alt

অর্থ-বাণিজ্য

এক হাজার কোটি টাকা ব্যাংকঋণ নিলে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তি বাধ্যতামূলক

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫

ব্যাংক থেকে যেসব কোম্পানি এক হাজার কোটি টাকা বা এর বেশি ঋণ নেবে, সেসব কোম্পানির শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তি বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংককে এ ব্যাপারে সব ব্যাংকে নির্দেশনা প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে।

এ ছাড়া শেয়ারবাজারে নতুন কোম্পানি আসার ক্ষেত্রে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও অনুমোদনের প্রাথমিক ক্ষমতা স্টক এক্সচেঞ্জের হাতে ন্যস্ত করার সুপারিশ করেছে শেয়ারবাজার সংস্কারে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি গঠিত টাস্কফোর্স।সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের কাছে আইপিও সংক্রান্ত সুপারিশ জমা দিয়েছে টাস্কফোর্স। সেখানে এসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

টাস্কফোর্সের সুপারিশে বলা হয়েছে, স্থির মূল্য পদ্ধতিতে ৩০ কোটি টাকার কম মূলধনের কোনো কোম্পানিকে মূল বাজারে তালিকাভুক্ত না করা এবং বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ৫০ কোটি টাকার কম মূলধনের কোনো কোম্পানিকে মূল বাজারে তালিকাভুক্ত না করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি আইপিওতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫০ শতাংশ এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য বাকি ৫০ শতাংশ শেয়ার সংরক্ষিত রাখার প্রস্তাব করেছে টাস্কফোর্স। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য সংরক্ষিত ৫০ শতাংশের মধ্যে ৫ শতাংশ প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য এবং বাকি ৪৫ শতাংশ দেশে বসবাসকারী বিনিয়োগকারীদের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে।

টাস্কফোর্স সুপারিশ করেছে, শেয়ারবাজারে আইপিওর মাধ্যমে কোন কোম্পানি বাজারে আসবে এবং কোন কোম্পানি অনুমোদন পাবে না, এর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেবে স্টক এক্সচেঞ্জগুলো। স্টক এক্সচেঞ্জ যদি কোনো কোম্পানির আইপিও প্রস্তাব বাতিল করে দেয় তাহলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি সেই কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দিতে পারবে না। আইপিও সংক্রান্ত আইন সংশোধন করে এ বিধান যুক্ত করার সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স।

বিএসইসির চেয়ারম্যানের কাছে টাস্কফোর্সের সুপারিশসংবলিত প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন টাস্কফোর্সের সদস্য ও বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারের সিইও মাজেদুর রহমান ও মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। এ সময় টাস্কফোর্সের অন্য সদস্যদের পাশাপাশি বিএসইসির তিন কমিশনার এবং টাস্কফোর্সের ফোকাস গ্রুপের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

গত ৭ অক্টোবর শেয়ারবাজারের উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক মানের সুশাসন নিশ্চিত করতে পুঁজিবাজার সংস্কারের সুপারিশের জন্য পাঁচ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। টাস্কফোর্সের সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান, নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোংয়ের জ্যেষ্ঠ অংশীদার এ এফ এম নেসারউদ্দীন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিএসই বিভাগের অধ্যাপক মো. মোস্তফা আকবর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন।

