পট পরিবর্তনের পর ‘অনিয়মের’ মাধ্যমে নেওয়া খেলাপি ঋণের একের পর এক তথ্য বেরিয়ে আসায় নানা সমস্যায় ভুগছিলো বেক্সিমকো গ্রুপ। এরই মধ্যে বেক্সিমকোর চালু কোম্পানিগুলোকে টিকিয়ে রাখতে বিশেষ ব্যবস্থায় এলসি খোলার ’সুযোগ দিচ্ছে’ বাংলাদেশ ব্যাংক।
শতভাগ মার্জিন এবং প্রতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনসহ একাধিক শর্ত মেনে ঋণপত্র বা এলসি খোলার বিষয়ে সবুজ সংকেত দিয়েছেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক সভায় রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে গভর্নরের এমন নির্দেশনার কথা বলেছেন, দু’টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী।
বেক্সিমকো গ্রুপের কাছ থেকে খেলাপি ঋণের অর্থ উদ্ধার এবং বিতরণ করা ঋণের অর্থ সময়মত ফেরত পাওয়া নিয়ে ২০ ব্যাংক এবং ব্যাংক বর্হিভূত সাতটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ওই বৈঠক করেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বেক্সিমকো গ্রুপ নিয়ে আয়োজিত শনিবারের ওই বৈঠকে অর্থ সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার এবং প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর উপস্থিত থাকার কথা বলেছেন।
ওই সভায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সুবিধা পেয়ে আসা বেক্সিমকো গ্রুপের ‘কিছুটা ভালো অবস্থায়’ থাকা কোম্পানিগুলো যাতে ব্যবসা করে টিকে থাকতে পারে এবং ব্যাংকগুলোকে টাকা ফেরত দিতে পারে, সেজন্য এলসির সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয় বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক ব্যাংকার মত দেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সভায় বলা হয়, এসব কোম্পানি বন্ধ করার কোনো পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেই।
ভাই সোহেল এফ রহমানকে নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানিগুলোর পর্ষদ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন।
পট পরিবর্তনের পর গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন সালমান এফ রহমান। আর সরকার পতনের পর বেক্সিমকো গ্রুপের একাধিক ‘অনিয়মের’ তথ্য সামনে আনছে সরকারের একাধিক সংস্থা। পণ্য রপ্তানির আড়ালে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান রহমানসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা করেছে সিআইডি।
সালমান ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে দুদকও অনুসন্ধান করছে। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) গত অগাস্টেই সালমান, তার ছেলে শায়ান ও পুত্রবধূ শাজরেহ রহমানের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করেছে।
কাগুজে কোম্পানি খুলে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে টাকা পাচার এবং ঋণের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সালমান, শায়ান এবং সোহেল এফ রহমানের ছেলে শাহরিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে দুদক।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও (এনবিআর)বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে সালমানের পরিবার ও বেক্সিমকো গ্রুপ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।
বিপুল খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশ্যে আসায় গ্রুপটির বেশির ভাগ কোম্পানিকে নতুন করে ঋণ দেওয়া বন্ধ করে দেয় ব্যাংকগুলো। এতে অনেকগুলো কোম্পানির কর্মকা- অচল হয়ে পড়ে। বেশ কয়েকটি লেঅফও করা হয়। গ্রুপটি পরিচালনায় আদালতের রায়ে তত্ত্বাবধায়কও বসানো হয়েছিল।
এমন অবস্থায় খেলাপি ঋণের অর্থ উদ্ধার এবং বাকি কোম্পানিগুলোকে টিকিয়ে রাখতে করণীয় নির্ধারণে এ বৈঠক ডাকে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেখানে ঋণপত্র খোলার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
নিয়ম অনুযায়ী কোনো গ্রুপ খেলাপি হলে অন্য কোম্পানিগুলোতে এলসি খোলার সুযোগ নেই। নতুন করে ঋণ বিতরণ করাও বন্ধ থাকে।
সভায় থাকা জনতা ব্যাংক, এবি ব্যাংক কর্তপক্ষ জানায়, বেক্সিমকো গ্রুপটির যেসব কোম্পানি তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থানে রয়েছে সেগুলোর ঋণপত্র খোলার বিষয়ে বিবেচনা করার কথা বলেছেন গভর্নর। তারা বলেন, বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানিগুলো বন্ধ করে দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই বাংলাদেশ ব্যাংকের। তাই একই গ্রুপের কোনো কোম্পানি খেলাপি হলেও অন্য কোম্পানি যাতে সচল থাকে, যারা ব্যবসা করে টাকা আনতে পারবে তাদের এলসি খুলতে বলা হয়েছে।
এক্ষেত্রে এলসি খোলার শর্ত হিসেবে ব্যাংকগুলোকে প্রতিবার প্রতিটি এলসির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এনওসি (অনাপত্তিপত্র) নেওয়ার লাগবে বলে বৈঠকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ১০০ শতাংশ মার্জিন দিয়ে বেক্সিমকোর এলসি খোলার নির্দেশনা দিয়েছেন গভর্নর। তিনি বলেন, সভায় যেসব ব্যাংকের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন সেগুলোর সঙ্গে বেক্সিমকোর ব্যবসায়িক লেনদেন রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, খেলাপিভুক্ত গ্রুপের এলসি খোলার অনুমোদন দিতে হলে ব্যাংক কোম্পানি আইনের একটি ধারা পরিপালন থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগও রয়েছে। বেক্সিমকোর ক্ষেত্রে তা করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও এ বিষয়ে গভর্নর আহসান মনসুরের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায় নি।
মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫
পট পরিবর্তনের পর ‘অনিয়মের’ মাধ্যমে নেওয়া খেলাপি ঋণের একের পর এক তথ্য বেরিয়ে আসায় নানা সমস্যায় ভুগছিলো বেক্সিমকো গ্রুপ। এরই মধ্যে বেক্সিমকোর চালু কোম্পানিগুলোকে টিকিয়ে রাখতে বিশেষ ব্যবস্থায় এলসি খোলার ’সুযোগ দিচ্ছে’ বাংলাদেশ ব্যাংক।
শতভাগ মার্জিন এবং প্রতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনসহ একাধিক শর্ত মেনে ঋণপত্র বা এলসি খোলার বিষয়ে সবুজ সংকেত দিয়েছেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক সভায় রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে গভর্নরের এমন নির্দেশনার কথা বলেছেন, দু’টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী।
বেক্সিমকো গ্রুপের কাছ থেকে খেলাপি ঋণের অর্থ উদ্ধার এবং বিতরণ করা ঋণের অর্থ সময়মত ফেরত পাওয়া নিয়ে ২০ ব্যাংক এবং ব্যাংক বর্হিভূত সাতটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ওই বৈঠক করেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বেক্সিমকো গ্রুপ নিয়ে আয়োজিত শনিবারের ওই বৈঠকে অর্থ সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার এবং প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর উপস্থিত থাকার কথা বলেছেন।
ওই সভায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সুবিধা পেয়ে আসা বেক্সিমকো গ্রুপের ‘কিছুটা ভালো অবস্থায়’ থাকা কোম্পানিগুলো যাতে ব্যবসা করে টিকে থাকতে পারে এবং ব্যাংকগুলোকে টাকা ফেরত দিতে পারে, সেজন্য এলসির সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয় বলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক ব্যাংকার মত দেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সভায় বলা হয়, এসব কোম্পানি বন্ধ করার কোনো পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেই।
ভাই সোহেল এফ রহমানকে নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানিগুলোর পর্ষদ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন।
পট পরিবর্তনের পর গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন সালমান এফ রহমান। আর সরকার পতনের পর বেক্সিমকো গ্রুপের একাধিক ‘অনিয়মের’ তথ্য সামনে আনছে সরকারের একাধিক সংস্থা। পণ্য রপ্তানির আড়ালে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান রহমানসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা করেছে সিআইডি।
সালমান ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে দুদকও অনুসন্ধান করছে। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) গত অগাস্টেই সালমান, তার ছেলে শায়ান ও পুত্রবধূ শাজরেহ রহমানের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করেছে।
কাগুজে কোম্পানি খুলে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে টাকা পাচার এবং ঋণের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সালমান, শায়ান এবং সোহেল এফ রহমানের ছেলে শাহরিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে দুদক।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও (এনবিআর)বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে সালমানের পরিবার ও বেক্সিমকো গ্রুপ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।
বিপুল খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশ্যে আসায় গ্রুপটির বেশির ভাগ কোম্পানিকে নতুন করে ঋণ দেওয়া বন্ধ করে দেয় ব্যাংকগুলো। এতে অনেকগুলো কোম্পানির কর্মকা- অচল হয়ে পড়ে। বেশ কয়েকটি লেঅফও করা হয়। গ্রুপটি পরিচালনায় আদালতের রায়ে তত্ত্বাবধায়কও বসানো হয়েছিল।
এমন অবস্থায় খেলাপি ঋণের অর্থ উদ্ধার এবং বাকি কোম্পানিগুলোকে টিকিয়ে রাখতে করণীয় নির্ধারণে এ বৈঠক ডাকে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেখানে ঋণপত্র খোলার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
নিয়ম অনুযায়ী কোনো গ্রুপ খেলাপি হলে অন্য কোম্পানিগুলোতে এলসি খোলার সুযোগ নেই। নতুন করে ঋণ বিতরণ করাও বন্ধ থাকে।
সভায় থাকা জনতা ব্যাংক, এবি ব্যাংক কর্তপক্ষ জানায়, বেক্সিমকো গ্রুপটির যেসব কোম্পানি তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থানে রয়েছে সেগুলোর ঋণপত্র খোলার বিষয়ে বিবেচনা করার কথা বলেছেন গভর্নর। তারা বলেন, বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানিগুলো বন্ধ করে দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই বাংলাদেশ ব্যাংকের। তাই একই গ্রুপের কোনো কোম্পানি খেলাপি হলেও অন্য কোম্পানি যাতে সচল থাকে, যারা ব্যবসা করে টাকা আনতে পারবে তাদের এলসি খুলতে বলা হয়েছে।
এক্ষেত্রে এলসি খোলার শর্ত হিসেবে ব্যাংকগুলোকে প্রতিবার প্রতিটি এলসির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এনওসি (অনাপত্তিপত্র) নেওয়ার লাগবে বলে বৈঠকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ১০০ শতাংশ মার্জিন দিয়ে বেক্সিমকোর এলসি খোলার নির্দেশনা দিয়েছেন গভর্নর। তিনি বলেন, সভায় যেসব ব্যাংকের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন সেগুলোর সঙ্গে বেক্সিমকোর ব্যবসায়িক লেনদেন রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, খেলাপিভুক্ত গ্রুপের এলসি খোলার অনুমোদন দিতে হলে ব্যাংক কোম্পানি আইনের একটি ধারা পরিপালন থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগও রয়েছে। বেক্সিমকোর ক্ষেত্রে তা করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও এ বিষয়ে গভর্নর আহসান মনসুরের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায় নি।