সুখবর, দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। টানা সাত মাস ধরে কমে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকের প্রবৃদ্ধি ফেব্রুয়ারিতে ৬ দশমিক ৮২ শতাংশে নেমে এসেছিল। মার্চে তা বেড়ে ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশে উঠেছে। ফেব্রুয়ারির ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল ২১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারির পরে আর কখনও এতটা কম হয়নি বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের নবম মাস মার্চে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ গত অর্থ বছরের একই মাসের তুলনায় ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেড়েছে। আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে এই হার ছিল ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ। জানুয়ারিতে ছিল ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে
ছিল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ
বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের নিম্নমুখী এই ধারা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০২২ সালের নভেম্বরে শুরু হয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে তা আরও কমতে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংক গত বৃহস্পতিবার ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের নবম মাস মার্চে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ গত অর্থ বছরের একই মাসের তুলনায় ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেড়েছে।
আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে এই হার ছিল ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ। জানুয়ারিতে ছিল ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ছিল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। তার আগে নভেম্বরে ৭ দশমিক ৬৬, অক্টোবরে ৮ দশমিক ৩০, সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ২০, আগস্টে ৯ দশমিক ৮৬, জুলাইয়ে ১০ দশমিক ১৩ এবং জুনে ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, মার্চ মাস শেষে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ১৯ হাজার ৫১২ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের মার্চ শেষে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৯৮ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। এ হিসাবেই মার্চ শেষে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ। গত ১০ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতিতে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা আছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। সে হিসাবে মার্চে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ২৩শতাংশীয় পয়েন্ট কম হয়েছে প্রবৃদ্ধি।
বিনিয়োগ মানেই অর্থনীতিতে চাঞ্চল্য, বিনিয়োগ মানেই নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ। আর বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ। সব মিলিয়ে বিনিয়োগ যেকোনো দেশের অর্থনীতিকে দেয় স্বস্তি। এই সূত্রে মার্চে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি কিছুটা বাড়লেও বাংলাদেশ এখন আছে অস্বস্তিতে।
শুধু তাই নয়, নতুন বিনিয়োগের অন্যতম প্রধান নির্দেশক মূলধনী যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারি) আমদানিও আশঙ্কাজনভাবে কমছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) মূল্যধনী যন্তপাতি আমদানির এলসি (ঋণপত্র) খোলার পরিমাণ কমেছে ২৬ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ। এই নয় মাসে ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানির জন্য ১৩৩ কোটি ৫০ লাখ (১.৩৩ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খুলেছেন দেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের একই সময়ে এই অঙ্ক ছিল ১৮০ কোটি ৪৭ লাখ (১.৮০ বিলিয়ন) ডলার।
সব মিলিয়ে দেশে শিল্প স্থাপনের নতুন উদ্যোগ ও ব্যবসা সম্প্রসারণ স্থবির হয়ে আছে; ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের মধ্যে ভয়-আতঙ্ক বিরাজ করছে। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা নিয়ে চিন্তায় আছেন উদ্যোক্তারা। ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হচ্ছে বেসরকারি খাত। সেই খাতে ঋণপ্রবাহ ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমে যাওয়ার অর্থ হলো বিনিয়োগ থমকে যাওয়া। আর বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে না। ফলে অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
আগের চেয়ে বিনিয়োগ এখন অনেক বেশি দামি হয়ে গেছে। একদিকে বেড়েছে ডলারের দাম, অন্যদিকে ব্যাংক সুদহারও চড়া। এ অবস্থায় নতুন বিনিয়োগ করতে গেলে আগের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। আবার উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে বাজারে পণ্যের চাহিদাও কমে গেছে। সব মিলিয়ে বিনিয়োগের জন্য এ সময়টাকে মোটেই অনুকূল মনে করছেন না ব্যবসায়ীরা। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ব্যবসার পরিবেশে অনিশ্চয়তা আর ব্যাংক ঋণে উচ্চ সুদহারের প্রভাবে গত কয়েক মাস বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি কমছিল বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।
মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে নীতি সুদহার বাড়িয়েই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, উঠেছে ১০ শতাংশে। ব্যাংক ঋণের সুদের হার ১৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগ করছেন না। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের নয় মাস হতে চলেছে। এখনও দেশে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসেনি। তবে মূল্যস্ফীতি নিম্মমুখী হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, নতুন বছরের তৃতীয় মাস মার্চে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি বা মাসভিত্তিক) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। চার মাস পর গত জানুয়ারিতে এই সূচক এক অঙ্কের ঘরে (সিঙ্গেল ডিজিট), ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে নামে।
২০২৪-২৫ অর্থ বছরের শুরু থেকেই অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সারা দেশ উত্তাল হতে শুরু করে। একপর্যায়ে আন্দোলনে সহিংস ঘটনায় দেশে চরম অস্থিরতা দেখা দেয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর সেই অস্থিরতা আরও বাড়ে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। সেই পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২২ সালের আগস্টে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক শূন্য সাত শতাংশে উঠেছিল। এরপর থেকে কমছেই। ২০২৩ সালের মে মাসে এই প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১১ দশমিক ১০ শতাংশ। তার আগের মাস এপ্রিলে ছিল ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। মার্চে ছিল ১২ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ১৪ শতাংশ। জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১২ দশমিক ৬২ শতাংশ। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। নভেম্বরে ছিল ১৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। অক্টোবর, সেপ্টেম্বর ও আগস্টে ছিল যথাক্রমে ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ, ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ ও ১৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
২০২১ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। তার আগের মাস নভেম্বরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ১১ শতাংশ; অক্টোবরে ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ আর সেপ্টেম্বরে হয়েছিল ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আগস্ট ও জুলাইয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৪২ শতাংশ ও ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। করোনা মহামারির ধাক্কায় কমতে কমতে ওই বছরের মে মাসে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমে এসেছিল।
শনিবার, ১০ মে ২০২৫
সুখবর, দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। টানা সাত মাস ধরে কমে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকের প্রবৃদ্ধি ফেব্রুয়ারিতে ৬ দশমিক ৮২ শতাংশে নেমে এসেছিল। মার্চে তা বেড়ে ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশে উঠেছে। ফেব্রুয়ারির ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল ২১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারির পরে আর কখনও এতটা কম হয়নি বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের নবম মাস মার্চে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ গত অর্থ বছরের একই মাসের তুলনায় ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেড়েছে। আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে এই হার ছিল ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ। জানুয়ারিতে ছিল ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে
ছিল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ
বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের নিম্নমুখী এই ধারা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০২২ সালের নভেম্বরে শুরু হয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে তা আরও কমতে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংক গত বৃহস্পতিবার ‘উইকলি সিলেক্টেড ইকোনমিক ইন্ডিকেটরস’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের নবম মাস মার্চে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ গত অর্থ বছরের একই মাসের তুলনায় ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেড়েছে।
আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে এই হার ছিল ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ। জানুয়ারিতে ছিল ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ছিল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। তার আগে নভেম্বরে ৭ দশমিক ৬৬, অক্টোবরে ৮ দশমিক ৩০, সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক ২০, আগস্টে ৯ দশমিক ৮৬, জুলাইয়ে ১০ দশমিক ১৩ এবং জুনে ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, মার্চ মাস শেষে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ১৯ হাজার ৫১২ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের মার্চ শেষে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১৫ লাখ ৯৮ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। এ হিসাবেই মার্চ শেষে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ। গত ১০ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতিতে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা আছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। সে হিসাবে মার্চে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ২৩শতাংশীয় পয়েন্ট কম হয়েছে প্রবৃদ্ধি।
