বাংলাদেশের কমপক্ষে ১০টি ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার মতো সংকটময় অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। সরকার এই ব্যাংকগুলোকে রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সংকটাপন্ন এই ব্যাংকগুলোর নাম প্রকাশ করা হয়নি।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর এ কথা জানান। তিনি বলেন, ব্যাংক খাতে বর্তমানে বড় ধরনের সংকট বিদ্যমান, তবে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে ।
আমানত বীমা দ্বিগুণ:
সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর জানান, আমানতকারীদের সুরক্ষার জন্য আমানত বীমার পরিমাণ এক লাখ থেকে ২ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রায় ৯৫ শতাংশ আমানতকারীর টাকা সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষিত থাকবে। তিনি বলেন, "বিশ্বের কোনো দেশই ১০০ শতাংশ আমানতকারীর টাকা ফেরত দেওয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারে না, আমরাও পারব না। তবে ছোট আমানতকারীদের জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে, যাতে কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হলে তারা দ্রুত টাকা ফেরত পায়।"
ব্যাংকিং খাতে সংস্কার:
গভর্নর বলেন, "বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে সংস্কার শুরু হয়েছে এবং কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। তবে আমাদের প্রধান লক্ষ্য এখন আমানতকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা।"
তিনি আরও বলেন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার বিষয়ে এখনও কোনো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়নি। "যারা অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে, তারা ব্যক্তি অ্যাকাউন্ট। আমরা কোনো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে হাত দিতে চাই না, কারণ এর ফলে কর্মসংস্থান এবং উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে," তিনি যোগ করেন।
এসএমই খাতে ঋণ বিতরণে সমস্যা:
গভর্নর উল্লেখ করেন, এসএমই খাতে ঋণ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন স্কিমে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। তবে ব্যাংকগুলো এই অর্থ বিতরণ করতে পারছে না। "বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফও এসএমই খাতে বিনিয়োগের জন্য অর্থায়ন করছে, কিন্তু কোনো কারণে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এ ঋণ বিতরণ হচ্ছে না। ব্যাংকগুলোকে এর কারণ এবং সমাধানের বিষয়ে লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে," তিনি বলেন।
ব্যাংক খাতের টাস্কফোর্স:
আগামী ১০ দিনের মধ্যে ব্যাংক খাতের সমস্যা সমাধানের জন্য একটি টাস্কফোর্স কাজ শুরু করবে বলে জানান গভর্নর। এই টাস্কফোর্স ব্যাংক খাতের বর্তমান সমস্যাগুলো নির্ধারণ করবে এবং আগের নীতিমালাগুলো পর্যালোচনা করবে। যদি কোনো নীতিমালা শুধু গুটিকয়েক ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিতে করা হয়ে থাকে, তাহলে সেই নীতিমালা বাতিল করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
ব্যাংক খাতে পরিবারতন্ত্র ভাঙার প্রতিশ্রুতি:
গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংক খাতে পরিবারতন্ত্রের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হবে। টাস্কফোর্সের কাজ হবে নীতিমালা পুনরায় মূল্যায়ন করা এবং প্রয়োজনমতো পরিবর্তন আনা। "আমরা চাই না ব্যাংক খাত কিছু ব্যবসায়ী পরিবারের হাতে সীমাবদ্ধ থাকুক, এই সমস্যা সমাধানে আমরা কাজ করছি," তিনি বলেন।
এস আলম ও অন্যান্য ঋণখেলাপিদের সম্পদ ক্রয় বিষয়ে সতর্কতা:
গভর্নর স্পষ্টভাবে বলেন, যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেছে, তাদের দায়বদ্ধতা নির্ধারণ করা হচ্ছে। তাদের সম্পদ বিক্রি করে এই দায় মেটানো হবে। যারা এস আলমের সম্পদ কিনতে চায়, তাদের নিজের দায়িত্বেই ক্রয় করতে হবে। কারণ এসব সম্পদের সঙ্গে যে দায় জড়িত থাকবে, তা ক্রেতাকেই বহন করতে হবে।
সার্বিক পরিস্থিতি:
গভর্নরের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়, ব্যাংক খাতে সংকট মোকাবিলায় সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা ব্যাংকগুলোকে বাঁচাতে চেষ্টা চলছে, পাশাপাশি আমানতকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এসএমই খাতে ঋণ বিতরণের সমস্যাগুলো সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং ব্যাংক খাতে আরও কার্যকর সংস্কার ও টাস্কফোর্সের মাধ্যমে সমস্যাগুলোর সমাধান করা হবে।
তিনি আশ্বাস দেন, সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক একসঙ্গে কাজ করে দেশের ব্যাংকিং খাতকে শক্তিশালী করবে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
