দেশের সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিতকল্পে বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবাহের হার ডাবল ডিজিটে উন্নীতকরণসহ একাধিক উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এর সভাপতি তাসকীন আহমেদ। এসব উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে, আর্থিক খাতে সুশাসন ও স্বচ্ছতা আনয়ন, ঋণের সুদ হার হ্রাস, স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ সম্প্রসারণে নীতি সহায়তার ধারাবাহিকতা, অবকাঠামো খাতে সমন্বিত উন্নয়ন, মূল্যস্ফীতি হ্রাসে বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ভ্যাট হ্রাস এবং শিল্পখাতের জন্য দীর্ঘমেয়াদী সহায়ক জ্বালানি মূল্য নীতিমালা প্রণয়ন ইত্যাদি।
শনিবার ডিসিসিআই আয়োজিত বেসরকারিখাতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিদ্যমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পর্যালোচনা (জুলাই-ডিসেম্বর, অর্থবছর ২০২৪-২৫) শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ আহ্বান জানান। ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) (সচিবের চলতি দায়িত্ব) মো: আব্দুর রহিম খান উক্ত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন।
ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ উক্ত সেমিনারে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়কালে অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতির উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। মূল প্রবন্ধে তিনি এ সময়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, মুদ্রানীতি, মূল্যস্ফীতি, বেসরকারি বিনিয়োগ, এফডিআই, কৃষি, শিল্প ও সেবা খাত, সিএমএসএমই, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, লজিস্টিক অবকাঠামো, দক্ষতা উন্নয়ন এবং আর্থিক খাতের উপর বিস্তারিত আলোকপাত করেন।
তিনি বলেন, ‘উদ্যোক্তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবাহের হার ডাবল ডিজিটে উন্নীতকরণ, মন্দ ঋণ কমাতে নজরদারি বাড়ানো, আর্থিক খাতে সুশাসন ও স্বচ্ছতা আনয়ন এবং ঋণের সুদ হার হ্রাস একান্ত অপরিহার্য।’ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, অবৈধ সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ভ্যাট হ্রাসের পাশাপাশি বিলাসবহুল পণ্যের উপর ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব করেন ঢাকা চেম্বার সভাপতি।
এছাড়াও স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ সম্প্রসারণে নীতি সহায়তার ধারাবাহিকতা, অবকাঠামো খাতের সমন্বিত উন্নয়ন এবং বাংলাদেশী পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধিতে আফ্রিকার বাজারে মনোনিবেশের উপর তিনি জোরারোপ করেন। এসএমইখাতের উন্নয়নকল্পে ঋণ প্রাপ্তিতে বিদ্যমান নীতিমালার সহজীকরণ, স্বল্পসুদে অর্থায়নের লক্ষ্যে বিকল্প অর্থায়ন ব্যবস্থার প্রবর্তন ও ডিজিটাল ফাইন্যান্সিং ব্যবস্থার সম্প্রসারণ অপরিহার্য বলে মত প্রকাশ করেন তাসকীন আহমেদ। সেই সাথে জ্বালানি খাতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার পাশাপাশি নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং শিল্পখাত ও সাধারণ ভোক্তাদের জন্য সহনীয় জ্বালানি মূল্য নির্ধারণের উপর তিনি জোরারোপ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো: আব্দুর রহিম খান বলেন, ‘আমাদের ৫০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে মাত্র ৪০ বিলিয়ন ডলারের রাজস্ব আহরণ কোনভাবেই কাম্য নয়। অটোমেশন ও ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো’ সঠিকভাবে কার্যকর হওয়া প্রয়োজন। লজিস্টিক পলিসি ও বাণিজ্য সহায়তা সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারলে সামগ্রিক বাণিজ্য ব্যয় ১০-১৫ শতাংশ কমানো সম্ভব।’
হালকা প্রকৌশল শিল্পকে গেমচেঞ্জার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখাতের উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সহায়তার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গাজীপুরে একটি টেকনোলোজি সেন্টার’ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।’ রাজস্ব আহরণ বাড়ানো এবং রপ্তানি-নির্ভর বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষন করা না গেলে বিনিয়োগ ব্যবধান হ্রাস পাবে না বলে তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন।
এছাড়াও অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান ড. এম মাশরুর রিয়াজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ ইউনুস এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (গবেষণা) ড. সায়েরা ইউনুস অংশগ্রহণ করেন।
পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান ড. এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণে বিলম্ব ও অতিরিক্ত টাকা ছাপানোর কারণে বিগত দিনগুলোতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি পরিলক্ষিত হয়েছে। যদিও ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময় হতে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়ার কারণে ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।’
তিনি জানান, রিজার্ভ সংকটের কারণে কাঁচামালের আমদানি ও মেশিনারিজ আমদানিতে বিধি-নিষেধের ফলে আমাদের সাপ্লাইচেইনে স্বল্পতা দেখা দেয়, যার প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক অর্থনীতিতে এবং চলতি বছরের মধ্যে রিজার্ভ ২৫-২৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হলে শিল্পখাতে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি স্বল্পতা কেটে যাবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে তিনি বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন সহ সরকারের অন্যান্য সংস্থার সক্ষমতা, কার্যকর উদ্যোগ ও বাস্তবায়ন জরুরী বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। রিজার্ভ বাড়াতে তিনি শিল্পখাতে নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ এবং শিল্প-কারখানায় অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণের উপর জোরারোপ করেন, যার মাধ্যমে আমাদের রপ্তানি ৫-৭ বিলিয়ন বৃদ্ধি পাবে এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ বলেন, ‘বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং আগামী অর্থবছরে গতানুগতিক বাজেট প্রণয়ন করা হলে বিদ্যমান সংকট সমাধান করা সম্ভব নয়। বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ বেশি হলে এবং সরকারের ঋণ গ্রহণের প্রবণতা বাড়লে বেসরকারিখাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ হবে না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে বাজেট, মুদ্রানীতি ও বাজার ব্যবস্থার সমন্বয় একান্ত জরুরী।’ রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধিতে বিদ্যমান ভ্যাট ব্যবস্থার অটোমেশনের কোন বিকল্প নেই বলে তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন।
বিআইডিএস-এর গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, ‘এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিল্পখাতে আমাদের কমপ্লায়েন্স বাড়ানোর পাশাপাশি গবেষণার ভিত্তিতে সরকারি-বেসরকারিখাতের মধ্যকার সমন্বয়ও বাড়াতে হবে।’ এছাড়াও সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ ও জয়েন্ট ভেঞ্চারের উপর জোরারোপ করা উচিত বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমাদের ঔষধ এবং চামড়াখাতের উপর আরো অধিক হারে গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (গবেষণা) ড. সায়েরা ইউনুস বলেন, ‘বৈশ্বিক বাজারে অস্থিরতার কারণে আমাদের পণ্য আমদানিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে এবং সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা নীতি হার সমন্বয়ের মাধ্যমে সেটা মোকাবেলার চেষ্টা করেছে।
তবে ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণে পণ্য আমাদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি কাঙ্খিত মাত্রায় হ্রাস পায়নি।’ তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘২০২৬ সালে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশ এর নীচে নেমে আসবে এবং আগামী বছর বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবাহ ডাবল ডিজিটে উন্নীত হবে।’
অনুষ্ঠানের মুক্ত আলোচনায় ইআরডি’র অতিরিক্ত সচিব এএইচএম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘বাংলাদেশ এলডিস উত্তরণের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। পরিকল্পনা কমিশনের সচিবের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট খাতের সমন্বয়ের মাধ্যমে ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সকলের মতামতের ভিত্তিতে পজিশন পেপার তৈরির পর সরকার এ ব্যাপারে চুড়ান্ত সিদ্বান্ত গ্রহণ করবে। তবে, এলডিসি উত্তরণ আমাদের উপর কি ধরনের প্রভাব পড়বে তা নির্ধারণ করে সরকারি-বেসরকারিখাতের সমন্বিত উদ্যোগ ও সক্ষমতা বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই।’
ঢাকা চেম্বারে সহ-সভাপতি মোঃ সালিম সোলায়মান এবং পরিচলনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দসহ সরকারি-বেসরকারিখাতের আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
