alt

অর্থ-বাণিজ্য

বিএসইসির নেতৃত্বের ওপর আস্থা নেই বেশির ভাগ বিনিয়োগকারীর: জরিপ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : সোমবার, ০৩ মার্চ ২০২৫

তারল্যসংকট, কারসাজি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার হস্তক্ষেপ শেয়ারবাজারে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এ কারণে গত বছরজুড়ে শেয়ারবাজারের কার্যক্রম ছিল খুবই দুর্বল। চলতি বছরও তারল্যসংকট ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা শেয়ারবাজারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সম্প্রতি এক জরিপে অংশ নিয়ে শেয়ারবাজার সম্পর্কে এমন মতামত বা ধারণা তুলে ধরেছেন বাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি আস্থা নেই বাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বেশির ভাগের। জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪৯ শতাংশ বলেছেন, ‘বর্তমান কমিশনের নেতৃত্বের প্রতি তাদের কোনো আস্থা নেই। সাড়ে ৩৬ শতাংশ বলেছেন, তাদের কিছুটা আস্থা আছে এই নেতৃত্বের প্রতি। মাত্র ১০ শতাংশ মতামতকারী বলেছেন, বর্তমান কমিশনের নেতৃত্বের প্রতি তারা আস্থাশীল।’

দেশের শেয়ারবাজারের শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউস লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজ ‘বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট সেন্টিমেন্ট সার্ভে-২০২৫’ নামে এই জরিপ করেছে। সম্প্রতি এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। তাতে শেয়ারবাজার নিয়ে এসব মতামত উঠে এসেছে।

গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত এই জরিপ করা হয়। জরিপে ১০১ জন তাঁদের মতামত দেন। জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন সেবা খাত, ব্যবসায়ী, বিনিয়োগ ব্যাংকার, বিদেশি বিনিয়োগকারী, শেয়ারবাজারে লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ট্রেডার বা লেনদেনকারী, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী, শিক্ষার্থী ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। প্রশ্নোত্তরের ভিত্তিতে এসব অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা তাঁদের মতামত তুলে ধরেন।

শেয়ারবাজারের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও আর্থিক খাত নিয়েও বিভিন্ন মতামত উঠে এসেছে। ২০১২ সাল থেকে প্রতিবছর এই ধারণা জরিপ পরিচালনা করে আসছে লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজ।

জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল চলতি বছর দেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী। জবাবে ৭৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছেন, এ বছর অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। ৫৯ শতাংশ উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ৫৬ শতাংশ ব্যাংক খাতের সংকটকে অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকার আর্থিক খাত সংস্কারে যেসব নীতি গ্রহণ করেছে, তাতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কতটা ফিরবে, এমন প্রশ্নের জবাবে সাড়ে ৬৩ শতাংশ মতামতকারী বলেছেন, এসব নীতি গ্রহণের ফলে কিছুটা আস্থা ফিরবে।

জরিপে জানতে চাওয়া হয়েছিল চলতি বছর কোন বিষয়টি শেয়ারবাজারে সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, জবাবে প্রায় ৩৩ শতাংশ মতামতকারী বলেছেন, সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি শেয়ারবাজারের ওপর সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নবগঠিত পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি যেসব সংস্কার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তার মধ্যে কোনটি শেয়ারবাজারে সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রায় ২৮ শতাংশ মতামতকারী জানিয়েছেন, কারসাজির দায়ে কারসাজিকারকদের যে জরিমানা করা হয়েছে, বাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব সবচেয়ে বেশি।

