের যে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা আছে তার সঙ্গে কিন্তু বর্তমান প্রস্তাবিত বাজেটের কৌশল এবং বরাদ্দের মিল নেই।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের যে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তা প্রস্তাবিত বাজেটে মেলানো হয়নি। প্রস্তাবিত বাজেটে যেসব নীতি ও অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছিল তার সঙ্গে বাজেটের বরাদ্দ মিলে না। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব পদ্ধতিসহ বিভিন্ন বিষয় দেখলে বোঝা যায় সাধারণ মানুষের নয় ব্যক্তি বিশেষের সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আয়করে কোথায় ছাড় আছে সেটা বাজেটে বলা হয়েছে। বড় ভাবে ছাড় কমানো হয়েছে পরোক্ষ করে। গার্মেন্টস, জ্বালানি, মাইক্রোক্রেডিটের মতো প্রত্যক্ষ করের ছাড় ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেই, আগামীতে কী করা হবে এই বিষয়ে দিক নির্দেশনা নেই। আয়করের ছাড়ের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেই।

অনুষ্ঠানে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, বর্তমান বাজেট একটি উচ্চাভিলাষী, ফাঁকাবুলির বাজেট। পাশাপাশি এটি বৈষম্যমূলক বাজেট, সেইসঙ্গে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য একটি অর্থহীন বাজেট এটি।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এই বাজেটে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। এটি এমন একটি বাজেট, যা জবাবদিহিতা হীন। এটি দুর্নীতি সহায়ক ও অনৈতিক বাজেট। এই কথাগুলো বলার অবশ্যই যৌক্তিক কারণ আছে। প্রথমে যদি কালো টাকার বিষয়টি বলি, কালো টাকাকে বৈধতা দেওয়া যাবে না– এমন ঘোষণা কিন্তু আমাদের আছে। আপনি সৎভাবে উপার্জন করে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কর দেবেন, অন্যজন অনৈতিকতার সঙ্গে দুর্নীতি করে প্রচুর পরিমাণে আয় করে নামমাত্র ১৫ শতাংশ কর দেবেন। আবার এসব বিষয় নিয়ে কোনো প্রশ্নও তোলা যাবে না।

তিনি বলেন, যারা দুর্নীতি করছে তাদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে, লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে সারা বছর অবৈধভাবে আয় করার। বছর শেষে রাজস্ব বিভাগ তাদের ক্লিন সার্টিফিকেট দেবে। অনেকে আবার শুদ্ধাচার পুরস্কার পাবেন, সেরা করদাতার পুরস্কারও পাবেন। এর মাধ্যমে দেশবাসীকে বোঝানো হচ্ছে তোমরা চাইলে এই পথটা অনুসরণ করো। এসবের কারণে আমরা আগামী প্রজন্মকে বলার সাহস পাব না যে তোমরা ভালো আদর্শ অনুসরণ করো। এই বলার সাহসটা আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। নৈতিকতার যে ভিত্তি তা সম্পূর্ণভাবে নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে।

কালো টাকা সাদা করার বিষয়টি নিয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে জানিয়ে তৌফিকুল ইসলাম বলেন, বলা হয়েছে ১৫ শতাংশ নগদ অর্থ দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করা যাবে। কিন্তু গুলশান এলাকায় ফ্ল্যাট কিনলে ২.৩৮ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে আপনি বের হয়ে যেতে পারবেন। পুরো বৈধ হবে, একই সঙ্গে দেখা যাচ্ছে ১৫ শতাংশ নয় ২-৩ শতাংশ দিয়ে আপনি বের হয়ে যেতে পারবেন। সম্পূর্ণরূপে ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছে। কাউকে কেউ কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না। এটা মানা যায় না।

বাজেটে অর্থনৈতিক অবস্থা পুনরুদ্ধারের কথা বলা হয়েছে। আমরা খুবই আশাবাদী। এর থেকে চমৎকার স্বপ্ন আর হয় না। কিন্তু এটা বাস্তবায়নে কোনো দিক নির্দেশনা নেই। ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। যে কারণে আমরা অর্থনৈতিক সংকটে পড়লাম। সেটা ভালোভাবে চিহ্নিত করা হয়নি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথা বলে বের হয়ে যাওয়া হয়েছে। ব্যাংকিং সেক্টর, সুশাসন নিয়ে আলোচনা নেই। বাজারে অনিয়ম, অর্থপাচার রোধে কী হবে, দায় দেনার ক্রাইসিস চিহ্নিত করা হয়নি

