alt

অর্থ-বাণিজ্য

কোটা আন্দোলনের প্রভাবে তলানিতে রেমিট্যান্স

রেজাউল করিম : বুধবার, ৩১ জুলাই ২০২৪

কোটা আন্দোলনের প্রভাবে এবার তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে রেমিট্যান্স। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের ২৭ দিনে ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৫৬ কোটি ৭৫ লাখ (১.৫৭ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাকি চার দিন যদি এই হারে রেমিট্যান্স আসে, তাহলে গত ১০ মাসে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্সের রেকর্ড হবে। ব্যাংকাররা বলছেন, কোটা আন্দোলনের কারণে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় রেমিট্যান্স কমেছে। অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, ‘রেমিট্যান্স শাটডাউন’ নামের যে আন্দোলন প্রবাসীরা শুরু করেছেন, এটা তার ফল।

বাংলাদেশ ব্যাংক ২৯ জুলাই সোমবার রেমিট্যান্সের সাপ্তাহিক পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। সেই পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের ২৭ দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৫৬ কোটি ৭৫ লাখ (১.৫৭ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১১৮ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ১৮ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। টাকার অঙ্কে যা ৬৮৫ কোটি টাকা। মাসের বাকি চার দিনে (২৮ থেকে ৩১ জুলাই) এই হারে এলে মাস শেষে রেমিট্যান্সের অঙ্ক ১৮০ কোটি (১.৮০ বিলিয়ন) ডলার হবে যা হবে দশ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম।

এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ (১.৩৩ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। এর পরের নয় মাসের পাঁচ মাস ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছে দেশে। চার মাস এসেছে ২ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।

দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে ধীরগতি নিয়ে শুরু হয় নতুন অর্থবছর। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতা, মৃত্যু, ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ, মামলা, গ্রেপ্তার ও প্রবাসীদের উৎকণ্ঠার প্রেক্ষাপটে রেমিটেন্স প্রবাহে আরও পতন দেখা দিয়েছে। তবে আগের মাস জুনে এই সূচকে উল্লম্ফন দেখা গিয়েছিল।

মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) কথা হয় সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও জাফর আলমের সঙ্গে। কোটা আন্দোলনের কারণে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় রেমিট্যান্স কমেছে বলে মনে করেন তিনি। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে ৫-৬ দিন ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। তাই প্রবাসীরা টাকা পাঠাতে পারেনি। এর কারণে গত সপ্তাহে রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমেছে।’

তবে আগামী কয়েকদিনে এর পরিমাণ বাড়বে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, যেহেতু ইন্টারনেটের কারণে সেসব প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠাতে পারেনি, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সেগুলো পাঠিয়ে দিবে। তখন আবার রেমিট্যান্স বাড়বে। গত সপ্তাহে যেমন কম রেমিট্যান্স এসেছিল, আগামী চারদিন বেশি রেমিট্যান্স আসবে।’

তবে অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, শুধু ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে রেমিট্যান্স কমেনি। এর পেছনে রয়েছে প্রবাসীদের ‘রেমিট্যান্স শাটডাউন’ আন্দোলন। কোটা আন্দোলনকারী ছাত্রদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ রেখেছে। তাই রেমিট্যান্স কমেছে।

অর্থনীতিবিদদের এই আশঙ্কার সত্যতা দেখা যায় প্রবাসীদের বিভিন্ন ফেইসবুক গ্রুপে। সেসব গ্রুপগুলোতে তারা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানোর জন্য সব প্রবাসীদের উৎসাহিত করছেন। কেউ কেউ আগামী কয়েক মাস কোনো রেমিট্যান্স না পাঠানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে রেমিট্যান্স কমেছে এমনটা আশঙ্কা করছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘যেকোনো দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হলে অর্থ পাচারকারীরা সুযোগ। এর ফলে দেখা যাবে, প্রবাসীরা অর্থ পাঠাবে, তার আত্মীয়স্বজন টাকা পাবে, কিন্তু দেশে ডলার আসবে না (হুন্ডি)। এই কার্যক্রম অর্থনীতির জন্য খারাপ ফল বয়ে আনবে। এটা চলতে দেওয়া যাবে না। সরকারের উচিত, যেভাবেই হোক দেশের অবস্থা স্থীতিশীল করা।’

