২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২৬ শতাংশ। অক্টোবরে তা সামান্য বেড়ে হয় ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। নভেম্বরে আরো বেড়ে ৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। ডিসেম্বরে তা কমে গেল
বিদায়ী বছরের শেষ চার মাসে ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি আটকে আছে ৮ শতাংশের নিচে। এর পেছনে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও তারল্য কমে যাওয়াসহ তিনটি কারণ থাকার কথা বলছেন ব্যাংকাররা। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ি, ডিসেম্বরে আমানতের প্রবৃদ্ধি আগের মাসের চেয়ে কমে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
বিদায়ী ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২৬ শতাংশ। অক্টোবরে তা সামান্য বেড়ে হয় ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। নভেম্বরে আরো বেড়ে ৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। ডিসেম্বরে তা কমে গেল। এর আগে ব্যাংক খাত আমানতের এত কম প্রবৃদ্ধি দেখেছিল ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, সেবার ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।
গত বছর জুলাই-অগাস্টের গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। তার আগে থেকেই ডলার সংকট, রিজার্ভের পতন, রেমিটেন্স কমে যাওয়াসহ অর্থনীতিতে নানা সংকট ছিল। আন্দোলনের ধাক্কা সামলে উঠতে অন্তর্বর্তী সরকার নানা পদক্ষেপ নিলেও অর্থনীতিতে গতি আসেনি।
সরকার পতনের মাস অগাস্টে ব্যাপক সহিংসতা, বিশৃঙখলার মধ্যেও ব্যাংক আমানতে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির তথ্য দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তার আগে ১০ শতাংশের কম প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২০২৩ সালের অক্টোবরে, ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতে আমনত দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৭৬ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের একই সময় তা ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধতন কর্মকর্তা জানান, ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের ওপর থাকা উচিত। আর বাংলাদেশের মত দেশে ১২-১৪ শতাংশ হওয়া উচিত।
সিটিজেনস ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ মাসুম মনে করেন, ব্যাংক আমানত কমে যাওয়ার পেছনে মূলত তিনটি কারণ রয়েছে। তার মতে, মাস শেষে যখন বাড়তি টাকা থাকে, তখন ব্যাংকে আমানত হিসাবে জমা করে মানুষ। বর্তমানে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে, মানুষের খরচ বেড়েছে। সংসার চালানোর পর বাড়তি টাকা হাতে থাকছে না।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সার্বিক মূল্যস্ফীতির তথ্যে দেখা যায়, বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেড়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ।
২০২৪ সালের শুরুতে আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবার সরকার গঠনের পর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মৎস্য, কৃষি, খাদ্য, বাণিজ্য ও অর্থমন্ত্রণালয়ের সংযোগে যৌথভাবে কাজ শুরু করেছিল, তাতে লাভ হয়নি। গতবছর জানুয়ারি থেকে ৯ শতাংশের উপরে থাকা মূল্যস্ফীতির হার সরকার পতনের আন্দোলনের উত্তাপে জুলাই শেষে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে পৌঁছায়। অগাস্টে তা কিছুটা কমে ১০.৪৯ শতাংশ হয়। সেপ্টেম্বরের মূল্যস্ফীতির হিসাব যখন বের হয় ততদিনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়ে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায়। সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ হলেও অক্টোবরে তা আবার দুই অংকের ঘর ছাড়ায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন। মুদ্রা সরবরাহে লাগাম দিতে বারবার সুদের হার বাড়ানো হয়। কিন্তু নিত্যপণ্যের বাজারে সুফল মেলেনি। শেখ হাসিনা সরকারের সময় আর্থিক খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টিও বহুল আলোচিত ছিল।
সিটিজেনস ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বলেন, ‘ব্যাংক খাত নিয়ে এক রকম আস্থার অভাব রয়েছে। ৮-৯টি ব্যাংক তারল্য সংকটে ভুগছে। এসব ব্যাংকের গ্রাহক চাহিদা অনুযায়ী টাকা তুলতে পারছে না। এসব ব্যাংকে আমানতও আসছে না। আবার জনমনে ব্যাংক নিয়ে এক রকম ভয় রয়েছে। তাই অনেকে ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নিয়েছেন। আপাতত বিনিয়োগ করছেন না।’
এখনো ট্রেজারি বিল-বন্ডের দর বেশি থাকার বিষয়টিও তুলে ধরেছেন মোহাম্মদ মাসুম। তিনি বলেন, ‘এখানে ১২ শতাংশের মত সুদ পাওয়া যাচ্ছে। তাই ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগও বেড়েছে এ খাতে। ব্যাংকের বদলে আমানত গেছে ট্রেজারি বিল, বন্ডে।’
