মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে কড়াকড়ি মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে। এ কারণে নীতি সুদের হার বাড়ানো হয়েছে, যা সরাসরি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণের সুদহারেও প্রভাব ফেলেছে। ফলে ঋণ গ্রহণের খরচ বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের গতি কমে গেছে। উচ্চ সুদের বোঝা বহন করতে না পেরে অনেক উদ্যোক্তা নতুন বিনিয়োগ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শিল্প, ব্যবসা ও উৎপাদন খাতে। পাশাপাশি রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতার বিষয়টিও নতুন ঋণগ্রহণে নিরুৎসাহিত করছে।
২০২৫ সালের মে মাস শেষে বার্ষিক ভিত্তিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৯৫ শতাংশে নেমেছে, যেখানে এক বছর আগে এ হার ছিল ১০ দশমিক ৩৫ শতাংশ
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের মে মাস শেষে বার্ষিক ভিত্তিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৯৫ শতাংশে নেমেছে, যেখানে এক বছর আগে এ হার ছিল ১০ দশমিক ৩৫ শতাংশ। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি এক বছরের ব্যবধানে ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ কমেছে। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে এ হার ছিল ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ, আর করোনা পরবর্তী সময়ে ২০২১ সালের মে মাসে একবার ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমেছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই অর্থবছরে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ নির্ধারণ করলেও তা অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। এর পেছনে নীতি সুদের ঊর্ধ্বগতির পাশাপাশি সরকারের বেশি হারে ঋণ গ্রহণ এবং ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট দায়ী। বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদের হার ১০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা আগে তুলনায় অনেক বেশি। এর ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণের সুদহার বেড়ে ১৪-১৬ শতাংশে পৌঁছেছে, যেখানে আগে ছিল ৮-৯ শতাংশ। এই উচ্চ সুদ ব্যবসায়িক ব্যয় ও ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে, ফলে মুনাফা কমে যাচ্ছে। এছাড়া রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অর্থনৈতিক ঝুঁকির কারণে বিনিয়োগকারীরা সঞ্চয়ের দিকেই বেশি ঝুঁকছেন, যার ফলে ব্যাংকিং খাতে ঋণপ্রবাহ স্থবির হয়ে পড়ছে।
অন্যদিকে সরকারের কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব না আসায় ঘাটতি পূরণের জন্য ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিতে হচ্ছে। এতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বেসরকারি খাতের ঋণের চেয়ে সরকারি ঋণ মেটাতে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, যার ফলে বেসরকারি খাত প্রয়োজনীয় অর্থায়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অর্থনীতির ভাষায় এটাকে বলা হয় ক্রেডিট ডিসপ্লেসমেন্ট।
বিশ্লেষকদের মতে, কড়াকড়ি মুদ্রানীতি, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ব্যাংকিং খাতের তারল্য সংকট এবং সরকারের ঋণনির্ভরতা মিলিয়ে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এই পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে উৎপাদন, বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান আরও চাপে পড়বে, যা অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে। তাই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালায় ভারসাম্য আনার তাগিদ দিয়েছেন তারা।
বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে কড়াকড়ি মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে। এ কারণে নীতি সুদের হার বাড়ানো হয়েছে, যা সরাসরি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণের সুদহারেও প্রভাব ফেলেছে। ফলে ঋণ গ্রহণের খরচ বেড়ে যাওয়ায় বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের গতি কমে গেছে। উচ্চ সুদের বোঝা বহন করতে না পেরে অনেক উদ্যোক্তা নতুন বিনিয়োগ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শিল্প, ব্যবসা ও উৎপাদন খাতে। পাশাপাশি রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতার বিষয়টিও নতুন ঋণগ্রহণে নিরুৎসাহিত করছে।
২০২৫ সালের মে মাস শেষে বার্ষিক ভিত্তিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৯৫ শতাংশে নেমেছে, যেখানে এক বছর আগে এ হার ছিল ১০ দশমিক ৩৫ শতাংশ
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের মে মাস শেষে বার্ষিক ভিত্তিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৯৫ শতাংশে নেমেছে, যেখানে এক বছর আগে এ হার ছিল ১০ দশমিক ৩৫ শতাংশ। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি এক বছরের ব্যবধানে ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ কমেছে। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে এ হার ছিল ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ, আর করোনা পরবর্তী সময়ে ২০২১ সালের মে মাসে একবার ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমেছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই অর্থবছরে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ নির্ধারণ করলেও তা অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। এর পেছনে নীতি সুদের ঊর্ধ্বগতির পাশাপাশি সরকারের বেশি হারে ঋণ গ্রহণ এবং ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট দায়ী। বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদের হার ১০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা আগে তুলনায় অনেক বেশি। এর ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণের সুদহার বেড়ে ১৪-১৬ শতাংশে পৌঁছেছে, যেখানে আগে ছিল ৮-৯ শতাংশ। এই উচ্চ সুদ ব্যবসায়িক ব্যয় ও ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে, ফলে মুনাফা কমে যাচ্ছে। এছাড়া রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অর্থনৈতিক ঝুঁকির কারণে বিনিয়োগকারীরা সঞ্চয়ের দিকেই বেশি ঝুঁকছেন, যার ফলে ব্যাংকিং খাতে ঋণপ্রবাহ স্থবির হয়ে পড়ছে।
অন্যদিকে সরকারের কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব না আসায় ঘাটতি পূরণের জন্য ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিতে হচ্ছে। এতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বেসরকারি খাতের ঋণের চেয়ে সরকারি ঋণ মেটাতে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, যার ফলে বেসরকারি খাত প্রয়োজনীয় অর্থায়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অর্থনীতির ভাষায় এটাকে বলা হয় ক্রেডিট ডিসপ্লেসমেন্ট।
বিশ্লেষকদের মতে, কড়াকড়ি মুদ্রানীতি, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ব্যাংকিং খাতের তারল্য সংকট এবং সরকারের ঋণনির্ভরতা মিলিয়ে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এই পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে উৎপাদন, বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান আরও চাপে পড়বে, যা অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে। তাই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালায় ভারসাম্য আনার তাগিদ দিয়েছেন তারা।