আলোচিত ব্যবসায়ি এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের ৯১ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সব হিসাব তলব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআরের আয়কর বিভাগের রাজধানীর কর অঞ্চল-১৫ থেকে বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) এ সংক্রান্ত চিঠি সব ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে। এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ২০০ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে করদাতার নামে অথবা যৌথ নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিচালিত সব ধরনের ব্যাংক হিসাব ও ক্রেডিট কার্ড সংক্রান্ত চাওয়া হয়েছে।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, এস আলমের (সাইফুল আলম) স্ত্রী ফারজানা পারভীন, মা চেমন আরা বেগম এবং ভাই আবদুল্লাহ হাসানের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের বাবা-মা, স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে বা বোনের যৌথ নামে অথবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ব্যাংক হিসাবের তথ্যও তলব করা হয়েছে। এর মানে, এস আলমসহ তার পুরো পরিবারের সদস্যদের যাবতীয় ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে এনবিআর।
এছাড়া তাদের নামে থাকা ক্রেডিট কার্ডের তথ্যও চাওয়া হয়েছে। ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর ও ডাক বিভাগের কাছে থাকা হিসাবের তথ্য চেয়েছে কর অঞ্চল-১৫।
চিঠিতে এস আলমের স্ত্রী, মা ও ভাইয়ের নাম ছাড়া অন্য কারও নাম সুস্পষ্ট না থাকায় তাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের হিসাব সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চলে পাঠানোর সময় করদাতা কোম্পানির পূর্ণ নাম, ই-টিআইএনসহ সব প্রকার ব্যবসায়িক ও আবাসিক ঠিকানা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করার নির্দেশনা দেয়া হয়।
চিঠিতে এস আলমের স্ত্রী ফারজানা পারভীন ও ভাই আবদুল্লাহ হাসানের পরিচয় হিসেবে এস আলম লাক্সারি চেয়ার কোচ সার্ভিস ও এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিল লিমিটেডের পরিচালক বলা হয়েছে চিঠিতে। এস আলমের মা চেমন আরা বেগম এস আলম লাক্সারি চেয়ার কোচ সার্ভিসের পরিচালক হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগের বিষয়ে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অনুসন্ধান চলার কথা জানিয়েছিল বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান মাসুদ বিশ্বাস।
গত ফেব্রুয়ারিতে অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সংস্থা বিএফআইইউ এর ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। তবে তারপর তার এ অনুসন্ধানের অগ্রগতি নিয়ে তেমন তথ্য আর সামনে আসেনি।
এস আলম ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে গত এক দশকে ব্যাংক দখল, অর্থ পাচারসহ ক্ষমতার অপব্যবহারের নানা অভিযোগ রয়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয়ে তিনি এসব কর্মকা- ঘটিয়েছেন। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় এস আলম গ্রুপ। এখন ব্যাংকটির এক-তৃতীয়াংশ ঋণই গ্রুপটির স্বার্থসংশ্লিষ্ট। গত সাত বছরে বিভিন্ন জালিয়াতের আশ্রয় নিয়ে শুধুমাত্র ইসলামী ব্যাংক থেকেই ৫০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
শুধু তাই নয়, একই ২০১৭ সালে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় দখল করে এস আলম গ্রুপ। আগের বছর তারা বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গ্লোবাল ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ এস আলম গ্রুপের হাতে। আর ২০০৪ সালে সিকদার গ্রুপ থেকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ যায় এস আলম গ্রুপের কাছে।
অভিযোগ রয়েছে, এস আলম গ্রুপের এমন দুর্নীতি করার সুযোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি হিসাবে ঘাটতি থাকায় নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে ‘টাকা ছাপিয়ে’ ও নানা অভিনব সুবিধা দিয়ে এস আলম-নিয়ন্ত্রিত ছয়টি ব্যাংককে টিকিয়ে রেখেছিলেন সাবেক গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। এতে তৎকালীন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সায় ছিল। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরপরই আত্মগোপনে চলে যান সাবেক গভর্নর। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব ব্যাংককে দেয়া বিশেষ সুবিধার সীমা কমিয়ে দেয়। পাশাপাশি এসব ব্যাংকের এক কোটি টাকার বেশি অর্থের চেক ক্লিয়ারিং করার সুবিধাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
