বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) নির্বাচন ঘিরে ইশতেহার ঘোষণা করেছে পোশাক মালিকদের নির্বাচনী প্ল্যাটফর্ম সম্মিলিত পরিষদ। এ সময় তারা ১২ দফা কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করে। বুধবার(২১-০৫- ২০২৫) রাজধানীর একটি হোটেলে এ ইশতেহার ঘোষণা করেন সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার মোঃ আবুল কালাম।
আবুল কালাম বলেন, ‘পোশাকশিল্পের একটি অধ্যায় আমরা পেরিয়ে এসেছি, পরবর্তী যাত্রা ১০০ বিলিয়ন ডলার ইন্ডাস্ট্রির পথে। তাই এই যাত্রায় দরকার আরও বেশি সতর্কতা। বর্তমানে আমরা একদিকে যেমন উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, গ্যাস-বিদুৎ সংকট, সাসটেইনেবিলিটি, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিউ ডিলিজেন্স (এইচআরইডিডি), সিএসডিডিডি, ট্রেসিয়াবিলিটিসহ ব্যবসা সংক্রান্ত বৈশ্বিক নীতিমালার পরিবর্তনের মুখোমুখি। অন্যদিকে আবার এই চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারলে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাবার হাতছানি। এমন সময়ের জন্য চাই অভিজ্ঞতা, তারুণ্য ও সাহসের সমন্বয়ে গঠিত নেতৃত্ব—যারা শ্রমিক, উদ্যোক্তা, নীতিনির্ধারক এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সমান দক্ষতায় কাজ করতে সক্ষম। আমরা সেই সব দক্ষতার সমন্বয়ে একটি সময়োপযোগী প্যানেল আপনাদের সামনে উপস্থিত করেছি আপনাদের সেবায়।’
সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার বলেন, ‘আমরা বর্তমানে একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। বৈশ্বিক অর্থনীতি, রাজনীতি, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন, জ্বালানি নিরাপত্তাসহ হাজারো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমরা আমাদের সম্ভাব্য কৌশলগত কর্ম পরিকল্পনা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি। আমাদের লক্ষ্য: একটি স্মার্ট ও ফিউচার ফিট বিজিএমইএ। সম্মিলিত পরিষদ যে ১২-দফা কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করেছে, তা শুধু অঙ্গীকার নয়—এটি বাস্তবভিত্তিক, সময়োপযোগী এবং সদস্যদের অংশগ্রহণে গঠিত রোডম্যাপ।’
এরপর ১২ দফা ইশতিহার ঘোষণা করেন আবুল কালাম। সেগুলো সংক্ষেপে নিচে দেওয়া হলো:
এসএমই সহায়তা সেল ও নীতিগত সহায়তা: আমরা বিজিএমইএর অধীনে একটি বিশেষ এসএমই সহায়তা সেল গঠন করব, যা ক্ষুদ্র ও মাঝারি পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাঠামোগত, আর্থিক এবং নীতিগত প্রতিবন্ধকতা দূর করতে কাজ করবে। এই সেলটি হবে পরামর্শ, সুযোগপ্রাপ্তি এবং নীতিগত সংস্কারের একটি কেন্দ্র, যা এসএমইগুলোকে সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করবে।
বিদ্যুৎ-জ্বালানি নিরাপত্তা ও বিকল্প প্রণোদনা: আমরা সরকার ও বিদ্যুৎ-গ্যাস সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে শক্তিশালীভাবে আলোচনা চালিয়ে যাব, যাতে বিশেষ করে উৎপাদনের মৌসুমি চূড়ান্ত সময়গুলোতে তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর জন্য গ্যাস ও বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়। একই সঙ্গে, যখন সরকার নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিতে পারছে না, তখন আমরা এমন একটি বিকল্প প্রণোদনা ও সুবিধা প্যাকেজের পক্ষে জোরালোভাবে তদবির করব, যা বিদ্যুৎ-গ্যাস সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত কারখানাগুলোর জন্য সহায়ক হবে।
ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ এর জন্য তৈরি তৈরি পোশাক খাতের কর্মীবাহিনী: বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পকে ডিজিটাল ও সাসটেইনেবল ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে আমরা শ্রমিক, তত্ত্বাবধায়ক ও মধ্য-পর্যায়ের ব্যবস্থাপকদের জন্য গঠনমূলক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করব। একাডেমিক প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে, আমরা একটি শিল্প-উপযোগী ও ভবিষ্যতের জন্য সুরক্ষিত মানবসম্পদ তৈরি করব।
অর্থায়ন সহজীকরণ: আমরা বিজিএমইএর অধীনে একটি বিশেষ গ্রিন ফান্ডিং ডেস্ক প্রতিষ্ঠা করব, যা বিশেষ করে এসএমই কারখানাগুলোকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সাসটেইনেবিলিটি তহবিল ব্যবহারে সহায়তা করবে।
একইসঙ্গে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য ঋণের সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে নীতিগত সংস্কারের পক্ষে আমরা তদবির করব, যাতে কার্যকর মূলধনের অ্যাক্সেস সহজ হয় এবং বিনিয়োগ আরও সাশ্রয়ী হয়।
বাজার ও পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ: আমরা বাজার ও পণ্যের বৈচিত্র্যকরণে সক্রিয়ভাবে কাজ করব, যাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকার মতো নতুন ও সম্ভাবনাময় অঞ্চলে রপ্তানি বাড়ানো করা যায়।
বিকল্প প্রণোদনা নীতি: এলডিসি থেকে উত্তরণের পর তৈরি পোশাকশিল্পের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য আমরা সরকার ও সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি বিকল্প প্রণোদনা নীতি প্রণয়নের জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করব। যখন প্রচলিত বাণিজ্য সুবিধাগুলো ধাপে ধাপে কমে আসবে, তখন এই নীতি বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পকে স্মার্ট রাজস্ব ব্যবস্থা, মজুরি স্থিতিশীলতা, ক্রেতাদের সঙ্গে সমন্বিত সহযোগিতা কাঠামো এবং খাতভিত্তিক সহায়তা টুলস মাধ্যমে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা বজায় রাখতে সহায়তা করবে। এই নীতির উদ্দেশ্য হবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে কর্মসংস্থান রক্ষা করা, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা এবং এলডিসি পরবর্তী অর্থনৈতিক পর্বে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে সব ধরনের কারখানা- বিশেষ করে এসএমইগুলোর জন্য—উত্তরণ প্রক্রিয়াকে সহজ ও সহনীয় করে তোলা।
বাণিজ্য সহায়তা ও এনবিআর সংস্কার: আমরা রপ্তানি প্রক্রিয়ার বাধা দূর ও নীতিপালন সহজ করতে কাস্টমস, ভ্যাট ও বন্ড ব্যবস্থায় সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে যাব। এর ফলে এসএমই ও নন-বন্ডেড কারখানাসহ সব ধরনের রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান বিশ্ববাজারে কম খরচে এবং কম দেরিতে প্রতিযোগিতা করতে পারবে। আমরা বন্দর-সংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলোর সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছি এবং তৈরি পোশাক খাতের জন্য গ্রিন চ্যানেল সুবিধা চালুর লক্ষ্যে কাজ অব্যাহত রাখব।
রপ্তানি সহায়তা ওয়ান-স্টপ সাপোর্ট সেল: আমরা বিজিএমইএর অধীনে একটি কেন্দ্রীয় সহায়তা প্ল্যাটফর্ম- ‘রপ্তানি সহায়তা ওয়ান-স্টপ সাপোর্ট’ সেল প্রতিষ্ঠা করব, যা সদস্যদের বিশেষ করে এসএমই, নারী নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠান এবং দ্বিতীয় প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের জন্য বাণিজ্যিক বুদ্ধিমত্তা, প্রবৃদ্ধির সরঞ্জাম এবং কারিগরি সহায়তায় সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করবে।
