রপ্তানি শুল্ক কমিয়ে করা হয়েছে অর্ধেক
ভারত সরকার বছর খানেক আগে চাল রপ্তানিতে যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, তা শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে নিয়েছে। একইসঙ্গে, চাল রপ্তানি শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে অর্ধেক করা হয়েছে, যা রপ্তানিকারকদের জন্য বড় সুবিধা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
২০২২ সালে ভারতে গড়ের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতের কারণে ধানের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। দেশটির অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের সরবরাহ এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার ওই বছরের জুলাই মাসে চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এনডিটিভির একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার: ‘গেম চেঞ্জার’
চাল রপ্তানিকারকদের মধ্যে অন্যতম, রাইস ভিলার প্রধান নির্বাহী সুরজ আগরওয়াল, অ-বাসমতী সাদা চাল রপ্তানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়াকে ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, "এই কৌশলগত পদক্ষেপ শুধু রপ্তানিকারকদের আয় বাড়াবে না, বরং কৃষকদেরও ক্ষমতায়ন করবে।" তিনি আরও যোগ করেন, "খরিফ শস্যের (বর্ষাকালীন) বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকরা এই সিদ্ধান্তের কারণে ভালো দাম পাবেন, যা তাদের জীবিকা উন্নয়নে সহায়তা করবে।"
ভারত সরকারের এই সাহসী পদক্ষেপ রপ্তানিকারকদের জন্য যেমন একটি স্বস্তির বিষয়, তেমনি এটি কৃষকদের জন্যও সুসংবাদ। কারণ, এতে কৃষকদের ফসলের ভালো দাম পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
রপ্তানির সুবিধা বাড়াতে নতুন কমিটি
চাল রপ্তানির বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে তদারকি করার জন্য গত বছর জুলাই মাসে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি রাইস ফেডারেশন কনসালটিং কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির মূল কাজ ছিল রপ্তানির নিয়মাবলি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের চালের সরবরাহ বজায় রাখা। এই কমিটির সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত কার্যকর করা সম্ভব হয়েছে।
বাসমতি চালের রপ্তানিতে ইতিবাচক পরিবর্তন
রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ভারত সরকার বাসমতি চালের ফ্লোর প্রাইস (ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য) তুলে নেয়। এই পদক্ষেপের ফলে ইউরোপ, আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে চালের রপ্তানি বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশ্ববাজারে ভারতীয় বাসমতি চালের চাহিদা বরাবরই বেশি, এবং ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার মাধ্যমে এই চাহিদা আরও বাড়তে পারে।
বাসমতি চালের রপ্তানি বাড়ানো এবং অ-বাসমতী চালের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার দেশের কৃষি খাতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। এর ফলে ভারতের চাল রপ্তানির বাজারে প্রবৃদ্ধি সম্ভব হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ প্রশস্ত হবে।
মূল্যস্ফীতির চাপ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সতর্কতা
ভারতে অগাস্ট মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৩.৬৫ শতাংশে পৌঁছায়। এ সময় খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দেশটির অর্থনীতি আরও চাপের মুখে পড়ে। রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার গভর্নর শক্তিকান্ত দাস তখন সতর্ক করে বলেন, খাদ্যপণ্যের ওপর নিবিড় নজরদারি না করা হলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে।
এদিকে, ভারত সরকারের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং রপ্তানি শুল্ক হ্রাসের পদক্ষেপ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে। খাদ্য সরবরাহ বাড়লে অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা কমবে এবং সাধারণ মানুষের জন্য খাদ্যপণ্য আরও সাশ্রয়ী হবে।
কৃষকদের জন্য সম্ভাবনা এবং অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব
ভারতের অর্থনীতি চাল রপ্তানির ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় দেশটির কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ভালো দাম পাচ্ছিল না, যার ফলে তাদের আয় কমে যাচ্ছিল। তবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের মাধ্যমে কৃষকরা আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের পণ্য বিক্রির সুযোগ পাবেন এবং ফসলের ভালো মূল্য পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
এই সিদ্ধান্তটি ভারতের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যও একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। রপ্তানি বৃদ্ধি পেলে বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়বে, যা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় সহায়তা করবে।
ভারতের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক বাজারেও প্রভাব ফেলবে। বিশ্বব্যাপী চালের চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে এই সিদ্ধান্তটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
রপ্তানি শুল্ক কমিয়ে করা হয়েছে অর্ধেক
শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ভারত সরকার বছর খানেক আগে চাল রপ্তানিতে যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, তা শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে নিয়েছে। একইসঙ্গে, চাল রপ্তানি শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে অর্ধেক করা হয়েছে, যা রপ্তানিকারকদের জন্য বড় সুবিধা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
২০২২ সালে ভারতে গড়ের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতের কারণে ধানের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। দেশটির অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের সরবরাহ এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার ওই বছরের জুলাই মাসে চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এনডিটিভির একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার: ‘গেম চেঞ্জার’
চাল রপ্তানিকারকদের মধ্যে অন্যতম, রাইস ভিলার প্রধান নির্বাহী সুরজ আগরওয়াল, অ-বাসমতী সাদা চাল রপ্তানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়াকে ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, "এই কৌশলগত পদক্ষেপ শুধু রপ্তানিকারকদের আয় বাড়াবে না, বরং কৃষকদেরও ক্ষমতায়ন করবে।" তিনি আরও যোগ করেন, "খরিফ শস্যের (বর্ষাকালীন) বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকরা এই সিদ্ধান্তের কারণে ভালো দাম পাবেন, যা তাদের জীবিকা উন্নয়নে সহায়তা করবে।"
ভারত সরকারের এই সাহসী পদক্ষেপ রপ্তানিকারকদের জন্য যেমন একটি স্বস্তির বিষয়, তেমনি এটি কৃষকদের জন্যও সুসংবাদ। কারণ, এতে কৃষকদের ফসলের ভালো দাম পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
রপ্তানির সুবিধা বাড়াতে নতুন কমিটি
চাল রপ্তানির বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে তদারকি করার জন্য গত বছর জুলাই মাসে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি রাইস ফেডারেশন কনসালটিং কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির মূল কাজ ছিল রপ্তানির নিয়মাবলি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের চালের সরবরাহ বজায় রাখা। এই কমিটির সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত কার্যকর করা সম্ভব হয়েছে।
বাসমতি চালের রপ্তানিতে ইতিবাচক পরিবর্তন
রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ভারত সরকার বাসমতি চালের ফ্লোর প্রাইস (ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য) তুলে নেয়। এই পদক্ষেপের ফলে ইউরোপ, আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে চালের রপ্তানি বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশ্ববাজারে ভারতীয় বাসমতি চালের চাহিদা বরাবরই বেশি, এবং ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার মাধ্যমে এই চাহিদা আরও বাড়তে পারে।
বাসমতি চালের রপ্তানি বাড়ানো এবং অ-বাসমতী চালের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার দেশের কৃষি খাতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। এর ফলে ভারতের চাল রপ্তানির বাজারে প্রবৃদ্ধি সম্ভব হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ প্রশস্ত হবে।
মূল্যস্ফীতির চাপ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সতর্কতা
ভারতে অগাস্ট মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৩.৬৫ শতাংশে পৌঁছায়। এ সময় খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে দেশটির অর্থনীতি আরও চাপের মুখে পড়ে। রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার গভর্নর শক্তিকান্ত দাস তখন সতর্ক করে বলেন, খাদ্যপণ্যের ওপর নিবিড় নজরদারি না করা হলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে।
এদিকে, ভারত সরকারের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং রপ্তানি শুল্ক হ্রাসের পদক্ষেপ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে। খাদ্য সরবরাহ বাড়লে অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা কমবে এবং সাধারণ মানুষের জন্য খাদ্যপণ্য আরও সাশ্রয়ী হবে।
কৃষকদের জন্য সম্ভাবনা এবং অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব
ভারতের অর্থনীতি চাল রপ্তানির ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় দেশটির কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ভালো দাম পাচ্ছিল না, যার ফলে তাদের আয় কমে যাচ্ছিল। তবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের মাধ্যমে কৃষকরা আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের পণ্য বিক্রির সুযোগ পাবেন এবং ফসলের ভালো মূল্য পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
এই সিদ্ধান্তটি ভারতের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যও একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। রপ্তানি বৃদ্ধি পেলে বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়বে, যা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় সহায়তা করবে।
ভারতের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক বাজারেও প্রভাব ফেলবে। বিশ্বব্যাপী চালের চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে এই সিদ্ধান্তটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।