দেশের সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিতকল্পে বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবাহের হার ডাবল ডিজিটে উন্নীতকরণসহ একাধিক উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এর সভাপতি তাসকীন আহমেদ। এসব উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে, আর্থিক খাতে সুশাসন ও স্বচ্ছতা আনয়ন, ঋণের সুদ হার হ্রাস, স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ সম্প্রসারণে নীতি সহায়তার ধারাবাহিকতা, অবকাঠামো খাতে সমন্বিত উন্নয়ন, মূল্যস্ফীতি হ্রাসে বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ভ্যাট হ্রাস এবং শিল্পখাতের জন্য দীর্ঘমেয়াদী সহায়ক জ্বালানি মূল্য নীতিমালা প্রণয়ন ইত্যাদি।
শনিবার ডিসিসিআই আয়োজিত বেসরকারিখাতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিদ্যমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পর্যালোচনা (জুলাই-ডিসেম্বর, অর্থবছর ২০২৪-২৫) শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ আহ্বান জানান। ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) (সচিবের চলতি দায়িত্ব) মো: আব্দুর রহিম খান উক্ত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন।
ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ উক্ত সেমিনারে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়কালে অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতির উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। মূল প্রবন্ধে তিনি এ সময়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, মুদ্রানীতি, মূল্যস্ফীতি, বেসরকারি বিনিয়োগ, এফডিআই, কৃষি, শিল্প ও সেবা খাত, সিএমএসএমই, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, লজিস্টিক অবকাঠামো, দক্ষতা উন্নয়ন এবং আর্থিক খাতের উপর বিস্তারিত আলোকপাত করেন।
তিনি বলেন, ‘উদ্যোক্তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবাহের হার ডাবল ডিজিটে উন্নীতকরণ, মন্দ ঋণ কমাতে নজরদারি বাড়ানো, আর্থিক খাতে সুশাসন ও স্বচ্ছতা আনয়ন এবং ঋণের সুদ হার হ্রাস একান্ত অপরিহার্য।’ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, অবৈধ সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ভ্যাট হ্রাসের পাশাপাশি বিলাসবহুল পণ্যের উপর ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব করেন ঢাকা চেম্বার সভাপতি।
এছাড়াও স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ সম্প্রসারণে নীতি সহায়তার ধারাবাহিকতা, অবকাঠামো খাতের সমন্বিত উন্নয়ন এবং বাংলাদেশী পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধিতে আফ্রিকার বাজারে মনোনিবেশের উপর তিনি জোরারোপ করেন। এসএমইখাতের উন্নয়নকল্পে ঋণ প্রাপ্তিতে বিদ্যমান নীতিমালার সহজীকরণ, স্বল্পসুদে অর্থায়নের লক্ষ্যে বিকল্প অর্থায়ন ব্যবস্থার প্রবর্তন ও ডিজিটাল ফাইন্যান্সিং ব্যবস্থার সম্প্রসারণ অপরিহার্য বলে মত প্রকাশ করেন তাসকীন আহমেদ। সেই সাথে জ্বালানি খাতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার পাশাপাশি নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং শিল্পখাত ও সাধারণ ভোক্তাদের জন্য সহনীয় জ্বালানি মূল্য নির্ধারণের উপর তিনি জোরারোপ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো: আব্দুর রহিম খান বলেন, ‘আমাদের ৫০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে মাত্র ৪০ বিলিয়ন ডলারের রাজস্ব আহরণ কোনভাবেই কাম্য নয়। অটোমেশন ও ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো’ সঠিকভাবে কার্যকর হওয়া প্রয়োজন। লজিস্টিক পলিসি ও বাণিজ্য সহায়তা সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে পারলে সামগ্রিক বাণিজ্য ব্যয় ১০-১৫ শতাংশ কমানো সম্ভব।’
হালকা প্রকৌশল শিল্পকে গেমচেঞ্জার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখাতের উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সহায়তার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গাজীপুরে একটি টেকনোলোজি সেন্টার’ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।’ রাজস্ব আহরণ বাড়ানো এবং রপ্তানি-নির্ভর বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষন করা না গেলে বিনিয়োগ ব্যবধান হ্রাস পাবে না বলে তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন।
এছাড়াও অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচনায় পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান ড. এম মাশরুর রিয়াজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ ইউনুস এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (গবেষণা) ড. সায়েরা ইউনুস অংশগ্রহণ করেন।
পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান ড. এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণে বিলম্ব ও অতিরিক্ত টাকা ছাপানোর কারণে বিগত দিনগুলোতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি পরিলক্ষিত হয়েছে। যদিও ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময় হতে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়ার কারণে ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।’
তিনি জানান, রিজার্ভ সংকটের কারণে কাঁচামালের আমদানি ও মেশিনারিজ আমদানিতে বিধি-নিষেধের ফলে আমাদের সাপ্লাইচেইনে স্বল্পতা দেখা দেয়, যার প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক অর্থনীতিতে এবং চলতি বছরের মধ্যে রিজার্ভ ২৫-২৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হলে শিল্পখাতে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি স্বল্পতা কেটে যাবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে তিনি বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন সহ সরকারের অন্যান্য সংস্থার সক্ষমতা, কার্যকর উদ্যোগ ও বাস্তবায়ন জরুরী বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। রিজার্ভ বাড়াতে তিনি শিল্পখাতে নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ এবং শিল্প-কারখানায় অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণের উপর জোরারোপ করেন, যার মাধ্যমে আমাদের রপ্তানি ৫-৭ বিলিয়ন বৃদ্ধি পাবে এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ বলেন, ‘বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং আগামী অর্থবছরে গতানুগতিক বাজেট প্রণয়ন করা হলে বিদ্যমান সংকট সমাধান করা সম্ভব নয়। বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ বেশি হলে এবং সরকারের ঋণ গ্রহণের প্রবণতা বাড়লে বেসরকারিখাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ হবে না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে বাজেট, মুদ্রানীতি ও বাজার ব্যবস্থার সমন্বয় একান্ত জরুরী।’ রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধিতে বিদ্যমান ভ্যাট ব্যবস্থার অটোমেশনের কোন বিকল্প নেই বলে তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন।
বিআইডিএস-এর গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, ‘এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিল্পখাতে আমাদের কমপ্লায়েন্স বাড়ানোর পাশাপাশি গবেষণার ভিত্তিতে সরকারি-বেসরকারিখাতের মধ্যকার সমন্বয়ও বাড়াতে হবে।’ এছাড়াও সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ ও জয়েন্ট ভেঞ্চারের উপর জোরারোপ করা উচিত বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমাদের ঔষধ এবং চামড়াখাতের উপর আরো অধিক হারে গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (গবেষণা) ড. সায়েরা ইউনুস বলেন, ‘বৈশ্বিক বাজারে অস্থিরতার কারণে আমাদের পণ্য আমদানিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে এবং সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা নীতি হার সমন্বয়ের মাধ্যমে সেটা মোকাবেলার চেষ্টা করেছে।
তবে ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণে পণ্য আমাদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি কাঙ্খিত মাত্রায় হ্রাস পায়নি।’ তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘২০২৬ সালে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশ এর নীচে নেমে আসবে এবং আগামী বছর বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবাহ ডাবল ডিজিটে উন্নীত হবে।’
অনুষ্ঠানের মুক্ত আলোচনায় ইআরডি’র অতিরিক্ত সচিব এএইচএম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘বাংলাদেশ এলডিস উত্তরণের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। পরিকল্পনা কমিশনের সচিবের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট খাতের সমন্বয়ের মাধ্যমে ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সকলের মতামতের ভিত্তিতে পজিশন পেপার তৈরির পর সরকার এ ব্যাপারে চুড়ান্ত সিদ্বান্ত গ্রহণ করবে। তবে, এলডিসি উত্তরণ আমাদের উপর কি ধরনের প্রভাব পড়বে তা নির্ধারণ করে সরকারি-বেসরকারিখাতের সমন্বিত উদ্যোগ ও সক্ষমতা বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই।’
ঢাকা চেম্বারে সহ-সভাপতি মোঃ সালিম সোলায়মান এবং পরিচলনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দসহ সরকারি-বেসরকারিখাতের আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।