সাত মাসে ৫৯ হাজার ৮৭৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার চলতি অর্থবছরে এডিপিতে ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখে বাজেট পাস করেছিল। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, জুলাই-জানুয়ারি সময়ে এডিপির এক পঞ্চমাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে
সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- বাস্তবায়নে বেহাল দশা দেখা দিয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দের মাত্র ২১ দশমিক ৫২ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ২৭ দশমিক ১১ শতাংশ ছিল।
এই সাত মাসে ৫৯ হাজার ৮৭৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার চলতি অর্থবছরে এডিপিতে ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখে বাজেট পাস করেছিল। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, জুলাই-জানুয়ারি সময়ে এডিপির এক পঞ্চমাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) বৃহস্পতিবার এডিপি বাস্তবায়নের হালনাগাদ এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
অর্থনীতিবিদ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলন; ক্ষমতার পটপরিবর্তন, অর্থ সংকট এবং ঠিকাদার ও প্রকল্প পরিচালকদের খুঁজে না পাওয়া—এসব কিছুর প্রভাব পড়েছে উন্নয়ন কর্মকা-ে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে এডিপিতে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা কম খরচ হয়েছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে খরচের পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা। এর মানে আগের বার প্রকল্পের মাধ্যমে যত টাকা খরচ করা হয়েছে, এবার তা-ও ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি গত ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম টাকা খরচ হয়েছে এবার।
এর আগে জুলাই-জানুয়ারি হিসাবে কোভিডের বছরে (২০২০-২১ অর্থবছর) ৬১ হাজার ৪৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরে খরচ হয়েছিল ৭১ হাজার ৫৩২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে খরচ হয় ৭২ হাজার ৯০ কোটি ২১ লাখ টাকা।
করোনা মহামারির ধকল কাটতে না কাটতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও বড় ধরনের সংকটের মধ্যে পড়েছিল। কৃচ্ছসাধনের পথ বেছে নিয়েছিল ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার। সে কারণে দেশের উন্নয়ন কর্মকা-ে মন্থরগতি দেখা দিয়েছিল।
জুলাই অভ্যুত্থান ও এরপর অন্তর্বর্তী সরকার ঢালাওভাবে খরচ করতে না চাওয়ায় এডিপির আওতায় সেই কর্মকা- আরও চাপে পড়েছে। তবে গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে তা ঘুরে দাঁড়িয়েছ। এই এক মাসেই বাস্তবায়ন হয়েছে প্রায় ৬ শতাংশ।
ডিসেম্বর মাসের সফলতায় চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধ (জুলাই-ডিসেম্বর) পর্যন্ত দেশের উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনায় অনুমোদন পাওয়া এডিপি বরাদ্দের প্রায় ১৮ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছিল সরকার।
এর আগে গত নভেম্বর মাস পর্যন্ত এডিপি বরাদ্দের মাত্র ৩৪ হাজার ২১৪ বা ১২ শতাংশের কিছু বেশি খরচ হয়েছিল। সেখান থেকে ডিসেম্বর এক মাসেই প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা বাস্তবায়ন করে তা ৫০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা সম্ভব হয়। কিন্তু নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে খরচ ফের কমে গেছে। এই মাসে ৯ হাজার ৮৭৪ কোটি ৫৩ রাখ টাকা খরচ হয়েছে। গত বছরের জানুয়ারিতে ব্যয় হয়েছিল ১২ হাজার ৭২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার চলতি অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন দেয়, যার মধ্যে এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে, বৈদেশিক ঋণ থেকে এক লাখ কোটি টাকা এবং সরকারি বিভিন্ন সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১৩ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা জোগান দেওয়ার কথা রয়েছে।
ডলার সংকটে আওয়ামী লীগ সরকার শেষ মেয়াদে বেছে বেছে বিদেশি ঋণ সহায়তার প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দেয়। ফলে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকেই সংকুচিত হতে থাকে উন্নয়ন কর্মকা-। জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় এবং শেখ হাসিনার সরকার পতন-পরবর্তী সময় সৃষ্ট অস্থিরতায় সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আর অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অপ্রয়োজনীয় বা কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প যাচাই-বাচাই করে অর্থছাড়ের কথা জানায়।
