বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের প্রধান উৎস রপ্তানি আয়ে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের অষ্টম মাস ফেব্রুয়ারিতে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৯৭ কোটি ৩১ লাখ (৩.৯৭ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক পাঁচ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। গত মঙ্গলবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
অর্থ বছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে ৩৮০ কোটি ২৮ লাখ (৩.৮০ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছিলেন বিভিন্ন খাতের রপ্তানিকারকরা। এর পর টানা চার মাস (অক্টোবর থেকে জানুয়ারি) ৪০০ কোটি (৪ বিলিয়ন) ডলারের বেশি রপ্তানি আয় দেশে আসে। সবশেষ ফেব্রুয়ারিতে তা ৪ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। তবে গত বছরের ফেব্রুয়ারির চেয়ে বেড়েছে ২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৮৬ কোটি ৬১ লাখ (৩.৮৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ।
সব মিলিয়ে চলতি অর্থ বছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) মোট ৩ হাজার ২৯৪ কোটি ২৬ লাখ (৩২.৯৪ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন বিভিন্ন খাতের রপ্তানিকারকরা। যা গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ২ হাজার ৯৮০ কোটি ৫০ লাখ (২৯.৫০ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়েছিল। অর্থ বছরের সাত মাস শেষে অর্থাৎ জুলাই-জানুয়ারি সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ৪৪৩ কোটি ৬০ লাখ (৪.৪৩ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেন রপ্তানিকারকরা। যা ছিল গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ বেশি। গত বছরের শেষ এবং চলতি অর্থ বছরের ষষ্ঠ মাস ডিসেম্বরে ৪৬২ কোটি ৭৫ লাখ (৪.৬২ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিলেন বিভিন্ন খাতের রপ্তানিকারকরা। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৭ দশমিক ৭২ শতাংশ।
নভেম্বর মাসে রপ্তানির অঙ্ক ছিল ৪১১ কোটি ৯৭ লাখ (৪.১২ বিলিয়ন) ডলার; আগের বছরের নভেম্বরের চেয়ে বেড়েছিল ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ। অক্টোবরে আয় হয়েছিল ৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২০ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে আয় হয়েছিল ৩ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার; বেড়েছিল ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আগস্ট ও জুলাইয়ে আয়ের অঙ্ক ছিল যথাক্রমে ৪ দশমিক শূন্য তিন ও ৩ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫ দশমিক ৬১ ও ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে যে খাত থেকে—সেই পোশাক শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষে কারখানা বন্ধসহ নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও অনিশ্চয়তার মধ্যেও রপ্তানি আয়ে ঊর্ধ্বমূখী গতি দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে এসে সেই গতিতে ছেদ পড়েছে। আগামী মাসগুলোতে কেমন আয় হবে—তা নিয়ে চিন্তায় আছেন রপ্তানিকারকরা।
রপ্তানিকারকরা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করছিলেন, ইপিবি রপ্তানি আয়ের ফোলানো-ফাঁপানো তথ্য দিচ্ছে। গত বছরের জুলাই মাসে রপ্তানি আয়ের হিসাবে বড় ধরনের গরমিল ধরা পড়ার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে ইপিবি। এর পর থেকে রপ্তানি আয়ের সংশোধিত বা প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করছে ইপিবি। গরমিল ধরা পরার পর গত বছরের ৯ অক্টোবর চলতি অর্থ বছরের তিন মাসের (প্রথম প্রান্তিক, জুলাই-সেপ্টেম্বর) তথ্য একসঙ্গে প্রকাশ করেছিল ইপিবি।
৪ ডিসেম্বর নভেম্বর মাসের তথ্য প্রকাশ করা হয়। ২ জানুয়ারি প্রকাশ করা হয় ডিসেম্বর মাসের তথ্য। ৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা হয় জানুয়ারি মাসের তথ্য। ৪ মার্চ (মঙ্গলবার) প্রকাশ করা হয়েছে ফেব্রুয়ারি মাসের তথ্য। দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত হচ্ছে তৈরি পোশাক। মোট আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে এই খাত থেকে।
ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের ফেব্রুয়ারির চেয়ে ১ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ৩ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার। আগের মাস জানুয়ারিতে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ৩ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি।
২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে মোট পণ্য রপ্তানির প্রায় ৮১ দশমিক ৩৪ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। এই আট মাসে ২৬ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থ বছরের একই সময়ে ছিল ২৪ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার। হিসাব বলছে, জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ। সাত মাসে অর্থাৎ জুলাই-জানুয়ারি সময়ে বেড়েছিল ১২ শতাংশ।
জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১৪ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ১২ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার; কমেছে দশমিক ৪৪ শতাংশ।
ফেব্রুয়ারি মাসে তৈরি পোশাক ছাড়া অন্য খাতের মধ্যে কৃষি পণ্য রপ্তানি থেকে আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এই মাসে বিভিন্ন ধরনের কৃষি পণ্য রপ্তানি থেকে ৬ কোটি ৮৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার আয় হয়েছে। গত বছরের জানুয়ারিতে আয়ের অঙ্ক ছিল ৬ কোটি ৪১ লাখ ২০ হাজার ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ।