বাংলাদেশে ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ (২.৫৪ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৮ কোটি ৪৭ লাখ ডলার, টাকার হিসাবে ছিল এক হাজার কোটি টাকা। একক মাসের হিসাবে জুন মাসের রেমিটেন্স ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে ২৬০ কোটি (২.৬ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিল প্রবাসীরা। গত বছরের জুনের চেয়ে এই বছরের জুনে ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি এসেছিল দেশে।

কিন্তু নতুন অর্থবছরের শুরুতে রেমিটেন্স প্রবাহের সেই উল্লম্ফন আর নেই। চলতি জুলাই মাসের ২৭ দিনে প্রবাসী আয় এসেছে ১৫৬ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের প্রথম ছয় দিনে (১ থেকে ৬ জুলাই) ৩৭ কোটি ৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। পরের সপ্তাহে অর্থাৎ ৭ থেকে ১৩ জুলাই এসেছে ৬০ কোটি ৮১ লাখ ডলার। ১৪ থেকে ২০ জুলাই সপ্তাহে আসে ৪৫ কোটি ৭০ লাখ ৫০ হাজার ডলার। আর পরের সাত দিন অর্থাৎ ২১ থেকে ২৭ জুলাই সপ্তাহে এসেছে ১৩ কোটি ৮০ লাখ ৬০ হাজার ডলারে। সব মিলিয়ে ১ থেকে ২৭ জুলাই এসেছে ১৫৬ কোটি ৭৫ লাখ (১.৫৬ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

গত ১৯ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংকিং কার্যক্রম চলেছে মাত্র এক দিন। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে দেশজুড়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তা নিয়ন্ত্রণে ১৯ জুলাই রাত থেকে কারফিউ জারি করে সরকার। এরপর ২৩ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ ছিল। ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ব্যাংকের অনলাইন লেনদেনও বন্ধ ছিল। কয়েক দিন লেনদেন বন্ধের পর ২৪ জুলাই ব্যাংক চালু হয়। ওই দিন লেনদেন চলে বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা। ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ১৯ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই বৈধ পথে তথা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে প্রবাসী আয় আসাও সম্ভব ছিল না। এ সময়ের মধ্যে যারা বিদেশ থেকে প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন, ২৪ জুলাইয়ের পর তা দেশে এসেছে।

ছবি

বাংলাদেশে লিথিয়াম ব্যাটারি উৎপাদনে হুয়াওয়ে ও ওয়ালটনের চুক্তি

ছবি

বিদেশি বিনিয়োগে ভরসা কম, রাজস্ব আদায়ে জোর দেওয়ার আহ্বান অর্থ উপদেষ্টার

ছবি

আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষ কমছে, উৎপাদন ফিরছে কারখানায়

ছবি

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে জ্যোতি গ্রেপ্তার

ছবি

বাজার মূলধন বাড়লেও কমেছে সূচক-লেনদেন

আমদানির পরও বেড়েছে ডিমের দাম, বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে অন্যান্য পণ্য

ছবি

নগদের ফরেনসিক নিরীক্ষা হবে

ছবি

চার বেসিস সদস্য কোম্পানি পেল এশিয়া স্মার্ট অ্যাপ অ্যাওয়ার্ডস ২০২৪

ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা

ছবি

ডিমের দাম আরও বেড়েছে, আগের মতোই মাছ-মাংস-সবজি

পোশাক শিল্পে অস্থিরতা চলছেই, গাজীপুর ও আশুলিয়ায় ২২৭ কারখানা বন্ধ

ছবি

সেরা বার্ষিক প্রতিবেদনের জন্য আইসিএবি গোল্ড অ্যাওয়ার্ড পেল রবি

ছবি

রিজার্ভ ২০ বিলিয়নের নিচে: আকু বিল পরিশোধের পর নতুন নিম্নমুখী স্তর

ছবি

নগর পরিবহনে শৃঙ্খলা ভঙ্গের চেষ্টা হলে কঠোর ব্যবস্থা: ডিএসসিসি প্রশাসক

ছবি

পাথরঘাটায় সিন্ডিকেট করে বরফ বিক্রি, জিম্মি জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ী ৫০ হাজার পরিবার

ছবি

আশুলিয়ায় শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়ার আহ্বান বিজিএমইএ সভাপতির

ছবি

ঢাকায় সমাবেশ করবে বিএনপি

ছবি

এফবিসিসিআই সভাপতির পদত্যাগ

ছবি

সাবমেরিন ক্যাবলস কোম্পানীর স্বক্ষমতা বৃদ্ধির তাগিদ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের

ছবি

এশিয়ান টেকনোলজি অ্যাওয়ার্ড পেলো গ্রামীণফোন

ছবি

বন্যার্তদের পাশে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড

ছবি

১ মিলিয়ন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে ডিজিটালাইজ করবে প্রিয়শপ

ছবি

টেলিটকের সেবার মান উন্নত করার নির্দেশ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের

ছবি

নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০২৪ বাংলাদেশ পর্বের টাইটেল স্পন্সর এআইইউবি

ছবি

বিকাশের ‘পে-লেটার’ সেবা ব্যবহার করে গ্রামীণফোন গ্রাহকদের জন্য স্মার্টফোন ক্রয়ের সুযোগ

ছবি

বিদ্যুতের বকেয়া পরিশোধের জন্য ইউনূসকে আদানির চিঠি: ভারতীয় গণমাধ্যম

ছবি

ব্যক্তিগত হিসাব অবরুদ্ধ হলেও কোম্পানির লেনদেন চালু রয়েছে: বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

আয়কর কর্মকর্তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে এনবিআরের কঠোর নির্দেশনা

ছবি

আশুলিয়ায় পোশাক শ্রমিকদের জন্য অতিরিক্ত হাজিরা বোনাস ঘোষণা

ছবি

বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পূর্ণ বন্ধ, উৎপাদনে ফেরার সম্ভাবনা অনিশ্চিত

ছবি

আগের সরকার ৬০ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়েছে: অর্থ উপদেষ্টা

৬ ব্যাংকে এস আলম পরিবারের জমা ২৬ হাজার কোটি টাকা

ছবি

ডিএসইর পুনর্গঠিত পর্ষদের পরিচালক পদ থেকে সরে গেলেন মাজেদুর রহমান

ছবি

দেশের ১০টি ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে, সরকার চেষ্টা করছে বাঁচাতে: গভর্নর

ছবি

শেয়ারবাজারে দরপতন চলছেই

ছবি

বাংলাদেশে ওয়ানপ্লাস-এর প্রথম ফ্ল্যাগশিপ স্টোর উদ্বোধন

tab

অর্থ-বাণিজ্য

কোটা আন্দোলনের প্রভাবে তলানিতে রেমিট্যান্স

রেজাউল করিম

বুধবার, ৩১ জুলাই ২০২৪

কোটা আন্দোলনের প্রভাবে এবার তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে রেমিট্যান্স। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের ২৭ দিনে ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৫৬ কোটি ৭৫ লাখ (১.৫৭ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাকি চার দিন যদি এই হারে রেমিট্যান্স আসে, তাহলে গত ১০ মাসে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্সের রেকর্ড হবে। ব্যাংকাররা বলছেন, কোটা আন্দোলনের কারণে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় রেমিট্যান্স কমেছে। অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, ‘রেমিট্যান্স শাটডাউন’ নামের যে আন্দোলন প্রবাসীরা শুরু করেছেন, এটা তার ফল।

বাংলাদেশ ব্যাংক ২৯ জুলাই সোমবার রেমিট্যান্সের সাপ্তাহিক পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। সেই পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের ২৭ দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৫৬ কোটি ৭৫ লাখ (১.৫৭ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ১১৮ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ১৮ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। টাকার অঙ্কে যা ৬৮৫ কোটি টাকা। মাসের বাকি চার দিনে (২৮ থেকে ৩১ জুলাই) এই হারে এলে মাস শেষে রেমিট্যান্সের অঙ্ক ১৮০ কোটি (১.৮০ বিলিয়ন) ডলার হবে যা হবে দশ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম।

এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ (১.৩৩ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। এর পরের নয় মাসের পাঁচ মাস ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছে দেশে। চার মাস এসেছে ২ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।

দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে ধীরগতি নিয়ে শুরু হয় নতুন অর্থবছর। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতা, মৃত্যু, ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ, মামলা, গ্রেপ্তার ও প্রবাসীদের উৎকণ্ঠার প্রেক্ষাপটে রেমিটেন্স প্রবাহে আরও পতন দেখা দিয়েছে। তবে আগের মাস জুনে এই সূচকে উল্লম্ফন দেখা গিয়েছিল।

মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) কথা হয় সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও জাফর আলমের সঙ্গে। কোটা আন্দোলনের কারণে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় রেমিট্যান্স কমেছে বলে মনে করেন তিনি। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে ৫-৬ দিন ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। তাই প্রবাসীরা টাকা পাঠাতে পারেনি। এর কারণে গত সপ্তাহে রেমিট্যান্সের পরিমাণ কমেছে।’

তবে আগামী কয়েকদিনে এর পরিমাণ বাড়বে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, যেহেতু ইন্টারনেটের কারণে সেসব প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠাতে পারেনি, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সেগুলো পাঠিয়ে দিবে। তখন আবার রেমিট্যান্স বাড়বে। গত সপ্তাহে যেমন কম রেমিট্যান্স এসেছিল, আগামী চারদিন বেশি রেমিট্যান্স আসবে।’

তবে অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন, শুধু ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে রেমিট্যান্স কমেনি। এর পেছনে রয়েছে প্রবাসীদের ‘রেমিট্যান্স শাটডাউন’ আন্দোলন। কোটা আন্দোলনকারী ছাত্রদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ রেখেছে। তাই রেমিট্যান্স কমেছে।

অর্থনীতিবিদদের এই আশঙ্কার সত্যতা দেখা যায় প্রবাসীদের বিভিন্ন ফেইসবুক গ্রুপে। সেসব গ্রুপগুলোতে তারা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানোর জন্য সব প্রবাসীদের উৎসাহিত করছেন। কেউ কেউ আগামী কয়েক মাস কোনো রেমিট্যান্স না পাঠানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে রেমিট্যান্স কমেছে এমনটা আশঙ্কা করছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি সংবাদকে বলেন, ‘যেকোনো দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হলে অর্থ পাচারকারীরা সুযোগ। এর ফলে দেখা যাবে, প্রবাসীরা অর্থ পাঠাবে, তার আত্মীয়স্বজন টাকা পাবে, কিন্তু দেশে ডলার আসবে না (হুন্ডি)। এই কার্যক্রম অর্থনীতির জন্য খারাপ ফল বয়ে আনবে। এটা চলতে দেওয়া যাবে না। সরকারের উচিত, যেভাবেই হোক দেশের অবস্থা স্থীতিশীল করা।’

বাংলাদেশে ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ (২.৫৪ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছিল ৮ কোটি ৪৭ লাখ ডলার, টাকার হিসাবে ছিল এক হাজার কোটি টাকা। একক মাসের হিসাবে জুন মাসের রেমিটেন্স ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে ২৬০ কোটি (২.৬ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিল প্রবাসীরা। গত বছরের জুনের চেয়ে এই বছরের জুনে ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি এসেছিল দেশে।

কিন্তু নতুন অর্থবছরের শুরুতে রেমিটেন্স প্রবাহের সেই উল্লম্ফন আর নেই। চলতি জুলাই মাসের ২৭ দিনে প্রবাসী আয় এসেছে ১৫৬ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের প্রথম ছয় দিনে (১ থেকে ৬ জুলাই) ৩৭ কোটি ৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। পরের সপ্তাহে অর্থাৎ ৭ থেকে ১৩ জুলাই এসেছে ৬০ কোটি ৮১ লাখ ডলার। ১৪ থেকে ২০ জুলাই সপ্তাহে আসে ৪৫ কোটি ৭০ লাখ ৫০ হাজার ডলার। আর পরের সাত দিন অর্থাৎ ২১ থেকে ২৭ জুলাই সপ্তাহে এসেছে ১৩ কোটি ৮০ লাখ ৬০ হাজার ডলারে। সব মিলিয়ে ১ থেকে ২৭ জুলাই এসেছে ১৫৬ কোটি ৭৫ লাখ (১.৫৬ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

গত ১৯ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংকিং কার্যক্রম চলেছে মাত্র এক দিন। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে দেশজুড়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তা নিয়ন্ত্রণে ১৯ জুলাই রাত থেকে কারফিউ জারি করে সরকার। এরপর ২৩ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ ছিল। ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ব্যাংকের অনলাইন লেনদেনও বন্ধ ছিল। কয়েক দিন লেনদেন বন্ধের পর ২৪ জুলাই ব্যাংক চালু হয়। ওই দিন লেনদেন চলে বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা। ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ১৯ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই বৈধ পথে তথা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে প্রবাসী আয় আসাও সম্ভব ছিল না। এ সময়ের মধ্যে যারা বিদেশ থেকে প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন, ২৪ জুলাইয়ের পর তা দেশে এসেছে।

back to top