ফলে চলতি অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন অনেক কমে যাবে- এই আন্দাজ আগে থেকেই করা হচ্ছিল। অর্থবছরের বাকি মাসগুলোতে এডিপি বাস্তবায়নের গতি আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
ডিসেম্বর মাসে এক একনেক সভা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছিলেন, ‘জানুয়ারি মাস থেকে পরের ছয় মাসে এডিপি বাস্তবায়নের গতি আরও বাড়বে। আমরা পহেলাতেই প্রকল্পগুলো যাচাই-বাচাই করছিলাম। এখন থেকে প্রকল্প বাস্তবায়ন দ্রুততর হবে।’
কীভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন দ্রুত হবে- এ প্রশ্নে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেছিলেন, ‘এই একনেকের মিটিংয়ে অনেক দ্রুত এবং বেশি (১০টি) প্রকল্প অনুমোদন করেছি। এভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন অনেক দ্রুততর হবে। তার একটা কারণ হলো- বেশ কিছু প্রকল্প এখন আসছে, যেগুলা আমাদের সময়ের নতুন প্রকল্প। আগেরগুলো অনেক যাচাই-বাছাই করতে হচ্ছিল। ফেরত পাঠাতে হচ্ছিল। আবার সংশোধন করতে হচ্ছিল। এই প্রথম আমাদের নিজেদের নতুন প্রকল্পগুলো আসা শুরু করেছে, বিশেষ করে স্থানীয় পর্যায়ের।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি স্থানীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এই ধরনের প্রকল্প পাঠাতে বিশেষ অনুরোধ করেছি। পরিকল্পনা কমিশনকেও বলেছি অনুসন্ধান করে স্থানীয় ধরনের প্রকল্প কোনগুলো আছে, সেগুলো খুঁজে বের করার জন্য।’
উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। চলতি অর্থবছরে এই মন্ত্রণালয়ের সাতটি প্রকল্পে ১৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। পাকিস্তান, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ভুটান, ব্রুনেই ও সৌদি আরবে সাতটি চ্যান্সারি কমপ্লেক্স তৈরির জন্য আলাদাভাবে এসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এডিপি আওতায় জুলাই-জানুয়ারি সাত মাসে মাত্র ৪৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বাস্তবায়নের হার মাত্র দশমিক ৩৩ শতাংশ।
অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে বাস্তবায়ন করেছে ০.৩৩ শতাংশ। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ৪ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ব্যয় করেছে ০.৪০ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ৭৫৪ কোটি টাকার বরাদ্দ থেকে বাস্তবায়ন করেছে ১.৯০ শতাংশ এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ থেকে মাত্র ২.১৮ শতাংশ ব্যয় করেছে। এডিপি বাস্তবায়নে জড়িত ৫৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সাতটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অর্থবছরের ৭ মাসে বরাদ্দের বিপরীতে ১০ শতাংশও বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
এর মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ১১ হাজার ১৫৩ কোটি টাকার বরাদ্দের বিপরীতে বাস্তবায়ন করেছে ৫.১৫ শতাংশ। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ৩ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে বাস্তবায়ন করেছে ৯.৬৬ শতাংশ। জন নিরাপত্তা বিভাগ ১ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে বাস্তবায়ন করেছে ৭.২২ শতাংশ। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে বাস্তবায়ন করেছে ৯.১৬ শতাংশ।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৮৫৭ কোটি টাকার বরাদ্দ থেকে বাস্তবায়ন করেছে ৭.৪১ শতাংশ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৭৩৯ কোটি টাকার বরাদ্দের বিপরীতে বাস্তবায়ন করেছে ৭.০৫ শতাংশ এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের ৬৬৬ কোটি টাকার বরাদ্দের বিপরীতে বাস্তবায়ন করেছে ৫.৩১ শতাংশ।
বেশি বরাদ্দ পাওয়ার ভিত্তিতে বড় ১৫ মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো অর্থ বছরের প্রথমার্ধ পর্যন্ত ২৩ দশমিক ৫০ শতাংশ ব্যয় করতে পেরেছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ ৩৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ, বিদ্যুৎ বিভাগ ৩৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ, স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রায় ৩০ শতাংশ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় প্রায় ২৭ শতাংশ এবং কৃষি মন্ত্রণালয় ২৫ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে।
এছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ২৩ শতাংশ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় প্রায় ২৩ শতাংশ, রেলপথ মন্ত্রণালয় প্রায় ২০ শতাংশ, সেতু বিভাগ ১৮ শতাংশ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ১৮ শতাংশ, নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয় প্রায় ১২ শতাংশ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ ৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে।