সামাজিক নীতিপালন উন্নয়ন কর্মসূচি: আমরা একটি বিজিএমইএ অনুমোদিত ইউনিফাইড কোড অব কনডাক্ট চালু করব, যা আন্তর্জাতিক ক্রেতা, আইএলও, অডিট সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে যৌথভাবে প্রণয়ন করা হবে। এর লক্ষ্য হলো একটি শিল্পব্যাপী নীতিপালন কাঠামো তৈরি করা, যা বহু পক্ষের দ্বারা স্বীকৃত হবে এবং আন্তর্জাতিক ডিউ ডিলিজেন্স মানদ- পূরণ করবে।
পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের সবুজ রূপান্তর: আমরা একটি সবুজ রূপান্তর কাঠামো বাস্তবায়ন করব, যেখানে সার্কুলারিটি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও ডিকার্বোনাইজেশনকে কৌশলগত ব্যবসায়িক উপাদান হিসেবে ব্যবহার করে কারখানার দক্ষতা, ক্রেতাদের আস্থা এবং বাংলাদেশের বৈশ্বিক সোর্সিং আকর্ষণ বৃদ্ধি করা হবে। নীতিমালা, কারিগরি সহায়তা ও আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা কারখানাগুলোকে এমন সাসটেইনেবল পদ্ধতিতে স্থানান্তরের সহায়তা করব, যা বাস্তব ও পরিমাপযোগ্য ফলাফল দেবে।
মেড ইন বাংলাদেশ- প্রিমিয়াম এডিশন: মেড ইন বাংলাদেশ- প্রমিয়াম এডিশন নামে একটি নতুন ব্র্যান্ডিং ক্যাম্পেইন চালু করব, যার মাধ্যমে বাংলাদেশকে কেবল একটি স্বল্পমূল্যের উৎপাদনভিত্তি হিসেবে নয়, বরং একটি আধুনিক, সাসটেইনেবল ও মূল্যনির্ভর সোর্সিং গন্তব্য হিসেবে বৈশ্বিকভাবে পুনঃস্থাপন করা হবে।
অ্যাপারেল ডিপ্লোম্যাসি ও দায়িত্বশীল এক্সিট পলিসি: বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিযোগিতা সক্ষমতা রক্ষা করতে আমরা দ্বিমুখী কৌশল গ্রহণ করব। একদিকে অ্যাপারেল ডিপ্লোম্যাসি চালিয়ে যাব যাতে অগ্রাধিকারমূলক বাজার প্রবেশাধিকার ও বাজার সম্প্রসারণ নিশ্চিত হয়। অন্যদিকে, দায়িত্বশীল এক্সিট পলিসি বাস্তবায়ন করব, যা ক্ষতিগ্রস্ত কারখানাগুলোকে সম্মানজনকভাবে বন্ধ হওয়ার সুযোগ দেবে, শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা করবে এবং উদ্যোক্তাদের পুনরুদ্ধার ও পুনঃবিনিয়োগে সহায়তা করবে।
বুধবার, ২১ মে ২০২৫
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) নির্বাচন ঘিরে ইশতেহার ঘোষণা করেছে পোশাক মালিকদের নির্বাচনী প্ল্যাটফর্ম সম্মিলিত পরিষদ। এ সময় তারা ১২ দফা কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করে। বুধবার(২১-০৫- ২০২৫) রাজধানীর একটি হোটেলে এ ইশতেহার ঘোষণা করেন সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার মোঃ আবুল কালাম।
আবুল কালাম বলেন, ‘পোশাকশিল্পের একটি অধ্যায় আমরা পেরিয়ে এসেছি, পরবর্তী যাত্রা ১০০ বিলিয়ন ডলার ইন্ডাস্ট্রির পথে। তাই এই যাত্রায় দরকার আরও বেশি সতর্কতা। বর্তমানে আমরা একদিকে যেমন উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, গ্যাস-বিদুৎ সংকট, সাসটেইনেবিলিটি, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিউ ডিলিজেন্স (এইচআরইডিডি), সিএসডিডিডি, ট্রেসিয়াবিলিটিসহ ব্যবসা সংক্রান্ত বৈশ্বিক নীতিমালার পরিবর্তনের মুখোমুখি। অন্যদিকে আবার এই চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারলে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাবার হাতছানি। এমন সময়ের জন্য চাই অভিজ্ঞতা, তারুণ্য ও সাহসের সমন্বয়ে গঠিত নেতৃত্ব—যারা শ্রমিক, উদ্যোক্তা, নীতিনির্ধারক এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সমান দক্ষতায় কাজ করতে সক্ষম। আমরা সেই সব দক্ষতার সমন্বয়ে একটি সময়োপযোগী প্যানেল আপনাদের সামনে উপস্থিত করেছি আপনাদের সেবায়।’
