alt

অর্থ-বাণিজ্য

দুই বছরের মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনার সুপারিশ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ভবিষ্যৎ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকলে কেউ বিনিয়োগ করবে না। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের অবিলম্বে একটি মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা করে ভবিষ্যৎ কৌশল নির্ধারণ করা উচিত বলে মনে করেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়বদ্ধতার মধ্যে আনা উচিত বলেও মত তার। আর আইনশৃঙ্খলা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এই মুহূর্তে জরুরি বলেও মন্তব্য এই অর্থনীতিবিদের।

সোমবার (২ ডিসেম্বর) শ্বেতপত্র প্রকাশ নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থনীতি বিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সভাপতি দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এই সুপারিশ করেন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরতে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে।

দেবপ্রিয় বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অন্তত দুই বছরের জন্য একটি পরিকল্পনা প্রস্তুত করা উচিত। তবে এর সময়কাল পরিবর্তিত পরিস্থিতির ভিত্তিতে সামঞ্জস্য করা যেতে পারে। পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ছয় মাস পূর্ণ হলে তা মূল্যায়ন ও আগামী ছয় মাসের জন্য একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ থাকা উচিত।’

বিনিয়োগ, শিক্ষা এবং সামাজিক সুরক্ষার মতো খাতগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার স্বল্পমেয়াদী প্রকৃতির। তবে বিনিয়োগ, শিক্ষা এবং সামাজিক সুরক্ষার মতো মূল খাতগুলোর রূপরেখার একটি কৌশলগত পরিকল্পনা থাকা উচিত। এই কৌশলগুলো অবশ্যই সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সময় গৃহীত অযৌক্তিক সিদ্ধান্তগুলো পুনর্মূল্যায়নেরও প্রয়োজন রয়েছে।’

বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ উচিত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটেও জাতিসংঘ মনে করছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পথে কোনো বাধা নেই।’

দেবপ্রিয় বলেন, ‘পরবর্তী জাতীয় বাজেট আসার আগে দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারে বর্তমান সরকার কী কী উদ্যোগ নেবে সেগুলো স্পষ্ট করতে হবে। আরও দায়বদ্ধতা আনতে হবে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে এ সরকার পাঁচ বছর দায়িত্বে থাকবে না। তবে অন্তত আগামী দুই বছরের কর্মপরিকল্পনা সামনে থাকতে হবে।’

‘চামচা পুঁজিবাদ’ থেকে ‘চোরতন্ত্র’
আওয়ামী লীগের শাসনামলকে ‘চোরতন্ত্র’ উল্লেখ করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশকে ‘চামচা পুঁজিবাদ’ থেকে চোরতন্ত্রে পরিণত করা হয়েছে। আইন সভা, নির্বাহী বিভাগসহ সবাই গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে চুরির অংশ হয়ে গেছে। এটাই চোরতন্ত্র। এজন্য রাজনীতিক, ব্যবসায়ী এবং উর্দি পরা কিংবা উর্দি ছাড়া আমলারা সহযোগী হলেন। এই চোরতন্ত্রের উৎস ২০১৮ সালের নির্বাচন।’

চোরতন্ত্রে পরিণত করতে কারা সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে- এমন প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে বৈঠক করেছে। প্রথমদিকে মনে হয়েছিল, রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের ভূমিকা বেশি। শেষের দিকের আলোচনায় উঠে এসেছে, চোরতন্ত্রে পরিণত করার প্রক্রিয়ায় উর্দি পরা কিংবা উর্দি ছাড়া আমলারা বেশি কাজ করেছে।’

সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত চারটি খাতের কথা বলেছেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এক নম্বরে আছে ব্যাংক খাত, দ্বিতীয় স্থানে অবকাঠামো, তৃতীয় স্থানে জ্বালানি এবং চতুর্থ স্থানে তথ্যপ্রযুক্তি খাত। এ মুহূর্তে অর্থনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলার স্থিতিশীলতা জরুরি বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তা না হলে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার বিপদসংকুল হয়ে পড়তে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য পাঁচ পরামর্শ
অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য পাঁচটি পরামর্শ দেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান। প্রথমত, গত পাঁচ মাসে যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা। দ্বিতীয়ত, আগামী ছয় মাস যেহেতু দেশ ও জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তাই এ সময়ে কী অর্থনৈতিক সংস্কার করা হবে, তা জনগণের সামনে তুলে ধরা। যেমন মূল্যস্ফীতি, সুদের হার, টাকার মান কত হবে, তা জনগণকে জানানো। অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়বদ্ধতার মধ্যে আনা উচিত। তৃতীয়ত, আগামী দিনের সীমারেখা কী, তা না বুঝে কেউ বিনিয়োগ করবে না। নিকট ভবিষ্যত সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকলে বিনিয়োগকারীরা দ্বিধাগ্রস্ত হবেন। দুই বছর মেয়াদি একটি পরিকল্পনা করার পরামর্শ দেন তিনি।