সাত মাসে ৫৯ হাজার ৮৭৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার চলতি অর্থবছরে এডিপিতে ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখে বাজেট পাস করেছিল। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, জুলাই-জানুয়ারি সময়ে এডিপির এক পঞ্চমাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে
শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- বাস্তবায়নে বেহাল দশা দেখা দিয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দের মাত্র ২১ দশমিক ৫২ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ২৭ দশমিক ১১ শতাংশ ছিল।
এই সাত মাসে ৫৯ হাজার ৮৭৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার চলতি অর্থবছরে এডিপিতে ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ রেখে বাজেট পাস করেছিল। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, জুলাই-জানুয়ারি সময়ে এডিপির এক পঞ্চমাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) বৃহস্পতিবার এডিপি বাস্তবায়নের হালনাগাদ এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
অর্থনীতিবিদ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলন; ক্ষমতার পটপরিবর্তন, অর্থ সংকট এবং ঠিকাদার ও প্রকল্প পরিচালকদের খুঁজে না পাওয়া—এসব কিছুর প্রভাব পড়েছে উন্নয়ন কর্মকা-ে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে এডিপিতে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা কম খরচ হয়েছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে খরচের পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা। এর মানে আগের বার প্রকল্পের মাধ্যমে যত টাকা খরচ করা হয়েছে, এবার তা-ও ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি গত ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম টাকা খরচ হয়েছে এবার।
এর আগে জুলাই-জানুয়ারি হিসাবে কোভিডের বছরে (২০২০-২১ অর্থবছর) ৬১ হাজার ৪৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরে খরচ হয়েছিল ৭১ হাজার ৫৩২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে খরচ হয় ৭২ হাজার ৯০ কোটি ২১ লাখ টাকা।
করোনা মহামারির ধকল কাটতে না কাটতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও বড় ধরনের সংকটের মধ্যে পড়েছিল। কৃচ্ছসাধনের পথ বেছে নিয়েছিল ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার। সে কারণে দেশের উন্নয়ন কর্মকা-ে মন্থরগতি দেখা দিয়েছিল।
জুলাই অভ্যুত্থান ও এরপর অন্তর্বর্তী সরকার ঢালাওভাবে খরচ করতে না চাওয়ায় এডিপির আওতায় সেই কর্মকা- আরও চাপে পড়েছে। তবে গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে তা ঘুরে দাঁড়িয়েছ। এই এক মাসেই বাস্তবায়ন হয়েছে প্রায় ৬ শতাংশ।
ডিসেম্বর মাসের সফলতায় চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধ (জুলাই-ডিসেম্বর) পর্যন্ত দেশের উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনায় অনুমোদন পাওয়া এডিপি বরাদ্দের প্রায় ১৮ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছিল সরকার।
এর আগে গত নভেম্বর মাস পর্যন্ত এডিপি বরাদ্দের মাত্র ৩৪ হাজার ২১৪ বা ১২ শতাংশের কিছু বেশি খরচ হয়েছিল। সেখান থেকে ডিসেম্বর এক মাসেই প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা বাস্তবায়ন করে তা ৫০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা সম্ভব হয়। কিন্তু নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে খরচ ফের কমে গেছে। এই মাসে ৯ হাজার ৮৭৪ কোটি ৫৩ রাখ টাকা খরচ হয়েছে। গত বছরের জানুয়ারিতে ব্যয় হয়েছিল ১২ হাজার ৭২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকার চলতি অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন দেয়, যার মধ্যে এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে, বৈদেশিক ঋণ থেকে এক লাখ কোটি টাকা এবং সরকারি বিভিন্ন সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১৩ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা জোগান দেওয়ার কথা রয়েছে।
ডলার সংকটে আওয়ামী লীগ সরকার শেষ মেয়াদে বেছে বেছে বিদেশি ঋণ সহায়তার প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দেয়। ফলে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকেই সংকুচিত হতে থাকে উন্নয়ন কর্মকা-। জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় এবং শেখ হাসিনার সরকার পতন-পরবর্তী সময় সৃষ্ট অস্থিরতায় সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আর অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অপ্রয়োজনীয় বা কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প যাচাই-বাচাই করে অর্থছাড়ের কথা জানায়।
ফলে চলতি অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন অনেক কমে যাবে- এই আন্দাজ আগে থেকেই করা হচ্ছিল। অর্থবছরের বাকি মাসগুলোতে এডিপি বাস্তবায়নের গতি আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
