alt

অর্থ-বাণিজ্য

শেখ পরিবারসহ ১১ শিল্পগোষ্ঠীর বিদেশে বিপুল সম্পদের খোঁজ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : রোববার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবার এবং ১০ শিল্পগোষ্ঠীর ব্যাংকঋণে অনিয়ম, কর ফাঁকি, অর্থ পাচারসহ নানা অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে সরকার গঠিত ১১টি তদন্ত দল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম ও পাচার করা অর্থের খোঁজ মিলেছে এস আলম গ্রুপের। এসব ঘটনায় ইতিমধ্যে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে। বিদেশে পাচার করা অর্থ উদ্ধারে বিশেষ অধ্যাদেশ তৈরির কাজ চলছে। অর্থ উদ্ধারে কোন ধরনের বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হবে, তা নির্ধারণের কাজ চলছে। এতে সহায়তা দিচ্ছেন বিশ্বব্যাংকের উদ্যোগে গঠিত পাচার করা অর্থ উদ্ধার বিশেষজ্ঞরা।

শেখ হাসিনার পরিবারের বাইরে যে ১০ শিল্পগোষ্ঠী নিয়ে তদন্ত চলছে, সেগুলো হলো এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, নাবিল গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, জেমকন গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, সিকদার গ্রুপ ও আরামিট গ্রুপ।

অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এই বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। এর পর থেকে জোরেশোরে কাজ শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বয়ে যৌথ তদন্ত দল। সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। বাংলাদেশ ব্যাংকে বিশেষ নিরাপত্তাবিশিষ্ট কক্ষে চলছে তদন্তের নথিপত্র প্রস্তুতের কাজ।

শেখ হাসিনার পরিবারের বাইরে যে ১০ শিল্পগোষ্ঠী নিয়ে তদন্ত চলছে, সেগুলো হলো এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, নাবিল গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, জেমকন গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, সিকদার গ্রুপ ও আরামিট গ্রুপ। এসব গ্রুপের পাশাপাশি গ্রুপের প্রধান ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত আর্থিক বিষয়ও তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে। তাদের অনেকেই বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন।

১১টি পরিবার ও গ্রুপের অনিয়মের তদন্ত নিয়ে প্রতি মাসে সভা করছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ১৬ এপ্রিল আবারও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ-সংক্রান্ত এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে রবিবার ১৩ এপ্রিল পাচারের অর্থ ফেরতসংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সভা অনুষ্ঠিত হবে। এর প্রধান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

গভর্নর শুক্রবার চট্টগ্রামে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘সব মিলিয়ে আমার ধারণা, আড়াই থেকে তিন লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে বড় শিল্প গ্রুপ ও তাদের পরিবারও রয়েছে। বেক্সিমকোর পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো। ছয় মাসের মধ্যে বিদেশে পাচার করা সম্পদের বড় একটি অংশ জব্দ করা হবে। এ জন্য আমরা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কথা বলছি। বিভিন্ন দেশ ও সংস্থাকে চিঠি দিচ্ছি। বিদেশি আইনি সংস্থা বা ফার্মের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে, এ কাজে তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে।’

জানা গেছে, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) নিজে ও বিভিন্ন দেশের এফআইইউগুলো থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে। এসব তথ্যের মধ্যে রয়েছে দেশের ব্যাংকগুলো থেকে নামে-বেনামে কত টাকা ঋণ নিয়েছে, এসব টাকার গতিপথ, বাইরের কোন দেশে কোথায় কত সম্পদ গড়ে তুলেছেন ও বাইরের ব্যাংকে কত অর্থ জমা আছে। এ ছাড়া ঘুষ, দুর্নীতি, প্রতারণা, জালিয়াতির তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে। এখন এসব লেনদেনে কোথায় কর ফাঁকি হয়েছে, কোথায় অর্থ পাচার হয়েছে—এসব অনিয়ম কোন আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য, তা নির্ধারণ করছে দুদক, এনবিআর ও সিআইডি। ইতিমধ্যে বেশির ভাগ ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুদক। আরও মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন আছে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ১১টি তদন্তের মধ্যে ৯টি গ্রুপেরই বিদেশে সম্পদের খোঁজ মিলেছে। এসব সম্পদের সবই পাচার করা অর্থে গড়ে উঠেছে। এখন দেশে মামলার মাধ্যমে এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেওয়া হচ্ছে। তবে বিদেশে সম্পদ প্রকৃত অর্থে জব্দ করতে সংশ্লিষ্ট দেশের আদালতে মামলা করা হবে। এরপর সে দেশ থেকে রায় হলে সম্পদ জব্দ হবে।

