alt

অর্থ-বাণিজ্য

১৫ বছরে ব্যাংক খাতে লোপাট ৯২,২৬১ কোটি টাকা : সিপিডি

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : মঙ্গলবার, ১৩ আগস্ট ২০২৪

গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্তরা বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দেয়ার জন্য অনেক নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। যার ফলে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গত ১৫ বছরে দেশের ব্যাংকখাতে বড় বড় অন্তত ২৪টি আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। এর মাধ্যমে লোপাট হয়েছে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। এ অর্থ গত অর্থবছরের বাজেটের ১২ শতাংশ। অন্যদিকে এসময়ে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা।

সোমবার (১২ আগস্ট) রাজধানীর ধানমন্ডিতে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) কার্যালয়ে ‘ব্যাংকিং খাতের সুশাসন ফিরিয়ে আনতে করণীয়’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন এ তথ্য তুলে ধরেন। এসময় সিপিডির সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান ও গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়।

ব্যাংকখাতকে এখনই ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য কিছু পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ জানিয়ে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘এটি করা হলে অর্থনীতির বিরাট জায়গা আমরা উন্নত করতে পারবো।’ ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা খর্ব করা, নিয়মনীতি না মেনে বেসরকারি ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়াকে ব্যাংকখাতের মূল সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন তিনি।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘ব্যাংকগুলোতে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা রয়েছে। বোর্ডের সদস্য নির্বাচন করা, ব্যাংক ঋণ স্যাংশন করার প্রক্রিয়া, আন্তর্জাতিক মানদ- পালনে দুর্বলতা রয়েছে। স্বাধীনতা খর্ব হতে হতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুরোপুরি স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেছে। এখানে প্রশাসনের দ্বৈততা রয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করা হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ন্ত্রণের জন্য, এর কোনো প্রয়োজন নেই। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকের লাইসেন্স প্রদানে কোনো বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়নি। এর মাধ্যমে স্বার্থান্বেষী শ্রেণী তৈরির জন্য ব্যাংক লাইসেন্স দেয়া হয়। এসব ব্যাংকের কোনো সক্ষমতা নেই। সেগুলো আবার সরকারি অর্থে রিক্যাপিটালাইজেশন করা হয়। সরকারি অর্থের কী ধরনের অপচয়।’

তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিখাতের ব্যাংকের মধ্যে তারা একটি অলিগার্ক তৈরি করে রেখেছে। কয়েকজন মিলে পুরো ব্যাংকখাত নিয়ন্ত্রণ করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর তারা নিয়ন্ত্রণ করছে। নীতিমালা তৈরি করছে। অনেক খেলাপি ঋণের মামলা জমে গেছে। ব্যাংকখাত দুর্বল হচ্ছে, কারণ ব্যাংকিং কোম্পানি অ্যাক্ট পরিবর্তন করা হয়। আইনের ফাঁকফোকরে অনেক ঋণ খেলাপি বের হয়ে যায়।’

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশাসনিক দায়িত্ব যারা পালন করেছেন, অর্থাৎ গত ১৫ বছরে গভর্নর যারা ছিলেন তারা যেসব নীতিমালা নিয়েছেন, সেগুলো ব্যাংকিং নর্মসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তারা বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে অনেক নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। এগুলোর তদন্ত হওয়া উচিত। এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন।’

খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলছে জানিয়ে এ অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ‘২০০৯ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা, যা চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকায়। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির বিষয়টির এখনও তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ করার জন্য সিআইডি ৭৯ বার সময় নিয়েছে। নতুন সময় ৪ সেপ্টেম্বর, সেটা ভবিষ্যতে দেখা যাবে। আমরা চাই ওই তদন্ত প্রতিবেদন উন্মুক্ত করা দেয়া হোক।’

