টাকা-ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার প্রথম দিন গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যাংকগুলোতে ডলারের দামে তেমন প্রভাব পড়েনি। তবে কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজারে সামান্য বেড়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ পেতে গত বুধবার ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করার ঘোষণা দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা-ডলারের রেফারেন্স রেট ঘোষণা করে ১২১ টাকা ৯৫ পয়সা। আগের দিন বুধবার একই সময়ে রেফারেন্স রেট ছিল ১২১ টাকা ৯৯ পয়সা। অবশ্য বৃহস্পতিবার দিন শেষে (বিকাল ৫টা পর্যন্ত) রেফারেন্স রেট বেড়ে ১২১ টাকা ৯৯ পয়সায় উঠেছিল। বুধবার একই সময়ে রেফারেন্স রেট ছিল ১২১ টাকা ৯২ পয়সা। ব্যাংকগুলো মোটাদাগে ১২২ টাকার মধ্যে ডলার বেচাকেনা করছে বলে জানা গেছে। আমদানি, রপ্তানি, রেমিটেন্সে ডলার বেচা-কেনা হয়েছে ১২১ টাকা থেকে ১২২ টাকায়। তবে বৃহস্পতিবার খোলাবাজারে ১২৬ টাকা দরে ডলার বিক্রি হয়েছে। বুধবার বিক্রি হয়েছিল ১২৫ টাকা ৫০ পয়সায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক ১২২ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে। আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রেও একই দর নিয়েছে। জনতা ব্যাংক একই দরে ডলার কেনাবেচা করেছে। বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংক ১২৩ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে।আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রেও এই দর নিয়েছে। রেমিটেন্সের ক্ষেত্রে এই দর দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২৪ সালের ৭ মে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে টাকা-ডলারের বিনিময় হার ছিল ১১০ টাকা। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এক বছরে টাকার বিপরীতে ডলারের দর বেড়েছে ১০ দশমিক ৯০ শতাংশ। গতকাল বৃহস্পতিবার ডলারের দাম নিয়ে ব্যবসায়ী ও বিদেশ ভ্রমণে ইচ্ছুকদের বেশ আগ্রহ দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দেশের শীর্ষ কয়েকটি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলা জানা যায়, ব্যবসায়ীসহ গ্রাহকরা ডলারের খবর জানতে অন্য যেকোনো দিনের চেয়ে এদিন বেশি খোঁজ-খবর করেছেন। অনেকে ডলার কেনার জন্য ব্যাংকে গেছেন। খোলাবাজারেও একটু চাপ দেখা গেছে। অনেকে বাড়তি মুনাফার আশায় ডলার মজুত করার পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলোতে পাঁচ কোটি ডলারের নগদ মুদ্রা মজুত আছে। তাই যে কেউ গেলেই ব্যাংকগুলো ডলার বিক্রি করছে। গ্রাহকরা যাতে বাজার থেকে বেশি দামে ডলার না কেনেন, সে পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, টাকা-ডলারের বিনিময় হার যাতে কোনও অবস্থাতেই না বাড়ে, সেজন্য বুধবার থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোতে কড়া নজরদারি রাখা হয়। সে কারণেই বাজারভিত্তিক করার পরও ডলারের দর তেমন হেরফের হয়নি।
বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোও বৃহস্পতিবার বাড়তি দাম অফার করেনি। বেশি দাম চাওয়া কয়েকটি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে ডলার না কেনার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কম বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। অন্যদিকে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে দেশে বেশি রেমিটেন্স আসছে। পাশাপাশি নগদ ডলার ঢুকছে। এ কারণেও ঈদের আগে কোনোভাবেই ডলারের বাজার অস্থির হওয়ার আশঙ্কা নেই বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
গত বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সংবাদ সম্মেলনে ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করার ঘোষণা দেন। মূলত আইএমএফের ঋণের কিস্তি ছাড়ের শর্ত হিসেবে এই উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলার কেনাবেচার ক্ষেত্রে দাম কী হবে, তা ব্যাংক ও গ্রাহকের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। অর্থাৎ ডলারের দাম আরও বাজারভিত্তিক হবে, সঙ্গে থাকবে জোরদার তদারকি।
সংবাদ সম্মেলনে আহসান মনসুর বলেন, ‘বাজারভিত্তিক মানে এই নয় যে ডলার যেকোনো দামে কেনাবেচা হবে। আমাদের সরবরাহ পরিস্থিতি এবং পূর্বাভাস অনুযায়ী, যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করতে হবে। বড় ধরনের প্রয়োজন দেখা দিলে বাংলাদেশ ব্যাংক সহায়তা করবে।’
আইএমএফের ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণের বাকি কিস্তিগুলো পেতে সংস্থাটির কথামতো ডলারের দর বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করা নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের দর কষাকষি চলছিল। মূলত সে কারণে আইএমএফ ঋণের কিস্তি ছাড় করছিল না।