চতুর্থত, তিনি মনে করেন, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণপ্রক্রিয়া স্থবির হওয়ার কোনো কারণ নেই। তিনটি মাপকাঠিতে বাংলাদেশ উত্তীর্ণ হয়েছে। তাই ২০২৬ সালের আগে বড় ধরনের অর্থনৈতিক দুর্যোগ সৃষ্টি হলে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে। এখনও সেই সময় হয়নি। পঞ্চমত, উন্নয়ন সহযোগী; বাজার-সুবিধা দেয়ার দেশ; বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং শ্রমশক্তি নেয়, এমন দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে আগামী বছরের প্রথমদিকে একটি উন্নয়ন ফোরাম বৈঠক করা, যেখানে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরতে হবে।

বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের ফাঁদে পড়ে গেছে
এলডিসি থেকে উত্তরণ সম্পর্কে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘সক্ষমতা ও আয়তন অনুসারে বাংলাদেশ এলডিসিতে থাকার মতো দেশ নয়। যদি কোনো কারণে ২০২৬ সালে উত্তরণ হতে না পারি, তাহলে আবার বলা হবে, ‘সোনার সংসার রেখে গিয়েছিলাম, এটা নষ্ট করে গেছে।’ যারা (বাজার-সুবিধাপ্রাপ্ত-রপ্তানিকারক) এলডিসি উত্তরণ পিছিয়ে দিতে তদবির করেন, তাদের গোড়া কোথায়, তা দেখেন। তারা সংসদে প্রভাবশালী ছিলেন, রাজনীতিতে প্রভাবশালী ছিলেন। আমরা দেখেছি, একটি রপ্তানি খাতকে কীভাবে একচেটিয়া সুবিধা দেওয়া হয়েছে।’

অনুষ্ঠানে কমিটির আরেক সদস্য ও বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘এতদিন ভেবেছিলাম, আমরা মধ্যম আয়ের দেশের ফাঁদে পড়ার শঙ্কায় আছি। এখন আমরা বলছি, আমরা সেই ফাঁদে পড়ে গেছি। পরিসংখ্যান দিয়ে এতদিন উন্নয়ন দেখানো হয়েছে। বাস্তবে তা হয়নি। হিসাব গরমিলের কারণে মধ্যম আয়ের দেশের ফাঁদে পড়ে গেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণ হওয়ার সময় ঠিক করা হয়েছে। মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ হয়। ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার।’

জিডিপির হিসাব বিষয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘এদেশে জিডিপি যেভাবে হিসাব করা হয়, তাতে অতিরিক্ত দেখা যায়। কোনো খাতে মূল্য সংযোজন বাড়লে ধরা পড়ে, কিন্তু কমলে ধরা পড়ে না। বিগত সরকারের আমলে এত টাকা পাচার হলো, কাঙ্খিত বিনিয়োগ হলো না, কর্মসংস্থান হলো না, তাহলে এত প্রবৃদ্ধি হয় কীভাবে। নীতি সংস্কার করতে হবে। জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।’

মেগা প্রকল্পে মেগা চুরি
কমিটির সদস্য ও সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘অনেক মেগা প্রকল্পই হয়ত প্রয়োজনীয় ছিল। কিন্তু এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ঠিকাদারের কথা অনুযায়ী কয়েকগুণ ব্যয় বাড়িয়ে সেই টাকা পাচার করা হয়েছে। অর্থপাচারের হিসাব বের করা বেশ কঠিন। তবে আমি একটি আন্তর্জাতিক পদ্ধতি অবলম্বন করে পাচারের হিসাবটা এনেছি। মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে যেসব টাকা লোপাট করা হয়েছে, পরবর্তী প্রজন্মের ঘাড়ে সেই বোঝা থেকে গেল।’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে কাগজে-কলমে চুরির প্রমাণ নেই। তবে বিদ্যুৎ খাতে বিগত সরকারের আমলে ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। এরমধ্যে ১০ শতাংশ বা ৩০০ কোটি ডলার ‘হাতবদল’ হয়েছে।’