কর্মকর্তারা জানান, বিদেশে পাচার করা অর্থ উদ্ধারে বিশেষ অধ্যাদেশ তৈরির কাজ চলছে। অধ্যাদেশ তৈরি হলে এর আলোকে বিদেশে চিহ্নিত হওয়া সম্পদ জব্দ ও তা আইনি পদ্ধতিতে ফেরত আনতে বিভিন্ন আগ্রহী প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হবে। কমিশন ভিত্তিতে এই কাজ পাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এরপর অর্থ ফেরত আনতে কয়েক বছর সময় লাগবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে কাউকে সম্পদ কেনার জন্য বিদেশে অর্থ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। ফলে যাঁরা সম্পদ গড়েছেন, সবাই অপরাধ করেছেন। পাচার করা অর্থ চিহ্নিত ও ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়ায় নতুন করে পাচার কমে গেছে। এর ফলে প্রবাসী আয়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এটাই বর্তমান সরকারের বড় সফলতা।

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি জানিয়েছেন, যারা অর্থ পাচার করেছে, তাদের জীবন কঠিন করে ফেলা হবে যাতে ভবিষ্যতে কেউ অর্থ পাচার না করে।

তদন্ত সংস্থাগুলোর কাছে এখন পর্যন্ত যত তথ্য এসেছে, তাতে এস আলম গ্রুপের সবচেয়ে বেশি অনিয়ম ও পাচারের তথ্য খুঁজে পাওয়া গেছে। গ্রুপটি ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি, এসআইবিএল, গ্লোবাল, ইউনিয়ন, জনতা, এক্সিমসহ ১১ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নামে-বেনামে ২ লাখ কোটি টাকার বেশি সরিয়েছে। এর মধ্যে অনেক ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে। এসব অর্থের একটা অংশ দেশের বাইরে চলে গেছে। এখন পর্যন্ত ৬টি দেশে গ্রুপটির একাধিক তারকা হোটেল, জমি ও সম্পদ থাকার তথ্য মিলেছে।

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার পরিবার এবং আরামিট গ্রুপের নামে থাকা দেশ-বিদেশের ৫৮০ বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, জমিসহ স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, ইউএইতে ২২৮টি ও যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি বাড়ি রয়েছে। বেসরকারি খাতের ইউসিবি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ছিল সাইফুজ্জামান চৌধুরী পরিবারের কাছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানিগুলোর মোট ঋণ ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি। অর্থ পাচার করে লন্ডন ও সিঙ্গাপুরে গ্রুপটির পরিবারের নামে সম্পদ থাকার তথ্য পেয়েছে তদন্ত সংস্থাগুলো।

দেশে বসুন্ধরা গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ থাকার তথ্য মিলেছে, এর মধ্যে কিছু ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানসহ তার পরিবারের আট সদস্যের বিদেশে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, স্লোভাকিয়া, সাইপ্রাস, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে বসুন্ধরার পরিবারের সদস্যদের সম্পদের খোঁজ মিলেছে, এ জন্য সম্পদ জব্দের আদেশের অনুলিপি এসব দেশে পাঠানো হয়েছে।

সিকদার গ্রুপ নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি সরিয়েছে। সিকদার পরিবারের সম্পদ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস ও নিউইয়র্ক, প্রমোদনগরী হিসেবে খ্যাত লাসভেগাস, সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবি ও থাইল্যান্ডের ব্যাংককে। যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর ও সুইজারল্যান্ডে রয়েছে সিকদার পরিবারের একাধিক কোম্পানি।

ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিমের ৩১টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ ও একটি ফ্ল্যাটসহ ৪৩ একর জমি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের যুক্তরাজ্যে পাঁচটি বাড়ি, আইলে অফ ম্যানে একটি ও জার্সিতে একটি বাড়ির খোঁজ মিলেছে।

এসব সম্পদ অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। নাবিল গ্রুপ নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংক ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি সরিয়েছে। সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খানসহ তার পরিবারের ১১ জন সদস্যের ১৯১টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে সরকারি প্লট বেআইনিভাবে নিজেদের নামে করিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, টিউলিপ সিদ্দিকসহ শেখ পরিবারের ছয় সদস্য ও একাধিক রাজউক কর্মকর্তাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। যুক্তরাজ্যে টিউলিপের একাধিক ফ্ল্যাটের খোঁজ মিলেছে। তবে জেমকন গ্রুপের বড় কোনো অনিয়মের খুঁজ পাননি তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

