লজিস্টিক পলিসির কার্যকর বাস্তবায়নে সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যান অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এর সভাপতি তাসকীন আহমেদ। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে লজিস্টিক খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক সেমিনার রবিবার(২৯-৬-২০২৫) ডিসিসিআই মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়) ড. শেখ মইনউদ্দিন উক্ত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন-এর চেয়ারম্যান মোঃ সলিম উল্লাহ এবং বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড)-এর চেয়ারপার্সন আবুল কাসেম খান এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগদান করেন।
অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, ‘লজিস্টিক পারফর্মম্যান্স ইনডেক্স ২০২৩’-এর তথ্য মতে, লজিস্টিক খাতে বিশে^র ১৩৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৮ তম। বন্দরে যানজট, কাস্টমস প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা, আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের অনুপস্থিতি ও অপ্রতুল অবকাঠামো আমাদের আমদানি-রপ্তানির পাশাপাশি সামগ্রিক ব্যবসায়িক প্রক্রিয়াকে প্রতিনিয়ত ব্যাহত করছে। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর দিয়ে আমাদের বৈদেশিক বাণিজ্যের ৯২% হয়ে থাকে। জিডিপিতে বন্দরদুটোর অবদান প্রায় ৩০শতাংশ। এমতাবস্থায় উল্লেখিত বন্দর সহ দেশের সকল রেল, স্থল, নৌ, সামুদ্রিক ও বিমান বন্দরগুলো সহ সার্বিক লজিস্টিক ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন এখন সময়ের দাবী। এক্ষেত্রে কালক্ষেপনের কোন সুযোগ নেই। তা না হলে আমরা বৈশি^ক প্রতিযোগিতায় ক্রামগত পিছিয়ে পড়ব।’ সেই সাথে অ্যাসআইকোডা এবং ন্যাশনাল সিঙ্গেল ইউন্ডো অতিদ্রুত বাস্তবায়নের উপর জোরারোপ করেন তাসকীন আহমেদ। আইসিডি উন্নয়নে বেসরকারিখাতকে সম্পৃক্তকরনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা ও আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের আহ্বান ডিসিসিআই সভাপতি।
প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে ড. শেখ মইনউদ্দিন বলেন, ‘এলডিসি পরবর্তী সময়ে বৈশি^ক বাণিজ্যে আমাদের প্রতিযোগী সক্ষমতা বাড়াতে আমাদের সড়ক, রেল, নৌ, বিমান ও সমুদ্র বন্দর এবং ইনফরমেশন সুপার হাইওয়ের সমন্বয়ে একটি বহুমাত্রিক পরিবহন ইকোসিস্টেম প্রয়োজন। অন্যথায় আমাদের অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। লজিস্টক খাতের উন্নয়নে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো আমাদের কোন দীর্ঘমেয়াদী বৃহৎ মাষ্টারপ্ল্যান অনুপস্থিতি। আগামী ২৫-৫০ বছরের জন্য উপযোগী একটি সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা চালুর লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বেসরকারিখাতকে এগিয়ে আসতে হবে। নীতি প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে না পারার কারণে বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই গৃহীত নীতিমালা হতে কাঙ্খিত ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না।’
বিশেষ অতিথি মোঃ সলিম উল্লাহ জানান, সম্প্রতি প্রণীত লজিস্টিক নীতিমালা পুনঃমূল্যায়নের জন্য সরকার ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। দেশের আভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে বিআইডব্লিউটিএ শীঘ্রই একটি মাষ্টারপ্ল্যান তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে তিনি অভহিত করেন।
