alt

অর্থ-বাণিজ্য

রেমিটেন্সে ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত, ১০ দিনে এলো ৯০ কোটি ডলার

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার রেমিটেন্সের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি মে মাসের প্রথম ১০ দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ৯০ কোটি ৩৫ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। রেমিটেন্সে প্রতি ডলারে ১২৩ টাকা টাকা দিচ্ছে এখন ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে টাকার অঙ্কে এই ১০ দিনে ১১ হাজার ১১৩ কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৯ কোটি শূন্য তিন লাখ ডলার; টাকার অঙ্কে যা ১ হাজার ১১১ কোটি টাকা।

মে মাস ৩১ দিনে। মাসের বাকি ২১ দিনে (১১ থেকে ৩১ মে) এই হারে এলে মাস শেষে রেমিটেন্সের অঙ্ক ২৮০ কোটি (২.৮০ বিলিয়ন) ডলার ছাড়িয়ে যাবে। যা হবে একক মাসের হিসাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। রোজা ও ঈদ সামনে রেখে গত মাস মার্চে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ৩২৯ কোটি ৫৬ লাখ (৩.২৯ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স আসে দেশে, যা ছিল গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ৬৫ শতাংশ বেশি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৭৫ কোটি ১৯ লাখ (২.৭৫ বিলিয়ন) ডলার আসে গত এপ্রিল মাসে।

আর এই রেমিটেন্সের উপর ভর করেই বেশ কিছুদিন ধরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকা বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভে স্বস্তি ফেরার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। গত ৬ মে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পরও বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে অবস্থান করছে। গ্রস হিসাবে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ২৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

আকুর বিল শোধের আগে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২২ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৭ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার। দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে এখন সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়। বলা যায়, সঙ্কটের এই সময়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে রেমিটেন্স।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও তা অকপটে স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘প্রবাসীদের সহযোগিতার কারণে বাংলাদেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।’ গত ২৪ এপ্রিল কাতারের রাজধানী দোহায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আজ যে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পেরেছি, তার মূলে আপনারা (প্রবাসীরা)। আপনারা সহযোগিতা না করলে আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারতাম না। আপনারা কখনও আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন ভাববেন না।’

প্রতিবারই দুই ঈদ সামনে রেখে প্রবাসীরা বেশি রেমিটেন্স পাঠান। তারপর কমে যায়। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। গত ৩১ মার্চ ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। ঈদের পরও সেই আগের গতিতেই বাড়ছে অর্থনীতির এই সূচক। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে। এই ঈদ ঘিরেও প্রবাসীরা পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি রেমিটেন্স পাঠাবেন বলে আশা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

সব মিলিয়ে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম ১০ মাস ১০ দিনে (২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ১০ মে) ২ হাজার ৫৪৪ কোটি (২৫.৪৪ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স এসেছে দেশে, যা গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের পুরো সময়ের (১২ মাস, ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন) চেয়েও ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেশি। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ২ হাজার ৩৯১ কোটি ২২ লাখ (২৩.৯১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের ১০ মে পর্যন্ত ২৫ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতি মাসের গড় হিসাবে এসেছে ২ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার। অর্থ বছরের বাকি ১ মাস ২১ দিনে (১১ মে থেকে ৩০ জুন) এই হারে এলে এবার মোট রেমিটেন্সের অঙ্ক ২৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। আর সেটা হলে তা হবে আরেকটি রেকর্ড। এর আগে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে, ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার।

গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে রেমিটেন্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এসেছিল ২২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থ বছরে এসেছিল ২১ দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলার। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে এসেছিল ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছর শুরু হয়েছিল গত বছরের জুলাই থেকে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে ওই মাস ছিল উত্তাল; দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল। কয়েক দিন ব্যাংক ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ ছিল। সে কারণে জুলাই মাসে রেমিটেন্স প্রবাহ কিছুটা কমেছিল, এসেছিল ১৯১ কোটি ৩৭ কোটি (১.৯১ বিলিয়ন) ডলার। তার আগের তিন মাস অবশ্য ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি এসেছিল। তবে তারপর থেকে প্রতি মাসেই ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স দেশে এসেছে; মার্চে এসেছে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি। এপ্রিল মাসে এল পৌনে ৩ বিলিয়ন ডলার।

অর্থাৎ চলতি অর্থ বছরের ১০ মাসের নয় মাসেই (আগস্ট-এপ্রিল) ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এমন দেখা যায়নি। ২০২৫ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ (২.১৮ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে এসেছিল ব্যাংকিং চ্যানেলে ২৬৪ কোটি (২.৬৪ বিলিয়ন) ডলার।

চলতি অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ (১.৯১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