ছবি

প্রসাধনী পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধি প্রত্যাহারের দাবি

ছবি

স্বর্ণের দাম আবার বাড়লো

ছবি

৮৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এক লাখ ১০ হাজার টন সার কিনবে সরকার

এফবিসিসিআই নির্বাচন: সময় বাড়লো ৪৫ দিন

ছবি

পাট খাতের উন্নয়নে ‘সাসটেইনেবল মার্কেট এক্সেস বুটক্যাম্প’ কর্মসূচি শুরু

এক বছরে ভারতে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন নেমেছে এক-তৃতীয়াংশে

৫ দিন বন্ধ থাকবে রূপালী ও এনসিসি ব্যাংকের সব কার্যক্রম

ছবি

ডলারের বিপরীতে টাকায় ঋণ নেয়ার সুযোগ

গত অর্থবছরে রফতানি আয় ৪৮ বিলিয়ন ডলার

নবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার

ছবি

ব্যাগেজ রুলসে মোবাইল ও স্বর্ণ আনায় বড় ছাড়

ছবি

এনবিআরের আন্দোলনে অংশ নেওয়া আরও ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তের কথা জানালো দুদক

ছবি

প্রবাসী আয়ে রেকর্ড, রপ্তানিতে বড় প্রবৃদ্ধি

ছবি

দেশের ৩২ বীমা কোম্পানি উচ্চ ঝুঁকিতে: আইডিআরএ চেয়ারম্যান

ছবি

বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ৭ শতাংশেরও কম

ছবি

ডিএসইর নতুন সিওও মোহাম্মদ আসাদুর রহমান

ছবি

অর্থবছরের প্রথম দিন ঊর্ধ্বমুখী শেয়ারবাজার

ছবি

ইলিশের দাম নির্ধারণ করে দেবে সরকার

ছবি

এনবিআরে আন্দোলন: এবার চার কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠালো সরকার

ছবি

৭৩ ধাপ এগিয়ে থাকা মায়ানমারকে হারিয়ে ইতিহাসের পথে বাংলাদেশের মেয়েরা

বিইআরসি ঘোষণা করল বেসরকারি এলপিজির নতুন দাম, ১২ কেজিতে ৩৯ টাকা কমতি

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানি আসছে, অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্বে নৌবাহিনী

ছবি

নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ে এফবিসিসিআই নির্বাচন পিছিয়ে গেল

ছবি

রেকর্ড রেমিটেন্সে শেষ হলো অর্থবছর, প্রথমবারের মতো আয় ছাড়াল ৩০ বিলিয়ন ডলার

ছবি

‘শাটডাউন’ কর্মসূচিতে অংশ: চট্টগ্রাম কাস্টম কমিশনার বরখাস্ত

ছবি

প্রসাধনীতে শুল্ক বাড়ায় রাজস্ব নয়, বাড়বে অর্থপাচার-চোরাচালান: বিসিটিআইএ

ছবি

৪০ শতাংশ কৃষক যথাযথ মজুরি পান না: বিবিএসের জরিপ

বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ১১ ব্যাংকের সম্পদের মান যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত

চট্টগ্রামে সমন্বিত তৈরি পোশাক শিল্পাঞ্চল গড়ার প্রস্তাব বিজিএমইএর

অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করেছেন ১৭ লাখের বেশি করদাতা: এনবিআর

ছবি

বাক্কো ও আকিজ টেলিকমের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত

মানবতাবিরোধী অপরাধ: শেখ হাসিনাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি সোমবার

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল ছয় মাসের জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার অনুমোদন

ছবি

সব সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমলো

ছবি

‘শাটডাউন’ এর মধ্যে কাস্টমস চাকরিকে অত্যাবশ্যক ঘোষণা করল সরকার

ছবি

স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করলে তদন্তে ভয় নেই’— এনবিআর ইস্যুতে অর্থ উপদেষ্টার মন্তব্য

tab

অর্থ-বাণিজ্য

শেখ পরিবারসহ ১১ শিল্পগোষ্ঠীর বিদেশে বিপুল সম্পদের খোঁজ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

