alt

অর্থ-বাণিজ্য

খাদ্য-মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ালো ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪

টিসিবির পণ্য নেয়ার জন্য সাধারণ মানুষের দীর্ঘ লাইন-ফাইল ছবি

সরকার নানা চেষ্টা করলেও নিত্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বমুখিতা ঠেকানো যাচ্ছে না। বেশ কয়েক ধাপে ব্যাংকঋণের সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে সরকার। এতেও কাজ হচ্ছে না। অক্টোবরে গড় সার্বিক মূল্যস্ফীতি আবার বেড়ে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ হয়ে গেছে। আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে আরও বেশি। অক্টোবরে খাদ্যমূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশে। বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এই প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

বিবিএস এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, অক্টোবর মাসের সিপিআই (ভোক্তা মূল্যসূচক) তথ্যে দেখা যায়, সে মাসে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশে। এটি আগের মাস সেপ্টেম্বরে কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ হয়েছিল। গড় মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশের অর্থ হলো ২০২৩ মাসের অক্টোবর মাসে যে পণ্য ১০০ টাকায় কিনতে হয়েছিল এ বছরের অক্টোবরে তা কিনতে হয়েছে ১১০ টাকা ৮৭ পয়সায়। অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। যদিও গত জুলাইয়ে ১৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বেড়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছিল ১৪ দশমিক ১ শতাংশে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়ার মূল কারণ আগস্টের মাঝামাঝি থেকে শুরু হওয়া বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ। দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পর উত্তরাঞ্চলেও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় মানুষের কৃষি জমি ডুবে ফসল নষ্ট হয়। খামারগুলো নষ্ট হয়ে হাঁস-মুরগির সরবরাহ ব্যবস্থায় ঘাটতি দেখা দেয়। এ ছাড়া দেশের সিন্ডিকেট ব্যবস্থা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকায় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না।

উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে চলছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ব্যাংক ঋণের সুদহার ক্রমে বাড়ছে। ইতোমধ্যে সুদের হার প্রায় ১৬ শতাংশে উঠেছে। গত দেড় বছরের কম সময়ে সুদহার বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ। এতে ছোট-বড় সব খাতের ব্যবসায়ীর মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।

খাদ্য মূল্যস্ফীতি লাগাম ছাড়িয়ে গেলেও বিবিএসের তথ্য বলছে, অক্টোবরে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশে নেমেছে, যেটি আগের মাস সেপ্টেম্বরেও ছিল ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির হার শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি। অক্টোবরে শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষকে বেশি দামে পণ্য কিনতে হয়েছে। এই মাসে গ্রামাঞ্চলে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ, খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। বিপরীতে একই সময়ে দেশের শহর এলাকাগুলোতে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ, খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে ২০২০ সালের এপ্রিলে ব্যাংক ঋণের সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা ৯ শতাংশ বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে মেয়াদি আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ বেঁধে দেয়া হয়। এরপর দীর্ঘ তিন বছরের বেশি সময় ধরে ঋণ ও আমানতের সুদহার এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ অর্থনীতি নানা সংকটে পড়লে গত বছরের জুলাই থেকে স্মার্ট পদ্ধতির আওতায় সুদের হার বাড়াতে শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর আইএমএফের ঋণের শর্ত পূরণে চলতি বছরের মে মাসে সুদের হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির আওতায় নীতি সুদহার কয়েক দফা বাড়ানো হয়। এতে ব্যাংকঋণের সুদহার ক্রমাগত বাড়তে থাকে এবং গত মাসে তা প্রায় ১৬ শতাংশে উঠেছে।

সর্বশেষ গত ২২ অক্টোবর নীতি সুদহার ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করার ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক যা ২৭ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়েছে। এতে সব ধরনের ঋণের সুদের হার চলতি মাসে আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

এর আগে আগস্টে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে কমার পর অক্টোবরে আবারও বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। আর গত জুলাইয়ে দেশে জাতীয় পর্যায়ে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ওই মাসে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যানে কারসাজি করা হতো বলে প্রমাণ খুঁজে পেয়েছে অর্থনীতির শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। জনগণের সামনে অসাধারণ অর্থনৈতিক পারফরম্যান্স তুলে ধরে সরকারের ভাবমূর্তি বাড়াতেই এসব করা হতো বলে জানিয়েছে কমিটি।

শ্বেতপত্র কমিটির এক সদস্য জানান, বিবিএস এ ধরনের কারসাজির কারণে মনগড়া তথ্য প্রকাশ করত। শেখ হাসিনার আমলে বিবিএস প্রথমে মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রস্তুত করে পরিকল্পনামন্ত্রীর কাছে জমা দিত। পরিকল্পনামন্ত্রী নিজের ইচ্ছামতো কমিয়ে আনার নির্দেশ দিতেন। তার পছন্দমতো তথ্য সাজিয়ে পাঠালে তা অনুমোদন করতেন মন্ত্রী। পরে তা অনুমোদনের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হতো। তিনি আরেক দফায় তা কমিয়ে অনুমোদন করতেন। আর হাসিনা যে তথ্য অনুমোদন দিতেন, বিবিএস সেটিই প্রকাশ করতে বাধ্য হতো। মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশের কাছাকাছি হলে বা বেশি হলে পরিকল্পনামন্ত্রীরা তা কোনোমতেই অনুমোদন করতেন না, বরং অনেকটাই কমিয়ে দিতেন তারা।