ডিসেম্বর মাসে এক একনেক সভা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছিলেন, ‘জানুয়ারি মাস থেকে পরের ছয় মাসে এডিপি বাস্তবায়নের গতি আরও বাড়বে। আমরা পহেলাতেই প্রকল্পগুলো যাচাই-বাচাই করছিলাম। এখন থেকে প্রকল্প বাস্তবায়ন দ্রুততর হবে।’
কীভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন দ্রুত হবে- এ প্রশ্নে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেছিলেন, ‘এই একনেকের মিটিংয়ে অনেক দ্রুত এবং বেশি (১০টি) প্রকল্প অনুমোদন করেছি। এভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন অনেক দ্রুততর হবে। তার একটা কারণ হলো- বেশ কিছু প্রকল্প এখন আসছে, যেগুলা আমাদের সময়ের নতুন প্রকল্প। আগেরগুলো অনেক যাচাই-বাছাই করতে হচ্ছিল। ফেরত পাঠাতে হচ্ছিল। আবার সংশোধন করতে হচ্ছিল। এই প্রথম আমাদের নিজেদের নতুন প্রকল্পগুলো আসা শুরু করেছে, বিশেষ করে স্থানীয় পর্যায়ের।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি স্থানীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এই ধরনের প্রকল্প পাঠাতে বিশেষ অনুরোধ করেছি। পরিকল্পনা কমিশনকেও বলেছি অনুসন্ধান করে স্থানীয় ধরনের প্রকল্প কোনগুলো আছে, সেগুলো খুঁজে বের করার জন্য।’
উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। চলতি অর্থবছরে এই মন্ত্রণালয়ের সাতটি প্রকল্পে ১৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। পাকিস্তান, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ভুটান, ব্রুনেই ও সৌদি আরবে সাতটি চ্যান্সারি কমপ্লেক্স তৈরির জন্য আলাদাভাবে এসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এডিপি আওতায় জুলাই-জানুয়ারি সাত মাসে মাত্র ৪৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বাস্তবায়নের হার মাত্র দশমিক ৩৩ শতাংশ।
অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে বাস্তবায়ন করেছে ০.৩৩ শতাংশ। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ৪ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে ব্যয় করেছে ০.৪০ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ৭৫৪ কোটি টাকার বরাদ্দ থেকে বাস্তবায়ন করেছে ১.৯০ শতাংশ এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ থেকে মাত্র ২.১৮ শতাংশ ব্যয় করেছে। এডিপি বাস্তবায়নে জড়িত ৫৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সাতটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অর্থবছরের ৭ মাসে বরাদ্দের বিপরীতে ১০ শতাংশও বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
এর মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ১১ হাজার ১৫৩ কোটি টাকার বরাদ্দের বিপরীতে বাস্তবায়ন করেছে ৫.১৫ শতাংশ। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ৩ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে বাস্তবায়ন করেছে ৯.৬৬ শতাংশ। জন নিরাপত্তা বিভাগ ১ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে বাস্তবায়ন করেছে ৭.২২ শতাংশ। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ১ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে বাস্তবায়ন করেছে ৯.১৬ শতাংশ।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৮৫৭ কোটি টাকার বরাদ্দ থেকে বাস্তবায়ন করেছে ৭.৪১ শতাংশ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৭৩৯ কোটি টাকার বরাদ্দের বিপরীতে বাস্তবায়ন করেছে ৭.০৫ শতাংশ এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের ৬৬৬ কোটি টাকার বরাদ্দের বিপরীতে বাস্তবায়ন করেছে ৫.৩১ শতাংশ।
বেশি বরাদ্দ পাওয়ার ভিত্তিতে বড় ১৫ মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো অর্থ বছরের প্রথমার্ধ পর্যন্ত ২৩ দশমিক ৫০ শতাংশ ব্যয় করতে পেরেছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ ৩৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ, বিদ্যুৎ বিভাগ ৩৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ, স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রায় ৩০ শতাংশ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় প্রায় ২৭ শতাংশ এবং কৃষি মন্ত্রণালয় ২৫ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে।
এছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ২৩ শতাংশ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় প্রায় ২৩ শতাংশ, রেলপথ মন্ত্রণালয় প্রায় ২০ শতাংশ, সেতু বিভাগ ১৮ শতাংশ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ১৮ শতাংশ, নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয় প্রায় ১২ শতাংশ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ ৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ বাস্তবায়ন করেছে।