শ্রমিকের বেতন-বোনাস পরিশোধ নিয়ে শুক্রবার দুই ধরনের পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। শিল্প পুলিশ বলেছে, শুক্রবার বেলা ৩টা পর্যন্ত তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ২ হাজার ৮৮৬ কারখানার মধ্যে ১০ শতাংশ ঈদের বোনাস ও ৫৯ শতাংশ মার্চ মাসের অর্ধেক বেতন দেয়নি। এসব কারখানার মধ্যে বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর সদস্য নয়, এমন কারখানা রয়েছে
পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে পাওনা বুঝে না পাওয়ায় রাজধানীর শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন গাজীপুরের টিএনজেড গ্রুপের পোশাকশ্রমিকেরা। শ্রমিকের বকেয়া পরিশোধে শুক্রবার গ্রুপের পরিচালক শরীফুল ইসলামকে থানা-পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়। তিনি পরে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের কাছে কারখানার যন্ত্রপাতি, আসবাব ও অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি করে শনিবার পাওনা পরিশোধ করার লিখিত প্রতিশ্রুতি দেন।
এদিকে ঈদের বাকি আর এক-দুই দিন। বেতন-ভাতা পরিশোধে সরকার নির্ধারিত সময়সীমা ইতিমধ্যে পার হয়েছে। তবে এখনো অনেক কারখানা উৎসব ভাতা বা বোনাস ও মার্চের অর্ধেক বেতন দেয়নি। যদিও বেতন-ভাতা পরিশোধের সুবিধার্থে শিল্পাঞ্চলে ব্যাংকের শাখা বিশেষ ব্যবস্থায় শনিবার খোলা ছিল। লেনদেন চলেছে তিন ঘণ্টা, ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত।
শ্রমিকের বেতন-বোনাস পরিশোধ নিয়ে শুক্রবার দুই ধরনের পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। শিল্প পুলিশ বলেছে, শুক্রবার বেলা ৩টা পর্যন্ত তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ২ হাজার ৮৮৬ কারখানার মধ্যে ১০ শতাংশ ঈদের বোনাস ও ৫৯ শতাংশ মার্চ মাসের অর্ধেক বেতন দেয়নি। এসব কারখানার মধ্যে বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর সদস্য নয়, এমন কারখানা রয়েছে। অবশ্য তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর দাবি, তাদের সচল ৯৭ শতাংশ কারখানা বোনাস ও ৯৩ শতাংশ বেতন দিয়েছে। আর নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ বলছে, দুটি কারখানা ছাড়া অন্যগুলোয় বেতন-ভাতা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।
এ বিষয়ে বিজিএমইএর প্রশাসক আনোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘টিএনজেড ও এসসেইন অ্যাপারেলস- এই দুই কারখানার বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। টিএনজেডের পরিচালক আজ শনিবার বিকেলের মধ্যে শ্রমিকের পাওনা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এসসেইন অ্যাপারেলসের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। এর বাইরে যেসব কারখানা বেতন বা বোনাস দেয়নি, তারা ছুটির আগেই দেবে।’
অন্যদিকে বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘দুটি কারখানায় বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যা আছে, সেগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে। ৯০ শতাংশ কারখানা ছুটি দিয়ে দিয়েছে। বাকিরা বেতন-ভাতা দিল শনিবার ছুটি দিয়ে দেবে।’