সম্মিলিত পরিষদের প্যানেল লিডার বলেন, ‘আমরা বর্তমানে একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। বৈশ্বিক অর্থনীতি, রাজনীতি, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন, জ্বালানি নিরাপত্তাসহ হাজারো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমরা আমাদের সম্ভাব্য কৌশলগত কর্ম পরিকল্পনা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি। আমাদের লক্ষ্য: একটি স্মার্ট ও ফিউচার ফিট বিজিএমইএ। সম্মিলিত পরিষদ যে ১২-দফা কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করেছে, তা শুধু অঙ্গীকার নয়—এটি বাস্তবভিত্তিক, সময়োপযোগী এবং সদস্যদের অংশগ্রহণে গঠিত রোডম্যাপ।’
এরপর ১২ দফা ইশতিহার ঘোষণা করেন আবুল কালাম। সেগুলো সংক্ষেপে নিচে দেওয়া হলো:
এসএমই সহায়তা সেল ও নীতিগত সহায়তা: আমরা বিজিএমইএর অধীনে একটি বিশেষ এসএমই সহায়তা সেল গঠন করব, যা ক্ষুদ্র ও মাঝারি পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাঠামোগত, আর্থিক এবং নীতিগত প্রতিবন্ধকতা দূর করতে কাজ করবে। এই সেলটি হবে পরামর্শ, সুযোগপ্রাপ্তি এবং নীতিগত সংস্কারের একটি কেন্দ্র, যা এসএমইগুলোকে সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করবে।
বিদ্যুৎ-জ্বালানি নিরাপত্তা ও বিকল্প প্রণোদনা: আমরা সরকার ও বিদ্যুৎ-গ্যাস সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে শক্তিশালীভাবে আলোচনা চালিয়ে যাব, যাতে বিশেষ করে উৎপাদনের মৌসুমি চূড়ান্ত সময়গুলোতে তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর জন্য গ্যাস ও বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়। একই সঙ্গে, যখন সরকার নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিতে পারছে না, তখন আমরা এমন একটি বিকল্প প্রণোদনা ও সুবিধা প্যাকেজের পক্ষে জোরালোভাবে তদবির করব, যা বিদ্যুৎ-গ্যাস সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত কারখানাগুলোর জন্য সহায়ক হবে।
ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ এর জন্য তৈরি তৈরি পোশাক খাতের কর্মীবাহিনী: বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পকে ডিজিটাল ও সাসটেইনেবল ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে আমরা শ্রমিক, তত্ত্বাবধায়ক ও মধ্য-পর্যায়ের ব্যবস্থাপকদের জন্য গঠনমূলক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করব। একাডেমিক প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে, আমরা একটি শিল্প-উপযোগী ও ভবিষ্যতের জন্য সুরক্ষিত মানবসম্পদ তৈরি করব।
অর্থায়ন সহজীকরণ: আমরা বিজিএমইএর অধীনে একটি বিশেষ গ্রিন ফান্ডিং ডেস্ক প্রতিষ্ঠা করব, যা বিশেষ করে এসএমই কারখানাগুলোকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সাসটেইনেবিলিটি তহবিল ব্যবহারে সহায়তা করবে।
একইসঙ্গে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য ঋণের সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে নীতিগত সংস্কারের পক্ষে আমরা তদবির করব, যাতে কার্যকর মূলধনের অ্যাক্সেস সহজ হয় এবং বিনিয়োগ আরও সাশ্রয়ী হয়।
বাজার ও পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ: আমরা বাজার ও পণ্যের বৈচিত্র্যকরণে সক্রিয়ভাবে কাজ করব, যাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকার মতো নতুন ও সম্ভাবনাময় অঞ্চলে রপ্তানি বাড়ানো করা যায়।
বিকল্প প্রণোদনা নীতি: এলডিসি থেকে উত্তরণের পর তৈরি পোশাকশিল্পের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য আমরা সরকার ও সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি বিকল্প প্রণোদনা নীতি প্রণয়নের জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করব। যখন প্রচলিত বাণিজ্য সুবিধাগুলো ধাপে ধাপে কমে আসবে, তখন এই নীতি বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পকে স্মার্ট রাজস্ব ব্যবস্থা, মজুরি স্থিতিশীলতা, ক্রেতাদের সঙ্গে সমন্বিত সহযোগিতা কাঠামো এবং খাতভিত্তিক সহায়তা টুলস মাধ্যমে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা বজায় রাখতে সহায়তা করবে। এই নীতির উদ্দেশ্য হবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে কর্মসংস্থান রক্ষা করা, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা এবং এলডিসি পরবর্তী অর্থনৈতিক পর্বে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে সব ধরনের কারখানা- বিশেষ করে এসএমইগুলোর জন্য—উত্তরণ প্রক্রিয়াকে সহজ ও সহনীয় করে তোলা।