পরপর তিনটি নির্বাচন চরম ত্রুটিপূর্ণ হয়েছে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের (সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেছেন, ‘পরপর তিনটি নির্বাচন চরম ত্রুটিপূর্ণ হয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও অর্থনৈতিক খাতগুলো ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে অবাধ নির্বাচন দরকার। তবে তার আগে আর্থিক ও অন্যান্য খাতে যে ক্ষতি হয়েছে, তার সংস্কার জরুরি। আমরা চাই না, পুরোনো দুর্নীতিবাজেরা কোনোভাবে পুনর্বাসিত হোক, সে জন্য আগে সংস্কার জরুরি।’

আওয়ামী লীগ আমলের দুর্নীতি গবেষণার বিষয় বলে মন্তব্য করেন সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি সব দেশেই হতে পারে। কিন্তু আমাদের প্রতিবেদনে (শ্বেতপত্র) তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে দুর্নীতির ব্যাপকতা তুলে ধরা হয়েছে। অতীতে যে ব্যাপক হারে দুর্নীতি হয়েছে, দুর্নীতির সঙ্গে যে বিপুল মানুষের সম্পৃক্ততা ও ধরন, এটা বাংলাদেশে বড় ধরনের গবেষণার ক্ষেত্র তৈরি করেছে।’

অতীতে সংস্কারের উদ্যোগ নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে সেলিম রায়হান বলেন, ‘আমরা মনে করি, যারা নানাভাবে গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে সংস্কারের বিরোধিতা করেছেন, তারা এখনও আছেন। তবে সামনের দিনে যদি আমরা অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কথা চিন্তা করি এবং ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ পরিস্থিতির বড় ধরনের উন্নতি আশা করি, তাহলে গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো সংস্কার করতে হবে।’

ছবি

রিয়াদে ইউএনসিসিডি ‘সিওপি-১৬’ সম্মেলনে প্রিয়শপ

ছবি

ন্যাশনাল পেমেন্ট এগ্রিগেটর হিসেবে আসছে ‘একপে’

ছবি

উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময় শতাধিক পণ্যে বাড়ল ভ্যাট-শুল্ক, আতঙ্কে ভোক্তারা

ছবি

সবজিতে ভরপুর বাজার, কমেছে দামও

ছবি

মেরামতের জন্য মহেশখালী এলএনজি টার্মিনাল থেকে ৭২ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ

ছবি

গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনায় ব্যবসায়ীদের অন্তর্ভুক্তি: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

একনেকে ৪,২৪৬ কোটি টাকার ১০ প্রকল্প অনুমোদন

ছবি

চালের দাম অযৌক্তিকভাবে বেড়েছে: মজুতদারির অভিযোগ তুলে সরকারের উদ্যোগ

ছবি

মোটরসাইকেল ও এসি শিল্পে কর দ্বিগুণ, রাজস্ব বাড়াতে সরকারের নতুন পদক্ষেপ

ছবি

মোটরসাইকেল, ফ্রিজ, এসি শিল্পে আয়কর দ্বিগুণ হল

প্রকৃত খেলাপি ঋণ ৬ লাখ কোটি টাকারও বেশি : বাংলাদেশ ব্যাংক

বিবিএস এর পরিসংখ্যান : প্রথম প্রান্তিকে জিডিপি তলানিতে, বছর শেষে মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে

ছবি

জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমেছে ৪.২৩ শতাংশ

ছবি

আরো পাঁচ ব্যাংকের এমডি বাধ্যতামূলক ছুটিতে

‘এই চালতো খামু ৫০ টাকায়, ৬৮ টাকায় ক্যা?’

ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা: ডলার কেনাবেচায় সর্বোচ্চ ১ টাকা ব্যবধান নির্ধারণ

ছবি

ডিসেম্বরে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ১৮%, তৈরি পোশাকে স্বস্তি

ছবি

জেসিআই ঢাকা পাইওনিয়ার এর নতুন প্রেসিডেন্ট তাসদীখ হাবীব

ছবি

ডিসেম্বরে রেকর্ড রেমিটেন্স: এক মাসে এলো ২৬৪ কোটি ডলার

ছবি

বেক্সিমকোর তিন কোম্পানিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে বিএসইসি

ছবি

বিকাশ-এর সেন্ড মানি সেবার আদ্যোপান্ত

ছবি

দেশসেরা ব্র্যান্ডগুলোকে পুরষ্কৃত করলো বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম

ছবি

সোনা চোরাচালান: উড়োজাহাজ জব্দের তথ্য ‘বিভ্রান্তিকর’ বলছে বিমান

নির্বাচন, সংস্কারও করতে হবে, তার আগে মানুষকে স্বস্তি দিতে হবে: দেবপ্রিয়

ছবি

দেশের সেরা মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্রান্ডের স্বীকৃতি পেলো শাওমি

ছবি

রূপালী ব্যাংকের এমডি হলেন ওয়াহিদুল

ছবি

এস আলম গ্রুপের ছয় কারখানা বন্ধ

ছবি

রিহ্যাব ফেয়ার: ফ্ল্যাটের দাম ‘আকাশচুম্বী’

ছবি

তিন সপ্তাহে প্রবাসী আয় ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে

ছবি

আইসিসি বাংলাদেশের ৩০তম বার্ষিকী উদযাপন

ছবি

বিকাশ অ্যাপে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিপিএস খোলা যাচ্ছে এক মিনিটেই

দ্বিগুণ পণ্য নিয়ে পাকিস্তান থেকে ফের এলো জাহাজ

ছবি

বাংলাদেশে সিএফমোটো’র ৩০০ সিসি স্পোর্টস বাইক

ছবি

ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি নিয়ে টেন মিনিট স্কুল ও বিকাশের উদ্যোগ

ছবি

এনাবলার অব এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেলো মাস্টারকার্ড

ছবি

আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের এমডি বদলে দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

tab

অর্থ-বাণিজ্য

দুই বছরের মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনার সুপারিশ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ভবিষ্যৎ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকলে কেউ বিনিয়োগ করবে না। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের অবিলম্বে একটি মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা করে ভবিষ্যৎ কৌশল নির্ধারণ করা উচিত বলে মনে করেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়বদ্ধতার মধ্যে আনা উচিত বলেও মত তার। আর আইনশৃঙ্খলা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এই মুহূর্তে জরুরি বলেও মন্তব্য এই অর্থনীতিবিদের।

সোমবার (২ ডিসেম্বর) শ্বেতপত্র প্রকাশ নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থনীতি বিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সভাপতি দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এই সুপারিশ করেন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরতে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে।

দেবপ্রিয় বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অন্তত দুই বছরের জন্য একটি পরিকল্পনা প্রস্তুত করা উচিত। তবে এর সময়কাল পরিবর্তিত পরিস্থিতির ভিত্তিতে সামঞ্জস্য করা যেতে পারে। পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ছয় মাস পূর্ণ হলে তা মূল্যায়ন ও আগামী ছয় মাসের জন্য একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ থাকা উচিত।’

বিনিয়োগ, শিক্ষা এবং সামাজিক সুরক্ষার মতো খাতগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার স্বল্পমেয়াদী প্রকৃতির। তবে বিনিয়োগ, শিক্ষা এবং সামাজিক সুরক্ষার মতো মূল খাতগুলোর রূপরেখার একটি কৌশলগত পরিকল্পনা থাকা উচিত। এই কৌশলগুলো অবশ্যই সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সময় গৃহীত অযৌক্তিক সিদ্ধান্তগুলো পুনর্মূল্যায়নেরও প্রয়োজন রয়েছে।’

বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ উচিত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটেও জাতিসংঘ মনে করছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পথে কোনো বাধা নেই।’

দেবপ্রিয় বলেন, ‘পরবর্তী জাতীয় বাজেট আসার আগে দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারে বর্তমান সরকার কী কী উদ্যোগ নেবে সেগুলো স্পষ্ট করতে হবে। আরও দায়বদ্ধতা আনতে হবে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে এ সরকার পাঁচ বছর দায়িত্বে থাকবে না। তবে অন্তত আগামী দুই বছরের কর্মপরিকল্পনা সামনে থাকতে হবে।’