আট মাসের (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) হিসাবে কৃষি পণ্য থেকে আয় বেড়েছে ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে আয় বেড়েছে ১১ দশমিক ৬২ শতাংশ। আট মাসের হিসাবে বেড়েছে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে আয় কমেছে ১১ দশমিক ৩৯ শতাংশ; জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে কমেছে ৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে হোম টেক্সটাইল রপ্তানি থেকে আয় কমেছে দশমিক ২৩ শতাংশ; তবে আট মাসের হিসাবে বেড়েছে ৫ দশমিক ২৩ শতাংশ।
গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৪৪ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ, যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০২২-২৩) চেয়ে ৪ দশমিক ২২ শতাংশ কম। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে পণ্য রপ্তানি থেকে মোট ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্য ধরেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময় সংঘাতময় পরিস্থিতিতে পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি ব্যাহত হয়। ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। এর মধ্যে গাজীপুর ও ঢাকার সাভারে শ্রমিক অসন্তোষের বেশ কয়েক দিন অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ থাকে। উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়। শ্রমিক অসন্তোষের কারণে এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান এ খাতের কর্মকাণ্ড।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর অস্থিরতার মধ্যেও রপ্তানি আয় বাড়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক মাস আমাদের পোশাক রপ্তানির ভরা মৌসুম (পিক সিজন) গেছে। সে কারণে রপ্তানিও বেশ ভালো হয়েছিল। তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে রপ্তানি আয়ের তথ্যে। জুলাই-অগাস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আমাদের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এরপরও রপ্তানি আয় বাড়ায় আমরা খুশি।
তবে আমাদের অর্ডার কিন্তু কমছে। জানি না আগামী মাসগুলোতে কী হবে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিরতার মধ্য দিয়ে গেছে। আমাদের হিসাবে জুলাই মাসের মধ্যে এক সপ্তাহেই পোশাক শিল্পে ক্ষতি হয়েছে ১ বিলিয়ন ডলারের উপরে। আর ব্যাংক বন্ধ থাকায় তো রপ্তানির উপর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) এক হাজার ৮৪৭ কোটি (১৮.৪৭ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অবস্থানকারী প্রবাসীরা। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেশি।
শনিবার, ০৮ মার্চ ২০২৫
বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের প্রধান উৎস রপ্তানি আয়ে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের অষ্টম মাস ফেব্রুয়ারিতে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৯৭ কোটি ৩১ লাখ (৩.৯৭ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক পাঁচ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। গত মঙ্গলবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
অর্থ বছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে ৩৮০ কোটি ২৮ লাখ (৩.৮০ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছিলেন বিভিন্ন খাতের রপ্তানিকারকরা। এর পর টানা চার মাস (অক্টোবর থেকে জানুয়ারি) ৪০০ কোটি (৪ বিলিয়ন) ডলারের বেশি রপ্তানি আয় দেশে আসে। সবশেষ ফেব্রুয়ারিতে তা ৪ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। তবে গত বছরের ফেব্রুয়ারির চেয়ে বেড়েছে ২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৮৬ কোটি ৬১ লাখ (৩.৮৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ।
সব মিলিয়ে চলতি অর্থ বছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) মোট ৩ হাজার ২৯৪ কোটি ২৬ লাখ (৩২.৯৪ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন বিভিন্ন খাতের রপ্তানিকারকরা। যা গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে ২ হাজার ৯৮০ কোটি ৫০ লাখ (২৯.৫০ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়েছিল। অর্থ বছরের সাত মাস শেষে অর্থাৎ জুলাই-জানুয়ারি সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ৪৪৩ কোটি ৬০ লাখ (৪.৪৩ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেন রপ্তানিকারকরা। যা ছিল গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ বেশি। গত বছরের শেষ এবং চলতি অর্থ বছরের ষষ্ঠ মাস ডিসেম্বরে ৪৬২ কোটি ৭৫ লাখ (৪.৬২ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিলেন বিভিন্ন খাতের রপ্তানিকারকরা। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৭ দশমিক ৭২ শতাংশ।
নভেম্বর মাসে রপ্তানির অঙ্ক ছিল ৪১১ কোটি ৯৭ লাখ (৪.১২ বিলিয়ন) ডলার; আগের বছরের নভেম্বরের চেয়ে বেড়েছিল ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ। অক্টোবরে আয় হয়েছিল ৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২০ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে আয় হয়েছিল ৩ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার; বেড়েছিল ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আগস্ট ও জুলাইয়ে আয়ের অঙ্ক ছিল যথাক্রমে ৪ দশমিক শূন্য তিন ও ৩ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫ দশমিক ৬১ ও ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে যে খাত থেকে—সেই পোশাক শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষে কারখানা বন্ধসহ নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও অনিশ্চয়তার মধ্যেও রপ্তানি আয়ে ঊর্ধ্বমূখী গতি দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে এসে সেই গতিতে ছেদ পড়েছে। আগামী মাসগুলোতে কেমন আয় হবে—তা নিয়ে চিন্তায় আছেন রপ্তানিকারকরা।