তৈরি পোশাকের বাইরে অন্য শিল্পকারখানাতেও শ্রমিকদের বেতন-বোনাস বাকি। সাভার-আশুলিয়া, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, কুমিল্লা ও সিলেটের বিভিন্ন খাতের ৬ হাজার ৮০৫ কারখানা তদারকি করে শিল্প পুলিশ বলেছে, শুক্রবার পর্যন্ত ২০ শতাংশ কারখানা বোনাস দেয়নি। এখনো মার্চের বেতন দেয়নি ৪৭ শতাংশ কারখানা।
এ বিষয়ে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহসভাপতি জলি তালুকদার বলেন, ‘সরকার আগে থেকে কঠোর হলে শ্রমিকের পাওনা নিয়ে সমস্যা কম হতো।’ শ্রমিকদের সঙ্গে অন্যায় করেও মালিকেরা পার পেয়ে যাচ্ছেন, এমন অভিযোগ করেন তিনি।
পাওনা বেতনসহ বোনাসের দাবিতে টিএনজেড গ্রুপের অ্যাপারেল প্লাস ইকো, টিঅ্যান্ডজেড অ্যাপারেলস ও অ্যাপারেল আর্ট কারখানার শ্রমিকেরা শনিবার ষষ্ঠ দিনের মতো রাজধানীর বিজয়নগরের শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। শ্রমিকদের আন্দোলনে সংহতি জানান গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় সেখানেই সংবাদ সম্মেলন করেন টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন টিএনজেড অ্যাপারেলসের শ্রমিক শহিদুল ইসলাম। তিনি ‘মালিকের গাড়ি বিক্রি করে শ্রমিকদের টাকা দেওয়া হয়েছে’ বলে দেওয়া বক্তব্যকে মিথ্যা অভিহিত করে বলেন, ‘টিএনজেড গ্রুপের একটি কারখানা (অ্যাপারেল প্লাস ইকো) শ্রমিকদের সামান্য টাকা দেওয়া হয়েছে। এভাবে শ্রমিকদের মধ্যে বিভেদ তৈরির চক্রান্ত চলছে।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, টিএনজেড অ্যাপারেলসে কর্মরত ২ হাজার ১০০ শ্রমিকের গত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের বেতন, ঈদ বোনাসসহ পাওনা প্রায় ৯ কোটি টাকা। অ্যাপারেল প্লাস ইকো কারখানার ৮২৬ শ্রমিকের জানুয়ারি-মার্চ মাসের বেতন, ঈদ বোনাসসহ অন্যান্য পাওনা ৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, যার মধ্যে শনিবার দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা। অ্যাপারেল আর্ট কারখানার ২৪০ শ্রমিকের ডিসেম্বর-মার্চ পর্যন্ত বেতন-বোনাসসহ অন্যান্য পাওনা ২ কোটি ৪ লাখ টাকা, যা এখনো পরিশোধ করা হয়নি।
এই বিষয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কারখানার মালিক থানায় আছেন। বেতন-ভাতা পরিশোধের চেষ্টা চলছে। মালিক টাকা না দিতে পারলে কারখানা ও যন্ত্রপাতি বিক্রি করে টাকা দেওয়া হবে। পাওনা মালিককেই দিতে হবে। সরকারের পক্ষে টাকা দেওয়ার সুযোগ নেই।’
শতভাগ কারখানায় বেতন-বোনাস পরিশোধ সম্পন্ন হবে, বলছে বিজিএমইএ: বিজিএমইএ বলছে, আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে দেশের পোশাক খাতের শ্রমিকদের বেতন ও উৎসব ভাতা অধিকাংশ কারখানায় পরিশোধ সম্পন্ন হয়েছে। এতে শ্রমিকদের মাঝে যেমন স্বস্তি ফিরে এসেছে পাশাপাশি উদ্যোক্তারাও চাপমুক্ত হয়েছেন। তবে এখনও যেসব কারখানায় বেতন-বোনাস দেওয়া বাকি রয়েছে তারাও শনিবারের মধ্যে (২৯ মার্চ) মধ্যে তা পরিশোধ করবেন। এতে করে শনিবারের মধ্যেই দেশের সব কারখানার শতভাগ পোশাক শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ সম্পন্ন হবে।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, ব্যাংক, শ্রমিক নেতাসহ সবার সহযোগিতায় এই প্রক্রিয়া নির্বিঘেœ সম্পন্ন হয়েছে।