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২৬ শতাংশ। অক্টোবরে তা সামান্য বেড়ে হয় ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। নভেম্বরে আরো বেড়ে ৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। ডিসেম্বরে তা কমে গেল
রোববার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
বিদায়ী বছরের শেষ চার মাসে ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি আটকে আছে ৮ শতাংশের নিচে। এর পেছনে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও তারল্য কমে যাওয়াসহ তিনটি কারণ থাকার কথা বলছেন ব্যাংকাররা। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ি, ডিসেম্বরে আমানতের প্রবৃদ্ধি আগের মাসের চেয়ে কমে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
বিদায়ী ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২৬ শতাংশ। অক্টোবরে তা সামান্য বেড়ে হয় ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। নভেম্বরে আরো বেড়ে ৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। ডিসেম্বরে তা কমে গেল। এর আগে ব্যাংক খাত আমানতের এত কম প্রবৃদ্ধি দেখেছিল ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, সেবার ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।
গত বছর জুলাই-অগাস্টের গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। তার আগে থেকেই ডলার সংকট, রিজার্ভের পতন, রেমিটেন্স কমে যাওয়াসহ অর্থনীতিতে নানা সংকট ছিল। আন্দোলনের ধাক্কা সামলে উঠতে অন্তর্বর্তী সরকার নানা পদক্ষেপ নিলেও অর্থনীতিতে গতি আসেনি।
সরকার পতনের মাস অগাস্টে ব্যাপক সহিংসতা, বিশৃঙখলার মধ্যেও ব্যাংক আমানতে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির তথ্য দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তার আগে ১০ শতাংশের কম প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২০২৩ সালের অক্টোবরে, ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতে আমনত দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৭৬ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের একই সময় তা ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধতন কর্মকর্তা জানান, ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের ওপর থাকা উচিত। আর বাংলাদেশের মত দেশে ১২-১৪ শতাংশ হওয়া উচিত।
সিটিজেনস ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ মাসুম মনে করেন, ব্যাংক আমানত কমে যাওয়ার পেছনে মূলত তিনটি কারণ রয়েছে। তার মতে, মাস শেষে যখন বাড়তি টাকা থাকে, তখন ব্যাংকে আমানত হিসাবে জমা করে মানুষ। বর্তমানে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে, মানুষের খরচ বেড়েছে। সংসার চালানোর পর বাড়তি টাকা হাতে থাকছে না।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সার্বিক মূল্যস্ফীতির তথ্যে দেখা যায়, বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেড়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ।
২০২৪ সালের শুরুতে আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবার সরকার গঠনের পর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মৎস্য, কৃষি, খাদ্য, বাণিজ্য ও অর্থমন্ত্রণালয়ের সংযোগে যৌথভাবে কাজ শুরু করেছিল, তাতে লাভ হয়নি। গতবছর জানুয়ারি থেকে ৯ শতাংশের উপরে থাকা মূল্যস্ফীতির হার সরকার পতনের আন্দোলনের উত্তাপে জুলাই শেষে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে পৌঁছায়। অগাস্টে তা কিছুটা কমে ১০.৪৯ শতাংশ হয়। সেপ্টেম্বরের মূল্যস্ফীতির হিসাব যখন বের হয় ততদিনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়ে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায়। সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ হলেও অক্টোবরে তা আবার দুই অংকের ঘর ছাড়ায়।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন। মুদ্রা সরবরাহে লাগাম দিতে বারবার সুদের হার বাড়ানো হয়। কিন্তু নিত্যপণ্যের বাজারে সুফল মেলেনি। শেখ হাসিনা সরকারের সময় আর্থিক খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টিও বহুল আলোচিত ছিল।
সিটিজেনস ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বলেন, ‘ব্যাংক খাত নিয়ে এক রকম আস্থার অভাব রয়েছে। ৮-৯টি ব্যাংক তারল্য সংকটে ভুগছে। এসব ব্যাংকের গ্রাহক চাহিদা অনুযায়ী টাকা তুলতে পারছে না। এসব ব্যাংকে আমানতও আসছে না। আবার জনমনে ব্যাংক নিয়ে এক রকম ভয় রয়েছে। তাই অনেকে ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নিয়েছেন। আপাতত বিনিয়োগ করছেন না।’
এখনো ট্রেজারি বিল-বন্ডের দর বেশি থাকার বিষয়টিও তুলে ধরেছেন মোহাম্মদ মাসুম। তিনি বলেন, ‘এখানে ১২ শতাংশের মত সুদ পাওয়া যাচ্ছে। তাই ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগও বেড়েছে এ খাতে। ব্যাংকের বদলে আমানত গেছে ট্রেজারি বিল, বন্ডে।’