দেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতের ৯৯ শতাংশ কর্মীই সর্বজনীন পেনশন স্কিমে আগ্রহী নন। বিভিন্ন আর্থিক বাধ্যবাধকতাকে এই অনাগ্রহের প্রধান কারণ হিসেবে মনে করেন ৯০.৬ শতাংশ কর্মী। আর ৬.৭ শতাংশ কর্মী মনে করেন, এটি দীর্ঘমেয়াদে টেকসই কোনো পেনশন ব্যবস্থা নয়। এছাড়াও ২.৭ শতাংশ কর্মীর এ স্কিম সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। সম্প্রতি এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সোমবার রাজধানীর শ্রম ভবনে বিলস আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় এ জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম এ জরিপটি পরিচালনা করেন।
নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সংস্থা মন্ডিয়াল এফএনভির সহায়তায় বিলস এনশিওরিং ডিসেন্ট ওয়ার্ক ইন দ্য রেডিমেড গার্মেন্ট (আরএমজি) সেক্টর থ্রো সোশ্যাল ডায়ালগ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে বিলস ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে সর্বজনীন পেনশন স্কিম: বাংলাদেশে তৈরি পোশাককর্মীদের সামাজিক সুরক্ষার সম্ভাব্য সুযোগ অনুসন্ধান শীর্ষক একটি জরিপ পরিচালনা করে। জরিপে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে চালু হওয়া এ স্কিমে এখন পর্যন্ত মাত্র ১.৩ শতাংশ পোশাককর্মী অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
মূলত সর্বজনীন পেনশন স্কিমের বিষয়টি মূল্যায়নের জন্য এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। এছাড়াও জরিপে পোশাকখাতে বিভিন্ন সংকট, কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের সুবিধা, কাঠামো, প্রক্রিয়া ইত্যাদি বিষয়গুলোও উঠে এসেছে। জরিপ প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশের পোশাককর্মীদের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমের একটি মডেল প্রস্তাব করা হয়েছে এবং টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণে কার্যকর সুপারিশ করা হয়েছে।
গোলটেবিল আলোচনায় বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জমান রতন বলেন, ‘মূল বিষয় হলো আর্থিক সক্ষমতা। কারণ পোশাককর্মীরা বর্তমানে কষ্টে রয়েছেন এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবার সময় তাদের নেই। এটি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে বছরে ৪ হাজার ৪৮ কোটি টাকার তহবিল তৈরি করা সম্ভব হবে।’
অ্যাডভোকেট একেএম নাসিম বলেন, ‘ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় কর্মীরা উপকৃত হবেন না; কেবল তহবিল ব্যবস্থাপকরা উপকৃত হবে। এখানে বড় একটি উদ্বেগের বিষয় হলো কর্মীরা এই তহবিলের বিষয়ে কতটা আগ্রহী। কারণ কিছু ক্ষেত্রে তাদের মজুরির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ এ তহবিলে জমা করার প্রয়োজন হতে পারে।’ কর্মীদের মধ্যে আস্থা তৈরির জন্য প্রাথমিকভাবে সরকার ও নিয়োগদাতাদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এ স্কিম চালু করা যেতে পারে বলে যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সেন্টারের (ইউটিসি) যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘যেখানে নিয়োগদাতারা নিজেরাই ব্যাংক খেলাপি হয়ে পড়ছেন, সেখানে কর্মীরা কীভাবে তাদের ওপর আস্থা রাখতে পারবেন? এখানে আস্থার একটি মৌলিক ইস্যু জড়িত।’
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব সাইদুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে চাকরির নিরাপত্তার অভাব রয়েছে।
সর্বজনীন পেনশন স্কিম এ সমস্যা মোকাবিলায় ভূমিকা রাখতে পারে। কর্মীদের মধ্যে এটি জনপ্রিয় করতে আমাদের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া উচিত।’
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সাকিউন নাহার বেগম বলেন, ‘আস্থার অভাবে ৭০ শতাংশেরও বেশি শ্রমিক এই স্কিমে অংশগ্রহণে আগ্রহী নয়। আমি মনে করি না এমন কোনো তথ্য-প্রমাণ রয়েছে, যা দিয়ে বলা যাবে যে এটি কোনো সরকারি হিসাবের ফলাফল। আমাদের এমন কিছু গ্যাপ চিহ্নিত করতে হবে যা ভবিষ্যতে সমাধান করা যায়।’
করোনা মহামারির পর তৈরি পোশাক কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষার জন্য ইইউ ফান্ডের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যথাযথ কাগজপত্র না থাকায় একাধিকবার চেষ্টা সত্ত্বেও ফান্ডটি অব্যবহৃতই রয়ে গেছে। সর্বজনীন পেনশন স্কিমের জন্যও যথাযথ কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে।
সর্বজনীন পেনশনে চারটি স্কিম রয়েছে। এগুলো হলো-প্রবাসীদের জন্য প্রবাস, বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের জন্য প্রগতি, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মীদের জন্য সুরক্ষা এবং অসচ্ছল ব্যক্তিদের জন্য সমতা। তৈরি পোশাক খাতের কর্মীরা প্রগতি স্কিমের আওতাভুক্ত।
মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
দেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতের ৯৯ শতাংশ কর্মীই সর্বজনীন পেনশন স্কিমে আগ্রহী নন। বিভিন্ন আর্থিক বাধ্যবাধকতাকে এই অনাগ্রহের প্রধান কারণ হিসেবে মনে করেন ৯০.৬ শতাংশ কর্মী। আর ৬.৭ শতাংশ কর্মী মনে করেন, এটি দীর্ঘমেয়াদে টেকসই কোনো পেনশন ব্যবস্থা নয়। এছাড়াও ২.৭ শতাংশ কর্মীর এ স্কিম সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। সম্প্রতি এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সোমবার রাজধানীর শ্রম ভবনে বিলস আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় এ জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম এ জরিপটি পরিচালনা করেন।
নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সংস্থা মন্ডিয়াল এফএনভির সহায়তায় বিলস এনশিওরিং ডিসেন্ট ওয়ার্ক ইন দ্য রেডিমেড গার্মেন্ট (আরএমজি) সেক্টর থ্রো সোশ্যাল ডায়ালগ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে বিলস ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে সর্বজনীন পেনশন স্কিম: বাংলাদেশে তৈরি পোশাককর্মীদের সামাজিক সুরক্ষার সম্ভাব্য সুযোগ অনুসন্ধান শীর্ষক একটি জরিপ পরিচালনা করে। জরিপে দেখা গেছে, ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে চালু হওয়া এ স্কিমে এখন পর্যন্ত মাত্র ১.৩ শতাংশ পোশাককর্মী অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
মূলত সর্বজনীন পেনশন স্কিমের বিষয়টি মূল্যায়নের জন্য এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। এছাড়াও জরিপে পোশাকখাতে বিভিন্ন সংকট, কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের সুবিধা, কাঠামো, প্রক্রিয়া ইত্যাদি বিষয়গুলোও উঠে এসেছে। জরিপ প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশের পোশাককর্মীদের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমের একটি মডেল প্রস্তাব করা হয়েছে এবং টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণে কার্যকর সুপারিশ করা হয়েছে।
গোলটেবিল আলোচনায় বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জমান রতন বলেন, ‘মূল বিষয় হলো আর্থিক সক্ষমতা। কারণ পোশাককর্মীরা বর্তমানে কষ্টে রয়েছেন এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবার সময় তাদের নেই। এটি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে বছরে ৪ হাজার ৪৮ কোটি টাকার তহবিল তৈরি করা সম্ভব হবে।’
অ্যাডভোকেট একেএম নাসিম বলেন, ‘ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় কর্মীরা উপকৃত হবেন না; কেবল তহবিল ব্যবস্থাপকরা উপকৃত হবে। এখানে বড় একটি উদ্বেগের বিষয় হলো কর্মীরা এই তহবিলের বিষয়ে কতটা আগ্রহী। কারণ কিছু ক্ষেত্রে তাদের মজুরির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ এ তহবিলে জমা করার প্রয়োজন হতে পারে।’ কর্মীদের মধ্যে আস্থা তৈরির জন্য প্রাথমিকভাবে সরকার ও নিয়োগদাতাদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এ স্কিম চালু করা যেতে পারে বলে যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সেন্টারের (ইউটিসি) যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘যেখানে নিয়োগদাতারা নিজেরাই ব্যাংক খেলাপি হয়ে পড়ছেন, সেখানে কর্মীরা কীভাবে তাদের ওপর আস্থা রাখতে পারবেন? এখানে আস্থার একটি মৌলিক ইস্যু জড়িত।’
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব সাইদুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে চাকরির নিরাপত্তার অভাব রয়েছে।
সর্বজনীন পেনশন স্কিম এ সমস্যা মোকাবিলায় ভূমিকা রাখতে পারে। কর্মীদের মধ্যে এটি জনপ্রিয় করতে আমাদের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া উচিত।’
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সাকিউন নাহার বেগম বলেন, ‘আস্থার অভাবে ৭০ শতাংশেরও বেশি শ্রমিক এই স্কিমে অংশগ্রহণে আগ্রহী নয়। আমি মনে করি না এমন কোনো তথ্য-প্রমাণ রয়েছে, যা দিয়ে বলা যাবে যে এটি কোনো সরকারি হিসাবের ফলাফল। আমাদের এমন কিছু গ্যাপ চিহ্নিত করতে হবে যা ভবিষ্যতে সমাধান করা যায়।’
করোনা মহামারির পর তৈরি পোশাক কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষার জন্য ইইউ ফান্ডের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যথাযথ কাগজপত্র না থাকায় একাধিকবার চেষ্টা সত্ত্বেও ফান্ডটি অব্যবহৃতই রয়ে গেছে। সর্বজনীন পেনশন স্কিমের জন্যও যথাযথ কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে।
সর্বজনীন পেনশনে চারটি স্কিম রয়েছে। এগুলো হলো-প্রবাসীদের জন্য প্রবাস, বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের জন্য প্রগতি, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মীদের জন্য সুরক্ষা এবং অসচ্ছল ব্যক্তিদের জন্য সমতা। তৈরি পোশাক খাতের কর্মীরা প্রগতি স্কিমের আওতাভুক্ত।