‘চামচা পুঁজিবাদ’ থেকে ‘চোরতন্ত্র’
আওয়ামী লীগের শাসনামলকে ‘চোরতন্ত্র’ উল্লেখ করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশকে ‘চামচা পুঁজিবাদ’ থেকে চোরতন্ত্রে পরিণত করা হয়েছে। আইন সভা, নির্বাহী বিভাগসহ সবাই গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে চুরির অংশ হয়ে গেছে। এটাই চোরতন্ত্র। এজন্য রাজনীতিক, ব্যবসায়ী এবং উর্দি পরা কিংবা উর্দি ছাড়া আমলারা সহযোগী হলেন। এই চোরতন্ত্রের উৎস ২০১৮ সালের নির্বাচন।’

চোরতন্ত্রে পরিণত করতে কারা সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে- এমন প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে বৈঠক করেছে। প্রথমদিকে মনে হয়েছিল, রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের ভূমিকা বেশি। শেষের দিকের আলোচনায় উঠে এসেছে, চোরতন্ত্রে পরিণত করার প্রক্রিয়ায় উর্দি পরা কিংবা উর্দি ছাড়া আমলারা বেশি কাজ করেছে।’

সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত চারটি খাতের কথা বলেছেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এক নম্বরে আছে ব্যাংক খাত, দ্বিতীয় স্থানে অবকাঠামো, তৃতীয় স্থানে জ্বালানি এবং চতুর্থ স্থানে তথ্যপ্রযুক্তি খাত। এ মুহূর্তে অর্থনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলার স্থিতিশীলতা জরুরি বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। তা না হলে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার বিপদসংকুল হয়ে পড়তে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য পাঁচ পরামর্শ
অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য পাঁচটি পরামর্শ দেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান। প্রথমত, গত পাঁচ মাসে যেসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা। দ্বিতীয়ত, আগামী ছয় মাস যেহেতু দেশ ও জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তাই এ সময়ে কী অর্থনৈতিক সংস্কার করা হবে, তা জনগণের সামনে তুলে ধরা। যেমন মূল্যস্ফীতি, সুদের হার, টাকার মান কত হবে, তা জনগণকে জানানো। অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়বদ্ধতার মধ্যে আনা উচিত। তৃতীয়ত, আগামী দিনের সীমারেখা কী, তা না বুঝে কেউ বিনিয়োগ করবে না। নিকট ভবিষ্যত সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকলে বিনিয়োগকারীরা দ্বিধাগ্রস্ত হবেন। দুই বছর মেয়াদি একটি পরিকল্পনা করার পরামর্শ দেন তিনি।

চতুর্থত, তিনি মনে করেন, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণপ্রক্রিয়া স্থবির হওয়ার কোনো কারণ নেই। তিনটি মাপকাঠিতে বাংলাদেশ উত্তীর্ণ হয়েছে। তাই ২০২৬ সালের আগে বড় ধরনের অর্থনৈতিক দুর্যোগ সৃষ্টি হলে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে। এখনও সেই সময় হয়নি। পঞ্চমত, উন্নয়ন সহযোগী; বাজার-সুবিধা দেয়ার দেশ; বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং শ্রমশক্তি নেয়, এমন দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে আগামী বছরের প্রথমদিকে একটি উন্নয়ন ফোরাম বৈঠক করা, যেখানে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরতে হবে।

বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের ফাঁদে পড়ে গেছে
এলডিসি থেকে উত্তরণ সম্পর্কে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘সক্ষমতা ও আয়তন অনুসারে বাংলাদেশ এলডিসিতে থাকার মতো দেশ নয়। যদি কোনো কারণে ২০২৬ সালে উত্তরণ হতে না পারি, তাহলে আবার বলা হবে, ‘সোনার সংসার রেখে গিয়েছিলাম, এটা নষ্ট করে গেছে।’ যারা (বাজার-সুবিধাপ্রাপ্ত-রপ্তানিকারক) এলডিসি উত্তরণ পিছিয়ে দিতে তদবির করেন, তাদের গোড়া কোথায়, তা দেখেন। তারা সংসদে প্রভাবশালী ছিলেন, রাজনীতিতে প্রভাবশালী ছিলেন। আমরা দেখেছি, একটি রপ্তানি খাতকে কীভাবে একচেটিয়া সুবিধা দেওয়া হয়েছে।’