রাণীনগরে ন্যায্যমূল্যের দোকান : স্বল্প আয়ের মানুষের স্বস্তি

ছবি

পুঁজিবাজারে শেয়ার কারসাজির ঘটনায় ১১৫ কোটি টাকা জরিমানা

ছবি

মূল্যস্ফীতির চাপে নিত্যপণ্যের বাজার, খাদ্যদ্রব্যে ১৩.৮০% মূল্যবৃদ্ধি

আইএমএফ-এর অধিকাংশ শর্ত পূরণ, চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড় ফেব্রুয়ারিতে

এইচআর ম্যানেজমেন্টে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে ‘ট্যালেন্ট লেন্স হাব’

ছবি

বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার প্রসারে টিকটকের কর্মশালা

ছবি

৫-৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হচ্ছে রুয়েট সাইবার ফেস্ট ২০২৪

থ্রি মিলিয়ন ক্লাবে প্রবেশ করেছে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং

ছবি

চার ধরনের নতুন নোট আসছে, নকশায় যুক্ত হবে জুলাই বিপ্লবের গ্রাফিতি

ছবি

সূচকের ওঠানামায় পুঁজিবাজারে চলছে লেনদেন

দুই বছরের মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনার সুপারিশ

ছবি

২৮ উপায়ে ‘দুর্নীতি’, ২৩৪ বিলিয়ন ডলার ‘পাচার’

ছবি

বিপিও শিল্পের উন্নয়নে বাক্কো ও বিটিআরসি যৌথ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

ছবি

দক্ষতা উন্নয়নে বেসিস ও সিসিপ এর মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর

ছবি

বেসিস ও এনআরবি ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত

ছবি

মুক্তাগাছায় ২০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে এডিবির অর্থায়ন

শ্বেতপত্র কমিটি: দেড় দশকে ২৮ উপায়ে দুর্নীতি, দেশ থেকে পাচার ২৮ লাখ কোটি টাকা

ছবি

ক্রেডিট কার্ডে সুদের হার বাড়ছে, জানুয়ারি থেকে কার্যকর

ছবি

ব্যাংক খাতের সংকট: দুর্নীতি ও খেলাপি ঋণে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ১০ ব্যাংক

ছবি

ছয় মাসে দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কায় খেলাপি ঋণ: গভর্নর

ছবি

সরকারি প্রকল্পে ১৫ বছরে ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি: শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদন

ছবি

ইউনিলিভার বাংলাদেশের সাসটেইনেবিলিটি ব্লুবুক ২০২৪ প্রকাশ

ছবি

মহেশখালীর মাতারবাড়ী কয়লা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পুনরায় বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু

ছবি

প্রয়োজনের সময় মানবতার পাশে বিকাশ

ছবি

বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি কমেছে ৯৩ শতাংশ

ছবি

সবজি-পেঁয়াজের দাম কমেছে, নাগালে আসছে নতুন আলুও

ছবি

ন্যায়সংগত সমাজ গঠনে গভীর সংস্কার প্রয়োজন: রেহমান সোবহান

ছবি

একদিনের ব্যবধানে সোনার দাম আরও কমলো

ছবি

ওপাস কমিউনিকেশন্স লিমিটেডের যাত্রা শুরু

ছবি

পিএমআই বাংলাদেশের পুরস্কার পেল বাংলালিন্ক

২য় বর্ষপূর্তি উদযাপন করলো এয়ার এ্যাস্ট্রা

দেশে বিওয়াইডির ৩০ বছর পূর্তি উদযাপন

ছবি

বেক্সিমকো শিল্প পার্কে শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন

ছবি

অর্থ সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি

ছবি

মেডিকেল প্রফেশনালদের জন্য কো-ব্র্যান্ডেড ক্রেডিট কার্ড চালু

ছবি

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আইসিসিবি’র কর্মশালা

tab

অর্থ-বাণিজ্য

খাদ্য-মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ালো ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

টিসিবির পণ্য নেয়ার জন্য সাধারণ মানুষের দীর্ঘ লাইন-ফাইল ছবি

শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪

সরকার নানা চেষ্টা করলেও নিত্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বমুখিতা ঠেকানো যাচ্ছে না। বেশ কয়েক ধাপে ব্যাংকঋণের সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে সরকার। এতেও কাজ হচ্ছে না। অক্টোবরে গড় সার্বিক মূল্যস্ফীতি আবার বেড়ে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ হয়ে গেছে। আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে আরও বেশি। অক্টোবরে খাদ্যমূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশে। বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এই প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