বিশেষ অতিথি’র বক্তব্যে বিল্ডের চেয়ারপার্সন আবুল কাসেম খান বলেন, ‘বাস্তবতা হলো বিশেষকরে লজিস্টিক খাতে আমরা একটি জায়গায় আটকে আছি, আমাদের অগ্রগতি কাঙ্খিত মাত্রায় নয় এবং বিষয়টি বেশ হতাশার। দেশের অর্থনীতিতে কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অবকাঠামো ও লজিস্টিক খাতে জিডিপি’র ৮-১০% বা প্রতিবছর প্রায় ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ প্রয়োজন।
যেখানে আমরা বেশ পিছিয়ে রয়েছি। বর্তমানে দেশে ১.৫ বিলিয়ন ডলারের মত এফডিআই রয়েছে। তবে অবকাঠমো খাতে অন্যান্য দেশের ন্যায় বিপুল পরিমাণে এফডিআই আকর্ষনের সুযোগ রয়েছে। অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে আগামী ৫০বছরের জন্য একটি টেকসই অবকাঠমো তৈরির মহাপরিকল্পনা হাতে নেওয়া প্রয়োজন।’ লজিস্টিক খাতের উন্নয়ন তদারকির জন্য তিনি আলাদা মন্ত্রণালয় বা কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাব করেন। সেই সাথে তিনি ২০২৬-৩৫ পর্যন্ত সময়কালকে ‘লজিস্টিক দশক’ ঘোষণার প্রস্তাব করেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশ’র চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এম মাশরুর রিয়াজ। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, ‘গত কয়েক দশকে আমাদের বেসরকারিখাতের নেতৃত্বে পরিচালিত অর্থনৈতিক অগ্রগতি বৈশি^ক পরিমন্ডলে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেও বিশেষকরে তৈরি পোষাক খাত এবং কয়েকটি সুনিদিষ্ট দেশ ও অঞ্চলের বাজারের উপর আমাদের রপ্তানি পণ্যের নির্ভরশীলতা ঝুঁকির বিষয়। সেই সাথে প্রতিবছর প্রায় ২২লক্ষ নতুন মানুষের নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির বিষয়টিও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।’ এমনবাস্তবতায় আমাদের অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণের পাশাপাশি রপ্তানির বাজার সম্প্রসারণে বেশি মনোযোগী হওয়ার উপর তিনি জোরারোপ করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘বৈশি^ক বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে বাণিজ্য সহযোগিতা এবং লজিস্টিক সক্ষমতা বাড়নোর কোন বিকল্প নেই। কেবলমাত্র এখাতে যদি ২৫ শতাংশ ব্যয় হ্রাস করা যায়, তাহলে প্রায় ২০ শতাংশ রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব, সেই সাথে পরিবহন ব্যয় ১ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব হলে ৭.৪ শতাংশ রপ্তানি বৃদ্ধি করা সম্ভব। জাতীয় লজিস্টিক নীতিমালার কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য সেক্টর ডেভেলপমেন্ট রোডম্যাপ মাষ্টারপ্ল্যান একান্ত আবশ্যক।’
সেমিনারের নির্ধারিত আলোচনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত সচিব মোঃ হাবিবুর রহমান, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানী লিমিটেড (ইডকল)-এর নির্বাহী পরিচালক আলমগীর মোর্শেদ, ডিপি ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’র কান্ট্রি ডিরেক্টর শামীম উল হক, বাংলাদেশ সাপ্লাইচেইন ম্যানেজমেন্ট সোসাইটির সভাপতি নকিব খানএবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)’র সিনিয়র প্রজেক্ট অফিসার (ট্রান্সপোর্ট) হুমায়ুন কবীর অংশগ্রহণ করেন।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত সচিব মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোর সক্ষমতা দাঁড়াবে ১০ মিলিয়ন টিইইউস, যার ব্যবহার নিশ্চিত করতে বেসরকারিখাতকে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম আরো বহুগুণে বৃদ্ধি করতে হবে। যেহেতু প্রতি ৫ বছরে প্রায় ২শতাংশ করে জমি কমে যাচ্ছে, তাই লজিস্টিক বিশেষকরে পরিবহন পরিসেবায় রেলওয়ে হতে পারে সবচেয়ে ব্যয় সাশ্রয়ী উপযোগী ব্যবস্থা।’ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সীতাকুন্ড পর্যন্ত কেবলমাত্র ট্রাক ও লরির জন্য একটি বিশেষায়িত এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করতে পারলে আমদানি-রপ্তানির পণ্য পরিবহন প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক সুফল পাওয়া যাবে বলে অভিমত জ্ঞাপন করেন। এছাড়াও পানগাঁও নদীবন্দরকে সফলভাবে পরিচালনার জন্য বেসরকারিখাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