বিজিএমইএর মহাসচিব মো. ফয়জুর রহমান জানিয়েছেন, ২৭ মার্চ পর্যন্ত ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পরিশোধ করেছে ৯৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ কারখানা। মার্চ মাসের ১৫ বা ৩০ দিনের বেতন পরিশোধ করেছে ৮৩ দশমিক ২০ শতাংশ কারখানা। ঈদ বোনাস পরিশোধ করেছে ৯৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ কারখানা। আর ফেব্রুয়ারি মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে ০ দশমিক ৪৭ শতাংশ কারখানায় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি আরও জানান, জরুরি শিপমেন্টের কারণে কিছু কারখানা ২৮ ও ২৯ মার্চ বেতন-ভাতা পরিশোধ করবে। বিজিএমইএ আশা করছে, ২৯ মার্চের মধ্যেই প্রায় ১০০ শতাংশ কারখানায় বেতন-বোনাস পরিশোধ সম্পন্ন হবে।
বিজিএমইএ বলছে, শুরু থেকেই বেতন-ভাতা পরিশোধ নিশ্চিত করতে ৪৪৫টি কারখানাকে ক্লোজ মনিটরিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে। তাদের হস্তক্ষেপে প্রায় ১০০টি সমস্যাগ্রস্ত কারখানার শ্রমিকদের পাওনা নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া, শ্রমিকদের সুবিধার্থে বিজিএমইএর অনুরোধে সরকার সরকারি ছুটির দিনেও ব্যাংকের শাখাগুলো খোলা রাখার নির্দেশ দেয়, যা উদ্যোক্তাদের বেতন পরিশোধে সহায়তা করেছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিজিএমইএর নির্দেশনা অনুযায়ী, ২৬ মার্চ থেকে ২৯ মার্চের মধ্যে ধাপে ধাপে শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হচ্ছে। যাতে মহাসড়কে যানজটের চাপ কমে। এ ছাড়াও, উত্তরবঙ্গগামী যাত্রীদের সুবিধার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে বিশেষ ট্রেন চালু করেছে এবং মহাসড়কগুলোতে বিআরটিসি বাসের বিশেষ সার্ভিস চালু করা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
শ্রমিকের বেতন-বোনাস পরিশোধ নিয়ে শুক্রবার দুই ধরনের পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। শিল্প পুলিশ বলেছে, শুক্রবার বেলা ৩টা পর্যন্ত তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ২ হাজার ৮৮৬ কারখানার মধ্যে ১০ শতাংশ ঈদের বোনাস ও ৫৯ শতাংশ মার্চ মাসের অর্ধেক বেতন দেয়নি। এসব কারখানার মধ্যে বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর সদস্য নয়, এমন কারখানা রয়েছে
শনিবার, ২৯ মার্চ ২০২৫
পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে পাওনা বুঝে না পাওয়ায় রাজধানীর শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন গাজীপুরের টিএনজেড গ্রুপের পোশাকশ্রমিকেরা। শ্রমিকের বকেয়া পরিশোধে শুক্রবার গ্রুপের পরিচালক শরীফুল ইসলামকে থানা-পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়। তিনি পরে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের কাছে কারখানার যন্ত্রপাতি, আসবাব ও অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি করে শনিবার পাওনা পরিশোধ করার লিখিত প্রতিশ্রুতি দেন।
এদিকে ঈদের বাকি আর এক-দুই দিন। বেতন-ভাতা পরিশোধে সরকার নির্ধারিত সময়সীমা ইতিমধ্যে পার হয়েছে। তবে এখনো অনেক কারখানা উৎসব ভাতা বা বোনাস ও মার্চের অর্ধেক বেতন দেয়নি। যদিও বেতন-ভাতা পরিশোধের সুবিধার্থে শিল্পাঞ্চলে ব্যাংকের শাখা বিশেষ ব্যবস্থায় শনিবার খোলা ছিল। লেনদেন চলেছে তিন ঘণ্টা, ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত।
শ্রমিকের বেতন-বোনাস পরিশোধ নিয়ে শুক্রবার দুই ধরনের পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। শিল্প পুলিশ বলেছে, শুক্রবার বেলা ৩টা পর্যন্ত তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ২ হাজার ৮৮৬ কারখানার মধ্যে ১০ শতাংশ ঈদের বোনাস ও ৫৯ শতাংশ মার্চ মাসের অর্ধেক বেতন দেয়নি। এসব কারখানার মধ্যে বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর সদস্য নয়, এমন কারখানা রয়েছে। অবশ্য তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর দাবি, তাদের সচল ৯৭ শতাংশ কারখানা বোনাস ও ৯৩ শতাংশ বেতন দিয়েছে। আর নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ বলছে, দুটি কারখানা ছাড়া অন্যগুলোয় বেতন-ভাতা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।
এ বিষয়ে বিজিএমইএর প্রশাসক আনোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘টিএনজেড ও এসসেইন অ্যাপারেলস- এই দুই কারখানার বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। টিএনজেডের পরিচালক আজ শনিবার বিকেলের মধ্যে শ্রমিকের পাওনা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এসসেইন অ্যাপারেলসের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। এর বাইরে যেসব কারখানা বেতন বা বোনাস দেয়নি, তারা ছুটির আগেই দেবে।’
অন্যদিকে বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘দুটি কারখানায় বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যা আছে, সেগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে। ৯০ শতাংশ কারখানা ছুটি দিয়ে দিয়েছে। বাকিরা বেতন-ভাতা দিল শনিবার ছুটি দিয়ে দেবে।’
তৈরি পোশাকের বাইরে অন্য শিল্পকারখানাতেও শ্রমিকদের বেতন-বোনাস বাকি। সাভার-আশুলিয়া, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, কুমিল্লা ও সিলেটের বিভিন্ন খাতের ৬ হাজার ৮০৫ কারখানা তদারকি করে শিল্প পুলিশ বলেছে, শুক্রবার পর্যন্ত ২০ শতাংশ কারখানা বোনাস দেয়নি। এখনো মার্চের বেতন দেয়নি ৪৭ শতাংশ কারখানা।
এ বিষয়ে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহসভাপতি জলি তালুকদার বলেন, ‘সরকার আগে থেকে কঠোর হলে শ্রমিকের পাওনা নিয়ে সমস্যা কম হতো।’ শ্রমিকদের সঙ্গে অন্যায় করেও মালিকেরা পার পেয়ে যাচ্ছেন, এমন অভিযোগ করেন তিনি।
পাওনা বেতনসহ বোনাসের দাবিতে টিএনজেড গ্রুপের অ্যাপারেল প্লাস ইকো, টিঅ্যান্ডজেড অ্যাপারেলস ও অ্যাপারেল আর্ট কারখানার শ্রমিকেরা শনিবার ষষ্ঠ দিনের মতো রাজধানীর বিজয়নগরের শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। শ্রমিকদের আন্দোলনে সংহতি জানান গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতি, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় সেখানেই সংবাদ সম্মেলন করেন টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন টিএনজেড অ্যাপারেলসের শ্রমিক শহিদুল ইসলাম। তিনি ‘মালিকের গাড়ি বিক্রি করে শ্রমিকদের টাকা দেওয়া হয়েছে’ বলে দেওয়া বক্তব্যকে মিথ্যা অভিহিত করে বলেন, ‘টিএনজেড গ্রুপের একটি কারখানা (অ্যাপারেল প্লাস ইকো) শ্রমিকদের সামান্য টাকা দেওয়া হয়েছে। এভাবে শ্রমিকদের মধ্যে বিভেদ তৈরির চক্রান্ত চলছে।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, টিএনজেড অ্যাপারেলসে কর্মরত ২ হাজার ১০০ শ্রমিকের গত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের বেতন, ঈদ বোনাসসহ পাওনা প্রায় ৯ কোটি টাকা। অ্যাপারেল প্লাস ইকো কারখানার ৮২৬ শ্রমিকের জানুয়ারি-মার্চ মাসের বেতন, ঈদ বোনাসসহ অন্যান্য পাওনা ৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, যার মধ্যে শনিবার দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা। অ্যাপারেল আর্ট কারখানার ২৪০ শ্রমিকের ডিসেম্বর-মার্চ পর্যন্ত বেতন-বোনাসসহ অন্যান্য পাওনা ২ কোটি ৪ লাখ টাকা, যা এখনো পরিশোধ করা হয়নি।
এই বিষয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কারখানার মালিক থানায় আছেন। বেতন-ভাতা পরিশোধের চেষ্টা চলছে। মালিক টাকা না দিতে পারলে কারখানা ও যন্ত্রপাতি বিক্রি করে টাকা দেওয়া হবে। পাওনা মালিককেই দিতে হবে। সরকারের পক্ষে টাকা দেওয়ার সুযোগ নেই।’
শতভাগ কারখানায় বেতন-বোনাস পরিশোধ সম্পন্ন হবে, বলছে বিজিএমইএ: বিজিএমইএ বলছে, আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে দেশের পোশাক খাতের শ্রমিকদের বেতন ও উৎসব ভাতা অধিকাংশ কারখানায় পরিশোধ সম্পন্ন হয়েছে। এতে শ্রমিকদের মাঝে যেমন স্বস্তি ফিরে এসেছে পাশাপাশি উদ্যোক্তারাও চাপমুক্ত হয়েছেন। তবে এখনও যেসব কারখানায় বেতন-বোনাস দেওয়া বাকি রয়েছে তারাও শনিবারের মধ্যে (২৯ মার্চ) মধ্যে তা পরিশোধ করবেন। এতে করে শনিবারের মধ্যেই দেশের সব কারখানার শতভাগ পোশাক শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ সম্পন্ন হবে।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, ব্যাংক, শ্রমিক নেতাসহ সবার সহযোগিতায় এই প্রক্রিয়া নির্বিঘেœ সম্পন্ন হয়েছে।
বিজিএমইএর মহাসচিব মো. ফয়জুর রহমান জানিয়েছেন, ২৭ মার্চ পর্যন্ত ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পরিশোধ করেছে ৯৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ কারখানা। মার্চ মাসের ১৫ বা ৩০ দিনের বেতন পরিশোধ করেছে ৮৩ দশমিক ২০ শতাংশ কারখানা। ঈদ বোনাস পরিশোধ করেছে ৯৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ কারখানা। আর ফেব্রুয়ারি মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে ০ দশমিক ৪৭ শতাংশ কারখানায় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি আরও জানান, জরুরি শিপমেন্টের কারণে কিছু কারখানা ২৮ ও ২৯ মার্চ বেতন-ভাতা পরিশোধ করবে। বিজিএমইএ আশা করছে, ২৯ মার্চের মধ্যেই প্রায় ১০০ শতাংশ কারখানায় বেতন-বোনাস পরিশোধ সম্পন্ন হবে।
বিজিএমইএ বলছে, শুরু থেকেই বেতন-ভাতা পরিশোধ নিশ্চিত করতে ৪৪৫টি কারখানাকে ক্লোজ মনিটরিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে। তাদের হস্তক্ষেপে প্রায় ১০০টি সমস্যাগ্রস্ত কারখানার শ্রমিকদের পাওনা নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া, শ্রমিকদের সুবিধার্থে বিজিএমইএর অনুরোধে সরকার সরকারি ছুটির দিনেও ব্যাংকের শাখাগুলো খোলা রাখার নির্দেশ দেয়, যা উদ্যোক্তাদের বেতন পরিশোধে সহায়তা করেছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিজিএমইএর নির্দেশনা অনুযায়ী, ২৬ মার্চ থেকে ২৯ মার্চের মধ্যে ধাপে ধাপে শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হচ্ছে। যাতে মহাসড়কে যানজটের চাপ কমে। এ ছাড়াও, উত্তরবঙ্গগামী যাত্রীদের সুবিধার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে বিশেষ ট্রেন চালু করেছে এবং মহাসড়কগুলোতে বিআরটিসি বাসের বিশেষ সার্ভিস চালু করা হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।