মে মাসে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৫৪ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। এই অঙ্ক আগের মাস এপ্রিলের চেয়ে প্রায় ২৮ শতাংশ কম। এপিলে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৭৫ কোটি ৯২ লাখ ডলার
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জন্যই আতঙ্ক হয়ে এসেছে ট্রাম্প শুল্ক। বাংলাদেশকে এখনও এই পাল্টা শুল্কের পুরোটা দিতে হচ্ছে না। বিদ্যমান শুল্কের সঙ্গে ১০ শতাংশ দিতে হচ্ছে। তাতেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির এই বাজারে পোশাক রপ্তানিতে বড় ধাক্কা এসেছে। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (অটেক্সা) গত রোববার হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, গত মে মাসে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৫৪ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। এই অঙ্ক আগের মাস এপ্রিলের চেয়ে প্রায় ২৮ শতাংশ কম। এপিলে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৭৫ কোটি ৯২ লাখ ডলার।
জানুয়ারিতে ৮০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি নিয়ে ২০২৫ সাল শুরু হয়। ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানির অঙ্ক ছিল ৭০ কোটি ১০ লাখ ডলার। মার্চে ছিল ৭২ কোটি ৩৯ লাখ ডলার। সব মিলিয়ে বছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জানুয়ারি-মে) যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫৩ কোটি (৩.৫৩ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তনি করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২১ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি।
চার মাসের হিসাবে অর্থাৎ জানুয়ারি-এপ্রিল সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) বেড়েছিল ২৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। দুই মাসে অর্থাৎ জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ২৭ শতাংশ।
অটেক্সার তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের পাঁচ মাসের (জুলাই-মে) কেবল মে মাসেই যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমেছে। গত বছরের মে মাসে এই বাজারে ৫৯ কোটি ৬৭ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, মে মাসে গত বছরের মে মাসের চেয়ে রপ্তানি কমেছে ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ।
ট্রাম্প শুল্কের শুরুর এই ধাক্কা দেখেই বিচলিত রপ্তানিকারকরা। আগামী ১ আগস্ট থেকে ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হলে কী হবে, তা নিয়ে শঙ্কিত তারা। গত এপ্রিলে ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই রপ্তানিকারকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল। সবাই আশা করেছিল, সরকার হয়ত দরকষাকষি করে শুল্ক অনেকটা কমিয়ে আনতে পারবে। কিন্তু কমেছে মাত্র ২ শতাংশ। আরও কমার কোনো আশা দেখা যাচ্ছে না।
একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় বাজার। ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে এই বাজারে ৮৬৯ কোটি ২৪ লাখ (৮.৬৯ বিলিয়ন) পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা মোট রপ্তানি আয়ের ১৮ শতাংশ। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক।
অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২২ সালে এই বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৩৬ শতাংশ বেড়ে ৯৭৩ কোটি (৯.৭৩ বিলিয়ন) ডলারে উঠেছিল। পরের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে প্রবৃদ্ধি তো দূরের কথা, উল্টো ২৫ শতাংশ কমেছিল। সেই নেতিবাচক ধারা চলে ২০২৪ সালেও। তবে বছরের শেষ দিকে এসে গতি বাড়ায় শেষ পর্যন্ত নামমাত্র প্রবৃদ্ধি দিয়ে শেষ হয়েছিল বছর। গত বছর বাংলাদেশ থেকে ৭৩৪ কোটি (৭.৩৪ বিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে, যা ছিল ২০২৩ সালের তুলনায় শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি।
২০২৫ সাল শুরু হয়েছিল বড় চমক দিয়ে। চার মাসে (জানুয়ারি-এপ্রিল) ২৯ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি দেখে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প মালিকরা বেজায় খুশি হয়ে ব্যবসা যখন আরও বাড়ার আশা করছিলেন। হিসাব কষে দেখছিলেন, এবছর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি কমপক্ষে ২৫ শতাংশ বাড়বে। ঠিক তখনই আঘাত হয়ে আসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন বাণিজ্য নীতি। গত ২ এপ্রিল শতাধিক দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন তিনি। তাতে বাংলাদেশের পণ্যে যোগ হয় ৩৭ শতাংশ শুল্ক। আগের ১৫ শতাংশের সঙ্গে মিলে সর্বমোট শুল্ক দাঁড়ায় ৫২ শতাংশ।