ইডকলের নির্বাহী পরিচালক আলমগীর মোর্শেদ বলেন, ‘লজিস্টিক অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন একটি বড় চ্যালেঞ্জ এবং আমাদের আর্থিক খাতের অবস্থাও তেমন ভালো নয়, সেই সাথে পুঁজিবাজার হতে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ পাওয়া যাচ্ছে না।’ তাই অবকাঠামোখাতে দীর্ঘমেয়াদে অর্থায়নের জন্য তিনি একাধিক বন্ড ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব করেন। যেহেতু লজিস্টিক খাতে আমাদের সক্ষমতা ও দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে, তাই এখাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে, যা ইতিবাচকভাবে দেখা প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
শামীম উল হক বলেন, ‘ওয়ারহাউজে সফলতার জন্য ডিজিটালাইজেশন প্রয়োজন ও তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো দরকার।’
নাকিব উদ্দিন খান বলেন, ‘লজিস্টিক খাতে নির্ভরযোগ্যতা বাড়াতে ব্যয় ও লিড টাইম হ্রাস, এবং গতি বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। এছাড়াও এখাতের উন্নয়নে বিদেশি বিনিয়োগর সুযোগ উন্মুক্তকরণ এবং পিপিপি মডেলে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহীত করতে হবে।’
এডিবি’র হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘বাংলাদেশের লজিস্টিক পলিসি বাস্তবায়নে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-এর পক্ষ হতে টেকনিক্যাল সহায়তা প্রদান করা হবে এবং এলক্ষ্যে সরকারের সাথে এডিবি একযোগে কাজ করছে।’
রোববার, ২৯ জুন ২০২৫
লজিস্টিক পলিসির কার্যকর বাস্তবায়নে সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যান অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এর সভাপতি তাসকীন আহমেদ। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে লজিস্টিক খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক সেমিনার রবিবার(২৯-৬-২০২৫) ডিসিসিআই মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়) ড. শেখ মইনউদ্দিন উক্ত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন-এর চেয়ারম্যান মোঃ সলিম উল্লাহ এবং বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড)-এর চেয়ারপার্সন আবুল কাসেম খান এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগদান করেন।
অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, ‘লজিস্টিক পারফর্মম্যান্স ইনডেক্স ২০২৩’-এর তথ্য মতে, লজিস্টিক খাতে বিশে^র ১৩৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৮ তম। বন্দরে যানজট, কাস্টমস প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা, আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের অনুপস্থিতি ও অপ্রতুল অবকাঠামো আমাদের আমদানি-রপ্তানির পাশাপাশি সামগ্রিক ব্যবসায়িক প্রক্রিয়াকে প্রতিনিয়ত ব্যাহত করছে। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর দিয়ে আমাদের বৈদেশিক বাণিজ্যের ৯২% হয়ে থাকে। জিডিপিতে বন্দরদুটোর অবদান প্রায় ৩০শতাংশ। এমতাবস্থায় উল্লেখিত বন্দর সহ দেশের সকল রেল, স্থল, নৌ, সামুদ্রিক ও বিমান বন্দরগুলো সহ সার্বিক লজিস্টিক ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন এখন সময়ের দাবী। এক্ষেত্রে কালক্ষেপনের কোন সুযোগ নেই। তা না হলে আমরা বৈশি^ক প্রতিযোগিতায় ক্রামগত পিছিয়ে পড়ব।’ সেই সাথে অ্যাসআইকোডা এবং ন্যাশনাল সিঙ্গেল ইউন্ডো অতিদ্রুত বাস্তবায়নের উপর জোরারোপ করেন তাসকীন আহমেদ। আইসিডি উন্নয়নে বেসরকারিখাতকে সম্পৃক্তকরনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা ও আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের আহ্বান ডিসিসিআই সভাপতি।