বিবিএস এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, অক্টোবর মাসের সিপিআই (ভোক্তা মূল্যসূচক) তথ্যে দেখা যায়, সে মাসে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশে। এটি আগের মাস সেপ্টেম্বরে কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ হয়েছিল। গড় মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশের অর্থ হলো ২০২৩ মাসের অক্টোবর মাসে যে পণ্য ১০০ টাকায় কিনতে হয়েছিল এ বছরের অক্টোবরে তা কিনতে হয়েছে ১১০ টাকা ৮৭ পয়সায়। অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। যদিও গত জুলাইয়ে ১৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বেড়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছিল ১৪ দশমিক ১ শতাংশে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়ার মূল কারণ আগস্টের মাঝামাঝি থেকে শুরু হওয়া বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ। দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পর উত্তরাঞ্চলেও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় মানুষের কৃষি জমি ডুবে ফসল নষ্ট হয়। খামারগুলো নষ্ট হয়ে হাঁস-মুরগির সরবরাহ ব্যবস্থায় ঘাটতি দেখা দেয়। এ ছাড়া দেশের সিন্ডিকেট ব্যবস্থা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকায় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না।

উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে চলছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ব্যাংক ঋণের সুদহার ক্রমে বাড়ছে। ইতোমধ্যে সুদের হার প্রায় ১৬ শতাংশে উঠেছে। গত দেড় বছরের কম সময়ে সুদহার বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ। এতে ছোট-বড় সব খাতের ব্যবসায়ীর মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।

খাদ্য মূল্যস্ফীতি লাগাম ছাড়িয়ে গেলেও বিবিএসের তথ্য বলছে, অক্টোবরে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশে নেমেছে, যেটি আগের মাস সেপ্টেম্বরেও ছিল ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির হার শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি। অক্টোবরে শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষকে বেশি দামে পণ্য কিনতে হয়েছে। এই মাসে গ্রামাঞ্চলে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ, খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। বিপরীতে একই সময়ে দেশের শহর এলাকাগুলোতে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ, খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৩ শতাংশ।

বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে ২০২০ সালের এপ্রিলে ব্যাংক ঋণের সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা ৯ শতাংশ বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে মেয়াদি আমানতের সুদহার ৬ শতাংশ বেঁধে দেয়া হয়। এরপর দীর্ঘ তিন বছরের বেশি সময় ধরে ঋণ ও আমানতের সুদহার এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ অর্থনীতি নানা সংকটে পড়লে গত বছরের জুলাই থেকে স্মার্ট পদ্ধতির আওতায় সুদের হার বাড়াতে শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর আইএমএফের ঋণের শর্ত পূরণে চলতি বছরের মে মাসে সুদের হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির আওতায় নীতি সুদহার কয়েক দফা বাড়ানো হয়। এতে ব্যাংকঋণের সুদহার ক্রমাগত বাড়তে থাকে এবং গত মাসে তা প্রায় ১৬ শতাংশে উঠেছে।

সর্বশেষ গত ২২ অক্টোবর নীতি সুদহার ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করার ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক যা ২৭ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়েছে। এতে সব ধরনের ঋণের সুদের হার চলতি মাসে আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

এর আগে আগস্টে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে কমার পর অক্টোবরে আবারও বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। আর গত জুলাইয়ে দেশে জাতীয় পর্যায়ে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ওই মাসে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যানে কারসাজি করা হতো বলে প্রমাণ খুঁজে পেয়েছে অর্থনীতির শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। জনগণের সামনে অসাধারণ অর্থনৈতিক পারফরম্যান্স তুলে ধরে সরকারের ভাবমূর্তি বাড়াতেই এসব করা হতো বলে জানিয়েছে কমিটি।

শ্বেতপত্র কমিটির এক সদস্য জানান, বিবিএস এ ধরনের কারসাজির কারণে মনগড়া তথ্য প্রকাশ করত। শেখ হাসিনার আমলে বিবিএস প্রথমে মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রস্তুত করে পরিকল্পনামন্ত্রীর কাছে জমা দিত। পরিকল্পনামন্ত্রী নিজের ইচ্ছামতো কমিয়ে আনার নির্দেশ দিতেন। তার পছন্দমতো তথ্য সাজিয়ে পাঠালে তা অনুমোদন করতেন মন্ত্রী। পরে তা অনুমোদনের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হতো। তিনি আরেক দফায় তা কমিয়ে অনুমোদন করতেন। আর হাসিনা যে তথ্য অনুমোদন দিতেন, বিবিএস সেটিই প্রকাশ করতে বাধ্য হতো। মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশের কাছাকাছি হলে বা বেশি হলে পরিকল্পনামন্ত্রীরা তা কোনোমতেই অনুমোদন করতেন না, বরং অনেকটাই কমিয়ে দিতেন তারা।

back to top