আবার শক্তিশালী হয়েছে ডলার, কমেছে টাকার মান। একদিনের ব্যবধানেই বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলার দর ১ টাকা ৪০ পয়সা বেড়েছে। অথচ পাঁচ দিন ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হওয়ায় টাকার হারানো শক্তি ফিরে পাওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। গতকাল মঙ্গলবার এক দিনেই ১ টাকা ৪০ পয়সা দাম কমেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামে ডলার কেনার পর প্রধান বিদেশি মুদ্রাটির দর বাড়তে শুরু করেছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে দুই দিনে প্রায় ৫০ কোটি ডলার কেনা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামে ডলার কেনার পর প্রধান বিদেশি মুদ্রাটির দর বাড়তে শুরু করেছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে দুই দিনে প্রায় ৫০ কোটি ডলার কেনা হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রার পতন ঠেকাতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কিনছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা
বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রার পতন ঠেকাতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কিনছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, ডলার কিনে মুদ্রাবাজার শান্ত রাখার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমান বাজারের বাস্তবতায় এটাই করা উচিৎ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, দেশের মুদ্রাবাজারে মঙ্গলবার ডলারের সর্বোচ্চ দাম ছিল ১২১ টাকা ৫০ পয়সা এবং সর্বনিম্ন দাম ১২০ টাকা ৮০ পয়সা। সোমবার যা ছিল যথাক্রমে ১২০ টাকা ১০ পয়সা ও ১১৯ টাকা ৫০ পয়সা। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এক দিনের ব্যবধানে ডলারের বিক্রয়মূল্য বেড়েছে ১ টাকা ৪০ পয়সা; টাকার মান ১ টাকা ৪০ পয়সা বেড়েছে। বেশ কিছুদিন টাকা-ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীল ছিল। এমনকি টাকা-ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরও স্বাভাবিক ছিল বাজার।
গত ১৪ মে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ১৩৪ কোটি (১.৩৪ বিলিয়ন) পেতে ডলারের বিনিময় মূল্য বাজারভিত্তিক করার ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদসহ সবাই আশঙ্কা করেছিলেন টাকা-ডলার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পর ডলারের দাম অনেক বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু তা হয়নি, উল্টো কমছিল। ১৪ মে টাকা-ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরদিন ছিল বৃহস্পতিবার (১৫ মে); ওই দিন খোলা বাজারে ডলারের দর খানিকটা বাড়লেও ব্যাংকে তেমন হেরফের হয়নি।
সাপ্তাহিক দুই দিন (১৬ ও ১৭ মে, শুক্র ও শনিবার) ছুটির পর ১৮ মে (রোববার) মুদ্রাবাজারে ডলারের বিক্রয় মূল্য ছিল ১২২ টাকা ৭৮ পয়সা। এরপর গত ৭ জুলাই পর্যন্ত ১২২ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ১২২ টাকা ১৮৫ পয়সার মধ্যে ডলার কেনাবেচা হয়।
৮ জুলাই থেকে কমতে থাকে ডলারের দর। শক্তিশালী হতে থাকে টাকা। ৮ জুলাই মুদ্রাবাজারে ডলারের বিক্রয় মূল্য ছিল ১২২ টাকা ৫৫ পয়সা। ৯ জুলাই তা কমে ১২২ টাকা ৩০ পয়সায় নেমে আসে। ১০ জুলাই তা আরও কমে ১২১ টাকা ৮৫ পয়সায় নেমে আসে। ১১ ও ১২ জুলাই (শুক্র ও শনিবার) ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার (১৩ জুলাই) ডলারের দর আরও কমে ১২১ টাকা ২০ পয়সায় নেমে আসে।
গত সোমবার ডলারের বিক্রয় মূল্য আরও কমে ১২০ টাকা ১০ পয়সায় নেমে আসে। তবে মঙ্গলবার একদিনেই ডলারের দর ১ টাকা ৪০ পয়সা বেড়ে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় উঠেছে। অর্থনীতিবিদরা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে হস্তক্ষেপ করে ডলারের দাম বেশি রাখার চেষ্টা করছে। কেননা, যেভাবে ডলারের দাম পড়ে যাচ্ছিল, তাতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় কমে যেত। রপ্তানিকারক ও প্রবাসীদের সহায়তা দিতেই ডলারের দাম ধরে রাখা হচ্ছে বলে জানান তারা।
এদিকে বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ডলার কিনছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে নিলামে ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার নিলামে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ১৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার কেনে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই ডলার সোমবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভে যোগ হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবারও নিলামের মাধ্যমে ২২ ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ৩১ কোটি ৩০ লাখ ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সব মিলিয়ে দুই দিনে ৪৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার কেনা হলো। এর আগে বিভিন্ন সময় বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নির্ধারিত দরে ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এবারই প্রথম সেটা নিলামের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, রেমিটেন্সে উল্লম্ফনের পাশাপাশি রপ্তানি আয়ের প্রবাহ বাড়ায় ডলারের বাজার স্থিতিশীল ছিল। এর সঙ্গে জুনের শেষের দিকে বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকসহ (এআইআইবি) আরও কয়েকটি উন্নয়ন সংস্থার কাছ থেকে প্রায় পৌনে ৪ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তার ঋণ আসায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বড় অঙ্কের ডলার আসে।