বিএসইসি গঠিত পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের কার্যপরিধি ছিল ১৭টি। এর মধ্যে ছিল পুঁজিবাজারের আকার, তথা জিডিপি ও বাজার মূলধন অনুপাত কম হওয়ার প্রধান কারণগুলো চিহ্নিত করা এবং উন্নতির জন্য নীতি প্রণয়নের প্রস্তাব; দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে ব্যাংকঋণের বদলে পুঁজিবাজার থেকে অর্থায়নে সরকারের নীতি প্রণয়ন ও এ-সংক্রান্ত নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিএসইসির প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের সুপারিশ করা; বাজারের সুশাসনের উন্নতির জন্য বর্তমান পরিস্থিতি ও প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো বিশ্লেষণ করে সমাধানের সুপারিশ প্রণয়ন; বিএসইসির প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সুপারিশ; ডিএসই, সিএসই, সিডিবিএল, সিসিবিএলের তদারকি কার্যক্রম বিশ্বমানে উন্নীত করাসহ প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসন নিশ্চিতে সুপারিশ প্রণয়ন; প্রাইভেট প্লেসমেন্ট-সংক্রান্ত সিকিউরিটিজ নীতিমালা যুগোপযোগী করতে সুপারিশ; তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন, করপোরেট ঘোষণাসহ বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা ও বাজারের গভীরতা বৃদ্ধির সুপারিশ প্রণয়ন; বাজার মধ্যস্থতাকারীদের জন্য বিদ্যমান আইন ও বিধিবিধান যুগোপযোগী করতে সুপারিশ করা; বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও আস্থা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান; বাজারে কারসাজি, অনিয়মের বিচার ও জরিমানার সমতা আনতে সুনির্দিষ্ট পেনাল কোড এবং শাস্তির বিধিমালা প্রণয়ন করা; নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের জন্য একটি মানসম্মত পদ্ধতি বা নির্দেশিকা প্রণয়ন; তালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানি একীভূত, অধিগ্রহণ-সংক্রান্ত হাইকোর্টের অনুমোদনের আগে বিএসইসির অনাপত্তি গ্রহণ-সংক্রান্ত সুপারিশ করা ইত্যাদি।

এ নিয়ে টাস্কফোর্সের পক্ষ থেকে তিনটি বিষয়ে বিএসইসিতে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মিউচুয়াল ফান্ড-সংক্রান্ত সুপারিশ, মার্জিন রুলস বা শেয়ারের বিপরীতে দেওয়া ঋণসুবিধা-সংক্রান্ত বিধিবিধান পরিবর্তনের সুপারিশ। সর্বশেষ মঙ্গলবার জমা দেওয়া হয়েছে আইপিও সংক্রান্ত সুপারিশ।

আইপিও সংক্রান্ত সুপারিশে টাস্কফোর্স বলেছে, স্টক এক্সচেঞ্জ আইপিও সংক্রান্ত আবেদন পর্যালোচনার জন্য বিশেষায়িত পৃথক প্যানেল করবে। ওই প্যানেল আইপিও আবেদনকারী কোম্পানির খুঁটিনাটি পরীক্ষা করবে। প্রয়োজনে কোম্পানির কার্যালয় এবং কারখানা বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সরেজমিন পরিদর্শন করবে। এরপর ওই প্যানেলের মতামতের ভিত্তিতে স্টক এক্সচেঞ্জ যদি কোম্পানিটি তালিকাভুক্তযোগ্য বলে মত দেয়, তাহলে তা কমিশন অনুমোদনের জন্য বিবেচনা করবে, অন্যথায় নয়। তবে স্টক এক্সচেঞ্জ কোনো কোম্পানির আইপিও বিষয়ে ইতিবাচক মতামত দেওয়ার পরও কমিশনের বিবেচনায় কোম্পানিটি আইপিও অনুমোদনযোগ্য না হলে তা গ্রহণ না করার এখতিয়ার কমিশনের কাছে থাকবে। আবার স্টক এক্সচেঞ্জ নেতিবাচক মতামত দেওয়ার পর চাইলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি তা পর্যালোচনা বা রিভিউ করার সুযোগ পাবে।

টাস্কফোর্স আইপিও আবেদনের পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার জন্য সময়সীমাও নির্দিষ্ট করে দেওয়ার সুপারিশ করেছে। তাদের সুপারিশে বলা হয়, সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে আইপিওর আবেদন থেকে শুরু করে তালিকাভুক্তির পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হবে। এর মধ্যে স্থিরমূল্য বা ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে আইপিও অনুমোদনের জন্য সর্বোচ্চ সময় নেওয়া যাবে সাড়ে পাঁচ মাস। আর বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হবে ছয় থেকে সাড়ে ছয় মাসের মধ্যে। কোনো কোম্পানি আইপিও আবেদনে সত্য ও বাস্তব তথ্য দিচ্ছে কি না, তা যাচাইয়ের জন্য প্রথমত বিএসইসির নির্ধারিত আইপিও অডিটর প্যানেলের মাধ্যমে আর্থিক হিসাব নিরীক্ষার বাধ্যবাধকতা আরোপের সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স।