রোববার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবার এবং ১০ শিল্পগোষ্ঠীর ব্যাংকঋণে অনিয়ম, কর ফাঁকি, অর্থ পাচারসহ নানা অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে সরকার গঠিত ১১টি তদন্ত দল। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম ও পাচার করা অর্থের খোঁজ মিলেছে এস আলম গ্রুপের। এসব ঘটনায় ইতিমধ্যে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে। বিদেশে পাচার করা অর্থ উদ্ধারে বিশেষ অধ্যাদেশ তৈরির কাজ চলছে। অর্থ উদ্ধারে কোন ধরনের বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হবে, তা নির্ধারণের কাজ চলছে। এতে সহায়তা দিচ্ছেন বিশ্বব্যাংকের উদ্যোগে গঠিত পাচার করা অর্থ উদ্ধার বিশেষজ্ঞরা।

শেখ হাসিনার পরিবারের বাইরে যে ১০ শিল্পগোষ্ঠী নিয়ে তদন্ত চলছে, সেগুলো হলো এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, নাবিল গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, জেমকন গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, সিকদার গ্রুপ ও আরামিট গ্রুপ।

অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এই বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। এর পর থেকে জোরেশোরে কাজ শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বয়ে যৌথ তদন্ত দল। সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। বাংলাদেশ ব্যাংকে বিশেষ নিরাপত্তাবিশিষ্ট কক্ষে চলছে তদন্তের নথিপত্র প্রস্তুতের কাজ।

শেখ হাসিনার পরিবারের বাইরে যে ১০ শিল্পগোষ্ঠী নিয়ে তদন্ত চলছে, সেগুলো হলো এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, নাবিল গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, জেমকন গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, সিকদার গ্রুপ ও আরামিট গ্রুপ। এসব গ্রুপের পাশাপাশি গ্রুপের প্রধান ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত আর্থিক বিষয়ও তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে। তাদের অনেকেই বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন।

১১টি পরিবার ও গ্রুপের অনিয়মের তদন্ত নিয়ে প্রতি মাসে সভা করছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ১৬ এপ্রিল আবারও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ-সংক্রান্ত এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে রবিবার ১৩ এপ্রিল পাচারের অর্থ ফেরতসংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সভা অনুষ্ঠিত হবে। এর প্রধান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

গভর্নর শুক্রবার চট্টগ্রামে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘সব মিলিয়ে আমার ধারণা, আড়াই থেকে তিন লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে বড় শিল্প গ্রুপ ও তাদের পরিবারও রয়েছে। বেক্সিমকোর পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো। ছয় মাসের মধ্যে বিদেশে পাচার করা সম্পদের বড় একটি অংশ জব্দ করা হবে। এ জন্য আমরা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কথা বলছি। বিভিন্ন দেশ ও সংস্থাকে চিঠি দিচ্ছি। বিদেশি আইনি সংস্থা বা ফার্মের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে, এ কাজে তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে।’

জানা গেছে, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) নিজে ও বিভিন্ন দেশের এফআইইউগুলো থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে। এসব তথ্যের মধ্যে রয়েছে দেশের ব্যাংকগুলো থেকে নামে-বেনামে কত টাকা ঋণ নিয়েছে, এসব টাকার গতিপথ, বাইরের কোন দেশে কোথায় কত সম্পদ গড়ে তুলেছেন ও বাইরের ব্যাংকে কত অর্থ জমা আছে। এ ছাড়া ঘুষ, দুর্নীতি, প্রতারণা, জালিয়াতির তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে। এখন এসব লেনদেনে কোথায় কর ফাঁকি হয়েছে, কোথায় অর্থ পাচার হয়েছে—এসব অনিয়ম কোন আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য, তা নির্ধারণ করছে দুদক, এনবিআর ও সিআইডি। ইতিমধ্যে বেশির ভাগ ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুদক। আরও মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন আছে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ১১টি তদন্তের মধ্যে ৯টি গ্রুপেরই বিদেশে সম্পদের খোঁজ মিলেছে। এসব সম্পদের সবই পাচার করা অর্থে গড়ে উঠেছে। এখন দেশে মামলার মাধ্যমে এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেওয়া হচ্ছে। তবে বিদেশে সম্পদ প্রকৃত অর্থে জব্দ করতে সংশ্লিষ্ট দেশের আদালতে মামলা করা হবে। এরপর সে দেশ থেকে রায় হলে সম্পদ জব্দ হবে।

