alt

অর্থ-বাণিজ্য

বাজেট পাস কাল

থাকছে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪

এমপিদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা প্রত্যাহার নিয়ে জল কম ঘোলা হয়নি। নানান জল্পনা কল্পনা শেষে সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে ৪০ শতাংশ কর বসানোর প্রস্তাব করা হয় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে।

তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে পারে সরকার। এছাড়া কর অবকাশ সুবিধার পাশাপাশি শর্ত সাপেক্ষে ইকোনমিক জোন ও হাইটেক পার্কের বিনিয়োগকারীদের ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানিতে আগের মতোই জিরো ডিউটি সুবিধা বহাল থাকতে পারে। অন্যদিকে, নানান সমালোচনার পরও কালো টাকা সাদা করার সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটছে না সরকার।

এসব নিয়েই আজ শনিবার (২৯ জুন) পাস হতে পারে অর্থবিল। জাতীয় সংসদে আগামীকাল, রোববার পাস হবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট। পরদিন, ১ জুলাই থেকে নতুন বাজেট কার্যকর হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে ছোটখাটো দু-একটি বিষয় ছাড়া তেমন কোনো বড় সংশোধনীর সম্ভাবনা নেই।

প্রস্তাবিত বাজেটে সংসদ সদস্যদের আমদানি করা গাড়ির ওপর শুল্ক আরোপের আহ্বান জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবু হাসান মাহমুদ আলী। তবে শেষ পর্যন্ত তা কার্যকর নাও হতে পারে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনি জটিলতায় এ পদক্ষেপ থেকে সরে আসতে পারে সরকার। কেননা সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে বিদ্যমান আদেশ সংশোধনের কোনো উদ্যোগ এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। ফলে আগের মতো এবারও এমপিরা শুল্কমুক্ত কর সুবিধা ভোগ করতে পারেন।

এনবিআর সূত্র জানায়, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। এ সময় প্রধানমন্ত্রী কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। পরে মঙ্গলবার (২৬ জুন) বাজেট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পর্যায়ক্রমে কর অব্যাহতি কমিয়ে কর জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে আসছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। পাশাপাশি আর্থিক খাত সংস্কারের পরামর্শ ও দিয়েছে সংস্থাটি।

আন্তর্জাতিক এ সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী, আইন প্রণেতাদের গাড়ি আমদানিতে থাকা কর অব্যাহতি তুলে নেওয়ার মাধ্যমে এ কার্যক্রম জোরদার করতে চেয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে সংসদ সদস্যদের এ সুবিধা পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার প্রস্তাবটি সংসদে পাস না হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনের আগে আইন প্রণেতাদের গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসানোর প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয় প্রত্যাখ্যান করেছিল।

গত ৬ জুন বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে সব ধরনের শুল্ক-কর অব্যাহতি আছে। সব স্তরে অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার জন্য সবাইকে রাজস্ব দিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য শুল্ক-কর ছাড়া গাড়ি আমদানির নীতিতে কিছুটা পরিবর্তন একটি মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। এই উদ্দেশ্যে সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে অব্যাহতির সুবিধা পরিবর্তন করা যেতে পারে। এ লক্ষ্যে সংসদ সদস্যদের (পারিশ্রমিক ও ভাতা) আদেশ ১৯৭৩-এ সংশোধনী অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি বাতিল করতে হলে ১৯৭৩ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডার সংশোধন করতে হবে। তাহলে এ ধরনের গাড়ি আমদানিতে কর আরোপ করা যাবে। এনবিআর সংবিধিবদ্ধ রেগুলেটরি অর্ডার (এসআরও) জারির মাধ্যমে দেশে বিদ্যমান কোনো আইনকে অগ্রাহ্য করতে পারে না।

জানা গেছে, কর অবকাশ সুবিধার পাশাপাশি কিছু শর্ত সাপেক্ষে ইকোনমিক জোন ও হাই-টেক পার্কের বিনিয়োগকারীদের ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানিতে আগের মতই জিরো ডিউটি সুবিধা বহাল থাকতে পারে। এছাড়া শেয়ারবাজারে ক্যাপিটাল গেইনের উপর নতুন করে আরোপ করা ট্যাক্স অব্যাহত থাকতে পারে।

ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে এবার অর্থনৈতিক অঞ্চলে কর অবকাশ সুবিধা বহার রাখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদেশি বিনিয়োগে ভাটা পড়েছে। দেশি বিনিয়োগ প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। এমন অবস্থায় অর্থনৈতিক অঞ্চলে কর আরোপ করা হলে বিনিয়োগ কমে আরও শোচনীয় পর্যায়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ কারণে হাই-টেক পার্ক ও অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগে কর অবকাশ অব্যাহত রাখা হতে পারে। ২০২৪-২৫ এর প্রস্তাবিত বাজেটে এই অঞ্চলগুলোর মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে ১ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছিল। তবে তা আগের মতো ০ শতাংশ হতে পারে।

এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের ওপর ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স বসানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। এতে বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আপত্তি থাকলেও তা আমলে নেওয়া হচ্ছে না। সংশোধনী বাজেটে আগের মতোই ৫০ লাখ টাকা লাভের ওপর কর আরোপের সিদ্ধান্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদের প্রবল সমালোচনার মুখেও কালো টাকা সাদা করার বিধান থেকে সরছে না সরকার। এ সুযোগ বহাল থাকলে আগামী ১ জুলাই থেকে ১৫ শতাংশ কর প্রদানের মাধ্যমে ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যাচাই-বাছাই ছাড়াই কালো টাকা সাদা করতে পারবেন। সরকারি কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্ন করতে পারবে না।

নতুন বিধান অনুযায়ী, কোনো করদাতা ফ্ল্যাট ও জমির মতো স্থাবর সম্পত্তির জন্য নির্ধারিত হারে কর প্রদান করলে এবং নগদ, সিকিউরিটিজ, ব্যাংক আমানত ও সঞ্চয় স্কিমসহ অন্যান্য সম্পদের ওপর ১৫ শতাংশ কর দিলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবে না।

গত ৬ জুন প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এ বিধান উপস্থাপন করেন। চলতি সংসদ অধিবেশনেই সংসদ সদস্যরা বিধানের তীব্র সমালোচনা করেন।

চলতি সপ্তাহে ফরিদপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এ কে আজাদ জাতীয় সংসদে বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হয়েছে। তাহলে কালো টাকার উৎস কেন যাচাই করা যাবে না? সার্বভৌম সংসদ কীভাবে কালো টাকার পাচারকে বৈধতা দিতে পারে তা বোধগম্য নয়।

সংসদে কুমিল্লা-৭ আসনের প্রাণ গোপাল দত্ত, মানিকগঞ্জ-১ আসনের জাহিদ মালেক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নুরুন নাহার বেগম সম্প্রতি সংসদে এই বিধানের সমালোচনা করেন। এছাড়া সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি), সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম), টিআইবি এবং বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি এই বিধানের সমালোচনা করেছে।

ছবি

আসছে ভিভো’র ৬ হাজার মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারির স্মার্টফোন

ছবি

আন্তর্জাতিক মানের মোবাইল সেবা নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর: জুনাইদ আহমেদ পলক

ছবি

ঢাকায় জিপি এক্সিলারেটরের ‘জেলায় জেলায় স্মার্ট উদ্যোক্তা’ বুটক্যাম্প

ছবি

এশিয়ান পেইন্টস কালার নেক্সট-২০২৪ উদ্বোধন

ছবি

আইসিসিবির ২৯তম বার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত

ছবি

জ্বালানি খাত ‘সঠিক নীতিতে চলছে না’ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা

ছবি

বড় পরিবর্তন ছাড়াই ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস

ছবি

নতুন অর্থবছরের বাজেট পাস,আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা

ছবি

এনবিআরের কর্মকর্তা ফয়সালকে বগুড়ায় বদলি

ছবি

সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস

ছবি

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস আজ

ছবি

লেনদেনের শুরুতে শেয়ারবাজারে বড় দরপতন

ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩১৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকার বাজেট

ছবি

পদ্মা সেতুর নদী শাসনে ব্যয় বাড়লো আরও প্রায় ২৫০ কোটি টাকা

ছবি

বাজার মূলধনে যোগ হলো সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা

ছবি

বাক্কো ও এ্যাসেট প্রকল্পের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি

ছবি

‘গ্লোবাল অ্যান্ড বাংলাদেশ আউটলুক অ্যান্ড রিস্ক’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত

ছবি

জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অটোমেশন কার্যক্রম অগ্রাধিকার দিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে: জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী

ছবি

যাত্রীদের কথা চিন্তা করেই চালু করা হয়েছে শাটল বাস সেবা

ছবি

টেকনোর শট অন ক্যামন কনটেস্টে প্রাইজমানি ও লন্ডন ট্যুরের সুযোগ

ছবি

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে জাতীয় লজিস্টিক নীতি হবে অন্যতম চালিকাশক্তি: তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া

