আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের কিস্তি ছাড়ে কোনো সমঝোতা ছাড়াই শেষ হয়েছে দ্বিতীয় দিনের ভার্চুয়াল বৈঠক। গতকাল মঙ্গলবারও বাংলাদেশের স্পষ্ট অবস্থান ছিল-এই মুহূর্তে ডলারের দর বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশের এ অবস্থানের ভিত্তিতে সংস্থাটি নিজেদের মধ্যে আবার আলোচনা করবে। এর পর আগামী ১৯ মে উভয় পক্ষের মধ্যে আরেকটি ভার্চুয়াল বৈঠক হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ডলারের দর বর্তমানে আইএমএফের পরামর্শেই ‘ক্রলিং পেগ’ নামে একটি পদ্ধতির আওতায় নির্ধারিত হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে একটি সীমার মধ্যে ডলারের দর ওঠানামা করে। এক বছর আগে এ পদ্ধতি চালু হয়। আইএমএফ চেয়েছিল, বাংলাদেশ এক পর্যায়ে বাজারের ওপর ছেড়ে দিক। জানা গেছে, পুরোপুরি বাজারভিত্তিক এই মুহূর্তে না করেও ক্রলিং পেগের মধ্যেই ওঠানামার সীমা বাড়ানোরও বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। বর্তমান পদ্ধতিতে মধ্যবর্তী রেট এখন ১১৯ টাকা। এর চেয়ে আড়াই শতাংশ কমতে বা বাড়তে পারবে। সেই হিসাবে ডলারের দর এখন সর্বোচ্চ ১২২ টাকা হওয়ার কথা। কয়েক মাস ধরে ১২২ টাকায় রয়েছে। প্রকৃত দর ওঠানামা না করায় আইএমএফ মনে করছে, পদ্ধতিটা স্বাধীনভাবে কাজ করছে না। এর ফলে বিনিময় হার অধিকতর নমনীয় হচ্ছে না, যা পুরোপুরি বাজারভিত্তিক হওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভার্চুয়াল বৈঠকে বাংলাদেশের দিক থেকে নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। বৈঠকে অর্থ সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান ও কবির আহমেদ যুক্ত ছিলেন। গত সোমবারও একই ইস্যুতে দু’পক্ষের বৈঠক হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বুধবার পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। আবার আলোচনার পথও বন্ধ হয়ে যায়নি। সমঝোতার বিষয়ে আরও বৈঠক হবে। আইএমএফকে জানানো হয়েছে এবং বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে, বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার উপযুক্ত সময় এখন নয়। বৈঠকে চলমান ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির বাইরে আইএমএফের কাছে ১০০ কোটি ডলারের একটি স্থিতিশীলতা তহবিল (স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড) নেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়। ভবিষ্যতে বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা হলে ওই তহবিল কাজে লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
বৈঠক সূত্রে আরও জানা গেছে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তি হিসেবে বলা হয়, বর্তমান ডলারের দর বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ কারণে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের সঙ্গে খোলাবাজারের দরের তেমন পার্থক্য নেই। বৈধ পথে রেমিট্যান্স গত ৯ মাসে বেড়েছে ২৯ শতাংশ। ডলারের দর দীর্ঘদিন ধরে ১২২ টাকায় স্থিতিশীল থাকার পরও এভাবে রেমিট্যান্স বাড়ছে। এ মুহূর্তে নমনীয়তা দেখালেই ডলারের দর বাড়তে পারে। তখন কমতে থাকা মূল্যস্ফীতি আবার বেড়ে যাবে। আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের আগে শর্তের অগ্রগতি যাচাইয়ে গত মাসে একটি মিশন ঢাকা সফর করে। তবে কোনো সমঝোতা ছাড়াই তারা ঢাকা ছাড়ে। তখনও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের ইস্যুতেই সমঝোতা হয়নি।
এর পর আলোচনা গড়ায় ওয়াশিংটনে। গত মাসের শেষ দিকে আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকের ফাঁকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সাইড লাইনে আলাদা বৈঠক হয়। কিন্তু ঢাকা বা ওয়াশিংটন– কোথাও আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচি থেকে পরবর্তী দুই কিস্তির বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি দু’পক্ষ।
সরকারের দিক থেকে ঋণ কর্মসূচিটি চলমান রাখার চেষ্টা আছে বলে জানা গেছে। যদিও অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী সম্প্রতি এমন কিছু মন্তব্য করেছেন, যার সার কথা হচ্ছে, কঠিন শর্ত বজায় থাকলে বাংলাদেশ এ কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।
আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। শুরু হওয়ার তিন দিনের মাথায় ওই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে পাওয়া গেছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালের জুনে পাওয়া গেছে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার। তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার। চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তিতে পাওয়ার কথা ১৩০ কোটি ডলার।
নিয়ম অনুযায়ী, কিস্তি পাওয়ার আগে আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের অনুমোদনের দরকার পড়ে। চতুর্থ কিস্তি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের পর পাওয়ার কথা থাকলেও শর্ত পূরণ না হওয়ায় তা পিছিয়ে দেয় আইএমএফ। তখন অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত ৫ ফেব্রুয়ারি সংস্থাটির পর্ষদ বৈঠক যুক্তরাষ্ট্রে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পিছিয়েছে। কিস্তি পেতে তাই দেরি হবে। আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের বৈঠক পিছিয়ে যায় ১২ মার্চ। ওই তারিখেও বাংলাদেশের কিস্তি ছাড়ের প্রস্তাব ওঠেনি।