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স চলতি বছর শেষে পাঁচ থেকে ছয় হাজারের মধ্যেই থাকবে বলে মনে করেন বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী। জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রায় ৬১ শতাংশই এ ধারণা পোষণ করেন। জরিপে অংশ নেওয়া ৬৯ শতাংশ মতামত প্রদানকারী বলেছেন, চলতি বছর শেয়ারবাজারের প্রবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখবে ওষুধ খাতের কোম্পানিগুলো। এরপরের অবস্থানে থাকবে ব্যাংক, টেলিকম ও তথ্যপ্রযুক্তি খাত। জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৪২ শতাংশ মনে করেন শেয়ারবাজারে প্রবৃদ্ধিতে চলতি বছর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবদান থাকবে ব্যাংক খাতের। আর ৩৬ শতাংশ মনে করেন তৃতীয় সর্বোচ্চ অবদান থাকবে টেলিকম খাতের। আর ২৭ শতাংশ মনে করেন তথ্যপ্রযুক্তি খাত বাজারের প্রবৃদ্ধিতে ভালো অবদান রাখবে।

শেয়ারবাজারের বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী মনে করেন চলতি বছরও বাজারে দৈনিক গড় লেনদেন ৪০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকার মধ্যে থাকবে। জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৬৪ শতাংশই এই ধারণা পোষণ করেন। আর ১৫ শতাংশ মনে করেন লেনদেন ৬০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকার মধ্যে থাকবে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কেউই মনে করেন না এ বছর শেয়ারবাজারে দৈনিক গড় লেনদেন হাজার কোটি টাকার বেশি থাকবে।

এদিকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানে অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রোববার আগারগাঁওয়ে বিএসইসি কার্যালয়ে এ অভিযান চালানো হয়।

অভিযানকালে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম বিএসইসি থেকে আইপিও অনুমোদন সংক্রান্ত বিষয়ে কোম্পানির আবেদনের তালিকা, তাদের দাখিল করা প্রসপেক্টাস, নিরীক্ষা প্রতিবেদন ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য নথিপত্র এবং চূড়ান্ত অনুমোদন তালিকা যাচাই করে।

একইসঙ্গে দুদকের আরেকটি দল বিএসইসিতে বেক্সিমকোর সুকুক ও আইএফআইসি আমার বন্ড এর ব্যাপারে তথ্য ও নথিপত্র সংগ্রহ করতে যায়। এগুলো কারাগারে থাকা শেখ হাসিনার সাবেক বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

দুদকের জনসংযোগ দপ্তর জানায়, প্রাথমিক পর্যালোচনায় দেখা যায়- কোম্পানি কর্তৃক দাখিল করা বানোয়াট উপার্জন এবং সম্পদ বিবরণী ও উইন্ডো ড্রেসিংয়ের মাধ্যমে তৈরি করা ব্যালেন্স শিটের বিপরীতে আইপিও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে অনেক ক্ষেত্রে ডিএসইর সুপারিশ ও পর্যবেক্ষণ বিবেচনা করা হয়নি, যা ব্যাপক অনিয়মের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে।

এছাড়া প্রাইভেট প্লেসমেন্ট জালিয়াতি ও বাণিজ্য, অধিকমূল্যে শেয়ার প্রাইস নিয়ে মার্কেটে প্রবেশ ও অল্প সময়ে শেয়ার বিক্রি, প্রাইসের দ্রুত অবনমনের পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসি যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি বলে জানায় দুদক।

দুর্বল কোম্পানিগুলোকে অবৈধভাবে অনুমোদন দেওয়ায় শেয়ারবাজারে প্রবেশের অল্পদিনেই তাদেরকে নিম্ন কর্মক্ষমতা কোম্পানি হিসেবে জেড ক্যাটাগরিভুক্ত করা হয়েছে।

সংস্থাটি আরও জানায়, জালিয়াতির মাধ্যমে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ড কর্তৃক প্রস্তুত করা উইন্ডো ব্যালেন্স শিট ও বানোয়াট উপার্জন রিপোর্টের ভিত্তিতে আইপিও অনুমোদন করা হয়। এছাড়া ইস্যু ম্যানেজারের তৈরি করা অধিমূল্যায়িত কোম্পানি প্রোফাইলের পরিপ্রেক্ষিতে অনিয়মের আশ্রয়ে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন কর্তৃক আইপিওর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়।

