alt

অর্থ-বাণিজ্য

প্রযুক্তির ব্যবহার ৫০ শতাংশ বাড়লে চাকরি হারাতে পারেন ১৮ লাখ মানুষ: বিআইডিএস

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪

দেশে প্রযুক্তিগত দক্ষতার ব্যবহার ৫০ শতাংশ বাড়লে প্রায় ১৮ লাখ মানুষ চাকরি হারাতে পারেন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাত (আরএমজি) খাত। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) এর চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে রোববার (৮ ডিসেম্বর) আয়োজিত ‘প্রযুক্তি, সাপ্লাই চেইন ও প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান’ শীর্ষক এক অধিবেশনে উপস্থাপিত গবেষণাপত্রে এ কথা বলা হয়। যৌথভাবে এ গবেষণাপত্রটি তৈরি করেন বিআইডিএস’র গবেষক ড. মনজুর হোসেন, ড. কাজী ইকবাল ও জায়েদ বিন সাত্তার। অধিবেশনটি পরিচালনা করেন ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপ (ইআরজি)-এর নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদ জহির।

বিআইডিএস’র গবেষণা সহযোগী ফারহিন ইসলাম জানান, শুধুমাত্র আরএমজি খাতে ১০ লাখ চাকরি হারানোর আশঙ্কা করা হয়েছে। গবেষণায় আরও কিছু ক্ষতিগ্রস্ত খাত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে- অ-ধাতু, খাদ্যপণ্য, চামড়া ও চামড়া সামগ্রী, ফার্নিচার, ফার্মাসিউটিক্যালস, প্লাস্টিক ও রাবার শিল্প।

উৎপাদন খাতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা এ হিসাব করেছি এটা ধরে নিয়ে যে, উৎপাদন খাতে কোনো প্রবৃদ্ধি হয়নি। তবে যদি উৎপাদন খাতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়, তাহলে ২০২৫ সালের মধ্যে, প্রযুক্তিগত দক্ষতা ৫০ শতাংশ বাড়লেও চাকরি ক্ষতির পরিমাণকে ছাড়িয়ে গিয়ে ২০ লাখেরও বেশি চাকরি সৃষ্টি হতে পারে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, কাগজেরপণ্য, কোক এবং পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম, অ-ধাতু খনিজ পণ্য, এবং কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিক্স নির্মাণ খাতে চাকরি বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’

দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য শ্রমশক্তির উন্নয়ন জরুরি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যতটা বেকারত্ব আমরা অনুমান করেছি, তা শ্রম প্রতিস্থাপনকারী প্রযুক্তির চেয়ে শ্রম-বর্ধনকারী প্রযুক্তির মাধ্যমে অনেক কম হবে এবং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য শ্রমশক্তির উন্নয়ন জরুরি। তবে যদি আমরা শ্রমশক্তিকে দক্ষ করে তুলতে পারি, তাহলে আমরা উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারব। সেইসঙ্গে চাকরি বজায় রাখতে পারব। সরকারকে শ্রমশক্তি উন্নয়নের জন্য সরকারের আরও পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।’

বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, ‘প্রযুক্তির প্রভাব কীভাবে লিঙ্গভিত্তিক কর্মসংস্থানে প্রভাব ফেলতে পারে, সেটিও গবেষণার বিষয় হওয়া উচিত। প্রযুক্তি গ্রহণের সময় তার সামাজিক প্রভাব বিবেচনায় নেয়ার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।’

একই সঙ্গে গবেষণায় আরও উঠে আসে, দেশের তৈরি পোশাক খাতে নারীর অংশগ্রহণ কমছে। ২০১৪ সালে দেশের এই খাতের শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ছিল ৫৬ শতাংশ, ২০২৩ সালে যা ৫৩ শতাংশে নেমে এসেছে। গবেষণায় দেখা যায়, গত ১০ বছরে তৈরি পোশাক খাতের বেশির ভাগ উপখাতে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে। এই খাতের আটটি উপখাতের মধ্যে ছয়টিতে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে; বেড়েছে মাত্র দুটিতে।