দ্বিতীয় মাস আগস্টে তারা পাঠান ২২২ কোটি ৪১ লাখ (২.২২ বিলিয়ন) ডলার। তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে এসেছিল ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ (২.৪০ বিলিয়ন) ডলার। চতুর্থ মাস অক্টোবরে আসে ২৩৯ কোটি ৫১ লাখ (২.৩৯ বিলিয়ন) ডলার। পঞ্চম মাস নভেম্বরে এসেছিল ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ (২ বিলিয়ন) ডলার।

ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন না মেলায় ১৮ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন অনিশ্চিত

ছবি

ফের স্থগিত ই-ক্যাব নির্বাচন

ছবি

সোনালী ব্যাংকের নিজস্ব পেমেন্ট সুইচ চালু

ছবি

এনআরবি ব্যাংকের বোর্ড অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান

ছবি

বিশ্বের শীর্ষ পরিবেশবান্ধব কারখানা এখন গাজীপুরের তাসনিয়া ফেব্রিকস

ছবি

জুনের মধ্যে আইএমএফের ১৩০ কোটি ডলার পাওয়ার আশা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়

ছবি

জুনের মধ্যে আইএমএফের দুটি কিস্তি মিলিয়ে ১.৩০ বিলিয়ন ডলার পেতে পারে বাংলাদেশ

ছবি

সারা দেশে গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক বিভ্রাট, সমস্যায় কোটি গ্রাহক

ছবি

গ্রামীন ব্যাংকের পর্ষদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও দুই নারী বিশেষজ্ঞ বাধ্যতামূলক, এমডির বয়সসীমা ৬৫

ছবি

বাজারই ঠিক করবে ডলারের দাম: বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর

সারের দুই গুদাম নির্মাণে ব্যয় হবে ১১৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা

শেয়ারবাজার নিয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ চান বিএমবিএ নেতারা

এক কোটি ১০ লাখ লিটার রাইস ব্রান তেল কিনবে সরকার

ছবি

সিঙ্গাপুর থেকে আসবে এক কার্গো এলএনজি, ব্যয় ৫৮৪ কোটি ১৬ লাখ

ছবি

ফের বড় পতন শেয়ারবাজারে

ছবি

বাজেট ২০২৫-২৬: ব্যাংক থেকে এবার কম ঋণ নেবে সরকার

ছবি

রেনেটা পিএলসি’র জন্য বিজনেস ক্রেডিট কার্ড সেবা নিয়ে আসলো এমটিবি ও মাস্টারকার্ড

ছবি

বিনিময় হার নমনীয়তায় সম্মত বাংলাদেশ, জুনেই আসছে আইএমএফের অর্থ

ছবি

প্রিয়শপ পরির্দশনে বিদেশি বিনিয়োগকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান

ছবি

বাজারে স্যামসাংয়ের নতুন দুটি স্মার্ট ওয়াশিং মেশিন

কমলো উড়োজাহাজের জ্বালানি তেলের দাম

ছবি

এনবিআরকে দুই ভাগ করে অধ্যাদেশ জারি

সিএজি কার্যালয়ের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিশেষ সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন

ছবি

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে নতুন গ্রাউন্ড সার্ভিস অ্যাসিস্টেন্টদের নিয়োগপত্র প্রদান

ছবি

ছয় নারী উদ্যোক্তা পেলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্মাননা

ছবি

শুধু ভালো ব্যাংকগুলোই বিদেশে ব্যবসা করতে পারবে

সিএজি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিশেষ সেবা কার্যক্রম উদ্বোধন

ছবি

৭ দিনে ৯ হাজার কোটি টাকা রেমিট্যান্স

ছবি

পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানি ১০ শতাংশ বেড়েছে

ছবি

পাবজি মোবাইলের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্বে ইনফিনিক্স

ছবি

বাংলাদেশের বাজারে ফিলিপসের নতুন মনিটর

ছবি

শাওমির ১০ কোটি টাকার ঈদ ক্যাম্পেইন

ছবি

অর্থনৈতিক সুরক্ষায় নতুন অধ্যাদেশ: দেউলিয়া ব্যাংক সাময়িকভাবে সরকারি মালিকানায় নিতে পারবে সরকার

রূপপুর প্রকল্পের ১৮ প্রকৌশলীকে চাকরিচ্যুত

ছবি

দুর্বল ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় নতুন অধ্যাদেশ জারি, গঠিত হবে ব্রিজ ব্যাংক

ছবি

চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্বাচনের জন্য প্রশাসকের মেয়াদ বৃদ্ধির দাবি

tab

অর্থ-বাণিজ্য

রেমিটেন্সে ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত, ১০ দিনে এলো ৯০ কোটি ডলার

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার রেমিটেন্সের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি মে মাসের প্রথম ১০ দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ৯০ কোটি ৩৫ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। রেমিটেন্সে প্রতি ডলারে ১২৩ টাকা টাকা দিচ্ছে এখন ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে টাকার অঙ্কে এই ১০ দিনে ১১ হাজার ১১৩ কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৯ কোটি শূন্য তিন লাখ ডলার; টাকার অঙ্কে যা ১ হাজার ১১১ কোটি টাকা।

মে মাস ৩১ দিনে। মাসের বাকি ২১ দিনে (১১ থেকে ৩১ মে) এই হারে এলে মাস শেষে রেমিটেন্সের অঙ্ক ২৮০ কোটি (২.৮০ বিলিয়ন) ডলার ছাড়িয়ে যাবে। যা হবে একক মাসের হিসাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। রোজা ও ঈদ সামনে রেখে গত মাস মার্চে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ৩২৯ কোটি ৫৬ লাখ (৩.২৯ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স আসে দেশে, যা ছিল গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ৬৫ শতাংশ বেশি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৭৫ কোটি ১৯ লাখ (২.৭৫ বিলিয়ন) ডলার আসে গত এপ্রিল মাসে।

আর এই রেমিটেন্সের উপর ভর করেই বেশ কিছুদিন ধরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকা বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভে স্বস্তি ফেরার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। গত ৬ মে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পরও বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে অবস্থান করছে। গ্রস হিসাবে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ২৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

আকুর বিল শোধের আগে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২২ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৭ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার। দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে এখন সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়। বলা যায়, সঙ্কটের এই সময়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে রেমিটেন্স।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও তা অকপটে স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘প্রবাসীদের সহযোগিতার কারণে বাংলাদেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।’ গত ২৪ এপ্রিল কাতারের রাজধানী দোহায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আজ যে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পেরেছি, তার মূলে আপনারা (প্রবাসীরা)। আপনারা সহযোগিতা না করলে আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারতাম না। আপনারা কখনও আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন ভাববেন না।’

প্রতিবারই দুই ঈদ সামনে রেখে প্রবাসীরা বেশি রেমিটেন্স পাঠান। তারপর কমে যায়। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। গত ৩১ মার্চ ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। ঈদের পরও সেই আগের গতিতেই বাড়ছে অর্থনীতির এই সূচক। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে। এই ঈদ ঘিরেও প্রবাসীরা পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি রেমিটেন্স পাঠাবেন বলে আশা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

সব মিলিয়ে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম ১০ মাস ১০ দিনে (২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ১০ মে) ২ হাজার ৫৪৪ কোটি (২৫.৪৪ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স এসেছে দেশে, যা গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের পুরো সময়ের (১২ মাস, ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন) চেয়েও ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেশি। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ২ হাজার ৩৯১ কোটি ২২ লাখ (২৩.৯১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের ১০ মে পর্যন্ত ২৫ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতি মাসের গড় হিসাবে এসেছে ২ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার। অর্থ বছরের বাকি ১ মাস ২১ দিনে (১১ মে থেকে ৩০ জুন) এই হারে এলে এবার মোট রেমিটেন্সের অঙ্ক ২৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। আর সেটা হলে তা হবে আরেকটি রেকর্ড। এর আগে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে, ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার।

গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে রেমিটেন্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এসেছিল ২২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থ বছরে এসেছিল ২১ দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলার। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে এসেছিল ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছর শুরু হয়েছিল গত বছরের জুলাই থেকে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে ওই মাস ছিল উত্তাল; দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল। কয়েক দিন ব্যাংক ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ ছিল। সে কারণে জুলাই মাসে রেমিটেন্স প্রবাহ কিছুটা কমেছিল, এসেছিল ১৯১ কোটি ৩৭ কোটি (১.৯১ বিলিয়ন) ডলার। তার আগের তিন মাস অবশ্য ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি এসেছিল। তবে তারপর থেকে প্রতি মাসেই ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স দেশে এসেছে; মার্চে এসেছে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি। এপ্রিল মাসে এল পৌনে ৩ বিলিয়ন ডলার।

অর্থাৎ চলতি অর্থ বছরের ১০ মাসের নয় মাসেই (আগস্ট-এপ্রিল) ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এমন দেখা যায়নি। ২০২৫ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ (২.১৮ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে এসেছিল ব্যাংকিং চ্যানেলে ২৬৪ কোটি (২.৬৪ বিলিয়ন) ডলার।

চলতি অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ (১.৯১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

দ্বিতীয় মাস আগস্টে তারা পাঠান ২২২ কোটি ৪১ লাখ (২.২২ বিলিয়ন) ডলার। তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে এসেছিল ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ (২.৪০ বিলিয়ন) ডলার। চতুর্থ মাস অক্টোবরে আসে ২৩৯ কোটি ৫১ লাখ (২.৩৯ বিলিয়ন) ডলার। পঞ্চম মাস নভেম্বরে এসেছিল ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ (২ বিলিয়ন) ডলার।

back to top