গৃহিণী স্ত্রী ও মেয়েকে ব্যাংকের পরিচালক বসিয়ে দিচ্ছি, এটা চাই না: গভর্নর

বন্দর থেকে নির্ধারিত সময়ে পণ্য না নিলে তিনগুণ জরিমানা

ছবি

সরকারের কাছে ৭ হাজার কোটি টাকা চায় বিকেএমইএ

শেয়ারবাজারে বড় দরপতন, লেনদেন আরও তলানিতে

ফেব্রুয়ারিতে পণ্য রপ্তানি বেড়েছে পৌনে ৩ শতাংশ

শ্রমিকপক্ষের আপত্তি সত্ত্বেও শ্রম আইন সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত

ছবি

রাজধানীতে আন্তর্জাতিক ট্রেড ফেয়ার ফর উইমেন ৬-৮ মার্চ

ইউনিয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও হিসেবে হুমায়ুন কবির এর যোগদান

সূচক, লেনদেন দুটোই কমেছে শেয়ারবাজারে

চূড়ান্ত এডিপির আকার কমে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা

ছবি

তেল, ডাল, আটা-ময়দাসহ একগুচ্ছ পণ্যে ভ্যাট প্রত্যাহার

ছবি

পরপর ৭ মাস ২ বিলিয়নের বেশি রেমিট্যান্স

ফেব্রুয়ারিতে রেমিটেন্স বেড়ে ২৫৩ কোটি ডলার

সিলেটে লেবুর হালি ২০০ টাকা চড়া সবজি এবং মাংসের দাম

মার্চের প্রথম দিনেই হতাশায় বিনিয়োগকারীরা

স্বর্ণের দাম কমে নামলো দেড় লাখ টাকার নিচে

মহাসড়কের হোটেল-রেস্তোরাঁয় ইএফডি বাধ্যতামূলক

রমজানের শুরুতে বাড়তে শুরু করেছে ফলের দাম

গেমিং ইন্ডাস্ট্রি’র সম্ভাবনা কাজে লাগাতে টেনসেন্ট ও বিআইপিএফ এর যৌথ উদ্যোগ

পাচার করা অর্থ ফেরাতে ‘আন্তর্জাতিক কর বিশেষজ্ঞ’ চায় এনবিআর

ইসলামী ব্যাংক থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার দাবি

১২ মার্চ ৩ হাজার কোটি টাকার সুকুক বন্ড ছাড়ছে সরকার

সাইফুর রহমানের দেখানো পথেই আগামীদিনে অর্থনৈতিক সংস্কার হবে: আমীর খসরু

ব্যাংকে তারল্য বেড়েছে ৫১ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা

মুরগি ও ডিমে সিন্ডিকেট করে ৬ মাসে অসাধু ব্যবসায়ীদের পকেটে ৯৬০ কোটি

ছবি

বেক্সিমকোর শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধে ৫২৫ কোটি টাকা ঋণ দেবে সরকার

ছবি

নগদের প্রশাসক বদিউজ্জামান দিদারের পদত্যাগ, নতুন প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পেলেন মোতাছিম বিল্লাহ

বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৪টি কারখানা বন্ধ, শ্রমিক ছাঁটাই

ছবি

বেক্সিমকোর শ্রমিকদের পাওনা শোধ শুরু ৯ মার্চ, সরকারের খরচ ৫২৫ কোটি টাকা: শ্রম উপদেষ্টা

ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে ৩ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা

বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারী কমলেও বাড়ছে দেশি বিনিয়োগকারী

চাল উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশ তৃতীয়

ছবি

দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাংক লুটের ঘটনা ঘটেছে: গভর্নর

অর্থবছরের ৬ মাসে কমেছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি

ছবি

ভারতীয় সুতার কারণে ক্ষতির মুখে দেশীয় টেক্সটাইল মিলস: বিটিএমএ

রোজার মাসে ব্যাংকের লেনদেন সময়সূচিতে পরিবর্তন

tab

অর্থ-বাণিজ্য

বিএসইসির নেতৃত্বের ওপর আস্থা নেই বেশির ভাগ বিনিয়োগকারীর: জরিপ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