৯ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক কার্যকরের দিন অনেকটা ‘ইউটার্ন’ করে তা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যদিও সব দেশের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর করা হয়। বাংলাদেশকেও এই ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক দিত হচ্ছে। আর তাতেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানি কমতে শুরু করেছে। দর-কষাকষি করতে না পারলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে শুল্কের বোঝা চেপে বসবে—তিন মাস আগের এমন শঙ্কাই সত্য হওয়ার পথে।
বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের কথা জানিয়ে গত ৭ জুলাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি লিখেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে মোট শুল্ক ভার কত দাঁড়াবে? ৭ এপ্রিল জারি করা ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছিল, এই হার হবে এত দিন থাকা শুল্ক হারের অতিরিক্ত। মানে হলো, এত দিন বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের পণ্য যে হারে শুল্ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যেত, তার সঙ্গে যুক্ত হবে নতুন এই পাল্টা শুল্ক।
ইউএস ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যে যত শুল্ক আদায় করা হয়েছে, তা গড় করলে হার দাঁড়ায় ১৫ শতাংশের মতো। ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর হলে মোট শুল্কহার দাঁড়াবে ৫০ শতাংশ। তার মানে, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে ৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে।
রপ্তানির দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে ট্রাম্প ফেরার তিন মাস পর গত এপ্রিলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। তখন বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭ শতাংশ বাড়তি শুল্ক নির্ধারিত হয়েছিল। আগে থেকে ১৫ শতাংশ শুল্ক থাকায় দুই মিলিয়ে শুল্কের হার ৫২ শতাংশে ওঠে। তবে পরে ট্রাম্প তার বর্ধিত শুল্ক হার কার্যকরের সময় বাড়িয়ে দেন। এই সময়ে বিভিন্ন দেশকে তার সঙ্গে সমঝোতায় আসার সুযোগ দেন তিনি।
বাংলাদেশ আলোচনার সেই সুযোগ নেয়। এই ফাঁকে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বিদেশি পণ্যে শুল্ক ছাড়ের নানা পদক্ষেপ নেয়। এদিকে ৯০ দিনের সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার দুদিন আগে ৭ জুলাই বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের পণ্যে নতুন শুল্ক হারের ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প জানান, আগামী ১ আগস্ট থেকে নতুন হার কার্যকর হবে।
ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে রবিবার ‘যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক: কোন পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গোলটেবিলে রপ্তানি বাণিজ্য নিয়ে উঠে এসেছে হতাশা, উদ্বেগ ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। প্রথম আলো আয়োজিত ওই বৈঠকে অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও গবেষকেরা অংশ নেন।
সেখানে দেশের শীস্থস্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারক হা-মীম গ্রুপের মালিক এ কে আজাদ বলেন, ‘তার ৪০ বছরের ব্যবসায়িক জীবনে এমন সঙ্কট আর দেখেননি। আমরা ব্যবসায়ীরা এই খাতকে সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে এসেছি। কিন্তু এখন হতাশ ও ক্ষুব্ধ। আমার এক বড় ব্র্যান্ড হেড অফিসে ডেকে জানায়, তারা নিজ দেশের সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করেছে। তাদের ভাষ্য ছিল—তোমাদের অবস্থান দুর্বল, ভালো ফল আশা করা যাচ্ছে না।’
এটা শুনে হতাশ হয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টাকে ফোন করেন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আজাদ। পরদিন বাণিজ্য উপদেষ্টা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকও করেন। তিনি বলেন, ‘ওই বৈঠকে উপদেষ্টা ব্যবসায়ীদের জানান, ৯৫ শতাংশ সমস্যা তারা সমাধান করেছেন। বাকি ৫ শতাংশ নিয়ে তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করছেন। আমার এক ক্রেতা ই–মেইলে জানিয়েছে, ১ তারিখ (আগস্ট) থেকে বাংলাদেশের ওপর যে শুল্ক বসবে, তা সরানো না গেলে শুল্কের ৩৫ শতাংশ আমাকে বহন করতে হবে। এখন প্রশ্ন হলো, আমি সেই শুল্ক কীভাবে বহন করব?’
