বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন
রাজস্ব আহরণ কম হওয়ায় সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন কমেছে। এতে ব্যাংক খাতে তারল্যের চাপ বেড়েছে। ঘাটতি পূরণে সরকার ঋণনির্ভর হওয়ায় মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। দুর্বল রাজস্ব ব্যবস্থা, মূল্যস্ফীতির চাপ বৃদ্ধি এবং বড় অঙ্কের বাজেট ঘাটতির কারণে অর্থনীতিতে স্থবিরতা বিরাজ করছে। এ অবস্থা সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করছে। তবে দেশের সরকার ব্যবস্থায় পরিবর্তনের কারণে বিচক্ষণ সরকারি ব্যয় নীতি গ্রহণ, বিনিয়োগ বাড়ানোর পদক্ষেপ ও সঞ্চয় বৃদ্ধির ফলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে পারে।
গত বুধবার প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৩-২৪ বার্ষিক প্রতিবেদনে এ ধরনের শঙ্কা ও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মূল্যায়ন নিয়ে। ওই অর্থবছরের পর ২০২৪-২৫ অর্থবছরও পার হয়ে গেছে। অর্থাৎ এক বছর পর আগের বছরের বার্ষিক প্রতিবেদন এবার প্রকাশ করা হয়েছে। আগে সাধারণত প্রতি অর্থবছর শেষ হওয়ার ৩ থেকে ৫ মাসের মধ্যে বার্ষিক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হতো। সরকার বদল, প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্তের ঘাটতিসহ নানা কারণে এবার প্রতিবেদনটি প্রকাশে দেরি হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এবারের প্রতিবেদনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সার্বিক অর্থনীতির মূল্যায়নসহ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বেশকিছু পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তবে প্রতিবেদনে গত বছরের আগস্টে সরকার পরিবর্তনের কারণে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে কি ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে সে বিষয়েও পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়, গত বছরের আগস্টে দেশের শাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসার পর সরকারি ব্যয় নীতিতে বিচক্ষণতা আনা হয়েছে। এতে সরকারি খাতে অপচয় কমেছে। অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় বাড়তে শুরু করেছে। যা বিগত সরকারের আমলে ব্যাংকগুলোতে সৃষ্ট তারল্য সংকট হ্রাসে ভূমিকা রাখছে। এতে আগামীতে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়তে পারে বলে প্রতিবেদনে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। এ খাতে বিনিয়োগ বাড়লে দেশে একদিকে যেমন কর্মসংস্থান বাড়বে, উৎপাদন বাড়বে। এসবের প্রভাবে মানুষের আয় বাড়বে। মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ কমে আসবে।
গত তিন অর্থবছর ধরে দেশে চড়া মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এ কারণে ভোক্তারা চাপে পড়েছেন। এ হার এখন কমতে শুরু করেছে। আগামীতে এ হার আরও কমে আসবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অংশ হিসাবে পরিবহণ, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি খাতে সরকার অনেক অর্থ বিনিয়োগ করেছে। যা কর্মসংস্থান এবং ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বাড়াতে সহায়তা করছে। এছাড়া পদ্মা ও যমুনা সেতুতে রেল সেতুর উদ্বোধনের ফলে দেশের দক্ষিণ, উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও বাড়বে। এখন ওইসব অঞ্চলে বিনিয়োগ অবকাঠামো বাড়াতে হবে। বেসরকারি খাতকে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত কয়েক বছর ধরেই রাজস্ব আহরণ কম হচ্ছে। সরকার পরিবর্তনের পর পণ্যমূল্য কমাতে কর কাঠামোতে ব্যাপক ছাড় দেওয়া হয়। এছাড়া ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে গতি কম থাকায় রাজস্ব আহরণ কম হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে এমনটি চলায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অর্থের জোগান কম গেছে। ফলে ব্যাংকে তারল্যের জোগান বাড়েনি। ঘাটতি অর্থায়নে সরকার ঋণনির্ভর হয়েছে। চড়া সুদে ঋণের কারণে সরকারের খরচ বেড়েছে। অন্যদিকে বেসরকারি খাতে ঋণের জোগান কম গেছে। ফলে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। যা ভোক্তাকে দীর্ঘ সময় ভুগিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্বল রাজস্ব ব্যবস্থা, মূল্যস্ফীতির চাপ বৃদ্ধি এবং বড় অঙ্কের বাজেট ঘাটতির কারণে অর্থনীতিতে স্থবিরতা সৃষ্টি করেছে। যা সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করেছে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি কমেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন
শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫
রাজস্ব আহরণ কম হওয়ায় সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন কমেছে। এতে ব্যাংক খাতে তারল্যের চাপ বেড়েছে। ঘাটতি পূরণে সরকার ঋণনির্ভর হওয়ায় মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। দুর্বল রাজস্ব ব্যবস্থা, মূল্যস্ফীতির চাপ বৃদ্ধি এবং বড় অঙ্কের বাজেট ঘাটতির কারণে অর্থনীতিতে স্থবিরতা বিরাজ করছে। এ অবস্থা সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করছে। তবে দেশের সরকার ব্যবস্থায় পরিবর্তনের কারণে বিচক্ষণ সরকারি ব্যয় নীতি গ্রহণ, বিনিয়োগ বাড়ানোর পদক্ষেপ ও সঞ্চয় বৃদ্ধির ফলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে পারে।
গত বুধবার প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৩-২৪ বার্ষিক প্রতিবেদনে এ ধরনের শঙ্কা ও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মূল্যায়ন নিয়ে। ওই অর্থবছরের পর ২০২৪-২৫ অর্থবছরও পার হয়ে গেছে। অর্থাৎ এক বছর পর আগের বছরের বার্ষিক প্রতিবেদন এবার প্রকাশ করা হয়েছে। আগে সাধারণত প্রতি অর্থবছর শেষ হওয়ার ৩ থেকে ৫ মাসের মধ্যে বার্ষিক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হতো। সরকার বদল, প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্তের ঘাটতিসহ নানা কারণে এবার প্রতিবেদনটি প্রকাশে দেরি হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এবারের প্রতিবেদনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সার্বিক অর্থনীতির মূল্যায়নসহ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বেশকিছু পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তবে প্রতিবেদনে গত বছরের আগস্টে সরকার পরিবর্তনের কারণে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে কি ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে সে বিষয়েও পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়, গত বছরের আগস্টে দেশের শাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসার পর সরকারি ব্যয় নীতিতে বিচক্ষণতা আনা হয়েছে। এতে সরকারি খাতে অপচয় কমেছে। অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় বাড়তে শুরু করেছে। যা বিগত সরকারের আমলে ব্যাংকগুলোতে সৃষ্ট তারল্য সংকট হ্রাসে ভূমিকা রাখছে। এতে আগামীতে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়তে পারে বলে প্রতিবেদনে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। এ খাতে বিনিয়োগ বাড়লে দেশে একদিকে যেমন কর্মসংস্থান বাড়বে, উৎপাদন বাড়বে। এসবের প্রভাবে মানুষের আয় বাড়বে। মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ কমে আসবে।
গত তিন অর্থবছর ধরে দেশে চড়া মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। এ কারণে ভোক্তারা চাপে পড়েছেন। এ হার এখন কমতে শুরু করেছে। আগামীতে এ হার আরও কমে আসবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অংশ হিসাবে পরিবহণ, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি খাতে সরকার অনেক অর্থ বিনিয়োগ করেছে। যা কর্মসংস্থান এবং ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বাড়াতে সহায়তা করছে। এছাড়া পদ্মা ও যমুনা সেতুতে রেল সেতুর উদ্বোধনের ফলে দেশের দক্ষিণ, উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও বাড়বে। এখন ওইসব অঞ্চলে বিনিয়োগ অবকাঠামো বাড়াতে হবে। বেসরকারি খাতকে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত কয়েক বছর ধরেই রাজস্ব আহরণ কম হচ্ছে। সরকার পরিবর্তনের পর পণ্যমূল্য কমাতে কর কাঠামোতে ব্যাপক ছাড় দেওয়া হয়। এছাড়া ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে গতি কম থাকায় রাজস্ব আহরণ কম হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে এমনটি চলায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অর্থের জোগান কম গেছে। ফলে ব্যাংকে তারল্যের জোগান বাড়েনি। ঘাটতি অর্থায়নে সরকার ঋণনির্ভর হয়েছে। চড়া সুদে ঋণের কারণে সরকারের খরচ বেড়েছে। অন্যদিকে বেসরকারি খাতে ঋণের জোগান কম গেছে। ফলে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। যা ভোক্তাকে দীর্ঘ সময় ভুগিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্বল রাজস্ব ব্যবস্থা, মূল্যস্ফীতির চাপ বৃদ্ধি এবং বড় অঙ্কের বাজেট ঘাটতির কারণে অর্থনীতিতে স্থবিরতা সৃষ্টি করেছে। যা সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করেছে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি কমেছে।