সিপিডি নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘বারবার পুনঃতফসিল করার কারণে ঋণ খেলাপির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে, এটা বন্ধ করতে হবে। ২০১২ সালের হলমার্কের ঋণ কেলেঙ্কারিতে দেখেছিলাম অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা দুর্বল ছিল, এখনও বিভিন্ন ব্যাংকে তা রয়ে গেছে। ২০২১ সালের তথ্যানুসারে ১১টি ব্যাংকের তথ্য-উপাত্ত গবেষণা করে বলেছিলাম শক্তিশালী প্রশাসক নিয়োগের সুপারিশ করছি। অনেকগুলো মৃতপ্রায়। যেগুলোর বেঁচে থাকার কথা নয়, ওইগুলো বন্ধ করা উচিত। যেগুলো দুর্বল রয়েছে, সেগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন করে যথাযথভাবে ঠিক করতে হবে। না হলে সক্রিয় করা সম্ভব নয়।’

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিকভাবে লাইসেন্স পাওয়া তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের কিছু ব্যাংক মৃতপ্রায় হয়ে আছে। এদের চলনশক্তি নেই। এদের জনগণের করের টাকা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। এরা মরে যাক। এতে শুধু অর্থের অপচয় হচ্ছে। বন্ধ হয়ে যাক এসব ব্যাংক। এ ছাড়া কিছু ব্যাংকের পারফরম্যান্স খারাপ, আরেকটু ধাক্কা লাগলেই মরে যাবে। এগুলোর পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন করে পরিচালনার চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে বলে ফাহমিদা খাতুন জানান।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘অনেক আর্থিক মামলা আদালতে পড়ে আছে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আর্থিক আদালতে মামলার সংখ্যা ৭২ হাজার ৫০০টি। টাকার পরিমাণ ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা। ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে আর্থিক কেলেঙ্কারি খুঁজে বের করা প্রয়োজন। আমাদের গবেষণায় দেখিয়েছিলাম ২৪টি আর্থিক কেলেঙ্কারি হয়েছে, যার পরিমাণ ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা।’

ব্যাংকগুলো মার্জ হওয়ার পূর্বশর্ত হলো অডিট করে ফাইনান্সিয়াল অবস্থা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে দেখা। পরিচালনা পর্ষদের সদস্য নেয়ার ক্ষেত্রে কিছু ক্যাটাগরি ঠিক করে দিতে হবে। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সরকার ১৫ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা দুর্বল ব্যাংকগুলোকে পুঁজি হিসেবে দেয়া হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ে আর্থিক বিভাগ বাতিলের দাবি জানিয়ে সিপিডি জানিয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিভাগ অর্থাৎ এফআইডি রয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক স্বাধীনভাবে তার কার্যক্রম করতে পারে না। এটা সৃষ্টি করার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো ব্যাংকিং সেক্টরকে প্রভাবিত করা। তারা মনে করেন অন্যায়ভাবে ঋণ কিংবা ভুল সিদ্ধান্ত যেগুলো নেয়া হয়েছে, তার একটি তদন্ত হওয়া উচিত। তাদের সুপারিশ এফআইডি বন্ধ করে দেয়া উচিত, এই বিভাগের কোনো প্রয়োজন নেই।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ছাত্রদের আন্দোলনে আমাদের নৈতিক সমর্থন ছিল। ছাত্রদের মুক্তির মিছিলে আমরা ছিলাম। যারা আত্মত্যাগ করেছে তাদের কাছে আমাদের এগুলো কিছুই না। আর্থিকখাতে দুর্নীতির শ্বেতপত্র তৈরি করতে হবে। ব্যাংকখাতে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।’

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘ব্যাংকখাতের চ্যালেঞ্জগুলো আর্থিক খাতেও প্রযোজ্য। বাংলাদেশের পুঁজিবাজার অসুস্থ ও বিকলাঙ্গ। একই ভাবে বিমা খাতও অগ্রহণযোগ্য অবস্থায় আছে। আর্থিক খাতে সুশাসনের জন্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক খাতগুলো বন্ধ করতে হবে।’