বুধবার, ০৭ মে ২০২৫
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের কিস্তি ছাড়ে কোনো সমঝোতা ছাড়াই শেষ হয়েছে দ্বিতীয় দিনের ভার্চুয়াল বৈঠক। গতকাল মঙ্গলবারও বাংলাদেশের স্পষ্ট অবস্থান ছিল-এই মুহূর্তে ডলারের দর বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশের এ অবস্থানের ভিত্তিতে সংস্থাটি নিজেদের মধ্যে আবার আলোচনা করবে। এর পর আগামী ১৯ মে উভয় পক্ষের মধ্যে আরেকটি ভার্চুয়াল বৈঠক হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ডলারের দর বর্তমানে আইএমএফের পরামর্শেই ‘ক্রলিং পেগ’ নামে একটি পদ্ধতির আওতায় নির্ধারিত হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে একটি সীমার মধ্যে ডলারের দর ওঠানামা করে। এক বছর আগে এ পদ্ধতি চালু হয়। আইএমএফ চেয়েছিল, বাংলাদেশ এক পর্যায়ে বাজারের ওপর ছেড়ে দিক। জানা গেছে, পুরোপুরি বাজারভিত্তিক এই মুহূর্তে না করেও ক্রলিং পেগের মধ্যেই ওঠানামার সীমা বাড়ানোরও বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। বর্তমান পদ্ধতিতে মধ্যবর্তী রেট এখন ১১৯ টাকা। এর চেয়ে আড়াই শতাংশ কমতে বা বাড়তে পারবে। সেই হিসাবে ডলারের দর এখন সর্বোচ্চ ১২২ টাকা হওয়ার কথা। কয়েক মাস ধরে ১২২ টাকায় রয়েছে। প্রকৃত দর ওঠানামা না করায় আইএমএফ মনে করছে, পদ্ধতিটা স্বাধীনভাবে কাজ করছে না। এর ফলে বিনিময় হার অধিকতর নমনীয় হচ্ছে না, যা পুরোপুরি বাজারভিত্তিক হওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভার্চুয়াল বৈঠকে বাংলাদেশের দিক থেকে নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। বৈঠকে অর্থ সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান ও কবির আহমেদ যুক্ত ছিলেন। গত সোমবারও একই ইস্যুতে দু’পক্ষের বৈঠক হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বুধবার পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। আবার আলোচনার পথও বন্ধ হয়ে যায়নি। সমঝোতার বিষয়ে আরও বৈঠক হবে। আইএমএফকে জানানো হয়েছে এবং বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে, বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার উপযুক্ত সময় এখন নয়। বৈঠকে চলমান ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির বাইরে আইএমএফের কাছে ১০০ কোটি ডলারের একটি স্থিতিশীলতা তহবিল (স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড) নেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়। ভবিষ্যতে বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা হলে ওই তহবিল কাজে লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
বৈঠক সূত্রে আরও জানা গেছে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তি হিসেবে বলা হয়, বর্তমান ডলারের দর বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ কারণে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের সঙ্গে খোলাবাজারের দরের তেমন পার্থক্য নেই। বৈধ পথে রেমিট্যান্স গত ৯ মাসে বেড়েছে ২৯ শতাংশ। ডলারের দর দীর্ঘদিন ধরে ১২২ টাকায় স্থিতিশীল থাকার পরও এভাবে রেমিট্যান্স বাড়ছে। এ মুহূর্তে নমনীয়তা দেখালেই ডলারের দর বাড়তে পারে। তখন কমতে থাকা মূল্যস্ফীতি আবার বেড়ে যাবে। আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের আগে শর্তের অগ্রগতি যাচাইয়ে গত মাসে একটি মিশন ঢাকা সফর করে। তবে কোনো সমঝোতা ছাড়াই তারা ঢাকা ছাড়ে। তখনও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের ইস্যুতেই সমঝোতা হয়নি।
এর পর আলোচনা গড়ায় ওয়াশিংটনে। গত মাসের শেষ দিকে আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকের ফাঁকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সাইড লাইনে আলাদা বৈঠক হয়। কিন্তু ঢাকা বা ওয়াশিংটন– কোথাও আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচি থেকে পরবর্তী দুই কিস্তির বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি দু’পক্ষ।
সরকারের দিক থেকে ঋণ কর্মসূচিটি চলমান রাখার চেষ্টা আছে বলে জানা গেছে। যদিও অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী সম্প্রতি এমন কিছু মন্তব্য করেছেন, যার সার কথা হচ্ছে, কঠিন শর্ত বজায় থাকলে বাংলাদেশ এ কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।
আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। শুরু হওয়ার তিন দিনের মাথায় ওই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে পাওয়া গেছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালের জুনে পাওয়া গেছে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার। তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার। চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তিতে পাওয়ার কথা ১৩০ কোটি ডলার।
নিয়ম অনুযায়ী, কিস্তি পাওয়ার আগে আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের অনুমোদনের দরকার পড়ে। চতুর্থ কিস্তি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের পর পাওয়ার কথা থাকলেও শর্ত পূরণ না হওয়ায় তা পিছিয়ে দেয় আইএমএফ। তখন অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত ৫ ফেব্রুয়ারি সংস্থাটির পর্ষদ বৈঠক যুক্তরাষ্ট্রে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পিছিয়েছে। কিস্তি পেতে তাই দেরি হবে। আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের বৈঠক পিছিয়ে যায় ১২ মার্চ। ওই তারিখেও বাংলাদেশের কিস্তি ছাড়ের প্রস্তাব ওঠেনি।