বড় আকারে আমরা ঋণের পরিস্থিতিতে পড়েছি সেটা স্বীকার করা হয়নি। গত অর্থবছরে বিদেশি ঋণশোধ করার জন্য আমাদের রাজস্ব যথেষ্ট ছিল না। আমরা প্রায় সাড়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ করে পরিশোধ করেছি।

অনুষ্ঠানে সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান ব্রিফিংয়ে মূল প্রবন্ধে বলেন, আয়করে কোথায় ছাড় আছে সেটা বাজেটে বলা হয়েছে। বড়ভাবে ছাড় কমানো হয়েছে পরোক্ষ করে। গার্মেন্টস, জ্বালানি, মাইক্রো ক্রেডিটের মতো প্রত্যক্ষ কর ছাড়ের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেই, আগামীতে কী করা হবে এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা নেই। আয়কর ছাড়ের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেই।

কালো টাকা সাদা করার বিষয়টি নিয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ১৫ শতাংশ নগদ অর্থ দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করা যাবে। কিন্তু গুলশান এলাকায় ফ্ল্যাট কিনলে ২.৩৮ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে আপনি বের হয়ে যেতে পারবেন। পুরো বৈধ হবে, সেক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ১৫ শতাংশ নয়, ২-৩ শতাংশ দিয়ে আপনি বের হয়ে যেতে পারবেন। একইসঙ্গে সম্পূর্ণরূপে ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছে। কাউকে কেউ কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না, এটা মানা যায় না।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন

কোটা আন্দোলন : সিলেটে এক সপ্তাহে ব্যবসায়ীদের ‘১৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি’

ইন্টারনেট বন্ধের কারণে কাজ হারিয়ে ফ্রিল্যান্সারদের আহাজারি

সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান চালু

চালু হচ্ছে শিল্প-কারখানা

নতুন মুদ্রানীতি: নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

মতিঝিলে পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষ চলছে

ছবি

সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে ‘অচলাবস্থা’, ব্যবসা ‘কমেছে ৫০ শতাংশ’, সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ

ছবি

বাজারে আসছে নতুন স্মার্টফোন এআই পোট্রেইট মাস্টার অনার ২০০ এবং ২০০ প্রো

ছবি

মোবাইল গেমিংয়ে ৩০ লাখ টাকা জিতলেন গেমাররা

ছবি

৪০০ কোটি টাকার’ পিয়ন জাহাঙ্গীরের ব্যাংক হিসাব জব্দ

ছবি

টানা দশমবার “জাতীয় রপ্তানি ট্রফি”অর্জন করল সার্ভিস ইঞ্জিন লিমিটেড

ছবি

শুরুতেই শেয়ারবাজারে বড় দরপতন

ছবি

তথ্যের অভাব, সংস্কারে গড়িমসি, বড় বিপদে পড়বে অর্থনীতি : আহসান মনসুর

ছবি

বাজার মূলধন কমলো সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা

ছবি

বাংলালিংকে আনলিমিটেড ইন্টারনেট ও ফ্রি ওটিটি সাবস্ক্রিপশন

ছবি

ইনফিনিক্স নোট ৩০ প্রো ফোনের দাম কমলো

ছবি

দেশের ৬৪টি জেলায় ই-কমার্স ডেলিভারি দিচ্ছে পাঠাও কুরিয়ার

ছবি

বাংলাদেশের বাজারে এআই ফিচার সমৃদ্ধ অপোর রেনো১২ সিরিজ

ছবি

ঢাকা-নেপাল রুটে বাস চালুর পরিকল্পনা বিআরটিসির

ছবি

‘আকাশ গো’ কম্প্যানিয়ন অ্যাপ নিয়ে এলো আকাশ ডিজিটাল টিভি

ছবি

মাদানী হসপিটালে বৃহৎপরিসরে ইনডোর সেবা উদ্বোধন

ছবি

মেহেরপুরে অবৈধ সিগারেট জব্দ, ৫ জনকে জরিমানা

ছবি

১৬ জুলাইয়ের মধ্যে ভিভো ওয়াই২৮ কিনলে সাথে ফ্রি উপহার

ছবি

মাসে দুই কোটি সক্রিয় গ্রাহকের মাইলফলক অর্জন করলো মাইজিপি

ছবি

ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির ৪০ শিক্ষার্থীর হাতে অভিভাবক মৃত্যু বীমার চেক হস্তান্তর