শুক্রবার, ১৬ আগস্ট ২০২৪
আলোচিত ব্যবসায়ি এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের ৯১ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সব হিসাব তলব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআরের আয়কর বিভাগের রাজধানীর কর অঞ্চল-১৫ থেকে বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) এ সংক্রান্ত চিঠি সব ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে। এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ২০০ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে করদাতার নামে অথবা যৌথ নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিচালিত সব ধরনের ব্যাংক হিসাব ও ক্রেডিট কার্ড সংক্রান্ত চাওয়া হয়েছে।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, এস আলমের (সাইফুল আলম) স্ত্রী ফারজানা পারভীন, মা চেমন আরা বেগম এবং ভাই আবদুল্লাহ হাসানের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের বাবা-মা, স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে বা বোনের যৌথ নামে অথবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ব্যাংক হিসাবের তথ্যও তলব করা হয়েছে। এর মানে, এস আলমসহ তার পুরো পরিবারের সদস্যদের যাবতীয় ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে এনবিআর।
এছাড়া তাদের নামে থাকা ক্রেডিট কার্ডের তথ্যও চাওয়া হয়েছে। ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর ও ডাক বিভাগের কাছে থাকা হিসাবের তথ্য চেয়েছে কর অঞ্চল-১৫।
চিঠিতে এস আলমের স্ত্রী, মা ও ভাইয়ের নাম ছাড়া অন্য কারও নাম সুস্পষ্ট না থাকায় তাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের হিসাব সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চলে পাঠানোর সময় করদাতা কোম্পানির পূর্ণ নাম, ই-টিআইএনসহ সব প্রকার ব্যবসায়িক ও আবাসিক ঠিকানা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করার নির্দেশনা দেয়া হয়।
চিঠিতে এস আলমের স্ত্রী ফারজানা পারভীন ও ভাই আবদুল্লাহ হাসানের পরিচয় হিসেবে এস আলম লাক্সারি চেয়ার কোচ সার্ভিস ও এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিল লিমিটেডের পরিচালক বলা হয়েছে চিঠিতে। এস আলমের মা চেমন আরা বেগম এস আলম লাক্সারি চেয়ার কোচ সার্ভিসের পরিচালক হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগের বিষয়ে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অনুসন্ধান চলার কথা জানিয়েছিল বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান মাসুদ বিশ্বাস।
গত ফেব্রুয়ারিতে অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সংস্থা বিএফআইইউ এর ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। তবে তারপর তার এ অনুসন্ধানের অগ্রগতি নিয়ে তেমন তথ্য আর সামনে আসেনি।
এস আলম ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে গত এক দশকে ব্যাংক দখল, অর্থ পাচারসহ ক্ষমতার অপব্যবহারের নানা অভিযোগ রয়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয়ে তিনি এসব কর্মকা- ঘটিয়েছেন। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় এস আলম গ্রুপ। এখন ব্যাংকটির এক-তৃতীয়াংশ ঋণই গ্রুপটির স্বার্থসংশ্লিষ্ট। গত সাত বছরে বিভিন্ন জালিয়াতের আশ্রয় নিয়ে শুধুমাত্র ইসলামী ব্যাংক থেকেই ৫০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
শুধু তাই নয়, একই ২০১৭ সালে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় দখল করে এস আলম গ্রুপ। আগের বছর তারা বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গ্লোবাল ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ এস আলম গ্রুপের হাতে। আর ২০০৪ সালে সিকদার গ্রুপ থেকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ যায় এস আলম গ্রুপের কাছে।
অভিযোগ রয়েছে, এস আলম গ্রুপের এমন দুর্নীতি করার সুযোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি হিসাবে ঘাটতি থাকায় নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে ‘টাকা ছাপিয়ে’ ও নানা অভিনব সুবিধা দিয়ে এস আলম-নিয়ন্ত্রিত ছয়টি ব্যাংককে টিকিয়ে রেখেছিলেন সাবেক গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। এতে তৎকালীন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সায় ছিল। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরপরই আত্মগোপনে চলে যান সাবেক গভর্নর। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব ব্যাংককে দেয়া বিশেষ সুবিধার সীমা কমিয়ে দেয়। পাশাপাশি এসব ব্যাংকের এক কোটি টাকার বেশি অর্থের চেক ক্লিয়ারিং করার সুবিধাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।