টেকনোলজি আপগ্রেডেশন অব দ্য আরএমজি ইন্ডাস্ট্রিজ ইন বাংলাদেশ শীর্ষক উপস্থাপনায় বিআইডিএসের গবেষক কাজী ইকবাল দেখিয়েছেন, গত ১০ বছরে তৈরি পোশাকের উপখাতগুলোর মধ্যে শুধু হোম টেক্সটাইল ও ওভেন খাতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। বাকি ছয়টি খাত অর্থাৎ নিট লিনজারি, ডেনিম ট্রাউজার, সোয়েটার, টি-শার্ট, জ্যাকেট, ওভেন ট্রাউজার ও ওভেন শার্টে নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ কমেছে। সবচেয়ে বেশি কমেছে জ্যাকেটে। এই উপখাতে ২০১৪ সালে নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ ছিল ৬৩ দশমিক ১৩ শতাংশ; ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ২২ শতাংশ।

উপস্থাপনায় বলা হয়, তৈরি পোশাক খাত গত ১০ বছরে অনেক বেশি পুঁজিঘন হয়েছে। সেই সঙ্গে শ্রমিকপ্রতি যন্ত্রের সংখ্যা কমেছে। এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে মেশিন অপারেটর ও হেলপারদের ওপর। সামগ্রিকভাবে তৈরি পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বেড়েছে।

নারী শ্রমিকদের সংখ্যা হ্রাসের সঙ্গে যে আরেকটি পরিবর্তন গত ১০ বছরে হয়েছে, তা হলো উৎপাদন খাতে প্রযুক্তি জানা মানুষের কর্মসংস্থান বেড়েছে। এই খাতে বিএসসি ও ডিপ্লোমা টেক্সটাইল প্রকৌশলী বেড়েছে। কিন্তু টেক্সটাইল প্রকৌশলে নারীর সংখ্যা খুবই নগণ্য। এছাড়া বিএসসি শিল্প প্রকৌশলী ও ডিপ্লোমা শিল্প প্রকৌশলীর সংখ্যা বেড়েছে। ডিপ্লোমা শিল্প প্রকৌশলীর পেশা তুলনামূলকভাবে নতুন। তবে এই খাতে সম্প্রতি কয়েক বছরে নারীরা এসেছেন। এই খাত গত ১০ বছরে অনেক বড় হয়েছে বলে নন-টেকনিক্যাল মানুষের সংখ্যাও দ্বিগুণ হয়েছে নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য।

এ প্রসঙ্গে বিনায়ক সেন বলেন, ‘এই যে প্রযুক্তির ব্যবহারের সঙ্গে নারীর শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছে, এর সামাজিক প্রভাব আছে। বিষয়টি কী একেবারে বাজারের হাতে দেয়া হবে, নাকি এখানে নারীদের অংশগ্রহণের হার বজায় রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

কাজী ইকবাল বলেন, ‘নারীরা কোথায় কোথায় প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কারণে সমস্যার মুখে পড়ছেন, তা চিহ্নিত করে তাদের নতুন দক্ষতা শেখানো দরকার। তাহলে নারীদের এই ঝরে পড়ার হার রোধ করা সম্ভব।’

এ প্রসঙ্গে বিআইডিএসের গবেষক মঞ্জুর আহমেদ বলেন, ‘দেশে এই মুহূর্তে প্রযুক্তির কারণে বড় ধরনের ছাঁটাই হচ্ছে, তা নয়। এর প্রভাব আছে। চীনে প্রযুক্তির কারণে ৩ শতাংশ ছাঁটাই হলেও ২ শতাংশ নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া সবখানেই থাকবে। ফলে দরকার হচ্ছে, নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা বা তাদের নতুন দক্ষতা শেখানো, এবং প্রয়োজনবোধে নতুন জায়গায় নিয়ে যাওয়া।’

অনুষ্ঠানে বিআইডিএসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষক ও সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।