অনুষ্ঠানে কমিটির আরেক সদস্য ও বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘এতদিন ভেবেছিলাম, আমরা মধ্যম আয়ের দেশের ফাঁদে পড়ার শঙ্কায় আছি। এখন আমরা বলছি, আমরা সেই ফাঁদে পড়ে গেছি। পরিসংখ্যান দিয়ে এতদিন উন্নয়ন দেখানো হয়েছে। বাস্তবে তা হয়নি। হিসাব গরমিলের কারণে মধ্যম আয়ের দেশের ফাঁদে পড়ে গেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণ হওয়ার সময় ঠিক করা হয়েছে। মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ হয়। ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার।’

জিডিপির হিসাব বিষয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘এদেশে জিডিপি যেভাবে হিসাব করা হয়, তাতে অতিরিক্ত দেখা যায়। কোনো খাতে মূল্য সংযোজন বাড়লে ধরা পড়ে, কিন্তু কমলে ধরা পড়ে না। বিগত সরকারের আমলে এত টাকা পাচার হলো, কাঙ্খিত বিনিয়োগ হলো না, কর্মসংস্থান হলো না, তাহলে এত প্রবৃদ্ধি হয় কীভাবে। নীতি সংস্কার করতে হবে। জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।’

মেগা প্রকল্পে মেগা চুরি
কমিটির সদস্য ও সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘অনেক মেগা প্রকল্পই হয়ত প্রয়োজনীয় ছিল। কিন্তু এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ঠিকাদারের কথা অনুযায়ী কয়েকগুণ ব্যয় বাড়িয়ে সেই টাকা পাচার করা হয়েছে। অর্থপাচারের হিসাব বের করা বেশ কঠিন। তবে আমি একটি আন্তর্জাতিক পদ্ধতি অবলম্বন করে পাচারের হিসাবটা এনেছি। মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে যেসব টাকা লোপাট করা হয়েছে, পরবর্তী প্রজন্মের ঘাড়ে সেই বোঝা থেকে গেল।’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে কাগজে-কলমে চুরির প্রমাণ নেই। তবে বিদ্যুৎ খাতে বিগত সরকারের আমলে ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। এরমধ্যে ১০ শতাংশ বা ৩০০ কোটি ডলার ‘হাতবদল’ হয়েছে।’

পরপর তিনটি নির্বাচন চরম ত্রুটিপূর্ণ হয়েছে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের (সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেছেন, ‘পরপর তিনটি নির্বাচন চরম ত্রুটিপূর্ণ হয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও অর্থনৈতিক খাতগুলো ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে অবাধ নির্বাচন দরকার। তবে তার আগে আর্থিক ও অন্যান্য খাতে যে ক্ষতি হয়েছে, তার সংস্কার জরুরি। আমরা চাই না, পুরোনো দুর্নীতিবাজেরা কোনোভাবে পুনর্বাসিত হোক, সে জন্য আগে সংস্কার জরুরি।’

আওয়ামী লীগ আমলের দুর্নীতি গবেষণার বিষয় বলে মন্তব্য করেন সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি সব দেশেই হতে পারে। কিন্তু আমাদের প্রতিবেদনে (শ্বেতপত্র) তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে দুর্নীতির ব্যাপকতা তুলে ধরা হয়েছে। অতীতে যে ব্যাপক হারে দুর্নীতি হয়েছে, দুর্নীতির সঙ্গে যে বিপুল মানুষের সম্পৃক্ততা ও ধরন, এটা বাংলাদেশে বড় ধরনের গবেষণার ক্ষেত্র তৈরি করেছে।’

অতীতে সংস্কারের উদ্যোগ নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে সেলিম রায়হান বলেন, ‘আমরা মনে করি, যারা নানাভাবে গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে সংস্কারের বিরোধিতা করেছেন, তারা এখনও আছেন। তবে সামনের দিনে যদি আমরা অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের কথা চিন্তা করি এবং ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ পরিস্থিতির বড় ধরনের উন্নতি আশা করি, তাহলে গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো সংস্কার করতে হবে।’

back to top