alt

অর্থ-বাণিজ্য

২৪ দিনে এলো সোয়া ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : সোমবার, ২৬ মে ২০২৫

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে। গড়তে চলেছে অনন্য রেকর্ড। চলতি মে মাসের ২৪ দিনেই সোয়া দুই বিলিয়ন (২২৫ কোটি) ডলার রেমিটেন্সে পাঠিয়েছেন বিশ্বে বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা আশা করছেন, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে আরও বেশি রেমিটেন্স আসবে দেশে। সব মিলিয়ে চলতি অর্থ বছর শেষে রেমিটেন্সের অঙ্ক ৩ হাজার কোটি (৩০ বিলিয়ন) ডলারে গিয়ে পৌঁছতে পারে, যা হবে নতুন ইতিহাস।

বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল রোববার রেমিটেন্সের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি মে মাসের প্রথম ২৪ দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ২২৪ কোটি (২.২৪ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। রেমিটেন্সে প্রতি ডলারে ১২৩ টাকা টাকা দিচ্ছে এখন ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে টাকার অঙ্কে এই ২৪ দিনে ২৭ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৯ কোটি ৩৬ লাখ ডলার; টাকার অঙ্কে যা ১ হাজার ১৫১ কোটি। মে মাস ৩১ দিনে। মাসের বাকি ৭ দিনে (২৫ থেকে ৩১ মে) এই হারে এলে মাস শেষে রেমিটেন্সের অঙ্ক ২৯০ কোটি (২.৯০ বিলিয়ন) ডলার ছাড়িয়ে, যা হবে একক মাসের হিসাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

রোজা ও ঈদ সামনে রেখে গত মাস মার্চে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ৩২৯ কোটি ৫৬ লাখ (৩.২৯ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স আসে দেশে, যা ছিল গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ৬৫ শতাংশ বেশি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৭৫ কোটি ১৯ লাখ (২.৭৫ বিলিয়ন) ডলার আসে গত এপ্রিল মাসে। এই রেমিটেন্সের ওপর ভর করেই বেশ কিছুদিন ধরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকা বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভে স্বস্তি ফেরার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

গত ৬ মে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পরও বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে অবস্থান করছে। গ্রস হিসাবে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ২৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি। আকুর বিল শোধের আগে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২২ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৭ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, ২২ মে বৃহস্পতিবার বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার।

দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে এখন সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়। বলা যায়, সঙ্কটের এই সময়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে রেমিটেন্স। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও তা অকপটে স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রবাসীদের সহযোগিতার কারণে বাংলাদেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।

গত ২৪ এপ্রিল কাতারের রাজধানী দোহায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আজ যে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পেরেছি, তার মূলে আপনারা (প্রবাসীরা)। আপনারা সহযোগিতা না করলে আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারতাম না। আপনারা কখনও আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন ভাববেন না।’

প্রতিবারই দুই ঈদ সামনে রেখে প্রবাসীরা বেশি রেমিটেন্স পাঠান। তারপর কমে যায়। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম দেখা যায়। গত ৩১ মার্চ ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। ঈদের পরও সেই আগের গতিতেই বাড়ছে অর্থনীতির এই সূচক। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে। এই ঈদ ঘিরেও প্রবাসীরা পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি রেমিটেন্স পাঠাবেন বলে আশা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

সব মিলিয়ে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের ১০ মাস ২৪ দিনে (২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ২৪ মে) ২ হাজার ৬৭৮ কোটি ২৮ লাখ (২৬.৭৮ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স এসেছে দেশে, যা গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের পুরো সময়ের (১২ মাস, ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন) চেয়েও ১২ শতাংশ বেশি। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ২ হাজার ৩৯১ কোটি ২২ লাখ (২৩.৯১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের ২৪ মে পর্যন্ত ২৬ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতি মাসের গড় হিসাবে এসেছে প্রায় ২ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। অর্থ বছরের বাকি ১ মাস ৭ দিনে (২৫ মে থেকে ৩০ জুন) এই হারে এলে এবার মোট রেমিটেন্সের অঙ্ক প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে পৌছবে। আর সেটা আরেকটি রেকর্ড। এর আগে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে, ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার।

গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে রেমিটেন্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এসেছিল ২২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থ বছরে এসেছিল ২১ দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলার। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে এসেছিল ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছর শুরু হয়েছিল গত বছরের জুলাই থেকে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে ওই মাস ছিল উত্তাল; দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল। কয়েক দিন ব্যাংক ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ ছিল। সে কারণে জুলাই মাসে রেমিটেন্স প্রবাহ কিছুটা কমেছিল; এসেছিল ১৯১ কোটি ৩৭ কোটি (১.৯১ বিলিয়ন) ডলার। তার আগের তিন মাস অবশ্য ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি এসেছিল। তবে তারপর থেকে প্রতি মাসেই ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স দেশে এসেছে। মার্চে এসেছে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি। এপ্রিল মাসে আসে পৌনে ৩ বিলিয়ন ডলার। চলতি মে মাসের ২৪ দিনে এসেছে সোয়া ২ বিলিয়ন ডলার।

অর্থাৎ চলতি অর্থ বছরের ১১ মাসের দশ মাসেই (আগস্ট-মে) ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছে। প্রতি মাসের গড় হিসাবে এসেছে প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এমন দেখা যায়নি। ২০২৫ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ (২.১৮ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে এসেছিল ২৬৪ কোটি (২.৬৪ বিলিয়ন) ডলার। চলতি অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ (১.৯১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। দ্বিতীয় মাস আগস্টে তারা পাঠান ২২২ কোটি ৪১ লাখ (২.২২ বিলিয়ন) ডলার। তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে এসেছিল ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ (২.৪০ বিলিয়ন) ডলার। চতুর্থ মাস অক্টোবরে আসে ২৩৯ কোটি ৫১ লাখ (২.৩৯ বিলিয়ন) ডলার। পঞ্চম মাস নভেম্বরে এসেছিল ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ (২ বিলিয়ন) ডলার।

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানিসহ পাঁচ দেশে আনুষ্ঠানিক আম রপ্তানি শুরু

এমএফএসের মাধ্যমে ২০২২ সালে ৭৫,০০০ কোটি টাকা পাচার: টিআইবি

আরও ৬২ পয়েন্ট সূচক হারালো পুঁজিবাজার

ছবি

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পিছিয়ে আছে রাজস্ব আদায়

বন্ডের সুদ কমায় মার্কিন শেয়ারবাজারে বড় উত্থান

এলএনজি, ভোজ্যতেল ও সার কিনবে সরকার

ছবি

বার্জার পেইন্টসের রাইট শেয়ার অনুমোদন

ছবি

আরও একটি আরএমজি কারখানা পেল লিড সনদ

ছবি

গ্রামীণফোন ও সুখীর মধ্যে চুক্তি

ছবি

শপআপের গেটওয়ে গালফ : সৌদি আরবের খুচরা বাজারে বাংলাদেশি পণ্য

বিবিএস-এর সাময়িক হিসাব: মাথাপিছু আয় ৮২ ডলার বেড়ে নতুন রেকর্ড

ছবি

গত ৯ মাসে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে: বিডা

ছবি

সমস্যাগ্রস্ত ২০ আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স বাতিলের নোটিশ

ছবি

২০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে: গভর্নর

ছবি

ব্র্যাক ব্যাংক ছাড়লেন সেলিম আর এফ হোসেন

মাতারবাড়ীর জন্য বিদেশি বিনিয়োগ ‘অত্যন্ত জরুরি’: ইউনূস

এলসি খোলার ‘সুযোগ পাচ্ছে’ বেক্সিমকোর সচল কোম্পানি

ছবি

অনারের ঈদ অফার

ছবি

ঈদে বিকাশে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স গ্রহণ করে প্রতিদিন ফ্রিজ-টিভি জেতার সুযোগ

ছবি

বাজারে আইটেল সিটি সিরিজের নতুন স্মার্টফোন সিটি ১০০

ছবি

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বতন্ত্র ও বিশেষায়িত বিভাগ হবে এনবিআর