ছবি

স্থানীয় শিল্পে খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার

ছবি

তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার চান টেক্সটাইল মালিকরা

বাজার মূলধনে যোগ হলো সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা

বিকাশ, রকেট, নগদসহ এমএফএসের মাধ্যমে শুল্ক-কর জমা দেয়া যাবে

ছবি

ব্রাদার পার্টনার ডে ২০২৫ অনুষ্ঠিত

ছবি

বিকাশ-রকেট-নগদে কাস্টমস শুল্ক পরিশোধ সুবিধা চালু, ঘরে বসেই পণ্য খালাসের পথ খুলল

ছবি

তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার চান ব্যবসায়ীরা

ছবি

কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে মাশুল বাড়বে না

সেমিকন্ডাক্টর খাতে ১০ বছরের কর অব্যাহতি ও শুল্ক ছাড়ের সুপারিশ

ছবি

প্রথম প্রান্তিকে বিমাদাবি নিষ্পত্তিতে গার্ডিয়ান লাইফ ইনস্যুরেন্সের ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’

৮৫ ব্রোকারেজ হাউসকে আগস্টের মধ্যে চালু করতে হবে ব্যাক অফিস সফটওয়্যার

ছবি

প্রসাধনী পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধি প্রত্যাহারের দাবি

ছবি

স্বর্ণের দাম আবার বাড়লো

ছবি

৮৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এক লাখ ১০ হাজার টন সার কিনবে সরকার

এফবিসিসিআই নির্বাচন: সময় বাড়লো ৪৫ দিন

ছবি

পাট খাতের উন্নয়নে ‘সাসটেইনেবল মার্কেট এক্সেস বুটক্যাম্প’ কর্মসূচি শুরু

এক বছরে ভারতে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন নেমেছে এক-তৃতীয়াংশে

৫ দিন বন্ধ থাকবে রূপালী ও এনসিসি ব্যাংকের সব কার্যক্রম

ছবি

ডলারের বিপরীতে টাকায় ঋণ নেয়ার সুযোগ

গত অর্থবছরে রফতানি আয় ৪৮ বিলিয়ন ডলার

নবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার

ছবি

ব্যাগেজ রুলসে মোবাইল ও স্বর্ণ আনায় বড় ছাড়

ছবি

এনবিআরের আন্দোলনে অংশ নেওয়া আরও ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তের কথা জানালো দুদক

ছবি

প্রবাসী আয়ে রেকর্ড, রপ্তানিতে বড় প্রবৃদ্ধি

ছবি

দেশের ৩২ বীমা কোম্পানি উচ্চ ঝুঁকিতে: আইডিআরএ চেয়ারম্যান

ছবি

বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ৭ শতাংশেরও কম

ছবি

ডিএসইর নতুন সিওও মোহাম্মদ আসাদুর রহমান

ছবি

অর্থবছরের প্রথম দিন ঊর্ধ্বমুখী শেয়ারবাজার

ছবি

ইলিশের দাম নির্ধারণ করে দেবে সরকার

ছবি

এনবিআরে আন্দোলন: এবার চার কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠালো সরকার

ছবি

৭৩ ধাপ এগিয়ে থাকা মায়ানমারকে হারিয়ে ইতিহাসের পথে বাংলাদেশের মেয়েরা

বিইআরসি ঘোষণা করল বেসরকারি এলপিজির নতুন দাম, ১২ কেজিতে ৩৯ টাকা কমতি

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানি আসছে, অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্বে নৌবাহিনী

ছবি

নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ে এফবিসিসিআই নির্বাচন পিছিয়ে গেল