আর এতে বেশ কিছুদিন ধরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকা অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভও সন্তোষজনক অবস্থায় অবস্থান করছে। এমনকি এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি আমদানি বিল পরিশোধের পরও বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ সাড়ে ২৪ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলারের অবস্থান করছে। গ্রস বা মোট হিসাবে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ২৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৯ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার। গত ৮ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে আকুর মে-জুন মেয়াদের ২ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধ করে। এর পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২৪ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। গ্রস হিসাবে নামে ২৯ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলারে।
আকুর দেনা শোধের আগে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২৬ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। আর গ্রস হিসাবে ছিল ৩১ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার। অর্থনীতির সামর্থ্য প্রকাশের গুরুত্বপূর্ণ সূচক রিজার্ভ নিয়ে বাংলাদেশে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা চলছে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময় থেকেই। অভ্যুত্থানের পর গত বছর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলেও উদ্বেগ কাটছিল না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৫ আগস্টের পর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে আর ডলার বিক্রি হয়নি। এর পরিবর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিনছে। ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রিজার্ভ থেকে ৮০ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়। পরের দুই মাসে বিক্রি না করে কেনা হয় ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। পরের তিন মাসে বাজার থেকে আরও ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কত ডলার কিনেছে তা জানা যায়নি। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের তথ্য এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে এ সময়ে নিট বিক্রির পরিমাণ ঋণাত্মক হয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা।
দেশে প্রায় তিন বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষের যে ভোগান্তি বাড়ছে, তার অন্যতম কারণ ডলারের উচ্চ দাম। ডলারের দাম কমলে তা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হয়। অন্তর্বর্তী সরকারেরও অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। বর্তমানে ডলারের দাম যে পর্যায়ে রয়েছে, সেটাকে স্বাভাবিক বলে মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ জন্য দাম ধরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ব্যাংকগুলো এখন প্রবাসী আয়ের ডলার ১২১ টাকায় কিনছে যা এক মাস আগে ১২৩ টাকার ওপরে ছিল। ডলারের দাম কমলেও অবশ্য প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়ছে। যদিও ব্যবসা-বাণিজ্যে একধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে। আমদানিতে গতি নেই। ঋণপত্র খোলার হার কমছে। ব্যাংকগুলোয় ডলারের চাহিদা কম।
বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
আবার শক্তিশালী হয়েছে ডলার, কমেছে টাকার মান। একদিনের ব্যবধানেই বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলার দর ১ টাকা ৪০ পয়সা বেড়েছে। অথচ পাঁচ দিন ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হওয়ায় টাকার হারানো শক্তি ফিরে পাওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। গতকাল মঙ্গলবার এক দিনেই ১ টাকা ৪০ পয়সা দাম কমেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামে ডলার কেনার পর প্রধান বিদেশি মুদ্রাটির দর বাড়তে শুরু করেছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে দুই দিনে প্রায় ৫০ কোটি ডলার কেনা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামে ডলার কেনার পর প্রধান বিদেশি মুদ্রাটির দর বাড়তে শুরু করেছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে দুই দিনে প্রায় ৫০ কোটি ডলার কেনা হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রার পতন ঠেকাতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কিনছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা
বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রার পতন ঠেকাতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কিনছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, ডলার কিনে মুদ্রাবাজার শান্ত রাখার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বর্তমান বাজারের বাস্তবতায় এটাই করা উচিৎ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, দেশের মুদ্রাবাজারে মঙ্গলবার ডলারের সর্বোচ্চ দাম ছিল ১২১ টাকা ৫০ পয়সা এবং সর্বনিম্ন দাম ১২০ টাকা ৮০ পয়সা। সোমবার যা ছিল যথাক্রমে ১২০ টাকা ১০ পয়সা ও ১১৯ টাকা ৫০ পয়সা। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এক দিনের ব্যবধানে ডলারের বিক্রয়মূল্য বেড়েছে ১ টাকা ৪০ পয়সা; টাকার মান ১ টাকা ৪০ পয়সা বেড়েছে। বেশ কিছুদিন টাকা-ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীল ছিল। এমনকি টাকা-ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরও স্বাভাবিক ছিল বাজার।
গত ১৪ মে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ১৩৪ কোটি (১.৩৪ বিলিয়ন) পেতে ডলারের বিনিময় মূল্য বাজারভিত্তিক করার ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদসহ সবাই আশঙ্কা করেছিলেন টাকা-ডলার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পর ডলারের দাম অনেক বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু তা হয়নি, উল্টো কমছিল। ১৪ মে টাকা-ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরদিন ছিল বৃহস্পতিবার (১৫ মে); ওই দিন খোলা বাজারে ডলারের দর খানিকটা বাড়লেও ব্যাংকে তেমন হেরফের হয়নি।
সাপ্তাহিক দুই দিন (১৬ ও ১৭ মে, শুক্র ও শনিবার) ছুটির পর ১৮ মে (রোববার) মুদ্রাবাজারে ডলারের বিক্রয় মূল্য ছিল ১২২ টাকা ৭৮ পয়সা। এরপর গত ৭ জুলাই পর্যন্ত ১২২ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ১২২ টাকা ১৮৫ পয়সার মধ্যে ডলার কেনাবেচা হয়।
