alt

অর্থ-বাণিজ্য

জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি খানিকটা বেড়েছে। ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে অর্থাৎ অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। আর প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) মাত্র ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল। আগের অর্থবছরের (২০২৩-২৪) তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল।

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ব্যবসা-বাণিজ্যে শ্লথ গতির কারণে প্রথম প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ধস নেমেছিল। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায়, বিশেষ করে কৃষি ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি বাড়ায় দ্বিতীয় প্রান্তিকের পর তৃতীয় প্রান্তিকেও প্রবৃদ্ধি বেড়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকর্তারা। ৩০ জুন শেষ হয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থবছর। অর্থাৎ চার প্রান্তিকই (১২ মাস, জুলাই-সেপ্টেম্বর, অক্টোবর-ডিসেম্বর, জানুয়ারি-মার্চ ও এপ্রিল-জুন) শেষ হয়েছে। সোমবার তৃতীয় প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) জিডিপির তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।

কৃষি, শিল্প ও সেবা- এই তিন খাতের উপাত্ত নিয়ে জিডিপির তথ্য প্রকাশ করা হয়। গেল অর্থবছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে কৃষি ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি বাড়লেও শিল্প খাতে কমেছে। জানুয়ারি-মার্চ সময়ে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৪২ শতাংশ। দ্বিতীয় প্রান্তিকে হয়েছিল ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। প্রথম প্রান্তিকে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল মাত্র দশমিক ৭৬ শতাংশ। তৃতীয় প্রান্তিকে সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ, দ্বিতীয় প্রান্তিকে হয়েছিল ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ, প্রথম প্রান্তিকে হয়েছিল ২ দশমিক ৪১ শতাংশ। অন্যদিকে জানুয়ানি-মার্চ প্রান্তিকে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। দ্বিতীয় প্রান্তিকে হয়েছিল৭ দশমিক ১০ শতাংশ। প্রথম প্রান্তিকে এই খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

গত ২৭ মে বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের নয় মাস—গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে জিডিপির সাময়িক হিসাব প্রকাশ করেছে বিবিএস। তাতে দেখা যায়, গত অর্থ বছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। আগের অর্থ বছরে অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের সাময়িক হিসাবে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা বলেছিল বিবিএস। তবে চূড়ান্ত হিসাবে তা কমে ৪ দশমিক ২২ শতাংশে নেমে আসে।

গত বছরের জুলাইয়ে কোটাবিরোধী ছাত্র-জনতার যে আন্দোলন হয়, তা ঠেকাতে একপর্যায়ে কারফিউ জারি করা হয়। তখন চলাচল সীমিত করা হয়। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি কমে যায়। এরই এক পর্যায় ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়; ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। জুলাই-আগস্টের এ সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে শিল্পে উৎপাদন ব্যাহত হয়। এখনও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চিয়তায় ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের মধ্যে ভয়-আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বিশ্ব আর্থিক খাতের মোড়ল দুই সংস্থা বিশ্ব ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। কিছুদিন আগে এই তিন উন্নয়ন সংস্থাই বলেছে, অনিশ্চয়তার কারণে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) অনেক কমবে।

আইএমএফ জানিয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকা- উল্লেখযোগ্যভাবে শ্লথ হয়ে পড়েছে এবং এর ফলে গেলো অর্থ বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসবে। বিশ্ব ব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে, ৩ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে আসবে। এডিবি বলেছে, ৩ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরেছিল শেখ হাসিনার সরকার। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে অন্তবর্তীকালীন সরকার।

বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে দেশের ভেতরে স্থিরমূল্যে ৮ লাখ ৯২ হাজার ১৭০ কোটি টাকার মূল্য সংযোজন হয়, যা গত সাত প্রান্তিকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আইএমএফের কাছ থেকে ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ। এই ঋণের পাঁচ কিস্তি ৩৬৫ কোটি (৩.৬৫ বিলিয়ন) ডলার ইতোমধ্যে পেয়েছে সরকার। এই ঋণের অন্যতম শর্ত ছিল তিন মাস পরপর জিডিপির হালনাগাদ হিসাব প্রকাশ করতে হবে। পাশাপাশি শ্রমশক্তি জরিপও প্রান্তিকভিত্তিক করতে হবে। সেই শর্ত পূরণের অংশ হিসেবেই বিবিএস প্রান্তিকভিত্তিক জিডিপির হিসাব প্রকাশ করছে। ইতোমধ্যে প্রান্তিকভিত্তিক শ্রমশক্তি জরিপ প্রকাশ শুরু হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক থেকে ত্রৈমাসিক জিডিপির হিসাব প্রকাশ করছে বিবিএস। তার আগে পুরো এক বছরের হিসাব দিয়ে দুই বার জিডিপির তথ্য প্রকাশ করত বিবিএস। সংশ্লিষ্ট অর্থবছরের প্রথম ছয়-সাত মাসের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রথমে জিডিপির আকার, প্রবৃদ্ধিসহ সাময়িক হিসাব দেওয়া হত। পরে পুরো বছরের তথ্য নিয়ে প্রকাশ করা হত জিডিপির চূড়ান্ত হিসাব।

সে হিসাবেই গত বছরের ২১ মে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জিডিপির সাময়িক হিসাব প্রকাশ করে পরিসংখ্যান ব্যুরো। তাতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ হয়েছে বলে জানানো হয়। পরে চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করে বিবিএস। তাতে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ২২ শতাংশ। আওয়ামী লীগ সরকার তাদের অর্জনের খাত হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে বরাবরই দেখিয়ে আসছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশে ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অর্জিত হয় ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ওই প্রবৃদ্ধি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। পরের বছর কোভিড মহামারীর ধাক্কায় তা ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশে নেমে আসে। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা আবার বেড়ে ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশে উঠেছিল। পরের বছর (২০২১-২২) ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে ৭ দশমিক ১০ শতাংশে উঠলেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে আবার কমে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশে নেমে আসে। ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের বাজেটে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরেছে অন্তবর্তী সরকার।

ছবি

বাণিজ্য রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রকে অগ্রাধিকার দিয়ে পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ

ছবি

বিশ্ববাজারে পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ

ছবি

আকু দায় মিটিয়ে রিজার্ভ ২৪ বিলিয়নের ঘরে

ছবি

ডিএসইতে লেনদেন ৬০০ কোটি টাকা ছাড়ালো

৬ মাসের কম সময়ে আইপিও প্রক্রিয়া শেষ করা হবে: ডিএসই চেয়ারম্যান

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রভিশন সংরক্ষণে নতুন নির্দেশনা

ছবি

ফুডির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলো স্কিটো

ছবি

বাজারে আসছে নতুন স্মার্টফোন ওয়ানপ্লাস নর্ড ৫ সিরিজ

ছবি

বাংলাদেশসহ ১৪ দেশে নতুন শুল্কের সময়সীমা ‘চূড়ান্ত নয়’ আলোচনার দরজা খোলা

ছবি

বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প

ছবি

বিদেশে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রে, ভারত ছয় নম্বরে

পাঁচ কার্যদিবসে বিদেশি ও প্রবাসী বিও হিসাব কমেছে প্রায় পাঁচশ’

সূচকের উত্থানে সপ্তাহ শুরু, লেনদেন ৫৭৩ কোটি

ছবি

ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হলেন আদিল চৌধুরী

ছবি

খাদ্যপণ্যের দাম কমায় স্বস্তি, জুনে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ৮.৪৮%

২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে গড় ব্যয় ৩০ পয়সা

রিটার্ন জমায় যেসব খাতে মিলবে করছাড়

ছবি

সেলসফোর্স বাজারে আনল এজেন্টফোর্স ৩ এআই এজেন্ট পরিচালনায় সহজ সমাধান

ছবি

আড়াই মাস পর ডিএসইএক্স ছুঁই ছুঁই পাঁচ হাজারের কাছে

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দর: বিদেশি অপারেটর আসার আগে এনসিটির ভার নিল ড্রাইডক

