সব ধরনের রপ্তানিতে দ্বিতীয়বারের নগদ সহায়তা কমিয়ে গত ৩০ জুন প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এলডিসি গ্রাজুয়েশনের অজুহাতে এই প্রণোদনা কমানো হলো। এতে তৈরি পোশাক, চামড়া, পাট, কৃষিসহ ৪৩ খাতে নগদ সহায়তা কমবে রপ্তানিকারকদের। প্রণোদনা কমানোর এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)।
আজ শনিবার বিটিএমএ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান সংগঠনটির সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন। এসময় বিটিএমএ’র সহ-সভাপতি মো. ফজলুল হক, মোহাম্মদ ফায়জুর রহমান ভুঁইয়াসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বিটিএমএ নেতারা জানান, অনতিবিলম্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা এফই সার্কুলার নং ১২ প্রত্যাহার করে নগদ প্রণোদনা আগের অবস্থায় আনতে হবে।
পাশাপাশি দ্রুত টেক্সটাইল শিল্পর জন্য যুগোপযোগী একটি টেক্সটাইল পলিসি প্রণয়ন এবং ব্যাংক লোন পরিশোধের জন্য এক বছরের গ্রেস পিরিয়ড রাখার দাবি জানিয়েছে বিটিএমএ।
সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, বিভিন্ন বৈশ্বিক সংকট ও নানাবিধ সমস্যায় দেশের টেক্সটাইল এবং অ্যাপারেল সেক্টর বর্তমানে মারাত্মক সংকটের মধ্যে রয়েছে । এ সময়ে রপ্তানির বিপরীতে প্রনোদনা হ্রাস করার সিদ্ধান্ত দেশের টেক্সটাইল সেক্টরের অগ্রযাত্রা ব্যাপকহারে বাধাগ্রস্ত হবে এবং এ সেক্টরের সংকট আরো তীব্র হবে ।
সভাপতি বলেন, নগদ প্রনোদনা হিসেবে সরকার কর্তৃক প্রতি অর্থ বছরে টেক্সটাইল এবং অ্যাপারেল সেক্টরে মাত্র ৮ হাজার কোটি টাকা প্রদান করা হয় যা প্রায় ৮.০০ লক্ষ কোটি টাকার বাজেটের খুবই সামান্য অংশমাত্র । বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেখানে কোন ধরনের বৈদেশিক সহায়তা ব্যতিরেকে পদ্মা সেতু তৈরী করতে পারেন সেখানে দেশের বৃহৎ রপ্তানি শিল্পে মাত্র ৮ হাজার কোটি টাকা প্রনোদনা জাতীয় অর্থনীতিতে কোন প্রভাব ফেলবে বলে আমরা মনে করিনা ।
তিনি বলেন, টেক্সটাইল সেক্টরের মিলগুলি দেশের ১৭ কোটি জনগোষ্ঠির বস্ত্রের মৌলিক চাহিদার প্রায় সম্পূর্নই যোগান দিচ্ছে যাতে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে। বাংলাদেশ ট্রেড এবং ট্যারিফ কমিশনের ২০২০ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে প্রতি বছর ৬.৫ বিলিয়ন মিটারের ফেব্রিক-কাপড়ের চাহিদা রয়েছে। সে অনুযায়ী বর্তমানে দেশের মানুষের কাপড়ের চাহিদা প্রায় ৭ বিলিয়ন মিটার এবং প্রতি মিটার কাপড়ের মূল্য ২ ডলার হিসেবে স্থানীয় জনগণের জন্য বছরে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় ১ লক্ষ ষাট হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন । বিটিএমএ সদস্যরা উল্লিখিত ৭ বিলিয়ন মিটার কাপড়ের প্রায় ৯০ শতাংশ সরবরাহ করছে যা আমদানি পরিপূরক হিসেবে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করছে। বিটিএমএ সদস্যরা দেশীয় চাহিদার শতভাগ সরবরাহ করতে সক্ষম হলেও চোরাইপথে দেশীয় চাহিদার প্রায় ১৫ শতাংশ কাপড়ের অনুপ্রবেশ ঘটে যাতে সরকার প্রচুর রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয় এবং উল্লেখযোগ্য পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়।
তিনি আরোও বলেন, দেশের প্রাইমারী টেক্সটাইল সেক্টর গত অর্থবছরে প্রায় ৭.৫ মিলিয়ন বেল তুলা আমদানি করেছে যাতে ৩.৫ থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়েছে । এ আমদানির বিপরীতে প্রাইমারী টেক্সটাইল সেক্টর দেশের মোট ৪৭ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানিতে প্রায় ২৭ বিলিয়ন ডলার প্রচ্ছন্ন রপ্তানি এবং ১২ বিলিয়ন ডলার দেশীয় বাজারে সরবরাহ সহ মোট ৩৯ বিলিয়ন ডলার অবদান রাখছে। যদিও মাঝে মধ্যে আমরা দেশের গুরত্বপূর্ন নীতি নির্ধারকদের বলতে শুনি তুলা আমদানি করে এ শিল্পের ভ্যালু অ্যাডিশন নিতান্তই কম এবং এ শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়েও তারা নানা নেতিবাচক মন্তব্য করেন । কিন্তু রপ্তানি এবং দেশীয় চাহিদার বিষয় পর্যালোচনা করলে দেখা যায় প্রাইমারী টেক্সটাইল সেক্টরের ভ্যালু অ্যাডিশন প্রায় ৩শ শতাংশ ।
সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, যে কোনো শিল্প শক্তিশালী বা টেকসই করার জন্য নীতি সহায়তা বা প্রণোদনা প্রয়োজন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও যা দিয়ে আসছে। যে কোনো দেশের জন্য টেকসই শিল্প প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন শক্তিশালী নীতি সহায়তা ও প্রণোদনা। আমাদের দেশে কোনো ধরনের বিকল্প ব্যবস্থা না রেখে নগদ প্রণোদনা যেভাবে কমানো হয়েছে, তাতে টেক্সটাইল সেক্টরে সক্ষমতা কমবে। এর প্রভাবে ক্রমান্বয়ে এই সেক্টরের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রিগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে। এছাড়া এ খাতে প্রতিযোগী অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমরা কোনোভাবেই টিকতে পারবো না। কোনো কারণে প্রাইমারি টেক্সটাইল বন্ধ হল পরবর্তীতে তৈরি পোশাক শিল্পও ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে। এতে দেশের অর্থনীতিতে ধস নামার আশংকা তৈরি হবে।
এরই মধ্যে টেক্সটাইল খাতের বেশ কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে উল্লেখ করে বিটিএমএ সভাপতি বলেন, আরও অনেক কারখানা যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় অনতিবিলম্বে ৩০ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা এফই সার্কুলার নং ১২ প্রত্যাহার করে নগদ প্রণোদনা আগের অবস্থায় আনা, দ্রুত সময়ের মধ্যে টেক্সটাইল শিল্পর জন্য একটি যুগোপযোগী টেক্সটাইল পলিসি প্রণয়ন এবং ব্যাংক লোন পরিশোধের জন্য এক বছরের গ্রেস পিরিয়ড রাখার দাবি জানাচ্ছি।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তুলা উৎপাদনকারী দেশ এবং টেক্সটাইল টেকনোলজিতেও বিশ্বে দ্বিতীয়। ভারত বর্তমানে বিশ্বের ৫ম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ এবং ২০০৪ সালে এলডিসি গ্র্যাজুয়েটেড হওয়া সত্ত্বেও টেক্সটাইল শিল্পকে নানানভাবে নগদ প্রণোদনার বিকল্প সুবিধা দিয়ে আসছে। সুতরাং এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের নামে বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পের প্রণোদনা ও নীতি সহায়তা ব্যাপকভাবে কমিয়ে এ শিল্পে যেভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে, তাতে এ শিল্প আচিরেই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবে। টেক্সটাইল খাতে বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ মানুষের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে জানিয়ে মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, পরোক্ষভাবে প্রায় এক কোটি জনগোষ্ঠী এ খাতের ওপর নির্ভরশীল। যারা প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য শীর্ষ নীতিনির্ধারকদের টেক্সটাইল শিল্প সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে এবং নানামুখী চাপ প্রয়োগ করে এ শিল্পকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছেন, তারা আসলে এই দেশকে বিদেশি বাজারে পরিণত করতে চায়।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পাশ হয়েছে। এ বাজেটে টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল খাতের জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো পলিসি সাপোর্ট এবং এই খাত সুরক্ষায় কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পরে টেক্সটাইল এবং অ্যাপারেল খাতের জন্য রপ্তানির বিপরীতে ২৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছিলেন। এটি দেশের টেক্সটাইল এবং অ্যাপারেল খাতের অগ্রযাত্রায় গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এর ফলে এ খাতে রপ্তানি আয় ২ বিলিয়ন থেকে ৪৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।
শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪
সব ধরনের রপ্তানিতে দ্বিতীয়বারের নগদ সহায়তা কমিয়ে গত ৩০ জুন প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এলডিসি গ্রাজুয়েশনের অজুহাতে এই প্রণোদনা কমানো হলো। এতে তৈরি পোশাক, চামড়া, পাট, কৃষিসহ ৪৩ খাতে নগদ সহায়তা কমবে রপ্তানিকারকদের। প্রণোদনা কমানোর এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)।
আজ শনিবার বিটিএমএ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান সংগঠনটির সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন। এসময় বিটিএমএ’র সহ-সভাপতি মো. ফজলুল হক, মোহাম্মদ ফায়জুর রহমান ভুঁইয়াসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বিটিএমএ নেতারা জানান, অনতিবিলম্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা এফই সার্কুলার নং ১২ প্রত্যাহার করে নগদ প্রণোদনা আগের অবস্থায় আনতে হবে।
পাশাপাশি দ্রুত টেক্সটাইল শিল্পর জন্য যুগোপযোগী একটি টেক্সটাইল পলিসি প্রণয়ন এবং ব্যাংক লোন পরিশোধের জন্য এক বছরের গ্রেস পিরিয়ড রাখার দাবি জানিয়েছে বিটিএমএ।
সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, বিভিন্ন বৈশ্বিক সংকট ও নানাবিধ সমস্যায় দেশের টেক্সটাইল এবং অ্যাপারেল সেক্টর বর্তমানে মারাত্মক সংকটের মধ্যে রয়েছে । এ সময়ে রপ্তানির বিপরীতে প্রনোদনা হ্রাস করার সিদ্ধান্ত দেশের টেক্সটাইল সেক্টরের অগ্রযাত্রা ব্যাপকহারে বাধাগ্রস্ত হবে এবং এ সেক্টরের সংকট আরো তীব্র হবে ।
সভাপতি বলেন, নগদ প্রনোদনা হিসেবে সরকার কর্তৃক প্রতি অর্থ বছরে টেক্সটাইল এবং অ্যাপারেল সেক্টরে মাত্র ৮ হাজার কোটি টাকা প্রদান করা হয় যা প্রায় ৮.০০ লক্ষ কোটি টাকার বাজেটের খুবই সামান্য অংশমাত্র । বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেখানে কোন ধরনের বৈদেশিক সহায়তা ব্যতিরেকে পদ্মা সেতু তৈরী করতে পারেন সেখানে দেশের বৃহৎ রপ্তানি শিল্পে মাত্র ৮ হাজার কোটি টাকা প্রনোদনা জাতীয় অর্থনীতিতে কোন প্রভাব ফেলবে বলে আমরা মনে করিনা ।
তিনি বলেন, টেক্সটাইল সেক্টরের মিলগুলি দেশের ১৭ কোটি জনগোষ্ঠির বস্ত্রের মৌলিক চাহিদার প্রায় সম্পূর্নই যোগান দিচ্ছে যাতে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে। বাংলাদেশ ট্রেড এবং ট্যারিফ কমিশনের ২০২০ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে প্রতি বছর ৬.৫ বিলিয়ন মিটারের ফেব্রিক-কাপড়ের চাহিদা রয়েছে। সে অনুযায়ী বর্তমানে দেশের মানুষের কাপড়ের চাহিদা প্রায় ৭ বিলিয়ন মিটার এবং প্রতি মিটার কাপড়ের মূল্য ২ ডলার হিসেবে স্থানীয় জনগণের জন্য বছরে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় ১ লক্ষ ষাট হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন । বিটিএমএ সদস্যরা উল্লিখিত ৭ বিলিয়ন মিটার কাপড়ের প্রায় ৯০ শতাংশ সরবরাহ করছে যা আমদানি পরিপূরক হিসেবে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করছে। বিটিএমএ সদস্যরা দেশীয় চাহিদার শতভাগ সরবরাহ করতে সক্ষম হলেও চোরাইপথে দেশীয় চাহিদার প্রায় ১৫ শতাংশ কাপড়ের অনুপ্রবেশ ঘটে যাতে সরকার প্রচুর রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয় এবং উল্লেখযোগ্য পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়।
তিনি আরোও বলেন, দেশের প্রাইমারী টেক্সটাইল সেক্টর গত অর্থবছরে প্রায় ৭.৫ মিলিয়ন বেল তুলা আমদানি করেছে যাতে ৩.৫ থেকে ৪ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়েছে । এ আমদানির বিপরীতে প্রাইমারী টেক্সটাইল সেক্টর দেশের মোট ৪৭ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানিতে প্রায় ২৭ বিলিয়ন ডলার প্রচ্ছন্ন রপ্তানি এবং ১২ বিলিয়ন ডলার দেশীয় বাজারে সরবরাহ সহ মোট ৩৯ বিলিয়ন ডলার অবদান রাখছে। যদিও মাঝে মধ্যে আমরা দেশের গুরত্বপূর্ন নীতি নির্ধারকদের বলতে শুনি তুলা আমদানি করে এ শিল্পের ভ্যালু অ্যাডিশন নিতান্তই কম এবং এ শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়েও তারা নানা নেতিবাচক মন্তব্য করেন । কিন্তু রপ্তানি এবং দেশীয় চাহিদার বিষয় পর্যালোচনা করলে দেখা যায় প্রাইমারী টেক্সটাইল সেক্টরের ভ্যালু অ্যাডিশন প্রায় ৩শ শতাংশ ।
সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, যে কোনো শিল্প শক্তিশালী বা টেকসই করার জন্য নীতি সহায়তা বা প্রণোদনা প্রয়োজন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও যা দিয়ে আসছে। যে কোনো দেশের জন্য টেকসই শিল্প প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন শক্তিশালী নীতি সহায়তা ও প্রণোদনা। আমাদের দেশে কোনো ধরনের বিকল্প ব্যবস্থা না রেখে নগদ প্রণোদনা যেভাবে কমানো হয়েছে, তাতে টেক্সটাইল সেক্টরে সক্ষমতা কমবে। এর প্রভাবে ক্রমান্বয়ে এই সেক্টরের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রিগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে। এছাড়া এ খাতে প্রতিযোগী অন্যান্য দেশের সঙ্গে আমরা কোনোভাবেই টিকতে পারবো না। কোনো কারণে প্রাইমারি টেক্সটাইল বন্ধ হল পরবর্তীতে তৈরি পোশাক শিল্পও ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে। এতে দেশের অর্থনীতিতে ধস নামার আশংকা তৈরি হবে।
এরই মধ্যে টেক্সটাইল খাতের বেশ কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে উল্লেখ করে বিটিএমএ সভাপতি বলেন, আরও অনেক কারখানা যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় অনতিবিলম্বে ৩০ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা এফই সার্কুলার নং ১২ প্রত্যাহার করে নগদ প্রণোদনা আগের অবস্থায় আনা, দ্রুত সময়ের মধ্যে টেক্সটাইল শিল্পর জন্য একটি যুগোপযোগী টেক্সটাইল পলিসি প্রণয়ন এবং ব্যাংক লোন পরিশোধের জন্য এক বছরের গ্রেস পিরিয়ড রাখার দাবি জানাচ্ছি।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তুলা উৎপাদনকারী দেশ এবং টেক্সটাইল টেকনোলজিতেও বিশ্বে দ্বিতীয়। ভারত বর্তমানে বিশ্বের ৫ম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ এবং ২০০৪ সালে এলডিসি গ্র্যাজুয়েটেড হওয়া সত্ত্বেও টেক্সটাইল শিল্পকে নানানভাবে নগদ প্রণোদনার বিকল্প সুবিধা দিয়ে আসছে। সুতরাং এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের নামে বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পের প্রণোদনা ও নীতি সহায়তা ব্যাপকভাবে কমিয়ে এ শিল্পে যেভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে, তাতে এ শিল্প আচিরেই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবে। টেক্সটাইল খাতে বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ মানুষের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে জানিয়ে মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, পরোক্ষভাবে প্রায় এক কোটি জনগোষ্ঠী এ খাতের ওপর নির্ভরশীল। যারা প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য শীর্ষ নীতিনির্ধারকদের টেক্সটাইল শিল্প সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে এবং নানামুখী চাপ প্রয়োগ করে এ শিল্পকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছেন, তারা আসলে এই দেশকে বিদেশি বাজারে পরিণত করতে চায়।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পাশ হয়েছে। এ বাজেটে টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল খাতের জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো পলিসি সাপোর্ট এবং এই খাত সুরক্ষায় কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পরে টেক্সটাইল এবং অ্যাপারেল খাতের জন্য রপ্তানির বিপরীতে ২৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছিলেন। এটি দেশের টেক্সটাইল এবং অ্যাপারেল খাতের অগ্রযাত্রায় গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এর ফলে এ খাতে রপ্তানি আয় ২ বিলিয়ন থেকে ৪৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।