এর মধ্যে মঙ্গলবার জানা যায়, বাংলাদেশ ডলারের বিনিময় আরও নমনীয় করতে রাজি হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে চলমান ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণের দুটি কিস্তি একসঙ্গে ছাড় করতে রাজি হয়েছে আইএমএফ। এরপর বুধবার গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন, ডলারের বিনিময় হার এখন থেকে বাজার ঠিক করবে। ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার এখন ভালো সময় বলেও বলেন তিনি।
আইএমএফের ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি হিসাবে ১ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার পাওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশের। তার আগে ২৩ মে আইএমএফের বোর্ডে বিষয়টি অনুমোদন হতে হবে। অনেক শর্তের মধ্যে এবার দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে পাওয়ার ক্ষেত্রে আলোচনার বড় অংশ আটকে ছিল মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা নিয়ে। এটি পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে না দিলেও সেখানে কিছুটা ছাড় দেওয়ার বিষয়ে সবশেষে সম্মতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে আলোচনার পরই আইএমএফ ঋণ ছাড়ে ইতিবাচক সাড়া দেয় বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বিদেশি মুদ্রার সরবরাহ সঙ্কটের মধ্যে শেখ হাসিনার সরকার আইএমএফের কাছে ঋণ চায়। কয়েক দফা আলোচনা শেষে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি সাত কিস্তিতে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে ওয়াশিংটনভিত্তিক আর্থিক সংস্থাটি। এরপর তিন কিস্তির অর্থও পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। ওই বছরের ডিসেম্বরে পায় দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। আর গত বছরের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি (১.১৫ বিলিয়ন) ডলার পেয়েছে। তিন কিস্তিতে আইএমএফের কাছ থেকে ২৩১ কোটি (২.৩১ বিলিয়ন) ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। ঋণের বাকি ২৩৯ কোটি (২.৩৯ বিলিয়ন) ডলার পাওয়ার কথা চার কিস্তিতে। এর মধ্যে দুই কিস্তির ১ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার পাওয়ার নিয়েই অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল।
এদিকে বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান বলেছেন, ‘সংস্কারের বিষয়ে বাংলাদেশের যে সদিচ্ছা আছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সেই বার্তা দিতেই ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করা হয়েছে।’ তবে কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে ডলারের দাম বেশি বেড়ে গেলে বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫
টাকা-ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার প্রথম দিন গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যাংকগুলোতে ডলারের দামে তেমন প্রভাব পড়েনি। তবে কার্ব মার্কেট বা খোলাবাজারে সামান্য বেড়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ পেতে গত বুধবার ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করার ঘোষণা দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা-ডলারের রেফারেন্স রেট ঘোষণা করে ১২১ টাকা ৯৫ পয়সা। আগের দিন বুধবার একই সময়ে রেফারেন্স রেট ছিল ১২১ টাকা ৯৯ পয়সা। অবশ্য বৃহস্পতিবার দিন শেষে (বিকাল ৫টা পর্যন্ত) রেফারেন্স রেট বেড়ে ১২১ টাকা ৯৯ পয়সায় উঠেছিল। বুধবার একই সময়ে রেফারেন্স রেট ছিল ১২১ টাকা ৯২ পয়সা। ব্যাংকগুলো মোটাদাগে ১২২ টাকার মধ্যে ডলার বেচাকেনা করছে বলে জানা গেছে। আমদানি, রপ্তানি, রেমিটেন্সে ডলার বেচা-কেনা হয়েছে ১২১ টাকা থেকে ১২২ টাকায়। তবে বৃহস্পতিবার খোলাবাজারে ১২৬ টাকা দরে ডলার বিক্রি হয়েছে। বুধবার বিক্রি হয়েছিল ১২৫ টাকা ৫০ পয়সায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক ১২২ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে। আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রেও একই দর নিয়েছে। জনতা ব্যাংক একই দরে ডলার কেনাবেচা করেছে। বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংক ১২৩ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে।আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রেও এই দর নিয়েছে। রেমিটেন্সের ক্ষেত্রে এই দর দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২৪ সালের ৭ মে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে টাকা-ডলারের বিনিময় হার ছিল ১১০ টাকা। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এক বছরে টাকার বিপরীতে ডলারের দর বেড়েছে ১০ দশমিক ৯০ শতাংশ। গতকাল বৃহস্পতিবার ডলারের দাম নিয়ে ব্যবসায়ী ও বিদেশ ভ্রমণে ইচ্ছুকদের বেশ আগ্রহ দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দেশের শীর্ষ কয়েকটি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলা জানা যায়, ব্যবসায়ীসহ গ্রাহকরা ডলারের খবর জানতে অন্য যেকোনো দিনের চেয়ে এদিন বেশি খোঁজ-খবর করেছেন। অনেকে ডলার কেনার জন্য ব্যাংকে গেছেন। খোলাবাজারেও একটু চাপ দেখা গেছে। অনেকে বাড়তি মুনাফার আশায় ডলার মজুত করার পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলোতে পাঁচ কোটি ডলারের নগদ মুদ্রা মজুত আছে। তাই যে কেউ গেলেই ব্যাংকগুলো ডলার বিক্রি করছে। গ্রাহকরা যাতে বাজার থেকে বেশি দামে ডলার না কেনেন, সে পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, টাকা-ডলারের বিনিময় হার যাতে কোনও অবস্থাতেই না বাড়ে, সেজন্য বুধবার থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোতে কড়া নজরদারি রাখা হয়। সে কারণেই বাজারভিত্তিক করার পরও ডলারের দর তেমন হেরফের হয়নি।
বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোও বৃহস্পতিবার বাড়তি দাম অফার করেনি। বেশি দাম চাওয়া কয়েকটি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে ডলার না কেনার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কম বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। অন্যদিকে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে দেশে বেশি রেমিটেন্স আসছে। পাশাপাশি নগদ ডলার ঢুকছে। এ কারণেও ঈদের আগে কোনোভাবেই ডলারের বাজার অস্থির হওয়ার আশঙ্কা নেই বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
গত বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সংবাদ সম্মেলনে ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করার ঘোষণা দেন। মূলত আইএমএফের ঋণের কিস্তি ছাড়ের শর্ত হিসেবে এই উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলার কেনাবেচার ক্ষেত্রে দাম কী হবে, তা ব্যাংক ও গ্রাহকের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। অর্থাৎ ডলারের দাম আরও বাজারভিত্তিক হবে, সঙ্গে থাকবে জোরদার তদারকি।
সংবাদ সম্মেলনে আহসান মনসুর বলেন, ‘বাজারভিত্তিক মানে এই নয় যে ডলার যেকোনো দামে কেনাবেচা হবে। আমাদের সরবরাহ পরিস্থিতি এবং পূর্বাভাস অনুযায়ী, যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করতে হবে। বড় ধরনের প্রয়োজন দেখা দিলে বাংলাদেশ ব্যাংক সহায়তা করবে।’
আইএমএফের ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণের বাকি কিস্তিগুলো পেতে সংস্থাটির কথামতো ডলারের দর বাজারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করা নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের দর কষাকষি চলছিল। মূলত সে কারণে আইএমএফ ঋণের কিস্তি ছাড় করছিল না।
এর মধ্যে মঙ্গলবার জানা যায়, বাংলাদেশ ডলারের বিনিময় আরও নমনীয় করতে রাজি হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে চলমান ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণের দুটি কিস্তি একসঙ্গে ছাড় করতে রাজি হয়েছে আইএমএফ। এরপর বুধবার গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন, ডলারের বিনিময় হার এখন থেকে বাজার ঠিক করবে। ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার এখন ভালো সময় বলেও বলেন তিনি।
আইএমএফের ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি হিসাবে ১ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার পাওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশের। তার আগে ২৩ মে আইএমএফের বোর্ডে বিষয়টি অনুমোদন হতে হবে। অনেক শর্তের মধ্যে এবার দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে পাওয়ার ক্ষেত্রে আলোচনার বড় অংশ আটকে ছিল মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা নিয়ে। এটি পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে না দিলেও সেখানে কিছুটা ছাড় দেওয়ার বিষয়ে সবশেষে সম্মতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে আলোচনার পরই আইএমএফ ঋণ ছাড়ে ইতিবাচক সাড়া দেয় বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বিদেশি মুদ্রার সরবরাহ সঙ্কটের মধ্যে শেখ হাসিনার সরকার আইএমএফের কাছে ঋণ চায়। কয়েক দফা আলোচনা শেষে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি সাত কিস্তিতে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে ওয়াশিংটনভিত্তিক আর্থিক সংস্থাটি। এরপর তিন কিস্তির অর্থও পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। ওই বছরের ডিসেম্বরে পায় দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। আর গত বছরের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি (১.১৫ বিলিয়ন) ডলার পেয়েছে। তিন কিস্তিতে আইএমএফের কাছ থেকে ২৩১ কোটি (২.৩১ বিলিয়ন) ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। ঋণের বাকি ২৩৯ কোটি (২.৩৯ বিলিয়ন) ডলার পাওয়ার কথা চার কিস্তিতে। এর মধ্যে দুই কিস্তির ১ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার পাওয়ার নিয়েই অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল।
এদিকে বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান বলেছেন, ‘সংস্কারের বিষয়ে বাংলাদেশের যে সদিচ্ছা আছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সেই বার্তা দিতেই ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করা হয়েছে।’ তবে কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে ডলারের দাম বেশি বেড়ে গেলে বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।