ছবি

স্থানীয় শিল্পে খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার

ছবি

তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার চান টেক্সটাইল মালিকরা

বাজার মূলধনে যোগ হলো সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা

বিকাশ, রকেট, নগদসহ এমএফএসের মাধ্যমে শুল্ক-কর জমা দেয়া যাবে

ছবি

ব্রাদার পার্টনার ডে ২০২৫ অনুষ্ঠিত

ছবি

বিকাশ-রকেট-নগদে কাস্টমস শুল্ক পরিশোধ সুবিধা চালু, ঘরে বসেই পণ্য খালাসের পথ খুলল

ছবি

তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার চান ব্যবসায়ীরা

ছবি

কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে মাশুল বাড়বে না

সেমিকন্ডাক্টর খাতে ১০ বছরের কর অব্যাহতি ও শুল্ক ছাড়ের সুপারিশ

ছবি

প্রথম প্রান্তিকে বিমাদাবি নিষ্পত্তিতে গার্ডিয়ান লাইফ ইনস্যুরেন্সের ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’

৮৫ ব্রোকারেজ হাউসকে আগস্টের মধ্যে চালু করতে হবে ব্যাক অফিস সফটওয়্যার

ছবি

প্রসাধনী পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধি প্রত্যাহারের দাবি

ছবি

স্বর্ণের দাম আবার বাড়লো

ছবি

৮৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এক লাখ ১০ হাজার টন সার কিনবে সরকার

এফবিসিসিআই নির্বাচন: সময় বাড়লো ৪৫ দিন

ছবি

পাট খাতের উন্নয়নে ‘সাসটেইনেবল মার্কেট এক্সেস বুটক্যাম্প’ কর্মসূচি শুরু

tab

অর্থ-বাণিজ্য

জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি খানিকটা বেড়েছে। ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে অর্থাৎ অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। আর প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) মাত্র ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল। আগের অর্থবছরের (২০২৩-২৪) তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল।

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ব্যবসা-বাণিজ্যে শ্লথ গতির কারণে প্রথম প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ধস নেমেছিল। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায়, বিশেষ করে কৃষি ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি বাড়ায় দ্বিতীয় প্রান্তিকের পর তৃতীয় প্রান্তিকেও প্রবৃদ্ধি বেড়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকর্তারা। ৩০ জুন শেষ হয়েছে ২০২৪-২৫ অর্থবছর। অর্থাৎ চার প্রান্তিকই (১২ মাস, জুলাই-সেপ্টেম্বর, অক্টোবর-ডিসেম্বর, জানুয়ারি-মার্চ ও এপ্রিল-জুন) শেষ হয়েছে। সোমবার তৃতীয় প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) জিডিপির তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।

কৃষি, শিল্প ও সেবা- এই তিন খাতের উপাত্ত নিয়ে জিডিপির তথ্য প্রকাশ করা হয়। গেল অর্থবছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে কৃষি ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি বাড়লেও শিল্প খাতে কমেছে। জানুয়ারি-মার্চ সময়ে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৪২ শতাংশ। দ্বিতীয় প্রান্তিকে হয়েছিল ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। প্রথম প্রান্তিকে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল মাত্র দশমিক ৭৬ শতাংশ। তৃতীয় প্রান্তিকে সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ, দ্বিতীয় প্রান্তিকে হয়েছিল ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ, প্রথম প্রান্তিকে হয়েছিল ২ দশমিক ৪১ শতাংশ। অন্যদিকে জানুয়ানি-মার্চ প্রান্তিকে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। দ্বিতীয় প্রান্তিকে হয়েছিল৭ দশমিক ১০ শতাংশ। প্রথম প্রান্তিকে এই খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