পুঁজিবাজারের সমস্যা-সমাধানের অ্যাকশন প্ল্যান দাখিলের নির্দেশ

ছবি

ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

ভোজ্যতেল আমদানিতে ৫ শতাংশ আগাম কর অব্যাহতি

ছবি

প্রচলিত প্রবৃদ্ধির মডেল পর্যালোচনা করা প্রয়োজন: হোসেন জিল্লুর রহমান

ছবি

মিষ্টি ব্যবসায়ীরা ভ্যাটের রিসিট দেন না, অভিযোগ এনবিআর চেয়ারম্যানের

ছবি

স্বর্ণের দামে ফের রেকর্ড, বেড়ে দাঁড়ালো ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকায়

ছবি

বাজেটে প্রথম অগ্রাধিকার ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ’, সুযোগ তৈরি হবে গ্রামীণ কর্মসংস্থানের

প্রতি তিন মাসে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিস্তারিত তথ্য জমা দিতে নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের

তৈরি পোশাকে করপোরেট কর অপরিবর্তিত চান ব্যবসায়ীরা

ছবি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ফিচারের প্রযুক্তিপণ্য প্রদর্শন করছে ওয়ালটন

ছবি

ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের তথ্য দিতে নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের

ছবি

পহেলা মে ঢাকায় শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ‘অটো সিরিজ অব এক্সিবিশন্স বাংলাদেশ’

ভারত থেকে ১০ হাজার মেট্রিক টন চাল নিয়ে জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে

প্রতিবন্ধীদের করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধি ও সঞ্চয়ে করমুক্ত সুবিধা দাবি

নির্দেশ অমান্য করেছে ৪৪ ব্যাংক, উপেক্ষিত স্বাস্থ্য-শিক্ষা, সিএসআরের ৫৪% ব্যয় ‘অন্যান্য’ খাতে

বিটিআরসি লাইসেন্সের জন্য স্টারলিংকের আবেদন

শুল্ক আরোপ: আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছে উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল

ছবি

বাজেটের আকার কমলেও এনবিআরের টার্গেট বাড়ছে ৩৮ হাজার কোটি টাকা

ছবি

বৈদেশিক মুদ্রার ‘মোট রিজার্ভ’ ২৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

শিল্পগ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের

ছবি

ভারত থেকে স্থলপথে সুতা আমদানি বন্ধ

কর্পোরেট কর হার ১২ শতাংশ করার প্রস্তাব বিজিএমইএ-বিকেএমইএ এর

ছবি

বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ২১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন

ছবি

স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় সুতা আমদানি বন্ধ করল এনবিআর

ছবি

শিল্প ও ক্যাপটিভ বিদ্যুতে গ্যাসের দাম বাড়লো ৩৩%

মোবাইলে আর্থিক সেবার গ্রাহক ২৪ কোটি ছাড়ালো

শেয়ারবাজারে ঢালাও দরপতন, কমেছে লেনদেন

ট্রাম্পের শুল্ক মোকাবিলায় বেসরকারি খাতকে যুক্ত করার আহ্বান ব্যবসায়ীদের

ছবি

শেখ পরিবারসহ ১১ শিল্পগোষ্ঠীর বিদেশে বিপুল সম্পদের খোঁজ

ছবি

বাংলাদেশে ইনফিনিক্স নোট ৫০ সিরিজ

ছবি

বাংলাদেশের বাজারে ক্যামন ৪০ ও ৪০ প্রো

ছবি

পাচারকৃত অর্থের বড় অংশ ছয় মাসের মধ্যেই ফেরত আনা হবে: গভর্নর

ছবি

ঈদের পর বাজার মূলধন হারালো ২ হাজার কোটি টাকা

ছবি

ঈদের ছুটির পর সচল ৯৯ শতাংশ পোশাক কারখানা

দেশের প্রায় ৭২ শতাংশ পরিবারে এখন স্মার্টফোন ব্যবহার করে: বিবিএসের জরিপ

ছবি

এফবিসিসিআই সহায়ক কমিটি বাতিলের দাবিতে আলটিমেটাম

tab

অর্থ-বাণিজ্য

এক হাজার কোটি টাকা ব্যাংকঋণ নিলে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তি বাধ্যতামূলক