কর্মকর্তারা জানান, বিদেশে পাচার করা অর্থ উদ্ধারে বিশেষ অধ্যাদেশ তৈরির কাজ চলছে। অধ্যাদেশ তৈরি হলে এর আলোকে বিদেশে চিহ্নিত হওয়া সম্পদ জব্দ ও তা আইনি পদ্ধতিতে ফেরত আনতে বিভিন্ন আগ্রহী প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হবে। কমিশন ভিত্তিতে এই কাজ পাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এরপর অর্থ ফেরত আনতে কয়েক বছর সময় লাগবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে কাউকে সম্পদ কেনার জন্য বিদেশে অর্থ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। ফলে যাঁরা সম্পদ গড়েছেন, সবাই অপরাধ করেছেন। পাচার করা অর্থ চিহ্নিত ও ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়ায় নতুন করে পাচার কমে গেছে। এর ফলে প্রবাসী আয়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এটাই বর্তমান সরকারের বড় সফলতা।

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি জানিয়েছেন, যারা অর্থ পাচার করেছে, তাদের জীবন কঠিন করে ফেলা হবে যাতে ভবিষ্যতে কেউ অর্থ পাচার না করে।

তদন্ত সংস্থাগুলোর কাছে এখন পর্যন্ত যত তথ্য এসেছে, তাতে এস আলম গ্রুপের সবচেয়ে বেশি অনিয়ম ও পাচারের তথ্য খুঁজে পাওয়া গেছে। গ্রুপটি ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি, এসআইবিএল, গ্লোবাল, ইউনিয়ন, জনতা, এক্সিমসহ ১১ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নামে-বেনামে ২ লাখ কোটি টাকার বেশি সরিয়েছে। এর মধ্যে অনেক ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে। এসব অর্থের একটা অংশ দেশের বাইরে চলে গেছে। এখন পর্যন্ত ৬টি দেশে গ্রুপটির একাধিক তারকা হোটেল, জমি ও সম্পদ থাকার তথ্য মিলেছে।

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার পরিবার এবং আরামিট গ্রুপের নামে থাকা দেশ-বিদেশের ৫৮০ বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, জমিসহ স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, ইউএইতে ২২৮টি ও যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি বাড়ি রয়েছে। বেসরকারি খাতের ইউসিবি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ছিল সাইফুজ্জামান চৌধুরী পরিবারের কাছে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানিগুলোর মোট ঋণ ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি। অর্থ পাচার করে লন্ডন ও সিঙ্গাপুরে গ্রুপটির পরিবারের নামে সম্পদ থাকার তথ্য পেয়েছে তদন্ত সংস্থাগুলো।

দেশে বসুন্ধরা গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ৩৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ থাকার তথ্য মিলেছে, এর মধ্যে কিছু ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানসহ তার পরিবারের আট সদস্যের বিদেশে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। সিঙ্গাপুর, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, স্লোভাকিয়া, সাইপ্রাস, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে বসুন্ধরার পরিবারের সদস্যদের সম্পদের খোঁজ মিলেছে, এ জন্য সম্পদ জব্দের আদেশের অনুলিপি এসব দেশে পাঠানো হয়েছে।

সিকদার গ্রুপ নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি সরিয়েছে। সিকদার পরিবারের সম্পদ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস ও নিউইয়র্ক, প্রমোদনগরী হিসেবে খ্যাত লাসভেগাস, সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবি ও থাইল্যান্ডের ব্যাংককে। যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর ও সুইজারল্যান্ডে রয়েছে সিকদার পরিবারের একাধিক কোম্পানি।

ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিমের ৩১টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ ও একটি ফ্ল্যাটসহ ৪৩ একর জমি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের যুক্তরাজ্যে পাঁচটি বাড়ি, আইলে অফ ম্যানে একটি ও জার্সিতে একটি বাড়ির খোঁজ মিলেছে।

এসব সম্পদ অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। নাবিল গ্রুপ নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংক ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি সরিয়েছে। সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খানসহ তার পরিবারের ১১ জন সদস্যের ১৯১টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে সরকারি প্লট বেআইনিভাবে নিজেদের নামে করিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, টিউলিপ সিদ্দিকসহ শেখ পরিবারের ছয় সদস্য ও একাধিক রাজউক কর্মকর্তাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। যুক্তরাজ্যে টিউলিপের একাধিক ফ্ল্যাটের খোঁজ মিলেছে। তবে জেমকন গ্রুপের বড় কোনো অনিয়মের খুঁজ পাননি তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

back to top