ছবি

বাংলাদেশে ওয়ানপ্লাস-এর প্রথম ফ্ল্যাগশিপ স্টোর উদ্বোধন

ছবি

পুষ্টিগ্রাম: বাড়ির আঙিনায় নিরাপদ সবজি চাষে ভাগ্যবদল

ছবি

বাজারে চাঁদাবাজি করলে ডিসিদের ব্যবস্থা নিতে বলেছি : অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

চলতি বছরে সোনার দাম বেড়েছে ২১ শতাংশ, কেনা বন্ধ রেখেছে চীন

ফের ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামছে রিজার্ভ

‘আশা সবাই দেখায়, আসলে আমরা বলির পাঁঠা’,‘চারিদিকের অবস্থা খারাপ’

ছবি

বেক্সিমকো গ্রুপের সম্পদ দেখভালে রিসিভার নিয়োগে উচ্চ আদালতের রুল

ছবি

বন্যা ও অচলাবস্থার কারণে পণ্যবাজারে স্বস্তি দিতে শুল্ক ছাড়

ছবি

ইসলামী ব্যাংকের ঋণের অর্ধেকের বেশি নিয়েছে এস আলম

ছবি

শেয়ারবাজারে ইতিহাস, ৪১০০ শতাংশ লভ্যাংশ দেবে লিন্ডে বিডি

ব্যাংক খাতের পরিস্থিতি: আমানতকারীদের স্বার্থে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

ঋণ খেলাপি নিয়ন্ত্রণে তিনটি টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত

ছবি

বড় ঋণ খেলাপিদের সম্পদ বিক্রির মাধ্যমে ঋণ আদায়ে উদ্যোগ: বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

পোশাক কারখানা খুলে দিতে বিজিএমইএ’র সিদ্ধান্ত, যৌথ অভিযান শুরু

ছবি

স্পট মার্কেট থেকে ২০ কার্গো এলএনজি আমদানির অনুমোদন

ছবি

রেজার ক্যাপিটালের ‘সিরিজ এ’ বিনিয়োগ পেল আইফার্মার

ছবি

বিকাশে আইডিএলসি লোনের কিস্তি পরিশোধের সুযোগ

ছবি

সরানো হল সালমান এফ রহমানকে, আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মেহমুদ হোসেন

ছবি

সূচকের ওঠানামায় পুঁজিবাজারে লেনদেন চলছে

ছয় মাসে খেলাপি ঋণ বাড়লো ৬৬ হাজার কোটি টাকা

ছবি

এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা আল আরাফাহ ও কমার্স ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন

ছবি

ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ রেকর্ড পরিমাণে, জুন শেষে ছাড়িয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার কোটি

ছবি

পর্ষদ পুনর্গঠন করা ব্যাংকের সংকট নিয়ে বসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ছবি

বিএসইসির কমিশনার হলেন ফারজানা লালারুখ

ছবি

ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে গুঁড়া দুধ ছাড়া সব পণ্য আমদানির অনুমতি

ছবি

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন, নিয়োগ পেলেন সাত স্বতন্ত্র পরিচালক

ছবি

সূচকের উত্থানে পুঁজিবাজারে চলছে লেনদেন

ছবি

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে সিআইডির অনুসন্ধান

ছবি

সেপ্টেম্বরে জ্বালানি তেলের দাম কমালো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

ছবি

এক্সিম ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম স্বপন

ছবি

ডিমের দাম বেড়েছে, কমেছে সবজির

ছবি

বাজারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন স্যামসাংয়ের নতুন রেফ্রিজারেটর

ছবি

দেশের বেকারত্বের হার বৃদ্ধি: বিবিএসের জরিপ

ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট মুনাফা ১৫,১০০ কোটি টাকা

ছবি

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সচিব আকিজ উদ্দিনের ব্যাংক হিসাব জব্দ

