ঢাকার পুলিশ কমিশনারের ‘দেশে কোনো জঙ্গি নাই’ মন্তব্যের তিন দিন পর জঙ্গি প্রসঙ্গে এক অতিরিক্ত কমিশনার বলেছেন, অপরাধকে কোনো ‘লেবাস’ দিয়ে ‘কালারিং করার’ প্রয়োজন নেই।
আশুরা উপলক্ষে নেওয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়ে বৃহস্পতিবার ঢাকার হোসাইনী দালানে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম।
এক দশক আগে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় হোসাইনী দালানে জঙ্গি হামলা হয়েছিল। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নজরুল ইসলাম বলেন, “অপরাধ, ভাই অপরাধই। এইটা জঙ্গি, এইটা-ওইটা নিয়ে ইয়ে করার দরকার নাই। একটা বোমা মারবে, মানুষ মরবে—এইটা অপরাধ।
“এইটা ক্রাইম; ক্রাইমের বিচার প্রচলিত আইনে যেভাবে আছে সেভাবেই হবে, ঠিক আছে? আপনি এইটাকে কোনো লেবাস দিয়ে, ওইটাকে কালারিং করার কোনো প্রয়োজন নাই, আমি মনে করি না। অপরাধ, অপরাধই। সে যে আমলেই হোক, যেভাবেই হোক। আমরা এইটা ওয়াকিবহাল আছি, আমাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আছে।”
২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর গভীর রাতে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় হোসাইনী দালানে বোমা হামলায় দুজন নিহত ও শতাধিক আহত হন। পরে ঘটনাস্থল থেকে অবিস্ফোরিত দুটি বোমা (আইইডি) উদ্ধার করা হয়।
মামলার নথি অনুযায়ী, ওই হামলায় জেএমবির ১৩ জঙ্গি জড়িত ছিল। তাদের মধ্যে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং অভিযানে তিনজন কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান। গ্রেপ্তারদের মধ্যে দুজন নাবালক প্রমাণ হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে শিশু আদালতে বিচার হয়। ২০২২ সালের মার্চে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল দুই আসামিকে দশ ও সাত বছরের কারাদণ্ড দেয় এবং ছয়জনকে খালাস দেয়।
এখন সেখানে কোনো নিরাপত্তা শঙ্কা রয়েছে কি না জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম বলেন, “আমরা এখন পর্যন্ত আশঙ্কা পাইনি, তবে আমাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে—বোথ কভার্ড অ্যান্ড ওভার্ড।”
হোসাইনী দালানের হামলার পরের বছর, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে ঢাকার গুলশান-২ এ হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলায় ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জন নিহত হন। এর দায় স্বীকার করে আইএস, তবে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা জানান, দেশীয় নব্য জেএমবি এ হামলা চালিয়েছে।
হোলি আর্টিজান মামলায় ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর সাতজনের ফাঁসি হয়, পরে ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট সেই সাজা পরিবর্তন করে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন।
এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সোমবার বলেন, “জঙ্গি নাই, এখন ঠেকাতে হবে ছিনতাই। জঙ্গি থাকলে না জঙ্গি নিয়ে ভাবব। আওয়ামী লীগের সময় জঙ্গি নাটক সাজিয়ে ছেলেপেলেদের মারছে, কিসের জঙ্গি?”