ছবি

জুনে বাংলাদেশে আসছে ১০০ চীনা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, হবে দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন

ছবি

বাংলাদেশকে ২৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক

ছবি

অনলাইন জুয়া: বন্ধ হচ্ছে হাজারের বেশি মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট

ছবি

প্রকল্পে বিনিয়োগের তুলনায় রিটার্ন নিয়ে প্রশ্ন আছে: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি

রিয়েলমির ঈদ ক্যাম্পেইনে থাকছে লাখ টাকা ক্যাশসহ নিশ্চিত পুরস্কার

ছবি

দেশের বাজারে স্যামসাংয়ের নতুন স্মার্টফোন গ্যালাক্সি এ৫৬ ফাইভজি

ছবি

ঈদে নকিয়ার ক্রেজি সামার অফার

কর্মবিরতি প্রত্যাহার, এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবি বহাল

ছবি

‘রাজস্ব সংস্কার ঐক্য পরিষদ’-এর আন্দোলন আরও জোরালো, সোমবার থেকে পূর্ণ কর্মবিরতি

ছবি

আন্তর্জাতিক সনদের অভাবে চামড়া শিল্পের সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না: ডিসিসিআই

ছবি

১০ মাসে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি সাড়ে ৭১ হাজার কোটি টাকা

ছবি

প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ৫, খাসির ২ টাকা বাড়লো

ছবি

দেশের শেয়ারবাজার এখন ‘ডাকাতদের আড্ডা’: প্রেস সচিব

ছবি

কর্মবিরতির প্রভাবে চট্টগ্রাম বন্দরে ২৪ হাজার কনটেইনার নিয়ে সাগরে ভাসছে ১৭ জাহাজ

চামড়া সংরক্ষণে নির্দেশনা, ঢাকায় ১০ দিনের আগে ঢুকবে না কাঁচা চামড়া

tab

অর্থ-বাণিজ্য

২৪ দিনে এলো সোয়া ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

সোমবার, ২৬ মে ২০২৫

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে। গড়তে চলেছে অনন্য রেকর্ড। চলতি মে মাসের ২৪ দিনেই সোয়া দুই বিলিয়ন (২২৫ কোটি) ডলার রেমিটেন্সে পাঠিয়েছেন বিশ্বে বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা আশা করছেন, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে আরও বেশি রেমিটেন্স আসবে দেশে। সব মিলিয়ে চলতি অর্থ বছর শেষে রেমিটেন্সের অঙ্ক ৩ হাজার কোটি (৩০ বিলিয়ন) ডলারে গিয়ে পৌঁছতে পারে, যা হবে নতুন ইতিহাস।

বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল রোববার রেমিটেন্সের সাপ্তাহিক যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি মে মাসের প্রথম ২৪ দিনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ২২৪ কোটি (২.২৪ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। রেমিটেন্সে প্রতি ডলারে ১২৩ টাকা টাকা দিচ্ছে এখন ব্যাংকগুলো। সে হিসাবে টাকার অঙ্কে এই ২৪ দিনে ২৭ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতিদিনের গড় হিসাবে এসেছে ৯ কোটি ৩৬ লাখ ডলার; টাকার অঙ্কে যা ১ হাজার ১৫১ কোটি। মে মাস ৩১ দিনে। মাসের বাকি ৭ দিনে (২৫ থেকে ৩১ মে) এই হারে এলে মাস শেষে রেমিটেন্সের অঙ্ক ২৯০ কোটি (২.৯০ বিলিয়ন) ডলার ছাড়িয়ে, যা হবে একক মাসের হিসাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

রোজা ও ঈদ সামনে রেখে গত মাস মার্চে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ৩২৯ কোটি ৫৬ লাখ (৩.২৯ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স আসে দেশে, যা ছিল গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ৬৫ শতাংশ বেশি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৭৫ কোটি ১৯ লাখ (২.৭৫ বিলিয়ন) ডলার আসে গত এপ্রিল মাসে। এই রেমিটেন্সের ওপর ভর করেই বেশ কিছুদিন ধরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকা বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভে স্বস্তি ফেরার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