ছবি

সালমান এফ রহমান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ

tab

অর্থ-বাণিজ্য

১৫ বছরে ব্যাংক খাতে লোপাট ৯২,২৬১ কোটি টাকা : সিপিডি

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

মঙ্গলবার, ১৩ আগস্ট ২০২৪

গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্তরা বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দেয়ার জন্য অনেক নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। যার ফলে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গত ১৫ বছরে দেশের ব্যাংকখাতে বড় বড় অন্তত ২৪টি আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। এর মাধ্যমে লোপাট হয়েছে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। এ অর্থ গত অর্থবছরের বাজেটের ১২ শতাংশ। অন্যদিকে এসময়ে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা।

সোমবার (১২ আগস্ট) রাজধানীর ধানমন্ডিতে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) কার্যালয়ে ‘ব্যাংকিং খাতের সুশাসন ফিরিয়ে আনতে করণীয়’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন এ তথ্য তুলে ধরেন। এসময় সিপিডির সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান ও গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়।

ব্যাংকখাতকে এখনই ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য কিছু পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ জানিয়ে ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘এটি করা হলে অর্থনীতির বিরাট জায়গা আমরা উন্নত করতে পারবো।’ ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা খর্ব করা, নিয়মনীতি না মেনে বেসরকারি ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়াকে ব্যাংকখাতের মূল সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন তিনি।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, ‘ব্যাংকগুলোতে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা রয়েছে। বোর্ডের সদস্য নির্বাচন করা, ব্যাংক ঋণ স্যাংশন করার প্রক্রিয়া, আন্তর্জাতিক মানদ- পালনে দুর্বলতা রয়েছে। স্বাধীনতা খর্ব হতে হতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুরোপুরি স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেছে। এখানে প্রশাসনের দ্বৈততা রয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করা হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ন্ত্রণের জন্য, এর কোনো প্রয়োজন নেই। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকের লাইসেন্স প্রদানে কোনো বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়নি। এর মাধ্যমে স্বার্থান্বেষী শ্রেণী তৈরির জন্য ব্যাংক লাইসেন্স দেয়া হয়। এসব ব্যাংকের কোনো সক্ষমতা নেই। সেগুলো আবার সরকারি অর্থে রিক্যাপিটালাইজেশন করা হয়। সরকারি অর্থের কী ধরনের অপচয়।’

তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিখাতের ব্যাংকের মধ্যে তারা একটি অলিগার্ক তৈরি করে রেখেছে। কয়েকজন মিলে পুরো ব্যাংকখাত নিয়ন্ত্রণ করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর তারা নিয়ন্ত্রণ করছে। নীতিমালা তৈরি করছে। অনেক খেলাপি ঋণের মামলা জমে গেছে। ব্যাংকখাত দুর্বল হচ্ছে, কারণ ব্যাংকিং কোম্পানি অ্যাক্ট পরিবর্তন করা হয়। আইনের ফাঁকফোকরে অনেক ঋণ খেলাপি বের হয়ে যায়।’

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশাসনিক দায়িত্ব যারা পালন করেছেন, অর্থাৎ গত ১৫ বছরে গভর্নর যারা ছিলেন তারা যেসব নীতিমালা নিয়েছেন, সেগুলো ব্যাংকিং নর্মসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তারা বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে অনেক নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন। এগুলোর তদন্ত হওয়া উচিত। এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন।’

খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলছে জানিয়ে এ অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ‘২০০৯ সালে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা, যা চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকায়। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির বিষয়টির এখনও তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ করার জন্য সিআইডি ৭৯ বার সময় নিয়েছে। নতুন সময় ৪ সেপ্টেম্বর, সেটা ভবিষ্যতে দেখা যাবে। আমরা চাই ওই তদন্ত প্রতিবেদন উন্মুক্ত করা দেয়া হোক।’