ককটেল বিস্ফোরণের বিষয়ে অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম বলেন, “রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলেছে, বিচার শুরু হয়েছে, অনেকের মনে ক্ষোভ আছে। দুই-চারটা ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। তবে পুলিশ সতর্ক অবস্থায় আছে। যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। আপনারাও আমাদের সহায়তা করবেন।”
আশুরা উপলক্ষে নিরাপত্তা প্রস্তুতি
মহররম মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ায় আগামী রোববার বাংলাদেশে আশুরা পালিত হবে। এ উপলক্ষে ডিএমপির নেওয়া নিরাপত্তার বিষয়ে অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার বলেন, “২৭ জুন থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে শিয়া এবং অনেক সুন্নী সম্প্রদায়ও এই শোক দিবস পালন করবেন।”
তিনি বলেন, “আশুরাকে কেন্দ্র করে ডিএমপি প্রতিবছর একটি সুসংহত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। এ বছরও যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে পবিত্র আশুরার নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বা হবে।”
মহররমের ১ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত ঢাকার হোসাইনী দালান, বড়কাটরা, মোহাম্মদপুর বিহারীক্যাম্প, সিয়ামসজিদ, বিবিকা রওজা, মিরপুর পল্লবী বিহারী ক্যাম্পসহ বিভিন্ন স্থানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা থাকবে।
ইমামবাড়ার আশেপাশে চেকপোস্ট জোরদার করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী উঁচু ভবনে সাদা পোশাক ও ইউনিফর্মে পুলিশ নজরদারি করছে। অনুষ্ঠান শুরুর আগে ডগ স্কোয়াড দিয়ে সুইপিং করা হবে। সিসি ক্যামেরা, সাইবার পেট্রোলিং, আর্চওয়ে গেট ও হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশির ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নারী তল্লাশির জন্য নারী পুলিশ সদস্য এবং অনুষ্ঠানের স্থির ও ভিডিওচিত্র ধারণের ব্যবস্থাও থাকবে।
তাজিয়া মিছিলের মধ্যপথে প্রবেশ নয়; ধাতব ও দাহ্য পদার্থ নিষিদ্ধ
বৃহস্পতিবার তিনটি, শুক্রবার ১১টি, শনিবার ১৭টি এবং রোববার ১৯টিসহ ঢাকায় মোট ৫০টি তাজিয়া বা শোক মিছিল হবে। প্রতিটি মিছিলে পর্যাপ্ত পুলিশি ফোর্স, উঁচু ভবনে নজরদারি, সিসি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হবে।
বড় মিছিল শুরুর আগে সংশ্লিষ্ট এলাকা সুইপিং করা হবে। ফুটপাতে দোকানপাট ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে নেওয়া হবে।
মিছিলকারীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “তাজিয়া মিছিলে কোনো ধাতব, দাহ্য পদার্থ, ছুরি, চাকু, তরবারি, লাঠি, বল্লম, ব্যাগ, ছাতা বা সন্দেহজনক প্যাকেট নিয়ে আসা যাবে না। আতশবাজি ও পটকা ব্যবহার না করতে হবে। পাঞ্জা মেলানোর সময় যেন ভীতি না সঞ্চার হয়। মিছিল শুরুর আগেই অংশগ্রহণ করতে হবে, মাঝপথে নয়।”
নিষিদ্ধ সংগঠন ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজরদারি চলছে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাইবার মনিটরিং অব্যাহত থাকবে। ফায়ার সার্ভিস ও স্বাস্থ্যসেবা সংস্থার সঙ্গেও সমন্বয় করা হবে বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫
ঢাকার পুলিশ কমিশনারের ‘দেশে কোনো জঙ্গি নাই’ মন্তব্যের তিন দিন পর জঙ্গি প্রসঙ্গে এক অতিরিক্ত কমিশনার বলেছেন, অপরাধকে কোনো ‘লেবাস’ দিয়ে ‘কালারিং করার’ প্রয়োজন নেই।
আশুরা উপলক্ষে নেওয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়ে বৃহস্পতিবার ঢাকার হোসাইনী দালানে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম।
এক দশক আগে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় হোসাইনী দালানে জঙ্গি হামলা হয়েছিল। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নজরুল ইসলাম বলেন, “অপরাধ, ভাই অপরাধই। এইটা জঙ্গি, এইটা-ওইটা নিয়ে ইয়ে করার দরকার নাই। একটা বোমা মারবে, মানুষ মরবে—এইটা অপরাধ।
“এইটা ক্রাইম; ক্রাইমের বিচার প্রচলিত আইনে যেভাবে আছে সেভাবেই হবে, ঠিক আছে? আপনি এইটাকে কোনো লেবাস দিয়ে, ওইটাকে কালারিং করার কোনো প্রয়োজন নাই, আমি মনে করি না। অপরাধ, অপরাধই। সে যে আমলেই হোক, যেভাবেই হোক। আমরা এইটা ওয়াকিবহাল আছি, আমাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আছে।”
২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর গভীর রাতে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় হোসাইনী দালানে বোমা হামলায় দুজন নিহত ও শতাধিক আহত হন। পরে ঘটনাস্থল থেকে অবিস্ফোরিত দুটি বোমা (আইইডি) উদ্ধার করা হয়।
মামলার নথি অনুযায়ী, ওই হামলায় জেএমবির ১৩ জঙ্গি জড়িত ছিল। তাদের মধ্যে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং অভিযানে তিনজন কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান। গ্রেপ্তারদের মধ্যে দুজন নাবালক প্রমাণ হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে শিশু আদালতে বিচার হয়। ২০২২ সালের মার্চে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল দুই আসামিকে দশ ও সাত বছরের কারাদণ্ড দেয় এবং ছয়জনকে খালাস দেয়।
এখন সেখানে কোনো নিরাপত্তা শঙ্কা রয়েছে কি না জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম বলেন, “আমরা এখন পর্যন্ত আশঙ্কা পাইনি, তবে আমাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে—বোথ কভার্ড অ্যান্ড ওভার্ড।”
হোসাইনী দালানের হামলার পরের বছর, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে ঢাকার গুলশান-২ এ হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলায় ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জন নিহত হন। এর দায় স্বীকার করে আইএস, তবে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা জানান, দেশীয় নব্য জেএমবি এ হামলা চালিয়েছে।
হোলি আর্টিজান মামলায় ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর সাতজনের ফাঁসি হয়, পরে ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট সেই সাজা পরিবর্তন করে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন।
এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সোমবার বলেন, “জঙ্গি নাই, এখন ঠেকাতে হবে ছিনতাই। জঙ্গি থাকলে না জঙ্গি নিয়ে ভাবব। আওয়ামী লীগের সময় জঙ্গি নাটক সাজিয়ে ছেলেপেলেদের মারছে, কিসের জঙ্গি?”