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫

ব্যাংক থেকে যেসব কোম্পানি এক হাজার কোটি টাকা বা এর বেশি ঋণ নেবে, সেসব কোম্পানির শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তি বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংককে এ ব্যাপারে সব ব্যাংকে নির্দেশনা প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে।

এ ছাড়া শেয়ারবাজারে নতুন কোম্পানি আসার ক্ষেত্রে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও অনুমোদনের প্রাথমিক ক্ষমতা স্টক এক্সচেঞ্জের হাতে ন্যস্ত করার সুপারিশ করেছে শেয়ারবাজার সংস্কারে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি গঠিত টাস্কফোর্স।সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের কাছে আইপিও সংক্রান্ত সুপারিশ জমা দিয়েছে টাস্কফোর্স। সেখানে এসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

টাস্কফোর্সের সুপারিশে বলা হয়েছে, স্থির মূল্য পদ্ধতিতে ৩০ কোটি টাকার কম মূলধনের কোনো কোম্পানিকে মূল বাজারে তালিকাভুক্ত না করা এবং বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ৫০ কোটি টাকার কম মূলধনের কোনো কোম্পানিকে মূল বাজারে তালিকাভুক্ত না করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি আইপিওতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫০ শতাংশ এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য বাকি ৫০ শতাংশ শেয়ার সংরক্ষিত রাখার প্রস্তাব করেছে টাস্কফোর্স। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য সংরক্ষিত ৫০ শতাংশের মধ্যে ৫ শতাংশ প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য এবং বাকি ৪৫ শতাংশ দেশে বসবাসকারী বিনিয়োগকারীদের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে।

টাস্কফোর্স সুপারিশ করেছে, শেয়ারবাজারে আইপিওর মাধ্যমে কোন কোম্পানি বাজারে আসবে এবং কোন কোম্পানি অনুমোদন পাবে না, এর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেবে স্টক এক্সচেঞ্জগুলো। স্টক এক্সচেঞ্জ যদি কোনো কোম্পানির আইপিও প্রস্তাব বাতিল করে দেয় তাহলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি সেই কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দিতে পারবে না। আইপিও সংক্রান্ত আইন সংশোধন করে এ বিধান যুক্ত করার সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স।

বিএসইসির চেয়ারম্যানের কাছে টাস্কফোর্সের সুপারিশসংবলিত প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন টাস্কফোর্সের সদস্য ও বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারের সিইও মাজেদুর রহমান ও মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। এ সময় টাস্কফোর্সের অন্য সদস্যদের পাশাপাশি বিএসইসির তিন কমিশনার এবং টাস্কফোর্সের ফোকাস গ্রুপের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

গত ৭ অক্টোবর শেয়ারবাজারের উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক মানের সুশাসন নিশ্চিত করতে পুঁজিবাজার সংস্কারের সুপারিশের জন্য পাঁচ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। টাস্কফোর্সের সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান, নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোংয়ের জ্যেষ্ঠ অংশীদার এ এফ এম নেসারউদ্দীন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিএসই বিভাগের অধ্যাপক মো. মোস্তফা আকবর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন।