৮ জুলাই থেকে কমতে থাকে ডলারের দর। শক্তিশালী হতে থাকে টাকা। ৮ জুলাই মুদ্রাবাজারে ডলারের বিক্রয় মূল্য ছিল ১২২ টাকা ৫৫ পয়সা। ৯ জুলাই তা কমে ১২২ টাকা ৩০ পয়সায় নেমে আসে। ১০ জুলাই তা আরও কমে ১২১ টাকা ৮৫ পয়সায় নেমে আসে। ১১ ও ১২ জুলাই (শুক্র ও শনিবার) ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার (১৩ জুলাই) ডলারের দর আরও কমে ১২১ টাকা ২০ পয়সায় নেমে আসে।
গত সোমবার ডলারের বিক্রয় মূল্য আরও কমে ১২০ টাকা ১০ পয়সায় নেমে আসে। তবে মঙ্গলবার একদিনেই ডলারের দর ১ টাকা ৪০ পয়সা বেড়ে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় উঠেছে। অর্থনীতিবিদরা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে হস্তক্ষেপ করে ডলারের দাম বেশি রাখার চেষ্টা করছে। কেননা, যেভাবে ডলারের দাম পড়ে যাচ্ছিল, তাতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় কমে যেত। রপ্তানিকারক ও প্রবাসীদের সহায়তা দিতেই ডলারের দাম ধরে রাখা হচ্ছে বলে জানান তারা।
এদিকে বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ডলার কিনছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে নিলামে ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার নিলামে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ১৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছ থেকে ১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার কেনে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই ডলার সোমবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভে যোগ হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবারও নিলামের মাধ্যমে ২২ ব্যাংকের কাছ থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ৩১ কোটি ৩০ লাখ ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সব মিলিয়ে দুই দিনে ৪৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার কেনা হলো। এর আগে বিভিন্ন সময় বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নির্ধারিত দরে ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এবারই প্রথম সেটা নিলামের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, রেমিটেন্সে উল্লম্ফনের পাশাপাশি রপ্তানি আয়ের প্রবাহ বাড়ায় ডলারের বাজার স্থিতিশীল ছিল। এর সঙ্গে জুনের শেষের দিকে বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকসহ (এআইআইবি) আরও কয়েকটি উন্নয়ন সংস্থার কাছ থেকে প্রায় পৌনে ৪ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তার ঋণ আসায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বড় অঙ্কের ডলার আসে।
আর এতে বেশ কিছুদিন ধরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকা অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভও সন্তোষজনক অবস্থায় অবস্থান করছে। এমনকি এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি আমদানি বিল পরিশোধের পরও বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ সাড়ে ২৪ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলারের অবস্থান করছে। গ্রস বা মোট হিসাবে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ২৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৯ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার। গত ৮ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে আকুর মে-জুন মেয়াদের ২ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধ করে। এর পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২৪ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। গ্রস হিসাবে নামে ২৯ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলারে।
আকুর দেনা শোধের আগে বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ২৬ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। আর গ্রস হিসাবে ছিল ৩১ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার। অর্থনীতির সামর্থ্য প্রকাশের গুরুত্বপূর্ণ সূচক রিজার্ভ নিয়ে বাংলাদেশে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা চলছে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময় থেকেই। অভ্যুত্থানের পর গত বছর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলেও উদ্বেগ কাটছিল না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৫ আগস্টের পর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে আর ডলার বিক্রি হয়নি। এর পরিবর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিনছে। ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রিজার্ভ থেকে ৮০ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়। পরের দুই মাসে বিক্রি না করে কেনা হয় ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। পরের তিন মাসে বাজার থেকে আরও ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কত ডলার কিনেছে তা জানা যায়নি। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের তথ্য এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে এ সময়ে নিট বিক্রির পরিমাণ ঋণাত্মক হয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা।
দেশে প্রায় তিন বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষের যে ভোগান্তি বাড়ছে, তার অন্যতম কারণ ডলারের উচ্চ দাম। ডলারের দাম কমলে তা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হয়। অন্তর্বর্তী সরকারেরও অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। বর্তমানে ডলারের দাম যে পর্যায়ে রয়েছে, সেটাকে স্বাভাবিক বলে মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ জন্য দাম ধরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ব্যাংকগুলো এখন প্রবাসী আয়ের ডলার ১২১ টাকায় কিনছে যা এক মাস আগে ১২৩ টাকার ওপরে ছিল। ডলারের দাম কমলেও অবশ্য প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়ছে। যদিও ব্যবসা-বাণিজ্যে একধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে। আমদানিতে গতি নেই। ঋণপত্র খোলার হার কমছে। ব্যাংকগুলোয় ডলারের চাহিদা কম।