ককটেল বিস্ফোরণের বিষয়ে অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম বলেন, “রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলেছে, বিচার শুরু হয়েছে, অনেকের মনে ক্ষোভ আছে। দুই-চারটা ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। তবে পুলিশ সতর্ক অবস্থায় আছে। যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। আপনারাও আমাদের সহায়তা করবেন।”
আশুরা উপলক্ষে নিরাপত্তা প্রস্তুতি
মহররম মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ায় আগামী রোববার বাংলাদেশে আশুরা পালিত হবে। এ উপলক্ষে ডিএমপির নেওয়া নিরাপত্তার বিষয়ে অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার বলেন, “২৭ জুন থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে শিয়া এবং অনেক সুন্নী সম্প্রদায়ও এই শোক দিবস পালন করবেন।”
তিনি বলেন, “আশুরাকে কেন্দ্র করে ডিএমপি প্রতিবছর একটি সুসংহত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। এ বছরও যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে পবিত্র আশুরার নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বা হবে।”
মহররমের ১ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত ঢাকার হোসাইনী দালান, বড়কাটরা, মোহাম্মদপুর বিহারীক্যাম্প, সিয়ামসজিদ, বিবিকা রওজা, মিরপুর পল্লবী বিহারী ক্যাম্পসহ বিভিন্ন স্থানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা থাকবে।
ইমামবাড়ার আশেপাশে চেকপোস্ট জোরদার করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী উঁচু ভবনে সাদা পোশাক ও ইউনিফর্মে পুলিশ নজরদারি করছে। অনুষ্ঠান শুরুর আগে ডগ স্কোয়াড দিয়ে সুইপিং করা হবে। সিসি ক্যামেরা, সাইবার পেট্রোলিং, আর্চওয়ে গেট ও হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশির ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নারী তল্লাশির জন্য নারী পুলিশ সদস্য এবং অনুষ্ঠানের স্থির ও ভিডিওচিত্র ধারণের ব্যবস্থাও থাকবে।
তাজিয়া মিছিলের মধ্যপথে প্রবেশ নয়; ধাতব ও দাহ্য পদার্থ নিষিদ্ধ
বৃহস্পতিবার তিনটি, শুক্রবার ১১টি, শনিবার ১৭টি এবং রোববার ১৯টিসহ ঢাকায় মোট ৫০টি তাজিয়া বা শোক মিছিল হবে। প্রতিটি মিছিলে পর্যাপ্ত পুলিশি ফোর্স, উঁচু ভবনে নজরদারি, সিসি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হবে।
বড় মিছিল শুরুর আগে সংশ্লিষ্ট এলাকা সুইপিং করা হবে। ফুটপাতে দোকানপাট ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে নেওয়া হবে।
মিছিলকারীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “তাজিয়া মিছিলে কোনো ধাতব, দাহ্য পদার্থ, ছুরি, চাকু, তরবারি, লাঠি, বল্লম, ব্যাগ, ছাতা বা সন্দেহজনক প্যাকেট নিয়ে আসা যাবে না। আতশবাজি ও পটকা ব্যবহার না করতে হবে। পাঞ্জা মেলানোর সময় যেন ভীতি না সঞ্চার হয়। মিছিল শুরুর আগেই অংশগ্রহণ করতে হবে, মাঝপথে নয়।”
নিষিদ্ধ সংগঠন ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজরদারি চলছে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাইবার মনিটরিং অব্যাহত থাকবে। ফায়ার সার্ভিস ও স্বাস্থ্যসেবা সংস্থার সঙ্গেও সমন্বয় করা হবে বলে জানান তিনি।