গত ২৭ মে বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের নয় মাস—গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে জিডিপির সাময়িক হিসাব প্রকাশ করেছে বিবিএস। তাতে দেখা যায়, গত অর্থ বছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। আগের অর্থ বছরে অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের সাময়িক হিসাবে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা বলেছিল বিবিএস। তবে চূড়ান্ত হিসাবে তা কমে ৪ দশমিক ২২ শতাংশে নেমে আসে।

গত বছরের জুলাইয়ে কোটাবিরোধী ছাত্র-জনতার যে আন্দোলন হয়, তা ঠেকাতে একপর্যায়ে কারফিউ জারি করা হয়। তখন চলাচল সীমিত করা হয়। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি কমে যায়। এরই এক পর্যায় ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়; ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। জুলাই-আগস্টের এ সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে শিল্পে উৎপাদন ব্যাহত হয়। এখনও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চিয়তায় ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের মধ্যে ভয়-আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বিশ্ব আর্থিক খাতের মোড়ল দুই সংস্থা বিশ্ব ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। কিছুদিন আগে এই তিন উন্নয়ন সংস্থাই বলেছে, অনিশ্চয়তার কারণে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) অনেক কমবে।

আইএমএফ জানিয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকা- উল্লেখযোগ্যভাবে শ্লথ হয়ে পড়েছে এবং এর ফলে গেলো অর্থ বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসবে। বিশ্ব ব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে, ৩ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে আসবে। এডিবি বলেছে, ৩ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরেছিল শেখ হাসিনার সরকার। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে অন্তবর্তীকালীন সরকার।

বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে দেশের ভেতরে স্থিরমূল্যে ৮ লাখ ৯২ হাজার ১৭০ কোটি টাকার মূল্য সংযোজন হয়, যা গত সাত প্রান্তিকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আইএমএফের কাছ থেকে ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ। এই ঋণের পাঁচ কিস্তি ৩৬৫ কোটি (৩.৬৫ বিলিয়ন) ডলার ইতোমধ্যে পেয়েছে সরকার। এই ঋণের অন্যতম শর্ত ছিল তিন মাস পরপর জিডিপির হালনাগাদ হিসাব প্রকাশ করতে হবে। পাশাপাশি শ্রমশক্তি জরিপও প্রান্তিকভিত্তিক করতে হবে। সেই শর্ত পূরণের অংশ হিসেবেই বিবিএস প্রান্তিকভিত্তিক জিডিপির হিসাব প্রকাশ করছে। ইতোমধ্যে প্রান্তিকভিত্তিক শ্রমশক্তি জরিপ প্রকাশ শুরু হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক থেকে ত্রৈমাসিক জিডিপির হিসাব প্রকাশ করছে বিবিএস। তার আগে পুরো এক বছরের হিসাব দিয়ে দুই বার জিডিপির তথ্য প্রকাশ করত বিবিএস। সংশ্লিষ্ট অর্থবছরের প্রথম ছয়-সাত মাসের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রথমে জিডিপির আকার, প্রবৃদ্ধিসহ সাময়িক হিসাব দেওয়া হত। পরে পুরো বছরের তথ্য নিয়ে প্রকাশ করা হত জিডিপির চূড়ান্ত হিসাব।

সে হিসাবেই গত বছরের ২১ মে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জিডিপির সাময়িক হিসাব প্রকাশ করে পরিসংখ্যান ব্যুরো। তাতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ হয়েছে বলে জানানো হয়। পরে চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করে বিবিএস। তাতে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ২২ শতাংশ। আওয়ামী লীগ সরকার তাদের অর্জনের খাত হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে বরাবরই দেখিয়ে আসছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশে ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অর্জিত হয় ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ওই প্রবৃদ্ধি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। পরের বছর কোভিড মহামারীর ধাক্কায় তা ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশে নেমে আসে। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা আবার বেড়ে ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশে উঠেছিল। পরের বছর (২০২১-২২) ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে ৭ দশমিক ১০ শতাংশে উঠলেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে আবার কমে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশে নেমে আসে। ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের বাজেটে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ধরেছে অন্তবর্তী সরকার।

back to top