ছবি

হুয়াওয়ের সঙ্গে নগদের চুক্তি

ছবি

ফোর্বস এর প্রচ্ছদে রিয়েলমি’র সিইও স্কাই লি

ছবি

শীঘ্রই বাংলাদেশের বাস্তায় নামছে বিওয়াইডি সিল

ছবি

এফবিসিসিআইআই আইআরসি এর আয়োজনে এক্সটেন্ডেড প্রসিডিউর রেসপনসিবিলিটি বিষয়ক সেমিনার

ছবি

মিউজ ডিজাইন অ্যাওয়ার্ডে প্লাটিনাম জিতলো টেকনো ক্যামন ৩০ সিরিজ

ছবি

বাজারে ভিভো’র ওয়াই সিরিজের নতুন স্মার্টফোন ওয়াই২৮

ছবি

নতুন অর্থবছরে ঢাকা উত্তরের সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট

ছবি

এক সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বাড়ল ৩০ টাকা

প্লাস্টিক রিসাইক্লিং খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে

ছবি

রপ্তানিতে প্রণোদনা কমানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চায় বিটিএমএ

ছবি

কাঁচা মরিচের ঝালের সঙ্গে বাড়ছে পেঁয়াজের ঝাঁঝও

tab

অর্থ-বাণিজ্য

প্রস্তাবিত বাজেট বে-নজির বাজেট : দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

সোমবার, ১০ জুন ২০২৪

২০২৪-২০২৫ সালের প্রস্তাবিত বাজেটকে একটি বে-নজির বাজেট বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সিপিডির দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার যে নিয়ম রাখা হয়েছে তা সংবিধান পরিপন্থি। এই বাজেট বে-নজির বাজেট।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫ ও বিরাজমান পরিস্থিতি: অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের প্রাপ্তি’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান ব্রিফিং এ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে আমরা কোথাও কোনো স্বস্তি দেখি না। চলমান সময়ে পিছিয়ে পড়া মানুষজনকে সুরক্ষা দিতে হয়। বিভিন্ন খাতে দেখা গেছে প্রস্তাবিত বাজেটে সুরক্ষার বিষয়ে আশ্বস্ত হওয়ার কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে জ্বালানি খাত, ব্যাংক খাত ও পুঁজিবাজারসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে রাজনৈতিক অঙ্গীকার দেখা যায়নি। প্রস্তাবিত বাজেটে সুরক্ষা, স্থিতিশীলতা ও সংস্কারের বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি এবং আসক্ত হওয়ার মতো কিছু পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের ঘোষিত নীতির সঙ্গে বাজেটে অন্তত পাঁচটি ক্ষেত্রে বড় ধরনের ব্যত্যয় হয়েছে। ৭ জানুয়ারিতে যে নির্বাচন প্রক্রিয়া হয়েছে সেখানে বর্তমান শাসক দল যে ইশতেহার দিয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে তারা ইশতিহারের প্রতি বিশ্বস্ত থাকেনি। প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচনী ইশতিহারের বড় ধরনের বরখেলাপ হয়েছে। বর্তমান সরকারের যে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা আছে তার সঙ্গে কিন্তু বর্তমান প্রস্তাবিত বাজেটের কৌশল এবং বরাদ্দের মিল নেই।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের যে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তা প্রস্তাবিত বাজেটে মেলানো হয়নি। প্রস্তাবিত বাজেটে যেসব নীতি ও অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছিল তার সঙ্গে বাজেটের বরাদ্দ মিলে না। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব পদ্ধতিসহ বিভিন্ন বিষয় দেখলে বোঝা যায় সাধারণ মানুষের নয় ব্যক্তি বিশেষের সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আয়করে কোথায় ছাড় আছে সেটা বাজেটে বলা হয়েছে। বড় ভাবে ছাড় কমানো হয়েছে পরোক্ষ করে। গার্মেন্টস, জ্বালানি, মাইক্রোক্রেডিটের মতো প্রত্যক্ষ করের ছাড় ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেই, আগামীতে কী করা হবে এই বিষয়ে দিক নির্দেশনা নেই। আয়করের ছাড়ের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেই।