বিএসইসি গঠিত পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের কার্যপরিধি ছিল ১৭টি। এর মধ্যে ছিল পুঁজিবাজারের আকার, তথা জিডিপি ও বাজার মূলধন অনুপাত কম হওয়ার প্রধান কারণগুলো চিহ্নিত করা এবং উন্নতির জন্য নীতি প্রণয়নের প্রস্তাব; দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে ব্যাংকঋণের বদলে পুঁজিবাজার থেকে অর্থায়নে সরকারের নীতি প্রণয়ন ও এ-সংক্রান্ত নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিএসইসির প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের সুপারিশ করা; বাজারের সুশাসনের উন্নতির জন্য বর্তমান পরিস্থিতি ও প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো বিশ্লেষণ করে সমাধানের সুপারিশ প্রণয়ন; বিএসইসির প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সুপারিশ; ডিএসই, সিএসই, সিডিবিএল, সিসিবিএলের তদারকি কার্যক্রম বিশ্বমানে উন্নীত করাসহ প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসন নিশ্চিতে সুপারিশ প্রণয়ন; প্রাইভেট প্লেসমেন্ট-সংক্রান্ত সিকিউরিটিজ নীতিমালা যুগোপযোগী করতে সুপারিশ; তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন, করপোরেট ঘোষণাসহ বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা ও বাজারের গভীরতা বৃদ্ধির সুপারিশ প্রণয়ন; বাজার মধ্যস্থতাকারীদের জন্য বিদ্যমান আইন ও বিধিবিধান যুগোপযোগী করতে সুপারিশ করা; বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও আস্থা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান; বাজারে কারসাজি, অনিয়মের বিচার ও জরিমানার সমতা আনতে সুনির্দিষ্ট পেনাল কোড এবং শাস্তির বিধিমালা প্রণয়ন করা; নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের জন্য একটি মানসম্মত পদ্ধতি বা নির্দেশিকা প্রণয়ন; তালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানি একীভূত, অধিগ্রহণ-সংক্রান্ত হাইকোর্টের অনুমোদনের আগে বিএসইসির অনাপত্তি গ্রহণ-সংক্রান্ত সুপারিশ করা ইত্যাদি।

এ নিয়ে টাস্কফোর্সের পক্ষ থেকে তিনটি বিষয়ে বিএসইসিতে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মিউচুয়াল ফান্ড-সংক্রান্ত সুপারিশ, মার্জিন রুলস বা শেয়ারের বিপরীতে দেওয়া ঋণসুবিধা-সংক্রান্ত বিধিবিধান পরিবর্তনের সুপারিশ। সর্বশেষ মঙ্গলবার জমা দেওয়া হয়েছে আইপিও সংক্রান্ত সুপারিশ।

আইপিও সংক্রান্ত সুপারিশে টাস্কফোর্স বলেছে, স্টক এক্সচেঞ্জ আইপিও সংক্রান্ত আবেদন পর্যালোচনার জন্য বিশেষায়িত পৃথক প্যানেল করবে। ওই প্যানেল আইপিও আবেদনকারী কোম্পানির খুঁটিনাটি পরীক্ষা করবে। প্রয়োজনে কোম্পানির কার্যালয় এবং কারখানা বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সরেজমিন পরিদর্শন করবে। এরপর ওই প্যানেলের মতামতের ভিত্তিতে স্টক এক্সচেঞ্জ যদি কোম্পানিটি তালিকাভুক্তযোগ্য বলে মত দেয়, তাহলে তা কমিশন অনুমোদনের জন্য বিবেচনা করবে, অন্যথায় নয়। তবে স্টক এক্সচেঞ্জ কোনো কোম্পানির আইপিও বিষয়ে ইতিবাচক মতামত দেওয়ার পরও কমিশনের বিবেচনায় কোম্পানিটি আইপিও অনুমোদনযোগ্য না হলে তা গ্রহণ না করার এখতিয়ার কমিশনের কাছে থাকবে। আবার স্টক এক্সচেঞ্জ নেতিবাচক মতামত দেওয়ার পর চাইলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি তা পর্যালোচনা বা রিভিউ করার সুযোগ পাবে।

টাস্কফোর্স আইপিও আবেদনের পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার জন্য সময়সীমাও নির্দিষ্ট করে দেওয়ার সুপারিশ করেছে। তাদের সুপারিশে বলা হয়, সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে আইপিওর আবেদন থেকে শুরু করে তালিকাভুক্তির পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হবে। এর মধ্যে স্থিরমূল্য বা ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে আইপিও অনুমোদনের জন্য সর্বোচ্চ সময় নেওয়া যাবে সাড়ে পাঁচ মাস। আর বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হবে ছয় থেকে সাড়ে ছয় মাসের মধ্যে। কোনো কোম্পানি আইপিও আবেদনে সত্য ও বাস্তব তথ্য দিচ্ছে কি না, তা যাচাইয়ের জন্য প্রথমত বিএসইসির নির্ধারিত আইপিও অডিটর প্যানেলের মাধ্যমে আর্থিক হিসাব নিরীক্ষার বাধ্যবাধকতা আরোপের সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স।

back to top