বাণিজ্য সহায়তা ও এনবিআর সংস্কার: আমরা রপ্তানি প্রক্রিয়ার বাধা দূর ও নীতিপালন সহজ করতে কাস্টমস, ভ্যাট ও বন্ড ব্যবস্থায় সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে যাব। এর ফলে এসএমই ও নন-বন্ডেড কারখানাসহ সব ধরনের রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান বিশ্ববাজারে কম খরচে এবং কম দেরিতে প্রতিযোগিতা করতে পারবে। আমরা বন্দর-সংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলোর সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছি এবং তৈরি পোশাক খাতের জন্য গ্রিন চ্যানেল সুবিধা চালুর লক্ষ্যে কাজ অব্যাহত রাখব।
রপ্তানি সহায়তা ওয়ান-স্টপ সাপোর্ট সেল: আমরা বিজিএমইএর অধীনে একটি কেন্দ্রীয় সহায়তা প্ল্যাটফর্ম- ‘রপ্তানি সহায়তা ওয়ান-স্টপ সাপোর্ট’ সেল প্রতিষ্ঠা করব, যা সদস্যদের বিশেষ করে এসএমই, নারী নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠান এবং দ্বিতীয় প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের জন্য বাণিজ্যিক বুদ্ধিমত্তা, প্রবৃদ্ধির সরঞ্জাম এবং কারিগরি সহায়তায় সমান প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করবে।
সামাজিক নীতিপালন উন্নয়ন কর্মসূচি: আমরা একটি বিজিএমইএ অনুমোদিত ইউনিফাইড কোড অব কনডাক্ট চালু করব, যা আন্তর্জাতিক ক্রেতা, আইএলও, অডিট সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে যৌথভাবে প্রণয়ন করা হবে। এর লক্ষ্য হলো একটি শিল্পব্যাপী নীতিপালন কাঠামো তৈরি করা, যা বহু পক্ষের দ্বারা স্বীকৃত হবে এবং আন্তর্জাতিক ডিউ ডিলিজেন্স মানদ- পূরণ করবে।
পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের সবুজ রূপান্তর: আমরা একটি সবুজ রূপান্তর কাঠামো বাস্তবায়ন করব, যেখানে সার্কুলারিটি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও ডিকার্বোনাইজেশনকে কৌশলগত ব্যবসায়িক উপাদান হিসেবে ব্যবহার করে কারখানার দক্ষতা, ক্রেতাদের আস্থা এবং বাংলাদেশের বৈশ্বিক সোর্সিং আকর্ষণ বৃদ্ধি করা হবে। নীতিমালা, কারিগরি সহায়তা ও আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা কারখানাগুলোকে এমন সাসটেইনেবল পদ্ধতিতে স্থানান্তরের সহায়তা করব, যা বাস্তব ও পরিমাপযোগ্য ফলাফল দেবে।
মেড ইন বাংলাদেশ- প্রিমিয়াম এডিশন: মেড ইন বাংলাদেশ- প্রমিয়াম এডিশন নামে একটি নতুন ব্র্যান্ডিং ক্যাম্পেইন চালু করব, যার মাধ্যমে বাংলাদেশকে কেবল একটি স্বল্পমূল্যের উৎপাদনভিত্তি হিসেবে নয়, বরং একটি আধুনিক, সাসটেইনেবল ও মূল্যনির্ভর সোর্সিং গন্তব্য হিসেবে বৈশ্বিকভাবে পুনঃস্থাপন করা হবে।
অ্যাপারেল ডিপ্লোম্যাসি ও দায়িত্বশীল এক্সিট পলিসি: বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিযোগিতা সক্ষমতা রক্ষা করতে আমরা দ্বিমুখী কৌশল গ্রহণ করব। একদিকে অ্যাপারেল ডিপ্লোম্যাসি চালিয়ে যাব যাতে অগ্রাধিকারমূলক বাজার প্রবেশাধিকার ও বাজার সম্প্রসারণ নিশ্চিত হয়। অন্যদিকে, দায়িত্বশীল এক্সিট পলিসি বাস্তবায়ন করব, যা ক্ষতিগ্রস্ত কারখানাগুলোকে সম্মানজনকভাবে বন্ধ হওয়ার সুযোগ দেবে, শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা করবে এবং উদ্যোক্তাদের পুনরুদ্ধার ও পুনঃবিনিয়োগে সহায়তা করবে।