দীর্ঘদিন ধরে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছিল ডিম। আমদানি বাড়িয়ে সরবরাহ কিছুটা কমানোর জন্য সম্প্রতি ভারত থেকে দুই লাখ ৩১ হাজার ৮০০ পিস ডিম আমদানি করেছে সরকার। এত পরিমাণ ডিম আমদানি করেও ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি ডজনে ডিমের দাম বেড়েছে প্রায় ১০ টাকা। একই চিত্র দেখা গেছে বাজারের অন্যান্য পণ্যের দামে। মাছ, মাংস, সবজিসহ অন্যান্য পণ্যও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন বাদামি ডিম ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অথচ গত এক সপ্তাহ আগে প্রতি ডজন বাদামি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায়। এছাড়া সাদা ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫৫ টাকায়। বাজারের তুলনায় পাড়া-মহল্লার দোকানে আরও পাঁচ টাকা বেশিতে বিক্রি হয়েছে মুরগির ডিম।
ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় চরম সংকটে পড়েছেন দেশের স্বল্প আয়ের মানুষ। মাহমুদ হোসেন নামের একজন ভোক্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘স্বল্প আয়ের মানুষ নিয়মিত মাছ মাংস খেতে পারে না। তাদের জন্য ডিমই ছিল ভরসা। এখন দেখি দিন দিন এর দামও বাড়তে শুরু করেছে। যে ডিমের দাম সর্বোচ্চ হওয়া উচিত ৩০, ৩৫ টাকা হালি, সেটি এখন ৫৫ টাকা হালি। এগুলো দেখার কি কেউ আছে? কেউই নেই। ভেবেছিলাম তো আওয়ামী লীগ সরকার থেকে গেলে সবকিছুর দাম কমবে। এখন তো দেখছি কিছুই কমছে না। তাহলে সরকার পরিবর্তন করে মানুষের লাভ হলো কী? আমরা সাধারণ মানুষ, আমরা দু-চারটা ডাল-ভাত খেয়ে বাঁচতে পারলেই হলো।’
ডিমের দামের বিষয়ে খুচরা বিক্রেতারা জানান, প্রায় তিন সপ্তাহ ধরেই ঢাকার বাজারে ডিমের দাম বাড়তি রয়েছে। ডজন বিক্রি হয়েছে ১৫০-১৫৫ টাকায়। এর আগে ডজন ১৫০ টাকার নিচে ছিল।
দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের দাবি, সম্প্রতি কয়েকটি জেলায় বন্যার কারণে অনেক মুরগির খামার নষ্ট হয়েছে। এতে ওই সব এলাকায় মুরগি ও ডিমের সরবরাহ কমেছে। আবার ভারত থেকে সম্প্রতি যে ডিম আমদানি হয়েছে, তা চাহিদার তুলনায় সামান্য। তাই সরবরাহ বৃদ্ধি না পাওয়ায় দাম কমছে না।
এদিকে, অন্যান্য পণ্যও বাড়তি দামে বিক্রি হয়েছে। গত সপ্তাহেও বাজারে মাছ-মাংসের দাম কিছুটা সহনীয় থাকলেও শুক্রবার তা বেড়ে গেছে। শুক্রবার রাজধানীর বাড্ডা-রামপুরা এলাকার বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা করে, যা গত সপ্তাহেও ছিল ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হয়েছে কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। খাসির মাংস ১০৫০ টাকা থেকে ১১০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস বিক্রি হয়েছে ১ হাজার টাকায়।
অন্যদিকে মাছের বাজারে পাঙাশ, তেলাপিয়া ছাড়া আর কোনো মাছেই তেমন স্বস্তির খবর পাওয়া যায়নি। বাজারে প্রতি কেজি পাঙাশ ১৭০-১৮০ টাকা তেলাপিয়া ২০০-২৫০ টাকা, চাষের কৈ ২৫০-২৭০ টাকা, কার্প জাতীয় মাছ ৩০০ টাকা, চাষের শিং ৩৫০-৪০০ টাকা, সাগরের পোয়া ৪০০-৬৫০ টাকা ও বাইলা মাছ বিক্রি হয়েছে ৬৫০-৭০০ টাকায়।
বাজারে অধিকাংশ সবজিই আগের বাড়তি দামে বিক্রি হয়েছে শুক্রবার। প্রতি কেজি পটোল বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকায়। করলা ৫০ টাকা, কচু ৫০ টাকা, সিম ২০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাউ প্রতি পিস ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আলু প্রতি কেজি ৫৫ টাকা, রসুন ২০০, পেঁয়াজ ১১০, আদা ২৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
ডিমের দাম বাড়ার বিষয়ে হইচইয়ের মধ্যেই বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) হুঁশিয়ারি দিয়েছে, সরকার বিদেশ থেকে ডিম আমদানি বন্ধ না করলে ডিম ও মুরগির উৎপাদন বন্ধ করে দেবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানিয়েছে, বাংলাদেশে ডিমের চাহিদা চার কোটি পিস। ডিমের উৎপাদন রয়েছে সাড়ে চার কোটি পিস। চাহিদার থেকে যেখানে উৎপাদন বেশি হচ্ছে, সেখানে ডিম আমদানির প্রশ্নই আসে না। সরকারের ডিম আমদানির ভুল সিদ্ধান্তে প্রান্তিক খামারিরা লসের মুখে পড়বে। দেশীয় খামারগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। এতে পরবর্তী সময়ে সংকট আরও বড় আকার ধারণ করবে।
শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