গত ৬ মে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পরও বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে অবস্থান করছে। গ্রস হিসাবে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ২৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি। আকুর বিল শোধের আগে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২২ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৭ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, ২২ মে বৃহস্পতিবার বিপিএম-৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার।

দেশের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে এখন সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়। বলা যায়, সঙ্কটের এই সময়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে রেমিটেন্স। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও তা অকপটে স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রবাসীদের সহযোগিতার কারণে বাংলাদেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।

গত ২৪ এপ্রিল কাতারের রাজধানী দোহায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আজ যে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পেরেছি, তার মূলে আপনারা (প্রবাসীরা)। আপনারা সহযোগিতা না করলে আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারতাম না। আপনারা কখনও আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন ভাববেন না।’

প্রতিবারই দুই ঈদ সামনে রেখে প্রবাসীরা বেশি রেমিটেন্স পাঠান। তারপর কমে যায়। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম দেখা যায়। গত ৩১ মার্চ ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়েছে। ঈদের পরও সেই আগের গতিতেই বাড়ছে অর্থনীতির এই সূচক। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে। এই ঈদ ঘিরেও প্রবাসীরা পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি রেমিটেন্স পাঠাবেন বলে আশা করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

সব মিলিয়ে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের ১০ মাস ২৪ দিনে (২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ২৪ মে) ২ হাজার ৬৭৮ কোটি ২৮ লাখ (২৬.৭৮ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স এসেছে দেশে, যা গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের পুরো সময়ের (১২ মাস, ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন) চেয়েও ১২ শতাংশ বেশি। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ২ হাজার ৩৯১ কোটি ২২ লাখ (২৩.৯১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের ২৪ মে পর্যন্ত ২৬ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। প্রতি মাসের গড় হিসাবে এসেছে প্রায় ২ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। অর্থ বছরের বাকি ১ মাস ৭ দিনে (২৫ মে থেকে ৩০ জুন) এই হারে এলে এবার মোট রেমিটেন্সের অঙ্ক প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে পৌছবে। আর সেটা আরেকটি রেকর্ড। এর আগে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে, ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার।

গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে রেমিটেন্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এসেছিল ২২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থ বছরে এসেছিল ২১ দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলার। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে এসেছিল ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছর শুরু হয়েছিল গত বছরের জুলাই থেকে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে ওই মাস ছিল উত্তাল; দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল। কয়েক দিন ব্যাংক ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ ছিল। সে কারণে জুলাই মাসে রেমিটেন্স প্রবাহ কিছুটা কমেছিল; এসেছিল ১৯১ কোটি ৩৭ কোটি (১.৯১ বিলিয়ন) ডলার। তার আগের তিন মাস অবশ্য ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি এসেছিল। তবে তারপর থেকে প্রতি মাসেই ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স দেশে এসেছে। মার্চে এসেছে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি। এপ্রিল মাসে আসে পৌনে ৩ বিলিয়ন ডলার। চলতি মে মাসের ২৪ দিনে এসেছে সোয়া ২ বিলিয়ন ডলার।

অর্থাৎ চলতি অর্থ বছরের ১১ মাসের দশ মাসেই (আগস্ট-মে) ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স এসেছে। প্রতি মাসের গড় হিসাবে এসেছে প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এমন দেখা যায়নি। ২০২৫ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ (২.১৮ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে এসেছিল ২৬৪ কোটি (২.৬৪ বিলিয়ন) ডলার। চলতি অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ (১.৯১ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। দ্বিতীয় মাস আগস্টে তারা পাঠান ২২২ কোটি ৪১ লাখ (২.২২ বিলিয়ন) ডলার। তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে এসেছিল ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ (২.৪০ বিলিয়ন) ডলার। চতুর্থ মাস অক্টোবরে আসে ২৩৯ কোটি ৫১ লাখ (২.৩৯ বিলিয়ন) ডলার। পঞ্চম মাস নভেম্বরে এসেছিল ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ (২ বিলিয়ন) ডলার।

back to top