রপ্তানিকারকরা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করছিলেন, ইপিবি রপ্তানি আয়ের ফোলানো-ফাঁপানো তথ্য দিচ্ছে। গত বছরের জুলাই মাসে রপ্তানি আয়ের হিসাবে বড় ধরনের গরমিল ধরা পড়ার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে ইপিবি। এর পর থেকে রপ্তানি আয়ের সংশোধিত বা প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করছে ইপিবি। গরমিল ধরা পরার পর গত বছরের ৯ অক্টোবর চলতি অর্থ বছরের তিন মাসের (প্রথম প্রান্তিক, জুলাই-সেপ্টেম্বর) তথ্য একসঙ্গে প্রকাশ করেছিল ইপিবি।
৪ ডিসেম্বর নভেম্বর মাসের তথ্য প্রকাশ করা হয়। ২ জানুয়ারি প্রকাশ করা হয় ডিসেম্বর মাসের তথ্য। ৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা হয় জানুয়ারি মাসের তথ্য। ৪ মার্চ (মঙ্গলবার) প্রকাশ করা হয়েছে ফেব্রুয়ারি মাসের তথ্য। দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত হচ্ছে তৈরি পোশাক। মোট আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে এই খাত থেকে।
ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের ফেব্রুয়ারির চেয়ে ১ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ৩ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার। আগের মাস জানুয়ারিতে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ৩ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি।
২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে মোট পণ্য রপ্তানির প্রায় ৮১ দশমিক ৩৪ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। এই আট মাসে ২৬ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থ বছরের একই সময়ে ছিল ২৪ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার। হিসাব বলছে, জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ। সাত মাসে অর্থাৎ জুলাই-জানুয়ারি সময়ে বেড়েছিল ১২ শতাংশ।
জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১৪ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ১২ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার; কমেছে দশমিক ৪৪ শতাংশ।
ফেব্রুয়ারি মাসে তৈরি পোশাক ছাড়া অন্য খাতের মধ্যে কৃষি পণ্য রপ্তানি থেকে আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এই মাসে বিভিন্ন ধরনের কৃষি পণ্য রপ্তানি থেকে ৬ কোটি ৮৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার আয় হয়েছে। গত বছরের জানুয়ারিতে আয়ের অঙ্ক ছিল ৬ কোটি ৪১ লাখ ২০ হাজার ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ।
আট মাসের (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) হিসাবে কৃষি পণ্য থেকে আয় বেড়েছে ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে আয় বেড়েছে ১১ দশমিক ৬২ শতাংশ। আট মাসের হিসাবে বেড়েছে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে আয় কমেছে ১১ দশমিক ৩৯ শতাংশ; জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে কমেছে ৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে হোম টেক্সটাইল রপ্তানি থেকে আয় কমেছে দশমিক ২৩ শতাংশ; তবে আট মাসের হিসাবে বেড়েছে ৫ দশমিক ২৩ শতাংশ।
গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৪৪ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ, যা ছিল আগের অর্থবছরের (২০২২-২৩) চেয়ে ৪ দশমিক ২২ শতাংশ কম। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে পণ্য রপ্তানি থেকে মোট ৫০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্য ধরেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময় সংঘাতময় পরিস্থিতিতে পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি ব্যাহত হয়। ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। এর মধ্যে গাজীপুর ও ঢাকার সাভারে শ্রমিক অসন্তোষের বেশ কয়েক দিন অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ থাকে। উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়। শ্রমিক অসন্তোষের কারণে এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান এ খাতের কর্মকাণ্ড।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর অস্থিরতার মধ্যেও রপ্তানি আয় বাড়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক মাস আমাদের পোশাক রপ্তানির ভরা মৌসুম (পিক সিজন) গেছে। সে কারণে রপ্তানিও বেশ ভালো হয়েছিল। তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে রপ্তানি আয়ের তথ্যে। জুলাই-অগাস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আমাদের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এরপরও রপ্তানি আয় বাড়ায় আমরা খুশি।
তবে আমাদের অর্ডার কিন্তু কমছে। জানি না আগামী মাসগুলোতে কী হবে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিরতার মধ্য দিয়ে গেছে। আমাদের হিসাবে জুলাই মাসের মধ্যে এক সপ্তাহেই পোশাক শিল্পে ক্ষতি হয়েছে ১ বিলিয়ন ডলারের উপরে। আর ব্যাংক বন্ধ থাকায় তো রপ্তানির উপর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) এক হাজার ৮৪৭ কোটি (১৮.৪৭ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অবস্থানকারী প্রবাসীরা। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেশি।