চার দিনের বিনিয়োগ সম্মেলন শুরু
দেশের নতুন উদ্যোক্তাদের অর্থায়নের জন্য ৮০০ থেকে ৯০০ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। সোমবার ঢাকায় শুরু হওয়া চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘কয়েক মাস আগে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ উদ্যোগ নিয়েছে। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ৮০০-৯০০ কোটি টাকার একটি তহবিল আমরা গঠন করব। মূলত বাণিজ্যিক ব্যাংকের অংশগ্রহণে, তারাই হবেন সেই ইক্যুইটির মালিক। এই অর্থ কেবল সম্ভাবনাময় স্টার্টআপের জন্য ইক্যুইটি বিনিয়োগ হিসাবে ব্যবহার হবে।’
সপ্তাহখানেকের মধ্যে সেই তহবিল চালু হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করেছিলাম, এ সময়ের মধ্যে এটা চালু হয়ে যাবে। কিন্তু আমি লন্ডনে থাকায় এবং ঈদ ছুটির কারণে এটা এখনও হয়নি, আমরা এক মাসের মত হারিয়েছি। এটা এক সপ্তাহ সময়ে প্রস্তুত হয়ে যাওয়ার কথা; আমরা সার্কুলার জারি করে দেব।’
ইক্যুইটির বাইরে স্টার্টআপগুলোকে ঋণ হিসাবে দেওয়ার জন্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা আরেকটি তহবিল গঠনের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে গভর্নর বলেন, ‘যাতে কেউ চাইলে ইক্যুইটি পায়, কিংবা ঋণ হিসাবেও তহবিল পায়। এটা কেবল শুরু, এটা শেষ হয়। স্টার্টআপ সেক্টর বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই তহবিলের আকারও ধীরে ধীরে বাড়বে। এই প্রতিশ্রুতি আমরা দিচ্ছি।’
বাংলাদেশ যে অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিকরণে পিছিয়ে আছে, সে কথা তুলে ধরে গভর্নর বড় আকারে একটি সমীক্ষা চালানোর কথা বলেন, ‘যেখানে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সম্ভাবনা ও তহবিলের প্রয়োজনীয়তার বিষয়গুলো দেখা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আমি চেষ্টা করছি এই উদ্ভাবনী মননকে কীভাবে সহযোগিতা দেওয়া যায়, যাতে তারা বিকশিত হতে পারে। আমাদের দরকার তাদের জন্য পরিবেশটা তৈরি করা এবং উদ্ভাবনের জন্য বাংলাদেশকে তাদের কাছে আকর্ষণীয় করা। যাতে তারা উদ্যোগটা নিয়ে চলে না যায়, বরং বাংলাদেশে নিয়ে আসে এবং দেশের ভেতরে এটাকে বড় করে।’
সেশনে দেশি-বিদেশি তরুণ, উদ্ভাবনী উদ্যোক্তারা অংশ নেন। এমপাওয়ারিং ইনোভেশন কানেক্টিং অপরচ্যুনিটি শিরোনামে সেশনটি অনুষ্ঠিত হয়। সামিটের প্রতিপাদ্য ‘এম্পাওয়ারিং ইনোভেশন কানেক্টিং অপরচুনিটি’।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমি বিকাশের মতো আরও কয়েকটি ইউনিকর্ন দেখতে চাই। দেখুন, বিকাশ অভিজ্ঞতা থেকে আমরা যা দেখতে পাচ্ছি তা হলো আমরা এটা করতে পারি, আমরা করেছি। সুতরাং, আপনাদের অনেকেই একই লক্ষ্য অর্জন করতে পারেন। এটা করার উপায় কী? এটা করার উপায় হলো আইনি নিয়ন্ত্রক লাইনে জোর দিন। স্বচ্ছ হন, লক্ষ্য নিয়ে কাজ করুন, তাৎক্ষণিক ফেরতের দিকে নয়। আমি সত্যিই আশা করি আমাদের স্টার্টআপ সম্প্রদায়, আমাদের তরুণ প্রজন্ম হাল ছাড়বে না। এমনকি যদি তারা একবার বা দুবার ব্যর্থ হয়, তাদের প্রচেষ্টা অবশ্যই চালিয়ে যেতে হবে। সাফল্য আসবে এবং আমি সেই দিনের অপেক্ষায় আছি যখন আমাদের অন্তত ১০টি বিকাশের মতো ইউনিকর্ন বাংলাদেশ আসবে। আমি নিশ্চিত সব ইতিবাচক জিনিস যা চারদিকে ঘটছে, ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ্বল এবং আমরা সেটাই আশা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘উদাহরণস্বরূপ, যখন আমি ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে ছিলাম, আমাদের বিকাশের দিকে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখতে হয়েছিল যে কেন এই কোম্পানি এত দ্রুত বাড়ছে। কিন্তু তবুও আমাদের প্রতি বছর প্রায় ৭০-৮০ কোটি টাকা ক্ষতি হিসেবে রাখতে হয়েছিল। বোস্টন কনসালটেন্সির মাধ্যমে আমাদের পর্যালোচনা থেকে আমরা ব্যাংক থেকে অর্থায়ন করেছিলাম, বিকাশ থেকে নয়। স্টার্টআপগুলোর লাভ একদিনেই আসে না। আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে, আপনাকে অধ্যবসায় করতে হবে। আপনাকে বিক্রি এবং অন্যান্য সুযোগ বাড়াতে হবে।’
বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী বাস্তবতায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) আয়োজনে চারদিনের এই বিনিয়োগ সম্মেলন শুরু হয়েছে। সোমবার সম্মেলনের প্রথম দিনে চট্টগ্রামে দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনের গেছেন প্রায় ৬০ জন বিনিয়োগকারী। আর ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে হয়েছে উচ্চ-পর্যায়ের প্লেনারি অধিবেশন।
সকালের প্লেনারি সেশন ‘বাংলাদেশ স্টার্টআপ কানেক্ট’-এ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কনস্টেলেশন অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির চেয়ারম্যান তানভীর আলী। শেয়ারট্রিপের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া হকের সঞ্চালনায় ওই আলোচনা পর্বে প্রধান উপদেষ্টার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, অর্থ সচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বক্তব্য দেন।
আয়োজকরা বলছেন, ‘পরিবর্তনশীল বিনিয়োগ পরিস্থিতিতে রূপান্তরিত সময়ের সুযোগ এবং অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা কাজে লাগানোর উপর আলো ফেলাই এই আয়োজনের উদ্দেশ্য।’
আগামীকাল সকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। সেই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের স্টারলিঙ্কের স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হবে।
চার দিনের বিনিয়োগ সম্মেলন শুরু
সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫
দেশের নতুন উদ্যোক্তাদের অর্থায়নের জন্য ৮০০ থেকে ৯০০ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। সোমবার ঢাকায় শুরু হওয়া চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘কয়েক মাস আগে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ উদ্যোগ নিয়েছে। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ৮০০-৯০০ কোটি টাকার একটি তহবিল আমরা গঠন করব। মূলত বাণিজ্যিক ব্যাংকের অংশগ্রহণে, তারাই হবেন সেই ইক্যুইটির মালিক। এই অর্থ কেবল সম্ভাবনাময় স্টার্টআপের জন্য ইক্যুইটি বিনিয়োগ হিসাবে ব্যবহার হবে।’
সপ্তাহখানেকের মধ্যে সেই তহবিল চালু হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করেছিলাম, এ সময়ের মধ্যে এটা চালু হয়ে যাবে। কিন্তু আমি লন্ডনে থাকায় এবং ঈদ ছুটির কারণে এটা এখনও হয়নি, আমরা এক মাসের মত হারিয়েছি। এটা এক সপ্তাহ সময়ে প্রস্তুত হয়ে যাওয়ার কথা; আমরা সার্কুলার জারি করে দেব।’
ইক্যুইটির বাইরে স্টার্টআপগুলোকে ঋণ হিসাবে দেওয়ার জন্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা আরেকটি তহবিল গঠনের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে গভর্নর বলেন, ‘যাতে কেউ চাইলে ইক্যুইটি পায়, কিংবা ঋণ হিসাবেও তহবিল পায়। এটা কেবল শুরু, এটা শেষ হয়। স্টার্টআপ সেক্টর বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই তহবিলের আকারও ধীরে ধীরে বাড়বে। এই প্রতিশ্রুতি আমরা দিচ্ছি।’