সোমবার, ০৩ মার্চ ২০২৫

তারল্যসংকট, কারসাজি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার হস্তক্ষেপ শেয়ারবাজারে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এ কারণে গত বছরজুড়ে শেয়ারবাজারের কার্যক্রম ছিল খুবই দুর্বল। চলতি বছরও তারল্যসংকট ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা শেয়ারবাজারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সম্প্রতি এক জরিপে অংশ নিয়ে শেয়ারবাজার সম্পর্কে এমন মতামত বা ধারণা তুলে ধরেছেন বাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি আস্থা নেই বাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বেশির ভাগের। জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে সর্বোচ্চ সাড়ে ৪৯ শতাংশ বলেছেন, ‘বর্তমান কমিশনের নেতৃত্বের প্রতি তাদের কোনো আস্থা নেই। সাড়ে ৩৬ শতাংশ বলেছেন, তাদের কিছুটা আস্থা আছে এই নেতৃত্বের প্রতি। মাত্র ১০ শতাংশ মতামতকারী বলেছেন, বর্তমান কমিশনের নেতৃত্বের প্রতি তারা আস্থাশীল।’

দেশের শেয়ারবাজারের শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউস লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজ ‘বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট সেন্টিমেন্ট সার্ভে-২০২৫’ নামে এই জরিপ করেছে। সম্প্রতি এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। তাতে শেয়ারবাজার নিয়ে এসব মতামত উঠে এসেছে।

গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত এই জরিপ করা হয়। জরিপে ১০১ জন তাঁদের মতামত দেন। জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন সেবা খাত, ব্যবসায়ী, বিনিয়োগ ব্যাংকার, বিদেশি বিনিয়োগকারী, শেয়ারবাজারে লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ট্রেডার বা লেনদেনকারী, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী, শিক্ষার্থী ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। প্রশ্নোত্তরের ভিত্তিতে এসব অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা তাঁদের মতামত তুলে ধরেন।

শেয়ারবাজারের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও আর্থিক খাত নিয়েও বিভিন্ন মতামত উঠে এসেছে। ২০১২ সাল থেকে প্রতিবছর এই ধারণা জরিপ পরিচালনা করে আসছে লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজ।

জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল চলতি বছর দেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী। জবাবে ৭৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছেন, এ বছর অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। ৫৯ শতাংশ উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ৫৬ শতাংশ ব্যাংক খাতের সংকটকে অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকার আর্থিক খাত সংস্কারে যেসব নীতি গ্রহণ করেছে, তাতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কতটা ফিরবে, এমন প্রশ্নের জবাবে সাড়ে ৬৩ শতাংশ মতামতকারী বলেছেন, এসব নীতি গ্রহণের ফলে কিছুটা আস্থা ফিরবে।

জরিপে জানতে চাওয়া হয়েছিল চলতি বছর কোন বিষয়টি শেয়ারবাজারে সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে, জবাবে প্রায় ৩৩ শতাংশ মতামতকারী বলেছেন, সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি শেয়ারবাজারের ওপর সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নবগঠিত পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি যেসব সংস্কার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তার মধ্যে কোনটি শেয়ারবাজারে সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রায় ২৮ শতাংশ মতামতকারী জানিয়েছেন, কারসাজির দায়ে কারসাজিকারকদের যে জরিমানা করা হয়েছে, বাজারে তার ইতিবাচক প্রভাব সবচেয়ে বেশি।