অনুষ্ঠানে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, বর্তমান বাজেট একটি উচ্চাভিলাষী, ফাঁকাবুলির বাজেট। পাশাপাশি এটি বৈষম্যমূলক বাজেট, সেইসঙ্গে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য একটি অর্থহীন বাজেট এটি।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এই বাজেটে শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। এটি এমন একটি বাজেট, যা জবাবদিহিতা হীন। এটি দুর্নীতি সহায়ক ও অনৈতিক বাজেট। এই কথাগুলো বলার অবশ্যই যৌক্তিক কারণ আছে। প্রথমে যদি কালো টাকার বিষয়টি বলি, কালো টাকাকে বৈধতা দেওয়া যাবে না– এমন ঘোষণা কিন্তু আমাদের আছে। আপনি সৎভাবে উপার্জন করে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কর দেবেন, অন্যজন অনৈতিকতার সঙ্গে দুর্নীতি করে প্রচুর পরিমাণে আয় করে নামমাত্র ১৫ শতাংশ কর দেবেন। আবার এসব বিষয় নিয়ে কোনো প্রশ্নও তোলা যাবে না।

তিনি বলেন, যারা দুর্নীতি করছে তাদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে, লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে সারা বছর অবৈধভাবে আয় করার। বছর শেষে রাজস্ব বিভাগ তাদের ক্লিন সার্টিফিকেট দেবে। অনেকে আবার শুদ্ধাচার পুরস্কার পাবেন, সেরা করদাতার পুরস্কারও পাবেন। এর মাধ্যমে দেশবাসীকে বোঝানো হচ্ছে তোমরা চাইলে এই পথটা অনুসরণ করো। এসবের কারণে আমরা আগামী প্রজন্মকে বলার সাহস পাব না যে তোমরা ভালো আদর্শ অনুসরণ করো। এই বলার সাহসটা আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। নৈতিকতার যে ভিত্তি তা সম্পূর্ণভাবে নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে।

কালো টাকা সাদা করার বিষয়টি নিয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে জানিয়ে তৌফিকুল ইসলাম বলেন, বলা হয়েছে ১৫ শতাংশ নগদ অর্থ দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করা যাবে। কিন্তু গুলশান এলাকায় ফ্ল্যাট কিনলে ২.৩৮ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে আপনি বের হয়ে যেতে পারবেন। পুরো বৈধ হবে, একই সঙ্গে দেখা যাচ্ছে ১৫ শতাংশ নয় ২-৩ শতাংশ দিয়ে আপনি বের হয়ে যেতে পারবেন। সম্পূর্ণরূপে ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছে। কাউকে কেউ কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না। এটা মানা যায় না।

বাজেটে অর্থনৈতিক অবস্থা পুনরুদ্ধারের কথা বলা হয়েছে। আমরা খুবই আশাবাদী। এর থেকে চমৎকার স্বপ্ন আর হয় না। কিন্তু এটা বাস্তবায়নে কোনো দিক নির্দেশনা নেই। ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। যে কারণে আমরা অর্থনৈতিক সংকটে পড়লাম। সেটা ভালোভাবে চিহ্নিত করা হয়নি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথা বলে বের হয়ে যাওয়া হয়েছে। ব্যাংকিং সেক্টর, সুশাসন নিয়ে আলোচনা নেই। বাজারে অনিয়ম, অর্থপাচার রোধে কী হবে, দায় দেনার ক্রাইসিস চিহ্নিত করা হয়নি

বড় আকারে আমরা ঋণের পরিস্থিতিতে পড়েছি সেটা স্বীকার করা হয়নি। গত অর্থবছরে বিদেশি ঋণশোধ করার জন্য আমাদের রাজস্ব যথেষ্ট ছিল না। আমরা প্রায় সাড়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ করে পরিশোধ করেছি।

অনুষ্ঠানে সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান ব্রিফিংয়ে মূল প্রবন্ধে বলেন, আয়করে কোথায় ছাড় আছে সেটা বাজেটে বলা হয়েছে। বড়ভাবে ছাড় কমানো হয়েছে পরোক্ষ করে। গার্মেন্টস, জ্বালানি, মাইক্রো ক্রেডিটের মতো প্রত্যক্ষ কর ছাড়ের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেই, আগামীতে কী করা হবে এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা নেই। আয়কর ছাড়ের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেই।

কালো টাকা সাদা করার বিষয়টি নিয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ১৫ শতাংশ নগদ অর্থ দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করা যাবে। কিন্তু গুলশান এলাকায় ফ্ল্যাট কিনলে ২.৩৮ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে আপনি বের হয়ে যেতে পারবেন। পুরো বৈধ হবে, সেক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ১৫ শতাংশ নয়, ২-৩ শতাংশ দিয়ে আপনি বের হয়ে যেতে পারবেন। একইসঙ্গে সম্পূর্ণরূপে ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছে। কাউকে কেউ কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না, এটা মানা যায় না।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন

back to top