ছবি

নতুন করে ৬০ জন ফ্রিল্যান্সারকে উদ্যোক্তা হবার প্রশিক্ষণ দিয়েছে বাক্কো

ছবি

চালডাল ও সক্রিয় টেকনোলজিসে বিনিয়োগ করেছে বাংলাদেশ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল

ছবি

বিএটি বাংলাদেশের নতুন চেয়ারম্যান ওয়েল সাবরা

ছবি

ইউসিবি ও এসএমই ফাউন্ডেশনের মধ্যে চুক্তি

ছবি

রিয়েলমি ঈদ ক্যাম্পেইন বিজয়ী পেলেন মোটরসাইকেল

ছবি

২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকের মার্কেট শেয়ারে ইনফিনিক্সের প্রবৃদ্ধি অর্জন

ছবি

সূচক বেড়ে পুঁজিবাজারে লেনদেন চলছে

বাংলাদেশের জন্য ঋণের তৃতীয় কিস্তি অনুমোদন দিয়েছে আইএমএফ

ছবি

কক্সবাজার-ময়মনসিংহে প্রিয়শপের হাব চালু

ছবি

১০ মাসে বিদেশি ঋণের সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে জাপান

ছবি

ছাগল কান্ডঃ মতিউর রহমানকে সোনালী ব্যাংকের বোর্ড থেকেও সরানো হয়েছে

ছবি

আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তি নিয়ে সংশয়

ছবি

বিশ্বব্যাংক ৯০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে

সব ধরনের সবজিসহ মাছ-মাংসের বাজারও উত্তপ্ত

ছবি

কাঁচা মরিচের কেজি ৪০০ টাকা, বেড়েছে আলু-শসার দাম

tab

অর্থ-বাণিজ্য

বাজেট পাস কাল

থাকছে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪

এমপিদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা প্রত্যাহার নিয়ে জল কম ঘোলা হয়নি। নানান জল্পনা কল্পনা শেষে সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে ৪০ শতাংশ কর বসানোর প্রস্তাব করা হয় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে।

তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে পারে সরকার। এছাড়া কর অবকাশ সুবিধার পাশাপাশি শর্ত সাপেক্ষে ইকোনমিক জোন ও হাইটেক পার্কের বিনিয়োগকারীদের ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানিতে আগের মতোই জিরো ডিউটি সুবিধা বহাল থাকতে পারে। অন্যদিকে, নানান সমালোচনার পরও কালো টাকা সাদা করার সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটছে না সরকার।

এসব নিয়েই আজ শনিবার (২৯ জুন) পাস হতে পারে অর্থবিল। জাতীয় সংসদে আগামীকাল, রোববার পাস হবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট। পরদিন, ১ জুলাই থেকে নতুন বাজেট কার্যকর হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে ছোটখাটো দু-একটি বিষয় ছাড়া তেমন কোনো বড় সংশোধনীর সম্ভাবনা নেই।

প্রস্তাবিত বাজেটে সংসদ সদস্যদের আমদানি করা গাড়ির ওপর শুল্ক আরোপের আহ্বান জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবু হাসান মাহমুদ আলী। তবে শেষ পর্যন্ত তা কার্যকর নাও হতে পারে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনি জটিলতায় এ পদক্ষেপ থেকে সরে আসতে পারে সরকার। কেননা সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে বিদ্যমান আদেশ সংশোধনের কোনো উদ্যোগ এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। ফলে আগের মতো এবারও এমপিরা শুল্কমুক্ত কর সুবিধা ভোগ করতে পারেন।

এনবিআর সূত্র জানায়, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। এ সময় প্রধানমন্ত্রী কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। পরে মঙ্গলবার (২৬ জুন) বাজেট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পর্যায়ক্রমে কর অব্যাহতি কমিয়ে কর জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে আসছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। পাশাপাশি আর্থিক খাত সংস্কারের পরামর্শ ও দিয়েছে সংস্থাটি।

আন্তর্জাতিক এ সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী, আইন প্রণেতাদের গাড়ি আমদানিতে থাকা কর অব্যাহতি তুলে নেওয়ার মাধ্যমে এ কার্যক্রম জোরদার করতে চেয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে সংসদ সদস্যদের এ সুবিধা পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার প্রস্তাবটি সংসদে পাস না হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনের আগে আইন প্রণেতাদের গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসানোর প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয় প্রত্যাখ্যান করেছিল।