সিপিডি নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘বারবার পুনঃতফসিল করার কারণে ঋণ খেলাপির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে, এটা বন্ধ করতে হবে। ২০১২ সালের হলমার্কের ঋণ কেলেঙ্কারিতে দেখেছিলাম অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা দুর্বল ছিল, এখনও বিভিন্ন ব্যাংকে তা রয়ে গেছে। ২০২১ সালের তথ্যানুসারে ১১টি ব্যাংকের তথ্য-উপাত্ত গবেষণা করে বলেছিলাম শক্তিশালী প্রশাসক নিয়োগের সুপারিশ করছি। অনেকগুলো মৃতপ্রায়। যেগুলোর বেঁচে থাকার কথা নয়, ওইগুলো বন্ধ করা উচিত। যেগুলো দুর্বল রয়েছে, সেগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন করে যথাযথভাবে ঠিক করতে হবে। না হলে সক্রিয় করা সম্ভব নয়।’

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিকভাবে লাইসেন্স পাওয়া তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের কিছু ব্যাংক মৃতপ্রায় হয়ে আছে। এদের চলনশক্তি নেই। এদের জনগণের করের টাকা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। এরা মরে যাক। এতে শুধু অর্থের অপচয় হচ্ছে। বন্ধ হয়ে যাক এসব ব্যাংক। এ ছাড়া কিছু ব্যাংকের পারফরম্যান্স খারাপ, আরেকটু ধাক্কা লাগলেই মরে যাবে। এগুলোর পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন করে পরিচালনার চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে বলে ফাহমিদা খাতুন জানান।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘অনেক আর্থিক মামলা আদালতে পড়ে আছে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আর্থিক আদালতে মামলার সংখ্যা ৭২ হাজার ৫০০টি। টাকার পরিমাণ ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা। ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে আর্থিক কেলেঙ্কারি খুঁজে বের করা প্রয়োজন। আমাদের গবেষণায় দেখিয়েছিলাম ২৪টি আর্থিক কেলেঙ্কারি হয়েছে, যার পরিমাণ ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা।’

ব্যাংকগুলো মার্জ হওয়ার পূর্বশর্ত হলো অডিট করে ফাইনান্সিয়াল অবস্থা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে দেখা। পরিচালনা পর্ষদের সদস্য নেয়ার ক্ষেত্রে কিছু ক্যাটাগরি ঠিক করে দিতে হবে। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সরকার ১৫ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা দুর্বল ব্যাংকগুলোকে পুঁজি হিসেবে দেয়া হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ে আর্থিক বিভাগ বাতিলের দাবি জানিয়ে সিপিডি জানিয়েছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বিভাগ অর্থাৎ এফআইডি রয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক স্বাধীনভাবে তার কার্যক্রম করতে পারে না। এটা সৃষ্টি করার প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো ব্যাংকিং সেক্টরকে প্রভাবিত করা। তারা মনে করেন অন্যায়ভাবে ঋণ কিংবা ভুল সিদ্ধান্ত যেগুলো নেয়া হয়েছে, তার একটি তদন্ত হওয়া উচিত। তাদের সুপারিশ এফআইডি বন্ধ করে দেয়া উচিত, এই বিভাগের কোনো প্রয়োজন নেই।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ছাত্রদের আন্দোলনে আমাদের নৈতিক সমর্থন ছিল। ছাত্রদের মুক্তির মিছিলে আমরা ছিলাম। যারা আত্মত্যাগ করেছে তাদের কাছে আমাদের এগুলো কিছুই না। আর্থিকখাতে দুর্নীতির শ্বেতপত্র তৈরি করতে হবে। ব্যাংকখাতে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।’

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘ব্যাংকখাতের চ্যালেঞ্জগুলো আর্থিক খাতেও প্রযোজ্য। বাংলাদেশের পুঁজিবাজার অসুস্থ ও বিকলাঙ্গ। একই ভাবে বিমা খাতও অগ্রহণযোগ্য অবস্থায় আছে। আর্থিক খাতে সুশাসনের জন্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক খাতগুলো বন্ধ করতে হবে।’

back to top