বাংলাদেশের কমপক্ষে ১০টি ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার মতো সংকটময় অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। সরকার এই ব্যাংকগুলোকে রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সংকটাপন্ন এই ব্যাংকগুলোর নাম প্রকাশ করা হয়নি।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর এ কথা জানান। তিনি বলেন, ব্যাংক খাতে বর্তমানে বড় ধরনের সংকট বিদ্যমান, তবে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে ।
আমানত বীমা দ্বিগুণ:
সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর জানান, আমানতকারীদের সুরক্ষার জন্য আমানত বীমার পরিমাণ এক লাখ থেকে ২ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রায় ৯৫ শতাংশ আমানতকারীর টাকা সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষিত থাকবে। তিনি বলেন, "বিশ্বের কোনো দেশই ১০০ শতাংশ আমানতকারীর টাকা ফেরত দেওয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারে না, আমরাও পারব না। তবে ছোট আমানতকারীদের জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়েছে, যাতে কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হলে তারা দ্রুত টাকা ফেরত পায়।"
ব্যাংকিং খাতে সংস্কার:
গভর্নর বলেন, "বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে সংস্কার শুরু হয়েছে এবং কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। তবে আমাদের প্রধান লক্ষ্য এখন আমানতকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা।"
তিনি আরও বলেন, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার বিষয়ে এখনও কোনো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়নি। "যারা অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে, তারা ব্যক্তি অ্যাকাউন্ট। আমরা কোনো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে হাত দিতে চাই না, কারণ এর ফলে কর্মসংস্থান এবং উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে," তিনি যোগ করেন।
এসএমই খাতে ঋণ বিতরণে সমস্যা:
গভর্নর উল্লেখ করেন, এসএমই খাতে ঋণ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন স্কিমে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। তবে ব্যাংকগুলো এই অর্থ বিতরণ করতে পারছে না। "বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফও এসএমই খাতে বিনিয়োগের জন্য অর্থায়ন করছে, কিন্তু কোনো কারণে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এ ঋণ বিতরণ হচ্ছে না। ব্যাংকগুলোকে এর কারণ এবং সমাধানের বিষয়ে লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে," তিনি বলেন।
ব্যাংক খাতের টাস্কফোর্স:
আগামী ১০ দিনের মধ্যে ব্যাংক খাতের সমস্যা সমাধানের জন্য একটি টাস্কফোর্স কাজ শুরু করবে বলে জানান গভর্নর। এই টাস্কফোর্স ব্যাংক খাতের বর্তমান সমস্যাগুলো নির্ধারণ করবে এবং আগের নীতিমালাগুলো পর্যালোচনা করবে। যদি কোনো নীতিমালা শুধু গুটিকয়েক ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিতে করা হয়ে থাকে, তাহলে সেই নীতিমালা বাতিল করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
ব্যাংক খাতে পরিবারতন্ত্র ভাঙার প্রতিশ্রুতি:
গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংক খাতে পরিবারতন্ত্রের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হবে। টাস্কফোর্সের কাজ হবে নীতিমালা পুনরায় মূল্যায়ন করা এবং প্রয়োজনমতো পরিবর্তন আনা। "আমরা চাই না ব্যাংক খাত কিছু ব্যবসায়ী পরিবারের হাতে সীমাবদ্ধ থাকুক, এই সমস্যা সমাধানে আমরা কাজ করছি," তিনি বলেন।
এস আলম ও অন্যান্য ঋণখেলাপিদের সম্পদ ক্রয় বিষয়ে সতর্কতা:
গভর্নর স্পষ্টভাবে বলেন, যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেছে, তাদের দায়বদ্ধতা নির্ধারণ করা হচ্ছে। তাদের সম্পদ বিক্রি করে এই দায় মেটানো হবে। যারা এস আলমের সম্পদ কিনতে চায়, তাদের নিজের দায়িত্বেই ক্রয় করতে হবে। কারণ এসব সম্পদের সঙ্গে যে দায় জড়িত থাকবে, তা ক্রেতাকেই বহন করতে হবে।
সার্বিক পরিস্থিতি:
গভর্নরের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়, ব্যাংক খাতে সংকট মোকাবিলায় সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা ব্যাংকগুলোকে বাঁচাতে চেষ্টা চলছে, পাশাপাশি আমানতকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এসএমই খাতে ঋণ বিতরণের সমস্যাগুলো সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং ব্যাংক খাতে আরও কার্যকর সংস্কার ও টাস্কফোর্সের মাধ্যমে সমস্যাগুলোর সমাধান করা হবে।
তিনি আশ্বাস দেন, সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক একসঙ্গে কাজ করে দেশের ব্যাংকিং খাতকে শক্তিশালী করবে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।