মে মাসে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৫৪ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। এই অঙ্ক আগের মাস এপ্রিলের চেয়ে প্রায় ২৮ শতাংশ কম। এপিলে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৭৫ কোটি ৯২ লাখ ডলার
মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জন্যই আতঙ্ক হয়ে এসেছে ট্রাম্প শুল্ক। বাংলাদেশকে এখনও এই পাল্টা শুল্কের পুরোটা দিতে হচ্ছে না। বিদ্যমান শুল্কের সঙ্গে ১০ শতাংশ দিতে হচ্ছে। তাতেই বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির এই বাজারে পোশাক রপ্তানিতে বড় ধাক্কা এসেছে। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (অটেক্সা) গত রোববার হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, গত মে মাসে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৫৪ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। এই অঙ্ক আগের মাস এপ্রিলের চেয়ে প্রায় ২৮ শতাংশ কম। এপিলে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৭৫ কোটি ৯২ লাখ ডলার।
জানুয়ারিতে ৮০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি নিয়ে ২০২৫ সাল শুরু হয়। ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানির অঙ্ক ছিল ৭০ কোটি ১০ লাখ ডলার। মার্চে ছিল ৭২ কোটি ৩৯ লাখ ডলার। সব মিলিয়ে বছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জানুয়ারি-মে) যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫৩ কোটি (৩.৫৩ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তনি করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২১ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি।
চার মাসের হিসাবে অর্থাৎ জানুয়ারি-এপ্রিল সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) বেড়েছিল ২৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। দুই মাসে অর্থাৎ জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ২৭ শতাংশ।
অটেক্সার তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের পাঁচ মাসের (জুলাই-মে) কেবল মে মাসেই যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমেছে। গত বছরের মে মাসে এই বাজারে ৫৯ কোটি ৬৭ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, মে মাসে গত বছরের মে মাসের চেয়ে রপ্তানি কমেছে ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ।
ট্রাম্প শুল্কের শুরুর এই ধাক্কা দেখেই বিচলিত রপ্তানিকারকরা। আগামী ১ আগস্ট থেকে ৩৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হলে কী হবে, তা নিয়ে শঙ্কিত তারা। গত এপ্রিলে ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই রপ্তানিকারকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল। সবাই আশা করেছিল, সরকার হয়ত দরকষাকষি করে শুল্ক অনেকটা কমিয়ে আনতে পারবে। কিন্তু কমেছে মাত্র ২ শতাংশ। আরও কমার কোনো আশা দেখা যাচ্ছে না।
একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় বাজার। ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে এই বাজারে ৮৬৯ কোটি ২৪ লাখ (৮.৬৯ বিলিয়ন) পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা মোট রপ্তানি আয়ের ১৮ শতাংশ। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক।
অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২২ সালে এই বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৩৬ শতাংশ বেড়ে ৯৭৩ কোটি (৯.৭৩ বিলিয়ন) ডলারে উঠেছিল। পরের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে প্রবৃদ্ধি তো দূরের কথা, উল্টো ২৫ শতাংশ কমেছিল। সেই নেতিবাচক ধারা চলে ২০২৪ সালেও। তবে বছরের শেষ দিকে এসে গতি বাড়ায় শেষ পর্যন্ত নামমাত্র প্রবৃদ্ধি দিয়ে শেষ হয়েছিল বছর। গত বছর বাংলাদেশ থেকে ৭৩৪ কোটি (৭.৩৪ বিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে, যা ছিল ২০২৩ সালের তুলনায় শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি।
২০২৫ সাল শুরু হয়েছিল বড় চমক দিয়ে। চার মাসে (জানুয়ারি-এপ্রিল) ২৯ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি দেখে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প মালিকরা বেজায় খুশি হয়ে ব্যবসা যখন আরও বাড়ার আশা করছিলেন। হিসাব কষে দেখছিলেন, এবছর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি কমপক্ষে ২৫ শতাংশ বাড়বে। ঠিক তখনই আঘাত হয়ে আসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন বাণিজ্য নীতি। গত ২ এপ্রিল শতাধিক দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন তিনি। তাতে বাংলাদেশের পণ্যে যোগ হয় ৩৭ শতাংশ শুল্ক। আগের ১৫ শতাংশের সঙ্গে মিলে সর্বমোট শুল্ক দাঁড়ায় ৫২ শতাংশ।