ছবি

রেকর্ড রেমিটেন্সে শেষ হলো অর্থবছর, প্রথমবারের মতো আয় ছাড়াল ৩০ বিলিয়ন ডলার

ছবি

‘শাটডাউন’ কর্মসূচিতে অংশ: চট্টগ্রাম কাস্টম কমিশনার বরখাস্ত

tab

অর্থ-বাণিজ্য

প্রযুক্তির ব্যবহার ৫০ শতাংশ বাড়লে চাকরি হারাতে পারেন ১৮ লাখ মানুষ: বিআইডিএস

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪

দেশে প্রযুক্তিগত দক্ষতার ব্যবহার ৫০ শতাংশ বাড়লে প্রায় ১৮ লাখ মানুষ চাকরি হারাতে পারেন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাত (আরএমজি) খাত। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) এর চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে রোববার (৮ ডিসেম্বর) আয়োজিত ‘প্রযুক্তি, সাপ্লাই চেইন ও প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান’ শীর্ষক এক অধিবেশনে উপস্থাপিত গবেষণাপত্রে এ কথা বলা হয়। যৌথভাবে এ গবেষণাপত্রটি তৈরি করেন বিআইডিএস’র গবেষক ড. মনজুর হোসেন, ড. কাজী ইকবাল ও জায়েদ বিন সাত্তার। অধিবেশনটি পরিচালনা করেন ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপ (ইআরজি)-এর নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদ জহির।

বিআইডিএস’র গবেষণা সহযোগী ফারহিন ইসলাম জানান, শুধুমাত্র আরএমজি খাতে ১০ লাখ চাকরি হারানোর আশঙ্কা করা হয়েছে। গবেষণায় আরও কিছু ক্ষতিগ্রস্ত খাত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে- অ-ধাতু, খাদ্যপণ্য, চামড়া ও চামড়া সামগ্রী, ফার্নিচার, ফার্মাসিউটিক্যালস, প্লাস্টিক ও রাবার শিল্প।

উৎপাদন খাতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা এ হিসাব করেছি এটা ধরে নিয়ে যে, উৎপাদন খাতে কোনো প্রবৃদ্ধি হয়নি। তবে যদি উৎপাদন খাতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়, তাহলে ২০২৫ সালের মধ্যে, প্রযুক্তিগত দক্ষতা ৫০ শতাংশ বাড়লেও চাকরি ক্ষতির পরিমাণকে ছাড়িয়ে গিয়ে ২০ লাখেরও বেশি চাকরি সৃষ্টি হতে পারে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, কাগজেরপণ্য, কোক এবং পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম, অ-ধাতু খনিজ পণ্য, এবং কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিক্স নির্মাণ খাতে চাকরি বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’

দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য শ্রমশক্তির উন্নয়ন জরুরি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যতটা বেকারত্ব আমরা অনুমান করেছি, তা শ্রম প্রতিস্থাপনকারী প্রযুক্তির চেয়ে শ্রম-বর্ধনকারী প্রযুক্তির মাধ্যমে অনেক কম হবে এবং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য শ্রমশক্তির উন্নয়ন জরুরি। তবে যদি আমরা শ্রমশক্তিকে দক্ষ করে তুলতে পারি, তাহলে আমরা উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারব। সেইসঙ্গে চাকরি বজায় রাখতে পারব। সরকারকে শ্রমশক্তি উন্নয়নের জন্য সরকারের আরও পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।’

বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, ‘প্রযুক্তির প্রভাব কীভাবে লিঙ্গভিত্তিক কর্মসংস্থানে প্রভাব ফেলতে পারে, সেটিও গবেষণার বিষয় হওয়া উচিত। প্রযুক্তি গ্রহণের সময় তার সামাজিক প্রভাব বিবেচনায় নেয়ার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।’

একই সঙ্গে গবেষণায় আরও উঠে আসে, দেশের তৈরি পোশাক খাতে নারীর অংশগ্রহণ কমছে। ২০১৪ সালে দেশের এই খাতের শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ছিল ৫৬ শতাংশ, ২০২৩ সালে যা ৫৩ শতাংশে নেমে এসেছে। গবেষণায় দেখা যায়, গত ১০ বছরে তৈরি পোশাক খাতের বেশির ভাগ উপখাতে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে। এই খাতের আটটি উপখাতের মধ্যে ছয়টিতে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে; বেড়েছে মাত্র দুটিতে।