গত ৬ জুন বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে সব ধরনের শুল্ক-কর অব্যাহতি আছে। সব স্তরে অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার জন্য সবাইকে রাজস্ব দিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। জনপ্রতিনিধি হিসেবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য শুল্ক-কর ছাড়া গাড়ি আমদানির নীতিতে কিছুটা পরিবর্তন একটি মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। এই উদ্দেশ্যে সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে অব্যাহতির সুবিধা পরিবর্তন করা যেতে পারে। এ লক্ষ্যে সংসদ সদস্যদের (পারিশ্রমিক ও ভাতা) আদেশ ১৯৭৩-এ সংশোধনী অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি বাতিল করতে হলে ১৯৭৩ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডার সংশোধন করতে হবে। তাহলে এ ধরনের গাড়ি আমদানিতে কর আরোপ করা যাবে। এনবিআর সংবিধিবদ্ধ রেগুলেটরি অর্ডার (এসআরও) জারির মাধ্যমে দেশে বিদ্যমান কোনো আইনকে অগ্রাহ্য করতে পারে না।

জানা গেছে, কর অবকাশ সুবিধার পাশাপাশি কিছু শর্ত সাপেক্ষে ইকোনমিক জোন ও হাই-টেক পার্কের বিনিয়োগকারীদের ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানিতে আগের মতই জিরো ডিউটি সুবিধা বহাল থাকতে পারে। এছাড়া শেয়ারবাজারে ক্যাপিটাল গেইনের উপর নতুন করে আরোপ করা ট্যাক্স অব্যাহত থাকতে পারে।

ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে এবার অর্থনৈতিক অঞ্চলে কর অবকাশ সুবিধা বহার রাখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদেশি বিনিয়োগে ভাটা পড়েছে। দেশি বিনিয়োগ প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। এমন অবস্থায় অর্থনৈতিক অঞ্চলে কর আরোপ করা হলে বিনিয়োগ কমে আরও শোচনীয় পর্যায়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ কারণে হাই-টেক পার্ক ও অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগে কর অবকাশ অব্যাহত রাখা হতে পারে। ২০২৪-২৫ এর প্রস্তাবিত বাজেটে এই অঞ্চলগুলোর মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে ১ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছিল। তবে তা আগের মতো ০ শতাংশ হতে পারে।

এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের ওপর ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স বসানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। এতে বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আপত্তি থাকলেও তা আমলে নেওয়া হচ্ছে না। সংশোধনী বাজেটে আগের মতোই ৫০ লাখ টাকা লাভের ওপর কর আরোপের সিদ্ধান্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদের প্রবল সমালোচনার মুখেও কালো টাকা সাদা করার বিধান থেকে সরছে না সরকার। এ সুযোগ বহাল থাকলে আগামী ১ জুলাই থেকে ১৫ শতাংশ কর প্রদানের মাধ্যমে ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যাচাই-বাছাই ছাড়াই কালো টাকা সাদা করতে পারবেন। সরকারি কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্ন করতে পারবে না।

নতুন বিধান অনুযায়ী, কোনো করদাতা ফ্ল্যাট ও জমির মতো স্থাবর সম্পত্তির জন্য নির্ধারিত হারে কর প্রদান করলে এবং নগদ, সিকিউরিটিজ, ব্যাংক আমানত ও সঞ্চয় স্কিমসহ অন্যান্য সম্পদের ওপর ১৫ শতাংশ কর দিলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবে না।

গত ৬ জুন প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এ বিধান উপস্থাপন করেন। চলতি সংসদ অধিবেশনেই সংসদ সদস্যরা বিধানের তীব্র সমালোচনা করেন।

চলতি সপ্তাহে ফরিদপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এ কে আজাদ জাতীয় সংসদে বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হয়েছে। তাহলে কালো টাকার উৎস কেন যাচাই করা যাবে না? সার্বভৌম সংসদ কীভাবে কালো টাকার পাচারকে বৈধতা দিতে পারে তা বোধগম্য নয়।

সংসদে কুমিল্লা-৭ আসনের প্রাণ গোপাল দত্ত, মানিকগঞ্জ-১ আসনের জাহিদ মালেক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য নুরুন নাহার বেগম সম্প্রতি সংসদে এই বিধানের সমালোচনা করেন। এছাড়া সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি), সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম), টিআইবি এবং বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি এই বিধানের সমালোচনা করেছে।

back to top