৯ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক কার্যকরের দিন অনেকটা ‘ইউটার্ন’ করে তা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যদিও সব দেশের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর করা হয়। বাংলাদেশকেও এই ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক দিত হচ্ছে। আর তাতেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানি কমতে শুরু করেছে। দর-কষাকষি করতে না পারলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে শুল্কের বোঝা চেপে বসবে—তিন মাস আগের এমন শঙ্কাই সত্য হওয়ার পথে।
বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের কথা জানিয়ে গত ৭ জুলাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি লিখেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে মোট শুল্ক ভার কত দাঁড়াবে? ৭ এপ্রিল জারি করা ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছিল, এই হার হবে এত দিন থাকা শুল্ক হারের অতিরিক্ত। মানে হলো, এত দিন বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের পণ্য যে হারে শুল্ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যেত, তার সঙ্গে যুক্ত হবে নতুন এই পাল্টা শুল্ক।
ইউএস ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যে যত শুল্ক আদায় করা হয়েছে, তা গড় করলে হার দাঁড়ায় ১৫ শতাংশের মতো। ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর হলে মোট শুল্কহার দাঁড়াবে ৫০ শতাংশ। তার মানে, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে ৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে।
রপ্তানির দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে ট্রাম্প ফেরার তিন মাস পর গত এপ্রিলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। তখন বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭ শতাংশ বাড়তি শুল্ক নির্ধারিত হয়েছিল। আগে থেকে ১৫ শতাংশ শুল্ক থাকায় দুই মিলিয়ে শুল্কের হার ৫২ শতাংশে ওঠে। তবে পরে ট্রাম্প তার বর্ধিত শুল্ক হার কার্যকরের সময় বাড়িয়ে দেন। এই সময়ে বিভিন্ন দেশকে তার সঙ্গে সমঝোতায় আসার সুযোগ দেন তিনি।
বাংলাদেশ আলোচনার সেই সুযোগ নেয়। এই ফাঁকে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বিদেশি পণ্যে শুল্ক ছাড়ের নানা পদক্ষেপ নেয়। এদিকে ৯০ দিনের সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার দুদিন আগে ৭ জুলাই বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের পণ্যে নতুন শুল্ক হারের ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প জানান, আগামী ১ আগস্ট থেকে নতুন হার কার্যকর হবে।
ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে রবিবার ‘যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক: কোন পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গোলটেবিলে রপ্তানি বাণিজ্য নিয়ে উঠে এসেছে হতাশা, উদ্বেগ ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। প্রথম আলো আয়োজিত ওই বৈঠকে অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও গবেষকেরা অংশ নেন।
সেখানে দেশের শীস্থস্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারক হা-মীম গ্রুপের মালিক এ কে আজাদ বলেন, ‘তার ৪০ বছরের ব্যবসায়িক জীবনে এমন সঙ্কট আর দেখেননি। আমরা ব্যবসায়ীরা এই খাতকে সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে এসেছি। কিন্তু এখন হতাশ ও ক্ষুব্ধ। আমার এক বড় ব্র্যান্ড হেড অফিসে ডেকে জানায়, তারা নিজ দেশের সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করেছে। তাদের ভাষ্য ছিল—তোমাদের অবস্থান দুর্বল, ভালো ফল আশা করা যাচ্ছে না।’
এটা শুনে হতাশ হয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টাকে ফোন করেন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আজাদ। পরদিন বাণিজ্য উপদেষ্টা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকও করেন। তিনি বলেন, ‘ওই বৈঠকে উপদেষ্টা ব্যবসায়ীদের জানান, ৯৫ শতাংশ সমস্যা তারা সমাধান করেছেন। বাকি ৫ শতাংশ নিয়ে তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করছেন। আমার এক ক্রেতা ই–মেইলে জানিয়েছে, ১ তারিখ (আগস্ট) থেকে বাংলাদেশের ওপর যে শুল্ক বসবে, তা সরানো না গেলে শুল্কের ৩৫ শতাংশ আমাকে বহন করতে হবে। এখন প্রশ্ন হলো, আমি সেই শুল্ক কীভাবে বহন করব?’