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স চলতি বছর শেষে পাঁচ থেকে ছয় হাজারের মধ্যেই থাকবে বলে মনে করেন বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী। জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রায় ৬১ শতাংশই এ ধারণা পোষণ করেন। জরিপে অংশ নেওয়া ৬৯ শতাংশ মতামত প্রদানকারী বলেছেন, চলতি বছর শেয়ারবাজারের প্রবৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখবে ওষুধ খাতের কোম্পানিগুলো। এরপরের অবস্থানে থাকবে ব্যাংক, টেলিকম ও তথ্যপ্রযুক্তি খাত। জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৪২ শতাংশ মনে করেন শেয়ারবাজারে প্রবৃদ্ধিতে চলতি বছর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবদান থাকবে ব্যাংক খাতের। আর ৩৬ শতাংশ মনে করেন তৃতীয় সর্বোচ্চ অবদান থাকবে টেলিকম খাতের। আর ২৭ শতাংশ মনে করেন তথ্যপ্রযুক্তি খাত বাজারের প্রবৃদ্ধিতে ভালো অবদান রাখবে।

শেয়ারবাজারের বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী মনে করেন চলতি বছরও বাজারে দৈনিক গড় লেনদেন ৪০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকার মধ্যে থাকবে। জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৬৪ শতাংশই এই ধারণা পোষণ করেন। আর ১৫ শতাংশ মনে করেন লেনদেন ৬০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকার মধ্যে থাকবে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কেউই মনে করেন না এ বছর শেয়ারবাজারে দৈনিক গড় লেনদেন হাজার কোটি টাকার বেশি থাকবে।

এদিকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানে অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রোববার আগারগাঁওয়ে বিএসইসি কার্যালয়ে এ অভিযান চালানো হয়।

অভিযানকালে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম বিএসইসি থেকে আইপিও অনুমোদন সংক্রান্ত বিষয়ে কোম্পানির আবেদনের তালিকা, তাদের দাখিল করা প্রসপেক্টাস, নিরীক্ষা প্রতিবেদন ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য নথিপত্র এবং চূড়ান্ত অনুমোদন তালিকা যাচাই করে।

একইসঙ্গে দুদকের আরেকটি দল বিএসইসিতে বেক্সিমকোর সুকুক ও আইএফআইসি আমার বন্ড এর ব্যাপারে তথ্য ও নথিপত্র সংগ্রহ করতে যায়। এগুলো কারাগারে থাকা শেখ হাসিনার সাবেক বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

দুদকের জনসংযোগ দপ্তর জানায়, প্রাথমিক পর্যালোচনায় দেখা যায়- কোম্পানি কর্তৃক দাখিল করা বানোয়াট উপার্জন এবং সম্পদ বিবরণী ও উইন্ডো ড্রেসিংয়ের মাধ্যমে তৈরি করা ব্যালেন্স শিটের বিপরীতে আইপিও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে অনেক ক্ষেত্রে ডিএসইর সুপারিশ ও পর্যবেক্ষণ বিবেচনা করা হয়নি, যা ব্যাপক অনিয়মের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে।

এছাড়া প্রাইভেট প্লেসমেন্ট জালিয়াতি ও বাণিজ্য, অধিকমূল্যে শেয়ার প্রাইস নিয়ে মার্কেটে প্রবেশ ও অল্প সময়ে শেয়ার বিক্রি, প্রাইসের দ্রুত অবনমনের পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসি যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি বলে জানায় দুদক।

দুর্বল কোম্পানিগুলোকে অবৈধভাবে অনুমোদন দেওয়ায় শেয়ারবাজারে প্রবেশের অল্পদিনেই তাদেরকে নিম্ন কর্মক্ষমতা কোম্পানি হিসেবে জেড ক্যাটাগরিভুক্ত করা হয়েছে।

সংস্থাটি আরও জানায়, জালিয়াতির মাধ্যমে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ড কর্তৃক প্রস্তুত করা উইন্ডো ব্যালেন্স শিট ও বানোয়াট উপার্জন রিপোর্টের ভিত্তিতে আইপিও অনুমোদন করা হয়। এছাড়া ইস্যু ম্যানেজারের তৈরি করা অধিমূল্যায়িত কোম্পানি প্রোফাইলের পরিপ্রেক্ষিতে অনিয়মের আশ্রয়ে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন কর্তৃক আইপিওর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়।

back to top