টেকনোলজি আপগ্রেডেশন অব দ্য আরএমজি ইন্ডাস্ট্রিজ ইন বাংলাদেশ শীর্ষক উপস্থাপনায় বিআইডিএসের গবেষক কাজী ইকবাল দেখিয়েছেন, গত ১০ বছরে তৈরি পোশাকের উপখাতগুলোর মধ্যে শুধু হোম টেক্সটাইল ও ওভেন খাতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। বাকি ছয়টি খাত অর্থাৎ নিট লিনজারি, ডেনিম ট্রাউজার, সোয়েটার, টি-শার্ট, জ্যাকেট, ওভেন ট্রাউজার ও ওভেন শার্টে নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ কমেছে। সবচেয়ে বেশি কমেছে জ্যাকেটে। এই উপখাতে ২০১৪ সালে নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ ছিল ৬৩ দশমিক ১৩ শতাংশ; ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ২২ শতাংশ।

উপস্থাপনায় বলা হয়, তৈরি পোশাক খাত গত ১০ বছরে অনেক বেশি পুঁজিঘন হয়েছে। সেই সঙ্গে শ্রমিকপ্রতি যন্ত্রের সংখ্যা কমেছে। এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে মেশিন অপারেটর ও হেলপারদের ওপর। সামগ্রিকভাবে তৈরি পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বেড়েছে।

নারী শ্রমিকদের সংখ্যা হ্রাসের সঙ্গে যে আরেকটি পরিবর্তন গত ১০ বছরে হয়েছে, তা হলো উৎপাদন খাতে প্রযুক্তি জানা মানুষের কর্মসংস্থান বেড়েছে। এই খাতে বিএসসি ও ডিপ্লোমা টেক্সটাইল প্রকৌশলী বেড়েছে। কিন্তু টেক্সটাইল প্রকৌশলে নারীর সংখ্যা খুবই নগণ্য। এছাড়া বিএসসি শিল্প প্রকৌশলী ও ডিপ্লোমা শিল্প প্রকৌশলীর সংখ্যা বেড়েছে। ডিপ্লোমা শিল্প প্রকৌশলীর পেশা তুলনামূলকভাবে নতুন। তবে এই খাতে সম্প্রতি কয়েক বছরে নারীরা এসেছেন। এই খাত গত ১০ বছরে অনেক বড় হয়েছে বলে নন-টেকনিক্যাল মানুষের সংখ্যাও দ্বিগুণ হয়েছে নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য।

এ প্রসঙ্গে বিনায়ক সেন বলেন, ‘এই যে প্রযুক্তির ব্যবহারের সঙ্গে নারীর শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছে, এর সামাজিক প্রভাব আছে। বিষয়টি কী একেবারে বাজারের হাতে দেয়া হবে, নাকি এখানে নারীদের অংশগ্রহণের হার বজায় রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

কাজী ইকবাল বলেন, ‘নারীরা কোথায় কোথায় প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কারণে সমস্যার মুখে পড়ছেন, তা চিহ্নিত করে তাদের নতুন দক্ষতা শেখানো দরকার। তাহলে নারীদের এই ঝরে পড়ার হার রোধ করা সম্ভব।’

এ প্রসঙ্গে বিআইডিএসের গবেষক মঞ্জুর আহমেদ বলেন, ‘দেশে এই মুহূর্তে প্রযুক্তির কারণে বড় ধরনের ছাঁটাই হচ্ছে, তা নয়। এর প্রভাব আছে। চীনে প্রযুক্তির কারণে ৩ শতাংশ ছাঁটাই হলেও ২ শতাংশ নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া সবখানেই থাকবে। ফলে দরকার হচ্ছে, নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা বা তাদের নতুন দক্ষতা শেখানো, এবং প্রয়োজনবোধে নতুন জায়গায় নিয়ে যাওয়া।’

অনুষ্ঠানে বিআইডিএসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষক ও সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।

back to top