বাংলাদেশ যে অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিকরণে পিছিয়ে আছে, সে কথা তুলে ধরে গভর্নর বড় আকারে একটি সমীক্ষা চালানোর কথা বলেন, ‘যেখানে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সম্ভাবনা ও তহবিলের প্রয়োজনীয়তার বিষয়গুলো দেখা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আমি চেষ্টা করছি এই উদ্ভাবনী মননকে কীভাবে সহযোগিতা দেওয়া যায়, যাতে তারা বিকশিত হতে পারে। আমাদের দরকার তাদের জন্য পরিবেশটা তৈরি করা এবং উদ্ভাবনের জন্য বাংলাদেশকে তাদের কাছে আকর্ষণীয় করা। যাতে তারা উদ্যোগটা নিয়ে চলে না যায়, বরং বাংলাদেশে নিয়ে আসে এবং দেশের ভেতরে এটাকে বড় করে।’
সেশনে দেশি-বিদেশি তরুণ, উদ্ভাবনী উদ্যোক্তারা অংশ নেন। এমপাওয়ারিং ইনোভেশন কানেক্টিং অপরচ্যুনিটি শিরোনামে সেশনটি অনুষ্ঠিত হয়। সামিটের প্রতিপাদ্য ‘এম্পাওয়ারিং ইনোভেশন কানেক্টিং অপরচুনিটি’।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমি বিকাশের মতো আরও কয়েকটি ইউনিকর্ন দেখতে চাই। দেখুন, বিকাশ অভিজ্ঞতা থেকে আমরা যা দেখতে পাচ্ছি তা হলো আমরা এটা করতে পারি, আমরা করেছি। সুতরাং, আপনাদের অনেকেই একই লক্ষ্য অর্জন করতে পারেন। এটা করার উপায় কী? এটা করার উপায় হলো আইনি নিয়ন্ত্রক লাইনে জোর দিন। স্বচ্ছ হন, লক্ষ্য নিয়ে কাজ করুন, তাৎক্ষণিক ফেরতের দিকে নয়। আমি সত্যিই আশা করি আমাদের স্টার্টআপ সম্প্রদায়, আমাদের তরুণ প্রজন্ম হাল ছাড়বে না। এমনকি যদি তারা একবার বা দুবার ব্যর্থ হয়, তাদের প্রচেষ্টা অবশ্যই চালিয়ে যেতে হবে। সাফল্য আসবে এবং আমি সেই দিনের অপেক্ষায় আছি যখন আমাদের অন্তত ১০টি বিকাশের মতো ইউনিকর্ন বাংলাদেশ আসবে। আমি নিশ্চিত সব ইতিবাচক জিনিস যা চারদিকে ঘটছে, ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ্বল এবং আমরা সেটাই আশা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘উদাহরণস্বরূপ, যখন আমি ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে ছিলাম, আমাদের বিকাশের দিকে খুব মনোযোগ দিয়ে দেখতে হয়েছিল যে কেন এই কোম্পানি এত দ্রুত বাড়ছে। কিন্তু তবুও আমাদের প্রতি বছর প্রায় ৭০-৮০ কোটি টাকা ক্ষতি হিসেবে রাখতে হয়েছিল। বোস্টন কনসালটেন্সির মাধ্যমে আমাদের পর্যালোচনা থেকে আমরা ব্যাংক থেকে অর্থায়ন করেছিলাম, বিকাশ থেকে নয়। স্টার্টআপগুলোর লাভ একদিনেই আসে না। আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে, আপনাকে অধ্যবসায় করতে হবে। আপনাকে বিক্রি এবং অন্যান্য সুযোগ বাড়াতে হবে।’
বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী বাস্তবতায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) আয়োজনে চারদিনের এই বিনিয়োগ সম্মেলন শুরু হয়েছে। সোমবার সম্মেলনের প্রথম দিনে চট্টগ্রামে দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনের গেছেন প্রায় ৬০ জন বিনিয়োগকারী। আর ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে হয়েছে উচ্চ-পর্যায়ের প্লেনারি অধিবেশন।
সকালের প্লেনারি সেশন ‘বাংলাদেশ স্টার্টআপ কানেক্ট’-এ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কনস্টেলেশন অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির চেয়ারম্যান তানভীর আলী। শেয়ারট্রিপের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া হকের সঞ্চালনায় ওই আলোচনা পর্বে প্রধান উপদেষ্টার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, অর্থ সচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বক্তব্য দেন।
আয়োজকরা বলছেন, ‘পরিবর্তনশীল বিনিয়োগ পরিস্থিতিতে রূপান্তরিত সময়ের সুযোগ এবং অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা কাজে লাগানোর উপর আলো ফেলাই এই আয়োজনের উদ্দেশ্য।’
আগামীকাল সকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। সেই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের স্টারলিঙ্কের স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হবে।