প্রধান অতিথি’র বক্তব্যে ড. শেখ মইনউদ্দিন বলেন, ‘এলডিসি পরবর্তী সময়ে বৈশি^ক বাণিজ্যে আমাদের প্রতিযোগী সক্ষমতা বাড়াতে আমাদের সড়ক, রেল, নৌ, বিমান ও সমুদ্র বন্দর এবং ইনফরমেশন সুপার হাইওয়ের সমন্বয়ে একটি বহুমাত্রিক পরিবহন ইকোসিস্টেম প্রয়োজন। অন্যথায় আমাদের অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। লজিস্টক খাতের উন্নয়নে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো আমাদের কোন দীর্ঘমেয়াদী বৃহৎ মাষ্টারপ্ল্যান অনুপস্থিতি। আগামী ২৫-৫০ বছরের জন্য উপযোগী একটি সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা চালুর লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বেসরকারিখাতকে এগিয়ে আসতে হবে। নীতি প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে না পারার কারণে বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই গৃহীত নীতিমালা হতে কাঙ্খিত ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না।’
বিশেষ অতিথি মোঃ সলিম উল্লাহ জানান, সম্প্রতি প্রণীত লজিস্টিক নীতিমালা পুনঃমূল্যায়নের জন্য সরকার ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। দেশের আভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে বিআইডব্লিউটিএ শীঘ্রই একটি মাষ্টারপ্ল্যান তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে তিনি অভহিত করেন।
বিশেষ অতিথি’র বক্তব্যে বিল্ডের চেয়ারপার্সন আবুল কাসেম খান বলেন, ‘বাস্তবতা হলো বিশেষকরে লজিস্টিক খাতে আমরা একটি জায়গায় আটকে আছি, আমাদের অগ্রগতি কাঙ্খিত মাত্রায় নয় এবং বিষয়টি বেশ হতাশার। দেশের অর্থনীতিতে কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অবকাঠামো ও লজিস্টিক খাতে জিডিপি’র ৮-১০% বা প্রতিবছর প্রায় ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ প্রয়োজন।
যেখানে আমরা বেশ পিছিয়ে রয়েছি। বর্তমানে দেশে ১.৫ বিলিয়ন ডলারের মত এফডিআই রয়েছে। তবে অবকাঠমো খাতে অন্যান্য দেশের ন্যায় বিপুল পরিমাণে এফডিআই আকর্ষনের সুযোগ রয়েছে। অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে আগামী ৫০বছরের জন্য একটি টেকসই অবকাঠমো তৈরির মহাপরিকল্পনা হাতে নেওয়া প্রয়োজন।’ লজিস্টিক খাতের উন্নয়ন তদারকির জন্য তিনি আলাদা মন্ত্রণালয় বা কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাব করেন। সেই সাথে তিনি ২০২৬-৩৫ পর্যন্ত সময়কালকে ‘লজিস্টিক দশক’ ঘোষণার প্রস্তাব করেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশ’র চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এম মাশরুর রিয়াজ। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, ‘গত কয়েক দশকে আমাদের বেসরকারিখাতের নেতৃত্বে পরিচালিত অর্থনৈতিক অগ্রগতি বৈশি^ক পরিমন্ডলে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেও বিশেষকরে তৈরি পোষাক খাত এবং কয়েকটি সুনিদিষ্ট দেশ ও অঞ্চলের বাজারের উপর আমাদের রপ্তানি পণ্যের নির্ভরশীলতা ঝুঁকির বিষয়। সেই সাথে প্রতিবছর প্রায় ২২লক্ষ নতুন মানুষের নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির বিষয়টিও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।’ এমনবাস্তবতায় আমাদের অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণের পাশাপাশি রপ্তানির বাজার সম্প্রসারণে বেশি মনোযোগী হওয়ার উপর তিনি জোরারোপ করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘বৈশি^ক বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে বাণিজ্য সহযোগিতা এবং লজিস্টিক সক্ষমতা বাড়নোর কোন বিকল্প নেই। কেবলমাত্র এখাতে যদি ২৫ শতাংশ ব্যয় হ্রাস করা যায়, তাহলে প্রায় ২০ শতাংশ রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব, সেই সাথে পরিবহন ব্যয় ১ শতাংশ হ্রাস করা সম্ভব হলে ৭.৪ শতাংশ রপ্তানি বৃদ্ধি করা সম্ভব। জাতীয় লজিস্টিক নীতিমালার কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য সেক্টর ডেভেলপমেন্ট রোডম্যাপ মাষ্টারপ্ল্যান একান্ত আবশ্যক।’
সেমিনারের নির্ধারিত আলোচনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত সচিব মোঃ হাবিবুর রহমান, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানী লিমিটেড (ইডকল)-এর নির্বাহী পরিচালক আলমগীর মোর্শেদ, ডিপি ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’র কান্ট্রি ডিরেক্টর শামীম উল হক, বাংলাদেশ সাপ্লাইচেইন ম্যানেজমেন্ট সোসাইটির সভাপতি নকিব খানএবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)’র সিনিয়র প্রজেক্ট অফিসার (ট্রান্সপোর্ট) হুমায়ুন কবীর অংশগ্রহণ করেন।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত সচিব মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোর সক্ষমতা দাঁড়াবে ১০ মিলিয়ন টিইইউস, যার ব্যবহার নিশ্চিত করতে বেসরকারিখাতকে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম আরো বহুগুণে বৃদ্ধি করতে হবে। যেহেতু প্রতি ৫ বছরে প্রায় ২শতাংশ করে জমি কমে যাচ্ছে, তাই লজিস্টিক বিশেষকরে পরিবহন পরিসেবায় রেলওয়ে হতে পারে সবচেয়ে ব্যয় সাশ্রয়ী উপযোগী ব্যবস্থা।’ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সীতাকুন্ড পর্যন্ত কেবলমাত্র ট্রাক ও লরির জন্য একটি বিশেষায়িত এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করতে পারলে আমদানি-রপ্তানির পণ্য পরিবহন প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক সুফল পাওয়া যাবে বলে অভিমত জ্ঞাপন করেন। এছাড়াও পানগাঁও নদীবন্দরকে সফলভাবে পরিচালনার জন্য বেসরকারিখাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
ইডকলের নির্বাহী পরিচালক আলমগীর মোর্শেদ বলেন, ‘লজিস্টিক অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়ন একটি বড় চ্যালেঞ্জ এবং আমাদের আর্থিক খাতের অবস্থাও তেমন ভালো নয়, সেই সাথে পুঁজিবাজার হতে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ পাওয়া যাচ্ছে না।’ তাই অবকাঠামোখাতে দীর্ঘমেয়াদে অর্থায়নের জন্য তিনি একাধিক বন্ড ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব করেন। যেহেতু লজিস্টিক খাতে আমাদের সক্ষমতা ও দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে, তাই এখাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে, যা ইতিবাচকভাবে দেখা প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
শামীম উল হক বলেন, ‘ওয়ারহাউজে সফলতার জন্য ডিজিটালাইজেশন প্রয়োজন ও তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো দরকার।’
নাকিব উদ্দিন খান বলেন, ‘লজিস্টিক খাতে নির্ভরযোগ্যতা বাড়াতে ব্যয় ও লিড টাইম হ্রাস, এবং গতি বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। এছাড়াও এখাতের উন্নয়নে বিদেশি বিনিয়োগর সুযোগ উন্মুক্তকরণ এবং পিপিপি মডেলে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহীত করতে হবে।’
এডিবি’র হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘বাংলাদেশের লজিস্টিক পলিসি বাস্তবায়নে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-এর পক্ষ হতে টেকনিক্যাল সহায়তা প্রদান করা হবে এবং এলক্ষ্যে সরকারের সাথে এডিবি একযোগে কাজ করছে।’