বিনিয়োগ মানেই অর্থনীতিতে চাঞ্চল্য, বিনিয়োগ মানেই নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ। আর বিনিয়োগ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান নিয়ামক বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ। সব মিলিয়ে বিনিয়োগ যেকোনো দেশের অর্থনীতিকে দেয় স্বস্তি। এই সূত্রে মার্চে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি কিছুটা বাড়লেও বাংলাদেশ এখন আছে অস্বস্তিতে।
শুধু তাই নয়, নতুন বিনিয়োগের অন্যতম প্রধান নির্দেশক মূলধনী যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারি) আমদানিও আশঙ্কাজনভাবে কমছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) মূল্যধনী যন্তপাতি আমদানির এলসি (ঋণপত্র) খোলার পরিমাণ কমেছে ২৬ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ। এই নয় মাসে ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানির জন্য ১৩৩ কোটি ৫০ লাখ (১.৩৩ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খুলেছেন দেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের একই সময়ে এই অঙ্ক ছিল ১৮০ কোটি ৪৭ লাখ (১.৮০ বিলিয়ন) ডলার।
সব মিলিয়ে দেশে শিল্প স্থাপনের নতুন উদ্যোগ ও ব্যবসা সম্প্রসারণ স্থবির হয়ে আছে; ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের মধ্যে ভয়-আতঙ্ক বিরাজ করছে। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা নিয়ে চিন্তায় আছেন উদ্যোক্তারা। ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হচ্ছে বেসরকারি খাত। সেই খাতে ঋণপ্রবাহ ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমে যাওয়ার অর্থ হলো বিনিয়োগ থমকে যাওয়া। আর বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে না। ফলে অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
আগের চেয়ে বিনিয়োগ এখন অনেক বেশি দামি হয়ে গেছে। একদিকে বেড়েছে ডলারের দাম, অন্যদিকে ব্যাংক সুদহারও চড়া। এ অবস্থায় নতুন বিনিয়োগ করতে গেলে আগের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। আবার উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে বাজারে পণ্যের চাহিদাও কমে গেছে। সব মিলিয়ে বিনিয়োগের জন্য এ সময়টাকে মোটেই অনুকূল মনে করছেন না ব্যবসায়ীরা। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ব্যবসার পরিবেশে অনিশ্চয়তা আর ব্যাংক ঋণে উচ্চ সুদহারের প্রভাবে গত কয়েক মাস বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি কমছিল বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।
মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে নীতি সুদহার বাড়িয়েই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, উঠেছে ১০ শতাংশে। ব্যাংক ঋণের সুদের হার ১৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগ করছেন না। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের নয় মাস হতে চলেছে। এখনও দেশে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসেনি। তবে মূল্যস্ফীতি নিম্মমুখী হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, নতুন বছরের তৃতীয় মাস মার্চে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি বা মাসভিত্তিক) দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। চার মাস পর গত জানুয়ারিতে এই সূচক এক অঙ্কের ঘরে (সিঙ্গেল ডিজিট), ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে নামে।
২০২৪-২৫ অর্থ বছরের শুরু থেকেই অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সারা দেশ উত্তাল হতে শুরু করে। একপর্যায়ে আন্দোলনে সহিংস ঘটনায় দেশে চরম অস্থিরতা দেখা দেয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর সেই অস্থিরতা আরও বাড়ে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। সেই পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২২ সালের আগস্টে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক শূন্য সাত শতাংশে উঠেছিল। এরপর থেকে কমছেই। ২০২৩ সালের মে মাসে এই প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১১ দশমিক ১০ শতাংশ। তার আগের মাস এপ্রিলে ছিল ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। মার্চে ছিল ১২ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ১৪ শতাংশ। জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১২ দশমিক ৬২ শতাংশ। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। নভেম্বরে ছিল ১৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। অক্টোবর, সেপ্টেম্বর ও আগস্টে ছিল যথাক্রমে ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ, ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ ও ১৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
২০২১ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ৬৮ শতাংশ। তার আগের মাস নভেম্বরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ১১ শতাংশ; অক্টোবরে ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ আর সেপ্টেম্বরে হয়েছিল ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আগস্ট ও জুলাইয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল যথাক্রমে ৮ দশমিক ৪২ শতাংশ ও ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। করোনা মহামারির ধাক্কায় কমতে কমতে ওই বছরের মে মাসে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমে এসেছিল।