দীর্ঘদিন ধরে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছিল ডিম। আমদানি বাড়িয়ে সরবরাহ কিছুটা কমানোর জন্য সম্প্রতি ভারত থেকে দুই লাখ ৩১ হাজার ৮০০ পিস ডিম আমদানি করেছে সরকার। এত পরিমাণ ডিম আমদানি করেও ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি ডজনে ডিমের দাম বেড়েছে প্রায় ১০ টাকা। একই চিত্র দেখা গেছে বাজারের অন্যান্য পণ্যের দামে। মাছ, মাংস, সবজিসহ অন্যান্য পণ্যও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে ফার্মের মুরগির প্রতি ডজন বাদামি ডিম ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অথচ গত এক সপ্তাহ আগে প্রতি ডজন বাদামি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায়। এছাড়া সাদা ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫৫ টাকায়। বাজারের তুলনায় পাড়া-মহল্লার দোকানে আরও পাঁচ টাকা বেশিতে বিক্রি হয়েছে মুরগির ডিম।
ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় চরম সংকটে পড়েছেন দেশের স্বল্প আয়ের মানুষ। মাহমুদ হোসেন নামের একজন ভোক্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘স্বল্প আয়ের মানুষ নিয়মিত মাছ মাংস খেতে পারে না। তাদের জন্য ডিমই ছিল ভরসা। এখন দেখি দিন দিন এর দামও বাড়তে শুরু করেছে। যে ডিমের দাম সর্বোচ্চ হওয়া উচিত ৩০, ৩৫ টাকা হালি, সেটি এখন ৫৫ টাকা হালি। এগুলো দেখার কি কেউ আছে? কেউই নেই। ভেবেছিলাম তো আওয়ামী লীগ সরকার থেকে গেলে সবকিছুর দাম কমবে। এখন তো দেখছি কিছুই কমছে না। তাহলে সরকার পরিবর্তন করে মানুষের লাভ হলো কী? আমরা সাধারণ মানুষ, আমরা দু-চারটা ডাল-ভাত খেয়ে বাঁচতে পারলেই হলো।’
ডিমের দামের বিষয়ে খুচরা বিক্রেতারা জানান, প্রায় তিন সপ্তাহ ধরেই ঢাকার বাজারে ডিমের দাম বাড়তি রয়েছে। ডজন বিক্রি হয়েছে ১৫০-১৫৫ টাকায়। এর আগে ডজন ১৫০ টাকার নিচে ছিল।
দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের দাবি, সম্প্রতি কয়েকটি জেলায় বন্যার কারণে অনেক মুরগির খামার নষ্ট হয়েছে। এতে ওই সব এলাকায় মুরগি ও ডিমের সরবরাহ কমেছে। আবার ভারত থেকে সম্প্রতি যে ডিম আমদানি হয়েছে, তা চাহিদার তুলনায় সামান্য। তাই সরবরাহ বৃদ্ধি না পাওয়ায় দাম কমছে না।
এদিকে, অন্যান্য পণ্যও বাড়তি দামে বিক্রি হয়েছে। গত সপ্তাহেও বাজারে মাছ-মাংসের দাম কিছুটা সহনীয় থাকলেও শুক্রবার তা বেড়ে গেছে। শুক্রবার রাজধানীর বাড্ডা-রামপুরা এলাকার বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা করে, যা গত সপ্তাহেও ছিল ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হয়েছে কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। খাসির মাংস ১০৫০ টাকা থেকে ১১০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস বিক্রি হয়েছে ১ হাজার টাকায়।
অন্যদিকে মাছের বাজারে পাঙাশ, তেলাপিয়া ছাড়া আর কোনো মাছেই তেমন স্বস্তির খবর পাওয়া যায়নি। বাজারে প্রতি কেজি পাঙাশ ১৭০-১৮০ টাকা তেলাপিয়া ২০০-২৫০ টাকা, চাষের কৈ ২৫০-২৭০ টাকা, কার্প জাতীয় মাছ ৩০০ টাকা, চাষের শিং ৩৫০-৪০০ টাকা, সাগরের পোয়া ৪০০-৬৫০ টাকা ও বাইলা মাছ বিক্রি হয়েছে ৬৫০-৭০০ টাকায়।
বাজারে অধিকাংশ সবজিই আগের বাড়তি দামে বিক্রি হয়েছে শুক্রবার। প্রতি কেজি পটোল বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকায়। করলা ৫০ টাকা, কচু ৫০ টাকা, সিম ২০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাউ প্রতি পিস ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আলু প্রতি কেজি ৫৫ টাকা, রসুন ২০০, পেঁয়াজ ১১০, আদা ২৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
ডিমের দাম বাড়ার বিষয়ে হইচইয়ের মধ্যেই বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) হুঁশিয়ারি দিয়েছে, সরকার বিদেশ থেকে ডিম আমদানি বন্ধ না করলে ডিম ও মুরগির উৎপাদন বন্ধ করে দেবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানিয়েছে, বাংলাদেশে ডিমের চাহিদা চার কোটি পিস। ডিমের উৎপাদন রয়েছে সাড়ে চার কোটি পিস। চাহিদার থেকে যেখানে উৎপাদন বেশি হচ্ছে, সেখানে ডিম আমদানির প্রশ্নই আসে না। সরকারের ডিম আমদানির ভুল সিদ্ধান্তে প্রান্তিক খামারিরা লসের মুখে পড়বে। দেশীয় খামারগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। এতে পরবর্তী সময়ে সংকট আরও বড় আকার ধারণ করবে।